নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেভাবে শীতের সন্ধ্যা কেটে যায়

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১০

হাঁটতে হাঁটতে যখন মনে হলো জিগাতলায় হাঁটা হয়না বহু বছর হয়ে গেছে; আজকে, এখন সেইদিকে যাই হাঁটতে তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরা ক্রমশই ব্যস্ততর হয়ে উঠছে। শীতের সময়- দ্রুত বাসায় পৌঁছাবার তাড়না হিসাবে এটা কি হতে পারে সম্ভাব্য একটা কারণ? স্বগতোক্তি করতে যাবো– আমি জানিনা এমন সময়ে জিগাতলার চৌরাস্তা আমাকে সচকিত করে তুললো, বরাবরের মতো। এক রিকশার ধাক্কা খেয়ে কোমরের ডান দিকটা সম্ভবত একটু ছিলে গেছে। কোমরে হাত না দিয়েও আমি পরিষ্কার বুঝতে পারি। জনৈক রিকশাওয়ালাকে গালাগাল করা অর্থহীন। জিগাতলার এই চৌরাস্তার মোড় আমার সবচাইতে অপছন্দের চৌরাস্তার মোড়ের মধ্যে দুই নাম্বারে। এক নাম্বারে আছে নীলক্ষেত মোড়ের চৌরাস্তা। জিগাতলার এই চৌরাস্তার মোড়ে আসলে রিকশা কি মানুষ কি সিএনজি- কিছু না কিছুর সাথে ধাক্কা আমার লাগে। এটা অবধারিত। রিকশার সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর আমি সন্তর্পণে জ্যাম এড়িয়ে ভেতরের রাস্তায় প্রবেশ করি।

আমি খুব কম সময়েই নিবিড়ভাবে কিছু পর্যবেক্ষণ করে থাকি। ইংরেজীতে যাকে বলে glance আমার আগ্রহ সেটাতেই। ইংরেজীতে যাকে বলা হয় look, সেটা আমার সচরাচর তেমন একটা হয়ে থাকেনা। যদিও নিবিড় নয় তবুও জিগাতলা বছরে বছরে ভালো বদলে গেছে- শীতের এই গতানুগতিক এক সন্ধ্যায় ভাসাভাসা পর্যবেক্ষণেই আমি এই সত্য আবিষ্কার করতে পারি। কয়েক বছর আগেও জিগাতলায় এতো নিয়মিত যাওয়া আসা হতো যে পরিবর্তনটা না চাইতেও চোখে পড়বার মতোই। চারপাশে আলো অনেকগুণে বেড়েছে। য়াগে যেমন সন্ধ্যা হলে যেই অন্ধকারের মধ্যে সুনামি রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতে পারতাম এখন আর তার উপায় নেই। বর্তমানে সেখানে ঢুকবার আগে চারপাশের চোখ ধাঁধানো আর্টিফিশিয়াল আরবান আলোয় স্নাত হয়ে তবেই ঢুকতে হবে। আমি সুনামি অতিক্রম করে আরো সামনে এগিয়ে যাই। মানুষে গিজগিজ করছে জিগাতলা। পোস্টঅফিসের সামনে যেই বড় এপার্টমেন্ট আছে তা বিয়ের সজ্জায় সজ্জিত। চার রঙের লাইটিঙে এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এখানে একটা বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুনামি থেকে ফুটপাথ বরাবর সোজা হেঁটে গেলে মিষ্টির দোকান। তার আশেপাশে অনেকগুলো ফ্লেক্সির দোকান গড়ে উঠেছে। সেই রাস্তা ধরে অর্থাৎ গাবতলা মসজিদ বরাবর এগিয়ে গেলে আরবান আলোতে অভ্যস্ত চোখজোড়াতেও এক ধরণের সংশয় নেমে আসে। এই তীব্র আলোয় আলোকিত জিগাতলাই কি বর্তমানের বাস্তব জিগাতলা? নাকি সবসময়ই তা এতোটা উজ্জ্বলতা নিয়ে বহাল তবিয়তে ছিলো- কেবল আমারই তা নজর এড়িয়ে গেছে? যেহেতু আমি ইংরেজীতে যাকে বলে glance, বরাবর তাতেই অভ্যস্ত তাই এই সম্ভাব্যতাকে উড়িয়ে দেওয়ার তো উপায় নেই।

