নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনের খবর সংযোগহীন

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:০৪

টানা কয়দিন ধরে বৃষ্টি হয়ে চললো। একনাগাড়ে। রোমেলের মন তবু বিক্ষিপ্তই আছে। এই কয়দিনে সে ঘর থেকে একদন্ডও বের হয়নি। মন ভালো করবার দাওয়াই নয়, তার ইচ্ছা হয়নি। একঘেঁয়েমীতে যদি বিক্ষিপ্ততা কমে যায়। বিষে বিষ ক্ষয়। কাজ হলোনা। কমলোনা।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ টিপটিপ বৃষ্টি পড়া দেখলো। নিচের রাস্তাগুলো ক্রমশ পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠছে। জমে স্ফীত হচ্ছে কাঁদার স্তর। মানুষের প্যান্ট উঠানোর দৈর্ঘ্য দীর্ঘতর হচ্ছে। কি ক্লান্তিকর! ভেবে রোমেল পুনরায় বিছানায় শুয়ে পড়লো। উপুড় হয়ে।

হৃদিতা, পেয়েছে কি তাকে? শেষ তাদের দেখা হয়েছিলো সপ্তাহ দুয়েক আগে। অমিতের ফ্ল্যাটে। তারা দুইজন ছাড়া আর কেউ ছিলোনা। রোমেল আর হৃদিতা। তখন বাইরে বাতাস ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চারপাশে দোল দিচ্ছে। রোদের রঙ মুছে যেতে শুরু করেছে আকাশ থেকে। নারিকেল গাছের পাতাগুলো মনোরঞ্জন করবার জন্য কাউকে না পেয়ে স্থির নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে তো দাঁড়িয়েই আছে।

“তোমার ফোনটা দাও তো।”

“উহু, প্রাইভেসী স্পয়েল করা যায়না। আমাদের মধ্যে তো কথা হইছিলো।” রোমেলের শরীরে তখনো শুধুমাত্র টাওয়েল। তার কন্ঠস্বর যতোটা ক্যাজুয়াল হওয়া সম্ভব ঠিক ততোটাই।

তারপরে আর কোন বাক্যালাপ নয়। কিছু কাটাকাটা ফেশিয়াল এক্সপ্রেশন। অমিতের ফ্ল্যাট খালি হয়ে গিয়েছিলো বিকাল চারটার মধ্যেই। হৃদিতা সেখান থেকে বাসায় যায়নি তা বিলক্ষণ জানে রোমেল। সাব্বিরের কাছে গিয়েছিলো। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য কি ঝগড়া হলেই হৃদিতা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে সাব্বিরের সাথে দেখা করে। নিজে থেকে। রোমেলও নাক টিপলে দুধ বের হওয়া বাচ্চা ছেলে নয়। নাজিয়া তার ডাকের জন্য উন্মুখই থাকে বরাবর। রোমেল সবসময় লক্ষ্য করেছে। এফোর্ট যা কিছু দিতে হয় তা অভিনয়ে। আর কন্ঠস্বরে। রোমেলের হাস্কি ভয়েজ নারীমহলে বেশ এট্রাকটিভ। তাকে আরেকটু এফোর্ট দিয়ে হাস্কিতর করা এবং ক্লান্তিকর কিছু সংলাপ- এতে কাজ হয়। গতো পাঁচদিন এভাবেই কেটে গেছে রোমেলের, নাজিয়ার সাথে।

বৃষ্টি থেমে এলে, মানুষজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাস্তায় বের হলে রোমেলও বেরিয়ে পড়ে। তাকে তখন দেখে পরিচিত কারো পক্ষে চিহ্নিত করা মুশকিল যে ছেলেটির নাম রোমেল। যার বয়স বত্রিশ, উচ্চতা পাঁচ ফুট সাড়ে নয়, ওজন সিক্সটি সেভেন কেজি। এনজিওতে ভালো বেতনের চাকরী করে। দিলদরিয়া মানুষ, সুযোগ হলেই বন্ধুবান্ধবদের পেছনে খরচ করে। নারীদের প্রতি কিশোরমনস্ক দুর্বলতা নিয়ে বেঁচে থাকতে ভালোবাসে।

টানা বৃষ্টি হবার প্রভাব কিনা কে জানে বাইরে বেরিয়ে পরিচিত রাস্তাগুলোকেই রোমেলের মনে হতে থাকে প্রথমবার মুখোমুখি হওয়া গোলকধাঁধার মতো। সে টলমল ভঙ্গিতে হাঁটতে থাকে। অল্পের জন্য একটা মাইক্রোবাসের ধাক্কা থেকে বেঁচে গেলো। রোমেলের তবুও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তার দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত। পা দুইটি তার কেঁপেই চলেছে।

নাজিয়ার মুখেই রোমেল শুনেছে সামনেই হৃদিতার বিয়ে। পাত্র সেই সাব্বির। হৃদিতা নিজের ব্যাপারে সবার কাছে যা সিক্রেট রাখে সেগুলোই আগ্রহ নিয়ে নাজিয়ার কাছে এসে বলে। কারণটা খুব জটিল কিছু নয়। রোমেলের সাথে নাজিয়াকে নিয়ে তার সন্দেহটা বহুদিনের। তাছাড়া নাজিয়া অন্যের যে কোন সিক্রেট নিজের কাছে রাখবার ব্যাপারে অত্যন্ত বিশ্বস্ত বলে হৃদিতা মনে করে। এই কথাও রোমেল নাজিয়ার কাছেই শুনেছে।

রোমেল দাঁতে দাঁত ঘষে। আমার সাথে মামদোবাজি? এতো সহজ না। ন্যুড ফটো রেখে দিছি। বিয়ের আগেরদিন সাব্বিরের নাম্বার কালেক্ট করে তার কাছে ফটোগুলা গছাইয়া দিবো। বিয়ের শখ তোর ঘুচাইয়া দিবো শালী। এবারে রোমেলের চোয়ালও শক্ত হয়ে উঠে। যারে এতো ভালোবাসি সে কিনা আমার লগে এমনে বিট্রে করে। দিমুনা, তোর বিয়ে হইতে দিমুনা।

তবে হৃদিতার বিয়ের রাতে আকাশ খুব পরিষ্কার দেখালে; তার মাঝে একটা বড় দেখতে চাঁদ উঠলে, বাতাসে চারপাশটা আগ্রহ নিয়ে দুলতে শুরু করলে রোমেল নাজিয়াকে ফোন দিয়ে অমিতের খালি ফ্ল্যাটে চলে আসবার আহ্বান জানাতে সংশয়ী হয়না। কোন উপলক্ষ্যের সাথে যেই নিমন্ত্রণ সংযোগহীন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.