নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন ও সূর্যাস্ত

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৪৮

তখন সূর্যাস্ত হবে হবে; হাঁটতে হাঁটতে যখন মাঠে চলে এসেছে, একটি আস্ত বিকাল যখন সমাপ্ত হবার পথে, মাঠের ঠিক মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে যুবকটি শিউরে উঠেছিলো। আনন্দে নাকি ভয়ে সেটা তার বোধগম্য হয়না।

যুবকটিকে দেখলে সে যুবক এর থেকে ভিন্ন কিছু মনে হবার সুযোগ নেই। চাউনীতে অনিশ্চয়তা, মুখাবয়বে সংকট, পায়ের গতিতে মন্থরতা- যারাই তাকে একনজর দেখবে তারাই বলে উঠবে হালকা পাতলা গড়নের, গন্তব্যহীনতার পাঁকে হাবুডুবু খেতে থাকা ছেলেটি আরো অনেক অনেকদিন ধরে যুবকই থেকে যাবে।

কৈশোরে হাজারো স্বপ্নকে অনায়াস বাস্তবের কাছে অবলীলায় লুটিয়ে পড়তে দেখে সে স্বপ্নের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলো। একলা ঘরের নোনা ধরা দেয়ালে, মাঠের কলকাকলিতে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে গতানুগতিক সকল দৃশ্যাবলীকে যখন তার থেকে দূরে দূরে থাকতো সে ক্রমশই স্বপ্নের প্রতি বিরুপতায় নিজেকে আবিষ্কার করতো। গন্তব্যকে সে স্পর্শ করতে পারেনা; নিকটতম স্পন্দনের নাড়িকে অনুভব করতে করতে অজস্র প্রহর অতিক্রান্ত হয়ে যেতো।

পিতামাতাহীন ভালোবাসাহীন মমতাহীন শহরে প্রথম যেদিন সে মেসের ঘুপচি ঘরে উঠে প্রথম অনুভব করেছিলো পারিপার্শ্বিকতার রুঢ় পাটাতনের সাথে সখ্যতা না ঘটলে সে বাঁচতে পারবেনা তারপরে প্রতিদিন ছেলেটি নিয়ম করে বিকালে টিউশনী সেরে রাস্তায় একা একা হাঁটতো। হাঁটবার বেলাতে ছেলেটি নিয়ম করে শেষ মুহুর্তে উপস্থিত হতো মাঠে। মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে চারপাশের দিকে গভীর চোখে তাকাতো। তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠতো।

কিন্তু ছেলেটি কখনো সূর্যাস্তের সময়ে কোথাও দাঁড়ায়নি। কখনোই না।

যেদিন ছেলেটি সূর্যাস্তের সময়ে মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো; সম্মোহিত হয়ে চোখ বন্ধ করেছিলো, চোখ বন্ধ করে একটি দৃশ্যও কল্পনা করে উঠতে পারেনি সেদিন রাতে ছেলেটি ভরপেট খেয়েছিলো। ভরপেটে খেলে চোখজুড়ে ঘুম নেমে আসে। ছেলেটিরও এসেছিলো। ঘুমে সমগ্র পৃথিবী থেকে নিজেকে বিযুক্ত করতে করতে সে অনেক অনেকদিন পরে স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্ন দেখে ডুকরে উঠেছিলো।

নিজের ঘুপচি ঘরটিতে সে একাই থাকে। তার সেই ডুকরে উঠবার শব্দে তাই কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কেউ দেখায়নি।

ছেলেটি এরপর থেকে নিয়মিত স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। স্বপ্নে সে প্রায়ই দেখতো একটি ফুলের বাগানে গিয়ে সে সমগ্র বাগান কুড়াল দিয়ে তছনছ করে ফেলছে। বাগানের প্রতিটি ফুলের সাথে সাথে মাটিকেও সে কুপিয়ে এফোঁড়ওফোঁড় করে ফেলছে। তার দিকে প্রত্যেকে বিস্মিত চোখে চেয়ে আছে। তাদের চোখ বিস্মিত, মানসপট বিস্ফোরিত।

