নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেতরের গল্প বাইরের গল্প

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৫২

সন্ধ্যার দিকে ফোন এসেছিলো দীপার কাছে। সায়ন্তনীর।

আজকাল রাফিন বড্ড রুঢ় আচরণ করছে- সায়ন্তনী নিজের গড়পড়তা বুদ্ধি দিয়েই তা বুঝেছে। দীপা আর রাফিন রক্তসূত্রে কাজিন। তাই দীপাকে মনে করার ব্যাপারটা এফোর্টলেস, সায়ন্তনীর।

দীপা অবসন্ন এবং ক্লান্ত- এই অবস্থাতেই ফোন ধরলো।

‘বল।’ এই একটা মাত্র সংক্ষিপ্ত শব্দ দীপা উচ্চারণ করে।

অহমিকার একটা চাদর; সবসময়ই সায়ন্তনীকে ঘিরে থাকে। সর্বত্র। অফিসে যখন পুরুষ কলিগদের সাথে হেসে হেসে কথা বলে, কোন পার্টিতে যখন নতুন কারো সাথে পরিচিত হয়, এমনকি তার এডমায়ারারদের কাছ থেকে স্তুতিবাক্য শুনে যখন তাদের এড়াতেও চায়না আবার আন্তরিকভাবে তাদের সাথে ইনভলভডও হতে পারেনা- এমন প্রতিটা পরিস্থিতিতেই সায়ন্তনী নিজের অহমিকা নিয়ে পূর্ণ সচেতন থাকে। তাই বান্ধবীর এই নিস্পৃহ ভঙ্গিমা তার অসহনীয় ঠেকে। কিন্তু এই মুহূর্তে দীপার তাকে প্রয়োজন নয়, বরং উল্টোটা।

‘কাল আসবো তোদের বাড়ির ওইদিকে। বিকালে ফ্রি আছিস?’- গলার স্বর যতোটা তার পক্ষে সম্ভব নরম করে সায়ন্তনী জিজ্ঞেস করে।

‘হ্যা। আয় তাহলে। পাঁচটার দিকে আসিস।’- দীপার কন্ঠস্বর যেনো একটু ইতিবাচক শোনালো?

‘ওকে। কালকে তাইলে পাঁচটার সময়ে দেখা হচ্ছে।’

ফোন রেখে দিয়ে দীপা অন্তর্গত ক্লান্তি নিয়েও হাসে। মনে মনে। সায়ন্তনী কি কারণে এতো আহ্লাদ করে তাকে ডেকে দেখা করতে চাইছে তার সবই সে জানে। বান্ধবীটির নাড়িনক্ষত্র তার চেনা। রাফিনের সাথে চূড়ান্ত পর্যায়ের কলহ। তার ঝাঁঝ একসময় সহ্য করতে না পারলে দীপাই তখন সায়ন্তনীর আশ্রয়াস্থল। একটা সমঝোতা- ব্যাস এতোটুকুতেই সায়ন্তনী খুশীতে ডগমগ হবে। সূক্ষ্ণ যে কোন তৃপ্তি কি আনন্দ বরাবরই সায়ন্তনীর কাছে অস্পৃশ্য। সায়ন্তনীর সাধ্যই নেই তাকে উপলব্ধি করবে। শামিতের সাথে আজকেই মৃদু ঝগড়া মতো হয়ে গেলো দীপার। তবুও এই মুহূর্তে তার বলা একটা কথা দীপার মনে পড়ে। সূক্ষ্ণ তৃপ্তি কি আনন্দ উপলব্ধি করতে যে স্থিতির প্রয়োজন তা মানুষ বলতে গেলে হারিয়েই ফেলেছে। সত্য, কথাটা নিদারুণ সত্য। তাকে সায়ন্তনীর এই দফায় অনেক প্রয়োজন পড়বে এ পরিষ্কার বুঝতে পারে দীপা। রাফিন সায়ন্তনীর কৃত অনেক কুকীর্তির কথাই জেনে গেছে। কিভাবে জেনেছে কে জানে। ভাই হলেও দীপা নিজে থেকে কিছুই বলতে যায়নি। তার রুচিতে আসেনা ওসব।