কয়েক বছর আগেও কলেজের বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলে জিগাতলার অলিগলি ঘোরা হতো আমার। তাদের বাসাও জিগাতলার আশেপাশেই। কারো পোস্টঅফিসের সামনে, কারো গাবতলার মসজিদ বরাবর সোজা যেই বৃহৎ রাস্তা সেখানে। সেই বছরের বিকাল কি সন্ধ্যাগুলো আমি জিগাতলা ছাড়া অন্য কোন জায়গা কল্পনাই করতেই পারতাম না। তাদের সাথে যোগাযোগ আগের মতো নেই- এমন হলেও সান্ত্বনার জায়গা অবশিষ্ট থাকতো। পরিস্থিতি তার চাইতেও খারাপ। সেই বন্ধুদের জগতের কোথাও আমি আর বর্তমান নই। আমার জীবনেও তারা শুধুমাত্র অতীত- এই সত্য বহু পুরনো হয়ে গেছে।

অতীত-বর্তমানের এই সিলসিলা সংক্রান্ত ভাবনা আমার দ্রুতই শেষ হয়। আমি দেখি গাবতলা মসজিদ থেকে ডানে যেই সরু রাস্তাটি আছে সেখানে আমি প্রবেশ করে গেছি। সন্ধ্যা বেশ ঘন হয়ে এসেছে। এই রাস্তাটা পাতি মাস্তানদের জন্য সন্ধ্যাবেলায় আদর্শ। অনেকেই শুনলে নাউজুবিল্লাহ বলে কানে হাত দিতে পারেন তবে আমার পর্যবেক্ষণ হলো একটা এলাকা কতোটা বদলেছে কিংবা কতোটা নস্টালজিয়া ধারণ করতে পারে তা মোটামুটি ভালো আন্দাজ করা যায় সেই এলাকার পাতি মাস্তানদের দেখলে। যাদের এই মুহূর্তে আমি দেখছি তাদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত বলে মনে হচ্ছে। সম্ভবত তারা নব্য পাতিমাস্তান। বছর কয়েক আগেও পরিচিত যাদের দেখতাম তাদের চলাফেরাই ছিলো অন্যরকম।

পাতিমাস্তান সংক্রান্ত ভাবনার সাথে সাথে সরু রাস্তাটিকেও পেছনে ফিরে যখন শেষ মাথায় চলে আসলাম দেখতে পেলাম আমি চমৎকার এক শর্টকাট ব্যবহার করে সাত মসজিদ রোডের বিপরীত দিকে চলে এসেছি। চোখ বরাবর কেন্টাকী নামক অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রলোক হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার উপরে বড় করে ইংরেজীতে লেখা KFC। আমার মনে পড়লো মাঝেমাঝে জিগাতলার চৌরাস্তা দিয়ে সাত মসজিদ রোডে যেতে ইচ্ছা না করলে এই শর্টকাট রাস্তাটা আমি ব্যবহার করতাম। অনেকদিন না আসবার কারণে ভুলেই গেছি- নিজেকে ডিফেন্ড করবার জন্য তড়িৎ যুক্তি বের করাতে আমার জুড়ি মেলা ভার এই কথাটা জীবনে অসংখ্যবার শুনেছি। একটা দীর্ঘসময় কথাটাকে কমপ্লিমেন্ট হিসাবে গ্রহণ করতাম। যখন ধীরে ধীরে উপলব্ধি হলো অনেক কথাই কমপ্লিমেন্টের ছদ্মবেশ ধরে ফাঁকির জায়গাগুলো চিনতে শেখায় তখন বুঝতে পারলাম নিজেকে ডিফেন্ড করবার তাড়না অনুভূত হওয়ার অসহায়ত্ব অন্যদের চাইতে আমার অনেক বেশী। আমার মাঝেমাঝে ইচ্ছা হয় কারো সাথে আলাপ করি- মানুষ কি আমৃত্যুই নিজেকে ডিফেন্ড করতে ভালোবাসে কিনা এই নিয়ে। কিন্তু কার সাথে করা যায়- এই অনর্থক দ্বিধা আমাকে সেই আলাপে যাওয়ার ক্ষেত্রে অকর্মন্য করে রেখেছে, আজঅবধি।

আমি রাস্তা পার হই। সোজা বরাবর হেঁটে গেলে রবীন্দ্রসরোবর। যেহেতু শীতকালের সন্ধ্যা তাই খুব ভালো সম্ভাবনা আছে শিমুল মোস্তফার কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান সেখানে হতে পারে। এই সম্ভবপরতার কথা চিন্তা করতেই আমি শিউরে উঠি। শীত আমার শরীরে এই প্রথম জাঁকিয়ে বসে। আমার মনে পড়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি থেকে কিছুদূর সামনে গেলেই একটা মাঠ আছে যেখানে সান্ধ্যকালীন আলোতে ক্রিকেট প্র্যাকটিস হয়- সেটা দেখা যেতে পারে। আবাহনী মাঠে ছেলেপেলেদের ক্রিকেট প্র্যাকটিস দেখাটা বড্ড জোলো হয়ে গেছে। নিরাসক্ত প্রাণহীন ছেলেদেরকে ঘিরে তাদের ক্রিকেট না বোঝা উচ্চাকাঙ্খী মায়েরা লোভী চোখ নিয়ে বসে আছে- এই দৃশ্য দেখতে দেখতে অনেকদিন হলো আবাহনী মাঠে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি।

