নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিচিত দোকান

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:২৬

আমি সন্ধ্যাবেলা দোকানটিতে গিয়েছিলাম। একটা স্যান্ডউইচ খেতে এবং সাথে এক গ্লাস পেপসি খেতে। এ হলো মোটাদাগের কারণ। যা প্রকৃত কারণ তা ছিলো আসলে আমি রাস্তায় একা একা হাঁটবার মানসিক স্থিরতায় ছিলাম না। সেই স্থিরতা থেকে সেই মুহূর্তে আমার অবস্থান অনেক দূরের ছিলো।

দোকানটি আমার চেনা। অনেকবারই সেখানে এসেছি। কখনো স্যান্ডউইচ, সাথে পেপসি আবার কখনো ফ্রাইড রাইস, সাথে পেপসি। কখনো দুপুরে খেতে এসেছি, কখনো এসেছি সন্ধ্যায়। কারণ সম্পর্কে সচেতন নই তবে রাতে কখনো দোকানটিতে আমি খেতে আসিনি।

স্যান্ডউইচ আর পেপসির অর্ডার দিয়ে আমি একটা সিট বাছাই করে বসে ছিলাম। একাধিকবার গিয়েছি এমন দোকানগুলোতে আমি সচরাচর প্রতিবারই একটি নির্দিষ্ট সিটে বসি। এই ধরনের শৃঙ্খল আমার নিজের বেলাতে আমি বেশ পছন্দ করি। তাই সেই শৃঙ্খলতা আমি নিজের উপরে আরোপ করতে ভালোবাসি। তাছাড়া এই দোকানে বসবার জন্য যেই নির্দিষ্ট সিটটি আমি বেছে নিয়েছি তার আরেকটি সুবিধা আছে। সেটা হলো সেখান থেকে দোকানটির টিভি সেট চোখের জন্য আরামদায়ক দূরত্বে। খাবারের অর্ডার দেওয়ার পরে সিটে বসে টিভি দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। আমি বাসায় সচরাচর টেলিভিশন দেখে থাকিনা। এই দোকানটির মতো অন্যান্য যেসব দোকানে আমি বসি এবং যেসব দোকানে এই দোকানটির মতো টেলিভিশন আছে সেসকল দোকানে আমি আগ্রহ নিয়ে টেলিভিশন দেখে থাকি।

কিন্তু আজকে টেলিভিশনের দিকে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। আমার সিটের থেকে পাশাপাশি বামে এক জোড়া ছেলেমেয়ে বসেছে। তারা নিজেদের মধ্যকার আলাপচারীতা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারছেনা। আমার মতো আশেপাশের অন্যদেরও ইচ্ছা থাকুক কি না থাকুক তাদের কথোপকথনে তাই নিষ্ক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে হচ্ছে। আমি তাদের দিকে তাকালাম। ছেলেটির পরনে কালো রঙের শার্ট, মুখের ডানদিকে গুটিকয়েক বসন্তের দাগ। মেয়েটির কপালে টিপ, পরনে সবুজ রঙের সালওয়ার কামিজ। ছেলেটির চাইতে মেয়েটিকেই বেশী উত্তেজিত বলে মনে হচ্ছে। তার কপালের উপরে ঘাম জমতে শুরু করেছে। ছেলেটির মুখ আপাত ভাবলেশহীন। মনের ভেতরেও সেই নিস্পৃহতা চলছে কিনা তা জানার কোন সুযোগ নেই।

“তোমাকে বলছি, অনেকবার বলছি সুমাইয়ার সাথে যোগাযোগ রাখবানা। তারপরেও তুমি যোগাযোগ রাখতেছো। আমার থেকে লুকাইয়া।”

“তুমি আমার কথা বুঝতে চেষ্টা করো।” আমি না তাকিয়েও স্পষ্ট বুঝতে পারছি ছেলেটির উচ্চারণের সাথে সাথে তার মুখাবয়বও কাঁচুমাচু।

“তোমার কোন কথা শুনবোনা আমি। কোন কথা শুনবোনা।” মেয়েটির কথা শুনতে না চাওয়ার জেদ এতোটাই তীব্র যে আশেপাশে আমরা যারা বসে আছি তারা প্রত্যেকেই তার দিকে তাকাতে বাধ্য হই।

ছেলেটি আমাদের সবার সেই দৃষ্টি বুঝতে পেরে আরো সংকুচিত হয়ে পড়ে। সে নিজের কন্ঠস্বর প্রয়োজনের চাইতে বেশী নিচু করে মেয়েটিকে বলতে শুরু করে “দেখো, সুমাইয়া আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। তুমি তারে নিয়া খামাখাই সন্দেহ করতেছো। দুইবার পাবলিক গেট টুগেদারে তাকে সবার সামনে ইনসাল্ট করছো তুমি। আমার ফ্রেন্ডসার্কেল আমারে নিয়া হাসাহাসি করে তুমি জানো? এইসব কথা তো তোমারে বলিনাই আমি। সুমাইয়ারে নিয়া তোমার সন্দেহের জন্য আমার বন্ধুবান্ধব কমে যাইতেছে। আমি বুঝতে পারতেছি এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর থেকে সবাই আমারে এভয়েড করা শুরু করবে। তুমি কি তাই চাও? বলো, এটাই চাও তুমি?”