শুধু রুচিই একমাত্র অনুঘটক নয়। সায়ন্তনীর ভেতরে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো অস্তিত্বশীল অহংবোধ; যার অনেকটাই ফাঁপা বলে দীপা মনে করে, তাকে সে বরাবরই অপছন্দ করে এসেছে। যখনই তাকে প্রয়োজন পড়ে, সায়ন্তনীর- দীপা লক্ষ্য করে দেখেছে দূর্গের মতো অভেদ্য সেই অহমিকা তার সামনে তখন পেঁজো তুলোর মতো উবে যায়। নিজের কাছে মিথ্যা বলবার কোন অর্থ হয়না- সায়ন্তনীর সেই অসহায়ত্ব দীপার কাছে পরম আকাঙ্খিত। দীপা এই বিষয়ে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সংশয়হীন, অনুতাপহীন।

পরদিন বিকালে দেখা হবার পরে অনেকক্ষণ যাবত এদিক-ওদিক অনেক কথাই বললো সায়ন্তনী। দীপার বাবার শরীর কেমন, তার ছোট বোনটার পড়াশোনা ভালো হচ্ছে কিনা- এমনকি শামিতের ব্যাপারেও আগ্রহ নিয়ে অনেক কিছু খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করলো দীপাকে। দীপা গুছিয়েই সব উত্তর দিলো। সায়ন্তনীর কথা ভেবে হাসলো মনে মনে।

‘দীপা। তুই তো জানিসই সব? মানে তোর কাছে শেষবার যা যা বলছিলাম।’

‘আমাকেই তো বলছিস। আমি জানবো না তো আর কে জানবে।’ – দীপা এবারে সরব হাসি হাসে।

‘না আসলে হইছে কি- রাফিন কিভাবে কিভাবে যেনো সব জেনে গেছে। আমি জানি তুই কিছুই বলিসনাই। তোর উপরে সেই বিশ্বাস পুরাপুরি আছে আমার। আমি বুঝতেই পারতেছিনা রাফিন কিভাবে সব জানলো। গতো কয়েকদিন ধরে আমাকে যা না তাই বলে যাচ্ছে। আমি ফোন করলে ধরতেছেনা। বারবার ফোন করি। ধরেনা। একবার ধরে। দুই মিনিটের মতো কথা বলে। ব্যবহার খুবই রাফ। পরশুদিন আমাকে বাজে গালিও পর্যন্ত দিছে।………………”

গরল ঢেলে দিচ্ছে, সায়ন্তনী। প্রচন্ড একটা বাড়ি পড়েছে বটে তার বুকে। দীপা পরিষ্কার বুঝতে পারে। এই আঘাত প্রেমিকের আচরণের জন্য নয়। তাকে কেউ স্পষ্ট ভাষায় যা অনেক আগেই তার শোনার কথা ছিলো তা শুনিয়ে গেছে, অবলীলায়- সায়ন্তনীর আঘাত এই জায়গাটায়। না সে পারছে অপমান সহ্য করতে, আবার যার কাছে অপমানিত হয়েছে- সেই অপমানকে চূড়ান্ত বলে মেনে নিয়ে সরে যাবে, সায়ন্তনীর আজন্মলালিত অহংবোধ কিছুতেই তা অনুমোদন করতে পারেনা। সম্ভবই নয়।

এবারে দীপা মুখ খোলে।

‘শোন, যা হবার তা হইবোই। এতো চিন্তা করিসনা। দেখ, রাফিন কি বলে। তোর সাথে তো ওর বসতেই হবে কখনো না কখনো। এখন এইসব নিয়ে ভাবিসনা। শামিতকে ফোন দিছিলাম তুই আসবার আগে। এর মধ্যেই চলে আসবে।’

তাদের কথোপকথন আর একটু এগোতেই শামিত এসে রেস্টুরেন্টে ঢোকে।

‘কি খবর সায়ন্তনী?’ – শামিত হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে।

কিছুক্ষণ আগের অসহায়ত্ব ততোমধ্যে সায়ন্তনীর চেহারা থেকে পুরোপুরি উধাও, আপাতভাবে।

‘এইতো শামিত। তোমার কি খবর?’