আমি জাহাজ বাড়ির বিপরীত দিকে যেই ব্রিজটি আছে সেখানে উঠি, হাঁটতে হাঁটতে। আজকে দেখছি জায়গাটিতে ভিড় বেশ কম। খুব সম্ভবত আমরাই শেষ প্রজন্ম যারা জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের সামনের নেসক্যাফে কি এখানে- এইসব জায়গায় বন্ধুবান্ধব কি প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে নিয়মিত এসেছি; এই ভাবনাটা আমাকে তাৎপর্য্যহীন এক গর্বে গর্বিত করে। আমি মাত্র ব্রিজটি পেরিয়ে যাবো তখন ফিসফিস স্বরে কিছু কথা শুনি।

‘এইসব কি করো? কেউ আইসা পড়লে?’

‘কে আইবো? দেখতেছো না মানুষজন নাই, ফাঁকা? আর তুমি কিন্তু কইছিলা সোনিয়ার সাথে যদি সব কনটাক্ট অফ কইরা দেই তাইলে তুমি আমারে বাধা দিতে পারবানা। আমি তোমার সাথে যা করতে চাই আমারে করতে দিবা।’

প্রেম-ভালোবাসায় বাণিজ্যচিন্তার একদা অভাবনীয় এই প্রসারে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। ছেলেটা, গলার স্বরে অনুমান করি সদ্য তরুণ হবে- তীব্র অধিকারসচেতন বলে মনে হচ্ছে। প্রতিবাদী জনতার প্রতিবাদ রাজনৈতিক পরিসরকে ছেড়ে ব্যক্তিগত পরিসরে চলে এসেছে- ফেনোমেনা হিসাবে এর গুরুত্ব ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এইসব ছোটখাটো সামাজিক রুপান্তরের বিষয়াবলী আমাকে বরাবরই আকৃষ্ট করে। কিন্তু এই মুহূর্তে এখানে আমার যুক্ত হবার কোন সম্ভাবনা নেই- যুক্তিতাড়িত এই ভাবনা আমার ঔচিত্যবোধকে প্রগাঢ় করলে আমি প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি পেরিয়ে অবশেষে মাঠটির সামনে এসে দাঁড়াই।

মাঠের বাইরে আমি এই মুহূর্তে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখছিনা। শীতের সময়ে শীতকালীন পিঠা, চটপটি-ফুচকার দোকানে মানুষজনের ভিড়ে জায়গাটি গমগম করতো। আজকে তার কিছুই দেখছিনা। চারপাশের স্ট্রিটবাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। সেই আলোতে মাঠে প্র্যাকটিস করা অধিক সহজতর। আমি মাঠে কতোজন আছে তা গুনে ফেলি। আঠারোজন।

একটু কাছে গিয়ে দাঁড়াই। দেখতে সুবিধা হবে তাইলে। একটা ছেলে মাত্রই নেটে প্রবেশ করে। ব্যাট করতে। অভিজ্ঞতা থেকে জানি দুই কি তিন রাউন্ডের বেশী খেলবার সুযোগ কেউ পায়না। ছেলেটার স্ট্যান্সের দিকে লক্ষ্য করি। হ্যা, স্টাইলিশ। ব্যাকলিফটটাও বেশ উঁচু। প্রথম বলটা ফ্রন্টফুটে সে নিঁখুত ড্রাইভ করলো। কভার আর মিডঅফ বরাবর। যদিও এখন নেটে ব্যাট করছে তবে মাঠে এই শট খেললে বাউন্ডারী হতো নিশ্চিতভাবেই। ব্যাটসম্যানের টেকনিক ভালো। আমি বিড়বিড় করে বলে উঠি। পরের বল, গুডলেংথ ডেলিভারী। হঠাৎ করে ব্যাটসম্যানের সামনে লাফিয়ে উঠলো যেনো। লিভ করাই উত্তম। কিন্তু ব্যাটসম্যান তা করেনা। খোঁচা দেয়। ম্যাচ হয়ে থাকলে বল চলে যেতো সোজা স্লিপকর্ডন বরাবর। রেগুলেশন। কার্ল হুপার সিনড্রোম নাকি? ব্যাটসম্যানের প্রতি প্রথম ইম্প্রেশনে জেগে উঠা মুগ্ধতার কারণে আমি তার উপরে ক্ষেপে উঠি। হুপার আমার খুব প্রিয় ব্যাটসম্যান ছিলো। এতো ম্যাজেস্টিক ছিলো!! কিন্তু বড্ড হতাশ করতো। নিজের অফুরন্ত পটেনশিয়ালকে পূর্ণ রুপ দিতে পারলোনা। এই ব্যাটসম্যানও মনে হচ্ছে সেই গোত্রেরই কেউ।