ছেলেটি আরো অনেক স্বপ্ন দেখতো। প্রতিটি স্বপ্নই নিদারুণ ধ্বংসের। সে যেখানেই যাচ্ছে ধ্বংস করে দিচ্ছে চারপাশকে। আড়ম্বরহীন। নিস্পৃহভঙ্গিতে। তাকে দেখে শিউরে শিউরে উঠছে স্বপ্নে দেখা দেওয়া মানুষগুলো। তাদের পর্যবেক্ষণে তারা আবিষ্কার করতে পারে এসেছে একজন। তাদের সমগ্র অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিতে। পৃথিবীতে যে সুন্দর বলে কিছু রাখবেনা। সহ্য করতে পারবেনা সৌন্দর্যের সামান্যতম উপস্থিতি।

ছেলেটি স্বপ্নের ভেতরেই চিৎকার করে তাদেরকে বলতে চাইতো তারা যা ভাবছে তেমন নয়। পৃথিবীর অন্তর্গত সৌন্দর্যের সাথে তার কোন বিরোধ নেই। সুন্দরতম সকল অনুভূতির থেকে তার অবস্থান আদপেই বিপ্রতীপ নয়। সে কন্ঠস্বরকে চিরে ফেলে কথাগুলো বলতে চাইতো। কিন্তু বলতে পারতোনা। সে শুধুমাত্র ধ্বংসে ব্যাপৃত হতো।

এভাবেই চলছিলো অনেকদিন। বিকালে টিউশনী সেরে ছেলেটি বাদাম খেতে খেতে মাঠে প্রবেশ করতো। সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে সে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতো আজকে যেনো সে কোন স্বপ্ন না দেখে।

যুবকটির প্রার্থনা অনেকদিন ধরে অশ্রুত থেকে গিয়েছিলো। তারপরে একদিন সে জন্ডিসে আক্রান্ত হলো।

ততোমধ্যে ছেলেটির পৃথিবী হলদে হয়ে এসেছে। বিছানায় অলস শুয়ে থাকতো, তখনো হলুদ। রাতেরবেলায় ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে অজস্র গাঁদা ফুল এসে তার করোটিকে ক্লান্ত করতো।

এভাবে দুই মাস ভুগলো ছেলেটি। সেই দুই মাস সে কোন স্বপ্ন দেখেনি। একটিবারের জন্যেও নয়।

সেদিন ছিলো শুক্রবার। বিকালবেলায় ছেলেটি অনুভব করলো সে সম্পূর্ণই সুস্থ। ঘরে থাকতে থাকতে ছেলেটি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলো। সে মনঃস্থির করলো আজকে সে বাইরে যাবে। কিন্তু মাঠে নয়। মাঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতেও নয়।

নিজেকে চমকে দিয়ে সে যখন একটি জায়গায় এসে স্থির হলো তাকে বলে সদরঘাট। ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে এসে যুবক ছেলেটি দেখলো রাস্তার এক কোনে পানির বিশাল ড্রামের পাশে ঠেলার ভেতরেই একটি পরিবার নিজেদের বসত গেড়ে বসেছে। বাচ্চা ছেলেটির নাক দিয়ে সিকনী গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। ছেলেটির বাবা পরম যত্নে সেই গড়ানো সিকনী মুছে দিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের ওমে তাকে আশ্রয়ের অভয় দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই দৃশ্যটি লক্ষ্য করবার কেউ নেই। লক্ষীবাজারের কাজি নজরুল ইসলাম কলেজে সরকারী পরীক্ষার সিট পড়েছিলো। পরীক্ষা শেষে প্রত্যেকেই ভিড় বাঁচিয়ে সেই এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে ব্যস্ত। তখন সূর্য হেলে পড়েছে; বাতাস ক্রমশই স্ফিত হচ্ছে, আকাশ সেই রঙে নিজেকে আবৃত করে নিয়েছে যেই রঙে সম্ভাবনা, যেই সম্ভাবনায় সংকল্প, যেই সংকল্পে একটি শক্ত চোয়াল ক্রমাগত নিজেকে আবিষ্কার করে ঐকান্তিক আলোর ক্ষুদ্রতম বিন্দুতে।

আজকে যেনো ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে আমার চোখে স্বপ্ন নেমে আসে। দৃশ্যটি দেখতে দেখতে যুবকটির ভাবনায় ইচ্ছাটি এসে জুড়ে বসে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.