আমার খাবারের অর্ডার তখন চলে এসেছে। স্যান্ডউইচে প্রথম কামড় দিতে দিতে আমি মেয়েটির কথা শুনতে পাই,

“তুমি সুমাইয়ারে নিয়া আমার সামনে কট খাওনাই? বলো, অস্বীকার করতে পারবা যে সুমাইয়ারে নিয়া তুমি আমার সামনে ছয় মাস আগে কট খাওনাই? আমি তোমার মোবাইলের মেসেজ চেক করে সুমাইয়ার সাথে তোমার ফ্লার্টিঙ দেখিনাই?”

“আরে আজব, তুমি এখনো সেইগুলা ধরে বসে আছো?” ছেলেটি বিস্মিত হয়ে গেলো। আমি তো তোমার কাছে স্বীকার করছিলামই।”
“না তুমি স্বীকার করোনাই। আমি নিজে তোমার মোবাইল চেক করে ধরতে পারছিলাম যে তুমি সুমাইয়ার সাথে আমাকে ফাঁকি দিয়ে ফ্লার্ট করে যাইতেছিলা। দিনের পর দিন।” মেয়েটি কথাগুলা জোরের সাথে বললো। যদিও তার কন্ঠস্বর এবারে নিয়ন্ত্রিত ছিলো।

“আমি সেইবারে স্বীকার যাওয়ার পরে তোমাকে যা বলছিলাম সেগুলা কিন্তু মেনে চলতেছি। আমি বলছিলাম যে সুমাইয়ার সাথে এইসব কথাবার্তা আর কখনো বলবোনা। তার সাথে দরকার ছাড়া মোবাইলেও আর কথা বলবোনা। বলিওনা কিন্তু। তোমাকে কথা দিছি বলে।”

আমি এবারে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখ প্রথমবারের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সে এবারে নিজের থেকে দ্বন্দ্বযুদ্ধের অবসান ঘটায়। ছেলেটির দিকে সরাসরি তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে “যাক, আমার কথা তাইলে তুমি শুনো। কি ভাগ্য আমার!”

ছেলেটিও হাসে। হাসতে হাসতে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে “সুমাইয়ারে নিয়া তুমি আমারে এতোক্ষণ কতো কথাই না শুনাইলা। রুম্মান ভাই যে রাতের পর রাত তোমারে মেসেজ পাঠায়, আমরা একসাথে থাকলে যখন তার সাথে দেখা হইয়া যায় তখন যে আমার সামনে সে তোমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চাইয়া থাকে তার বেলায়? আমি তো তোমারে কখনো এইসব নিয়া কথা শুনাইনা।”

এবারে মেয়েটিকে ডিফেন্সিভ হতে দেখা যায়। সে ঈষৎ বিগলিত কন্ঠে জবাব দেয় “আরে আমি রুম্মান ভাইয়ের সেই এসএমএসগুলার কোন রিপ্লাই দিছি?” সে সিনিয়র ভাই, এসএমএস করলে তার মুখের উপরে তো বলা যায়না যে ভাইয়া আপনি আমাকে এসএমএস করবেন না। সে এসএমএস পাঠায় যতো খুশী। আমি একটারও রিপ্লাই পাঠাইনা। তুমি জানো ভার্সিটিতেও তার সাথে আমার একা দেখা হয়ে গেলেও আমি দুই মিনিটের মাথাতেই বের হয়ে আসি। এমনকি ডিবেটিং ক্লাবেরও তো সে প্রেসিডেন্ট। সেখানেও আমি দরকার ছাড়া তার সাথে একটা কথা বেশী বলিনা।”

ছেলেটি পাল্টা কোন কথা না বলে হাসতে থাকে। একটু পরে মেয়েটির গলার স্বর আরো নিচু হয়ে আসে। তাকে আর রাগত বলে মনে হয়না।

খাওয়া শেষ করার পরে পে করে আমি দোকানটি থেকে বের হয়ে আসি। তখন সন্ধ্যা পুরোপুরি নেমে এসেছে। আলোয় আলোয় পরিচিত রাস্তাগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে। আমি এরকম সময়ে প্রতিবার তা টের পাই। আচ্ছা এখন আমি কই যেতে পারি? হাঁটবার জন্য? অনেকসময় ধরে হাঁটবার মানসিকতা আমি ফিরে পেয়েছি। সেই যুগলের সৌজন্যে একান্তই নিঃসঙ্গ এই কাজটি করতে আমার এখন আনন্দ হবে। বাতাস ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। হাঁটবার জন্য যা আমি সবসময় চেয়ে থাকি। পরপর দুইটি রিকশাকে প্রত্যাখ্যান করে আমি পরিচিত একটি রাস্তার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। খোলা চোখে যেই রাস্তাটির আশেপাশে কোন মানুষ দেখা যাচ্ছেনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.