নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কনসেশন

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২৪

সন্ধ্যাবেলাতে রেবেকাকে দেখে ফেললো সাব্বির; অপ্রত্যাশিতভাবে, যতোটা নির্জন হলে একটি সন্ধ্যাকে স্তব্ধ বলা যেতে পারে ততোটুকু স্তব্ধতার ভেতরে।

অফিস শেষে কথাই ছিলো; কেয়ার সাথে- কেয়ার অফিসের সামনে এসে দাঁড়াবে। সাব্বিরের অফিস ছুটি হয় পাঁচটা বেজে। কেয়ারটা সাড়ে পাঁচ হলে। ব্যাড ডে এট দি অফিস- কর্মস্থলে যতোটা জঘন্য সময় কাটলে একটা দিন সম্পর্কে কথাটা বলা যায় তার চাইতেও জঘন্য গেছে সাব্বিরের। মাঝেমাঝে নিজের সম্প্রতি অর্জিত ধীশক্তিসম্পন্নতা তার নিজের কাছেই বিস্ময়কর ঠেকে- ঘুষি মেরে চোয়াল ফাটিয়ে দেওয়ার প্রলোভনকে এতোটা এড়িয়ে সে যেতে পারে কি করে, তা ভেবে। শক্তপোক্ত গড়নের সাথে সাথে এংরি ইয়াংম্যান ইমেজের জন্য স্কুল থেকেই সাব্বির, বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত। স্বীয় ইমেজের সদ্বব্যবহার করতেও তার জুড়ি ছিলোনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রেম হয়েছিলো পাঁচটা। তিনটা প্রেম এসেছিলো- সাব্বির এখনো কড়ে গুনে বলে দিতে পারে; অপরপক্ষ তার মাস্তানীতে শিল্প খুঁজে পাওয়ার তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তির অধিকারিণী ছিলো বলে।

কেয়া অফিস ছুটির পরেও ইদানিং নামতে বেশ দেরী করে। কেনো, সাব্বিরের তা জানা। আসন্ন প্রমোশনের জন্য কেয়ার ইমিডিয়েট বস; সদ্যই সেপারেশনের মুখ দেখবার কারণে ম্যারিটাল স্ট্যাটাসে যাকে নতুন করে ডিভোর্সড লিখতে হচ্ছে, সেই মিঃ মোশাররফকে নিয়মিত কেয়ার ভজিয়ে যেতে হচ্ছে। স্থূল শরীরী সমীকরণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে যেভাবে ম্যানেজ করে পদন্নোতি হাসিল করা যেতে পারে- কেয়া এভাবে ভেবে থাকে। ম্যানেজ- ভালগার একটা শব্দ। অনেকবার বলার পরেও সাব্বির শব্দটি ব্যবহার করে থাকে, সে আনন্দ পায় বলে। যেই আনন্দের কেন্দ্রস্থলে বসে আছে তার মুখ থেকে শব্দটি শোনার পরে কেয়ার কপট বিরক্তিতে কুঁচকে যাওয়া মুখ।

কফিশপ নাকি রাস্তার ধারে একসাথে হাঁটা? রেগুলেটরী সেলফির আপলোডিঙে একগুচ্ছ কৃত্রিম ক্লিশে প্রশংসায় স্নাত হওয়া নাকি পরস্পরের হাতে চাপ দিলে এখনো উষ্ণতা অনুভূত হয় কিনা তা পরখ করা? ডাইলেমা শেষে সাব্যস্ত হয়েছিলো দুটাই। কিছুক্ষণ খোলা রাস্তায় একসাথে হাঁটা। জানুয়ারী মাসের প্রথমভাগ- সাব্বির বা কেয়ার কারোরই ডাস্ট এলার্জি নেই, কাজেই ধুলোকে তুড়ি মেরে ফাঁকা রাস্তায় হেঁটে বেড়াবে দুইজনে। তারপরে চলে যাবে আশেপাশের কোন একটা কফিশপে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সাথে পাল্লা দিয়ে শহরে বেড়ে চলেছে কফিশপ- পর্যবেক্ষণ করেছে সাব্বির।

‘তোমার প্রমোশনের খবর কি?’- ধুলোর আছড়ে পড়া থেকে নিজের মুখকে বাঁচাতে বাঁচাতে প্রশ্নটা করেই ফেললো সাব্বির। সে ভেবে রেখেছিলো প্রশ্নটা, করবেনা। টপিকটা এড়িয়ে যাবে। সদ্যই তালাকপ্রাপ্ত মিডলএজড মিঃ মোশাররফ নিয়ে যা কিছু আছে চিন্তা করবার, কেয়াই চিন্তা করুক না। হোয়াই হি?

