নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৃতীয় চোখ

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:০১

আগুন লাগার খবর টিভিতে দেখাইলে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি। – ঋতুকে; চারপাশে মানুষজন আছে দেখে, গলা নামিয়ে বলেছিলো শামীম।

তুমি কি মানুষ? মাঝেমাঝে তোমার কথা শুনলে তাজ্জব না হয়ে পারিনা। – ঋতুর ইনস্ট্যান্ট মুখ ঝামটাতেও মুখ অন্ধকার হলোনা শামীমের।

সত্যিই, স্পটে থাকা সাংবাদিকদের গলার এক্সাইটমেন্টটা আর্টিফিশিয়াল লাগে। মনে হয় সবই টিআরপির কথা ভেবে। এখন আমার কাছে অদ্ভুত লাগলে কি করবো? তোমাকে মিথ্যা বলে তো কোন লাভ নাই। - কনফেশনে শামীমের সংকোচ বরাবরই কম।

তুমি সিনিক। পুরাপুরি সিনিক। কালকে পত্রিকায় পোড়া লাশগুলার ছবি দেখে আমার গা গুলাইয়া উঠছিলো। আমার বাপটাও আছে, তোমার মতো ক্ষ্যাপা। সকালে উঠে মাত্র নাস্তা করতে বসছি। তখনই তার খেয়াল হইলো টেবিলে এই নিয়ে হইচই বাঁধাইতে হবে। জানো, মায়ের সাথে এই নিয়ে তার তুমুল ঝগড়া হইছে। ঝগড়া চলতেছে, এমন সময়ে মা দুম করে বাবার হাত থেকে পত্রিকাটা নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। বাবা রাগের চোটে কি করবে ভেবেই কুল পায়নাই। রাগী মুখে তার ঘরে পায়চারী করছে দুপুর পর্যন্ত। কারো সাথে কোন কথা বলেনাই। আমরা সামনাসামনি হাসতেও পারিনা। বিকালে যখন রেগেমেগে মেজাজ ঠান্ডা করতে বের হইলো তখন আমি, মা আর ইতু হাসতে হাসতে অস্থির। - মনে করে আবারো হেসে ফেললো ঋতু।

এক বছর হয়ে গেছে তারা যুগল হবে। ঋতুর দিকে চোরা চোখে চেয়ে শামীম মনে মনে হিসাব করলো। মেজাজে সে বরাবরই হালকা। একটু বেশীই, যা ঋতু মনে করে। মাঝেমাঝে তুমুল লেগে যায় এই নিয়ে। বেশীরভাগ সময়ে শামীম নিজে ক্ষান্ত দেয়। কনফেশনে গিয়ে। যখন সে পরিষ্কার বোঝে ঝগড়া করবার মতো মুড সেই সময়ে তার নেই।

বাদবাকি সময়ে শামীমের জেদ দেখে ঋতু তাকে বিশেষ একটা ঘাঁটায়না। যেহেতু সেই জেদের ব্যাপারটা প্রেমিকের মধ্যে তেমন একটা সে দেখেনা। মাঝেমাঝে, যখন দীর্ঘদিন যাবত শামীম কনফেশনের মুডে থাকে- প্রেমিক তার একটু বেশীই টিমিড; আরেকটু পুরুষালী হলে ব্যাপারটা জমতো ভালো- এমন ভাবনায় ঋতু আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

তাদের দুইজনের মধ্যে একজনই আসলে কেবল অপরের কাছে সাবমিশনে আস্থা রাখে। এবং সে শামীম নয়।

ঠান্ডা মাথায়; যখন বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার অবকাশ পাওয়া যায়, তখন দুজনেই উপলব্ধি করে ঝগড়ায় আগে থেকেই হাত তুলে প্রকৃতপ্রস্তাবে শামীম নিজের অবস্থানের অনড়তাকেই মূর্ত করে তোলে।