‘চলতেছে আর কি। তোমার বান্ধবী থাকতে পুরাপুরি ভালো থাকা?’ শামিত ফোঁড়ন কাটে।

এরপর মসৃণগতিতে আড্ডা চলতে থাকে। সন্ধ্যা পার হয়ে প্রায় রাত হয়ে আসলে আজকের মতো উঠা দরকার- তারা প্রত্যেকেই উপলব্ধি করে।

‘শামিত, সায়ন্তনীর বাসা দিয়েই তো চলে যাবা। ওকে ড্রপ করে দিয়ে আসো।’ – দীপা বলে উঠে।

‘না না তোমার কষ্ট করতে হবেনা। আমি একলাই চলে যাবো।’- সায়ন্তনী পরিষ্কার কন্ঠে বলে।

‘আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তাই হোক। আমিও আসলে আজকে তোমার বাসা দিয়ে যাইতে পারতাম না। বাসায় যাবার আগে আমার এক বন্ধু নাফিস- তার সাথে একটু দেখা করে যাইতে হবে।’

‘না না, তুমি তোমার মতো করে চলে যাও শামিত। আমি তো একা চলাফেরা করতে অভ্যস্তই। অফিস থেকেও তো রাতেরবেলাতে একাই বাসায় ফিরি।’ – সায়ন্তনী যথারীতি সপ্রতিভ।

ভাড়া ঠিক করে রিকশায় বসবার পরে সায়ন্তনী অনুভব করলো একটা আততায়ী শীতল বাতাস; সূচের মতো তাকে বিঁধছে। আকাশে আস্ত একটা অর্ধচাঁদ, কিন্তু তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারছে কই? বাসের হইহল্লা, আশেপাশে কোথায় যেনো বিয়ে- সেখান থেকে কানে আছড়ে পড়ছে ঝিনচাক হিন্দি গানের কলি, এতোসব কোলাহলেও সায়ন্তনী নীরবতাকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে কই? তার সামান্য একটু সঙ্গ পাওয়ার জন্য কতো পুরুষ উন্মুখ থাকে। অফিসে কি যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে; সায়ন্তনী যেখানেই যায় তাকে ঘিরেই তার এডমায়ারারদের যতো আয়োজন, তাদের কথা মনে করেও সে স্বস্তি পায়না কিছুমাত্র। রাফিনের কথা সম্পূর্ণরুপে বিস্মৃত হয়, সায়ন্তনী। শামিত কিভাবে পারে বারবার তাকে এতোটা উপেক্ষা করতে- এর রহস্যোদ্ধার করতে না পারা পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারবেনা সায়ন্তনী। বাতাসটা আরো তীক্ষ্ণ হয়ে তাকে বিঁধতে শুরু করে। তার সর্বত্র জুড়ে।

নিজের ঘরে প্রবেশ করে একটু থিতু হয়ে নিয়েছে কি নেয়নি; সায়ন্তনীর ছটফটে পাংশুটে মুখ কল্পনা করে হেসে উঠলো দীপা। শামিত ঠিকই বলেছিলো। পরিকল্পনাটা তারই ছিলো। আজকে দীপার সাথে সায়ন্তনীর দেখা হবে শুনে তৎক্ষণাৎ নিজের পরিকল্পনার কথা দীপাকে জানালে সে রাজি হয়ে গিয়েছে। সায়ন্তনীর পরীক্ষা নেবেই যখন মনস্থির করেছে- চূড়ান্ত পরীক্ষাই কেনো নয়? তাকে অনেকবার বলা শামিতের একটা কথাও দীপাকে সংশয়হীন রেখেছে, সায়ন্তনী সম্পর্কে- আমাকে সন্দেহ করলে আর যার সাথে নিয়েই করোনা কেনো, সায়ন্তনীকে নিয়ে কইরোনা। শি ইজ জাস্ট নট মাই কাপ অব টি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:০৭

বাবুলবাদশাগ বলেছেন: ভাল লাগল শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.