‘যেমন ছিলো তেমনই। নাথিং নিউ। মিঃ বোস আর তাইমুর- এই দুইজন আমার পিছনে উঠে পড়ে লাগছে, জানো? আজকে অফিসে এসে রুমে ঢুকবার আগে আমার দিকে কিভাবে তাকাইলো দুইজনে, বিশ্রী। আমার ধারণা আইরেপ ছিলো।’ – কেয়ার মুখে স্পষ্ট অসন্তোষ; চক্ষুবলাৎকারের দৃশ্য কল্পনায়।

‘আচ্ছা বাদ দাও এইসব।’ – বলেই মনে হলো সাব্বিরের, টপিকটা তো গাড়লের মতো সে নিজেই টেনে এনেছে। কেয়াকে উপদেশ দিচ্ছে কোন যুক্তিতে?

সাব্বিরের অন্তর্গত কিছু ছেলেমানুষী অপ্রতিভতা; যাকে খানিকটা ব্রীড়াও বলা যেতে পারে- কেয়ার কাছে বরাবরই উপভোগ্য। সাব্বিরের মুখের দিকে তাকাতেই সে হেসে ফেললো। তারা দুই বছর ধরে প্রেম করছে। সামনের জুন মাসে বিয়েটাও সেরে ফেলবে। প্রথম প্রথম সাব্বিরকে যখন দেখেছিলো; কেয়ার কাছে অকল্পনীয় ছিলো, এমন কাউকে বিয়ে করা দূর কি বাত প্রেমও বুঝি করা যেতে পারে, সেই সম্ভাব্যতা। দুই বছর পরে সেই মানুষের অপ্রতিভতা দেখেই কেয়া হেসে ফেলতে পারে- নিঃসন্দেহে সুরিয়াল।

হাস্যমুখী কেয়ার থেকে দৃষ্টি সরাতে সরাতে একটা কালো গাড়ির থেকে চোখ চলে গেলো সাব্বিরের। দেখলো গাড়িটা থেমে আছে- একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক তার বনেট খুলে যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা শুরু করলো। গাড়িটার আশেপাশে অন্য কোন মানুষ দেখা যাচ্ছেনা। এই সময়টায় কতো স্ট্রিট প্যাসেঞ্জারদের দেখা যায় রাস্তায়, এখন কেউই নেই। গাড়ির দরজা খুলে; সাব্বিরের দৃষ্টিসীমাকে হকচকিত করে বের হয়ে আসলো রেবেকা। সাদা-কালো শাড়িতে। দূরত্ব খুব বেশী নয় এখান থেকে গাড়ির- রেবেকাকে জরিপ করতে উন্মুখ সাব্বিরের মনে হলো। যতোটুকু দেখে নিতে পারে এর মাঝেই; যার পরে বর্তমান থাকতে পারেনা নিঁখুত বর্তমানে কিংবা অতীত নিঁখুত অতীতে- সাব্বিরের মনে হলো তার হিসাবে বড় একটা গোলমাল হয়ে গেছে। তখন বড্ড টানাটানি যাচ্ছিলো সাব্বিরের। চাকরী পাবে কি পাবেনা, নিদারুণ অস্তিত্ব সংকট। ভায়াবল অপশন হিসাবে, সেই সময়ে, যে কোন বিচারে তার মতোই বেকার বসে থাকা রেবেকার চাইতে ক্যারিয়ারিস্ট কেয়া শ্রেয়তর। সাব্বির হাজারটা হিসাব নিকাশ শেষে রেবেকার হাত ছেড়ে কেয়ার হাত ধরেছিলো। সেই সিদ্ধান্তের ফলে কি কনসেশন তাকে দিতে হয়েছে- বুঝতে পারলো সাব্বির, মাত্র।

সাব্বির আজকাল হাত রাখলেও কেয়ার কোমরের নাগাল ঠিকভাবে পায়না- দিয়ে ফেলা কনসেশন সম্পর্কে মানুষের চোখ একবার খুলে গেলে সে আবিষ্কার করে একের পর এক দিয়ে যাওয়া কনসেশন সম্পর্কে উপলব্ধি ক্রমশ স্বচ্ছতর হচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.