পত্রিকায় পোড়া লাশের ছবিগুলো শামীমও দেখেছিলো। ঋতু যখন প্রসঙ্গটা উঠালো তখন খবরটা প্রথম শোনার পরে নিজের প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবছিলো সে। এই বস্তিতে আগুন লাগবার ঘটনার ফর্মুলা সম্পর্কে সে অজ্ঞাত নয়, আর আট দশজন রাজনীতি নিয়ে অযথাই চেয়ার টেবিল কাঁপিয়ে দেওয়া নাইভ মানুষজনের মতো। ফর্মুলা, সবই নিঁখুত ফর্মুলার কারসাজি। বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করাবার ইচ্ছা জেগে উঠলে; যেমনটা মাঝেমাঝে সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসলে তাকে আর ঋতুকে বায়োলজিকালীই এক হিসাবে দেখবার ইচ্ছা হয় শামীমের- তখন ফর্মুলা ইজ দা আলটিমেট ওয়ার্ড।

বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করতে চিরাচরিত আগুন লাগাবার নাটক অবলীলায় করা যায়, আনচ্যালেঞ্জডভাবে। কিন্তু শামীম ঘন হয়ে আসা সন্ধ্যায় ঋতু আর তার ইকুয়েশনের বেলাতে হাজারো রকমের ফর্মুলা খাটাতে গিয়েও ব্যর্থ ফিরে যায়। নিজের কাছে।

পরশুদিন যখন পেপারে লাশগুলো দেখছিলো সে; যাকে আগুনে পুড়ে যাওয়া কয়লার স্তুপ বললেই সৎ থাকাটা সহজতর, একটা লাশের দিকে তাকিয়ে প্রথমে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিলো শামীমের। তার মনে হয়েছিলো সেই লাশের তিনটা চোখ ছিলো। একটা কানের পাশে। শিউরে উঠে মুখের উপরে দুই হাত রাখতে যাবে- ফোন এসেছিলো, শাহরিনের। পাঁচ মাস তেরো দিন আঠারো ঘন্টা পরে।

কাকতালীয়ভাবে ঠিক তখনই ডাইরীর মধ্যভাগের পাতাটা খোলা না থাকলে এই আঙ্কিক হিসাব ঠিক ঠিক বলতে পারাটা শামীমের চৌদ্দপুরুষের পক্ষেও সম্ভব ছিলোনা। সে ফোনটা ধরেছিলো। কন্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে।

স্বামীর সাথে শাহরিনের বনিবনা হচ্ছেনা। বিয়ের আট মাস পরে এসে অনিবার্য এই সত্যটুকু শাহরিনের কাছে সত্যতা হিসাবে হাজির হয়েছে। শামীম শান্তভাবে যা শুনবার শুনেছিলো; যতোটুকু গোপনীয়তা শাহরিন তার কাছে বিসর্জন দিয়েছিলো, ঠিক ততোটুকু।

গুলশান থেকে ধানমন্ডি- অফিস আর বাসার দূরত্বটুকু নেহায়েত কম নয় শামীমের। পরদিন ঘরে ঢুকবার সময়ে যখন অনুভব করেছিলো মানুষ হয়ে জন্মাবার অসংশোধনযোগ্য অপরাধ করে বসেছে বলে বেঁচে আছে- পত্রিকা বের করে আবারো দেখেছিলো সেই ছবিটা। যার তিনটা চোখ আছে বলে ভ্রম হয়েছিলো।

ভ্রম? ভ্রমই তো নাকি সত্যতা সহকারে সত্য? এখনো শামীমের কনফিউশন যায়নি পুরাপুরি। যতোই ছবিটা দেখে সে আরো বেশী দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

দিন পনেরো পরে একদিন বিকালে; মর্মর বাতাসে যখন গোটা শহর মুখরিত- বস্তিতে আগুন লাগবার বিষয়টা ইস্যুতে প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবার পরে শামীমকে আর্জেন্ট ফোন দিয়ে আর্জেন্ট কথা আছে জানিয়ে ডেকে এনেছিলো ঋতু।

আজকে আমি কনফেস করি। তোমার কাছে- ঋতুর কন্ঠস্বর আগে কখনো এতোটা নিরীহ শোনায়নি। শামীম কিংবা ঋতু কারো কাছেই।

শামীম নীরব।

আমাকে রাসেল ভাইয়া প্রায়ই ফোন করে। গতো দুই মাস হইলো। ফেসবুকেও চ্যাটিঙে রেগুলার আমাকে নিজে থেকে নক দেয়। আমি কখনো আগে থেকে তাকে নক দেইনাই।– ঋতুর ভয়েজ কি একটু হাস্কি শোনালো? শামীম প্রমোদ গোনে।

পরশুদিন সে আমাকে রাতে ফোন দিছিলো। ধরো দুইটার সময়ে হবে। প্রথম তিনবার আমি রিসিভ করিনাই। চতুর্থবার যখন দিলো তখন রিসিভ করছি।

শামীম স্পষ্ট বুঝতে পারে আর কোন তাগাদার প্রয়োজন নেই। না মুখে, না চাউনীতে। যা বলবার ঋতু এখন নিজে থেকেই বলবে। আর্জেন্ট বলে। তবে সে যা জানেনা তা হলো কথাগুলো শুধুমাত্র ঋতুর বলাটা আর্জেন্ট। তার শোনাটা নয়।

তবুও শামীম আর্জেন্ট নয়- ঋতুর সেই কনফেশনে কোন বাধা দিলোনা।

কোন হার্ড ফিলিংস নয় এই সেটেলমেন্টে এসে পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পরে শামীমের কাছে বাতাসটা আরো বেশী মর্মর ঠেকলো। আলোটাও কি উজ্জ্বলই না দেখাচ্ছে!! আজকাল সন্ধ্যা হতে সোডিয়াম বাতির পরিবর্তে ফ্লোরোসেন্ট বাতি জ্বলে উঠে সর্বত্র। সোডিয়ামটা আর্টিফিশিয়াল হয়ে গিয়েছিলো। অতি ব্যবহারে।

আহ, অপকর্ম আর যাই করে থাকুক না থাকুক সরকার বাহাদুরেরও তৃতীয় চোখ আছে বটে। নাইলে ফ্লোরোসেন্ট বাতির জয়জয়কার কেনো?

ঠিক সেই রাতে; পরদিন অফিস ছুটির নিশ্চিন্ততাকে স্মরণে রেখে, শাহরিনকে কল করেছিলো। রাত বারোটা বাজতেই শাহরিনের স্বামী ঘুমিয়ে স্বপ্নের অর্ধেকটাও নাকি দেখে ফেলে; আট মাস যাবত পাশে শুয়ে শাহরিন এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, কথাটা জানতো শামীম। সে ফোন দিয়েছিলো একটার দিকে। সংক্ষিপ্ত আলাপে শাহরিনকে প্রেসক্রাইব করেছিলো বনিবনা না হলে স্বামীকে ছেড়ে চলে আসতে। ডিকশোনারী থেকে ডিভোর্স শব্দটার এখনো উচ্ছেদ হয়নি।

যেমনটা হয়ে থাকে নগরায়ন প্রক্রিয়া থেকে বস্তিবাসীর। তৃতীয় কোন চোখ; যতো কাল্পনিকই সে হোক, এই ক্ষেত্রে তাদের কোন সাহায্য করতে পারেনা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৪৭

নিয়াম বলেছেন: ঋতু আর সেই বড় ভাইয়ের বিষয়টা কতদূর গিয়ে ঠেকলো সেটা অনুমান করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ আগুনটা বিহারিদের ওখানে লেগেছিল সম্ভবত। এই নৃশংস রাজনীতি চলছে চলবে। ভাল লিখেছেন, শুভকামনা

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


যাদের তৃতীয় চোখ আছে, তারা চশমা কোথা থেকে কিনে?

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১৭

বিজন রয় বলেছেন: মানুষ দেখে এক, শোনে এক, আর করে এক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.