হুপারের কথা স্মরণ করতে করতে আমি শ্যাডো করে ফেলি- অসচেতনভাবেই। বিড়বিড় করে হতাশাজ্ঞাপন করি। তখনই হঠাৎ চারপাশকে চমকে দিয়ে বজ্রকন্ঠ ভেসে আসছে টের পাই।

‘এই যে, আপনি- এইদিকে আসেন।’

আমি জমে যাই, আশঙ্কায়। এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে কখন সামান্য দূরে পুলিশ এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পাইনি।

আমি পুলিশের দিকে এগিয়ে যাই। মোট তিনজন।

‘এখানে কি করেন?’

‘মাঠের খেলা দেখি।’

‘খেলা দেখেন তো বিড়বিড় করে কি বলতেছিলেন? হাতও নাড়লেন দেখলাম।’

যা করছিলাম তা বলতে যাবো- মনে হলো কোন মানে হয়না। আমি ক্রিকেট প্র্যাকটিস দেখতে দেখতে নিজেও ইনভল্ভড হয়ে যাই- এই দার্শনিকবোধের সাথে পুলিশকে পরিচিত করতে চেষ্টা করা মানেই যতোটুকু ঝামেলা তৈরী হয়েছে তাকে আরো বাড়িয়ে তোলা।

আমার অপরাধী মুখে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে পুলিশবাহিনীর অথোরিটারিয়ান মনোভাব আরো সাবলীল হয়ে উঠে।

‘আপনি কি করেন?’ – এই সহজ স্বাভাবিক প্রশ্নটিও পুলিশ কর্তৃত্বের সুরে আমার দিকে ছুঁড়ে দেয়।

‘স্টুডেন্ট।’

‘কই পড়াশোনা করেন?’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাস্টার্স করছি।’

‘আইডি কার্ড দেখি।’

আমি বাইরে বের হলে সবসময় পকেটে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড আর ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে বের হই। স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বের করে তাদের দেখাই।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট আপনি। আপনার পরিবার, দেশের মানুষ আপনাদের কাছ থেকে কতো আশা করে। আর আপনারা……’ – শীতের সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে ক্রিকেট খেলা দেখবার কারণেই আমার কাছ থেকে জাতির আর কিছু প্রত্যাশা করা উচিত না এমনটা মনে করেই কিনা কে জানে তারা আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করবার প্রয়োজন অনুভব করেনা। আমি মাঠের ভেতরে কি হচ্ছে তা দেখবার পরিবর্তে তাদের ধীরপায়ে হেঁটে চলে যাওয়া দেখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের শিক্ষার্থী হবার গর্ব আমাকে কখনো তেমন একটা স্পর্শ করেনি। তবে মনে হলো হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেই পুলিশবাহিনী কর্তৃক কোন বিড়ম্বনার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে গেলাম।

ঠিক তখনই গাছের পাতার ফাঁকে চাঁদটা স্পষ্ট হয়ে আমার চোখের সামনে চলে আসে।


‘উঠবিনা? সেই কখন থেকে ঘুমাচ্ছিস। দুপুর তো শেষ হয়ে আসলো।’- আমার সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বাবার কন্ঠ কখনোই তেমন উঁচুতে উঠেনা। তবুও সেই ডাকে সবসময়েই আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমারও ভেঙ্গে গেলো।

ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি তিনটা বেজে গেছে। মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হবার পর দ্রুত খেতে শুরু করি। দশ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করে গোসলে ঢুকে যাই। যখন বের হই তখন শরীর খুব ঝরঝরে লাগতে থাকে। হাঁটতে বের হবার জন্য আমি সম্পূর্ণ তৈরী।

‘কোথায় যাচ্ছিস?’

‘হাঁটতে।’- আমি স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দেই।

‘আশেপাশে?’- বাবার তড়িৎ প্রশ্ন।

আমি তো জানি আমি কোথায় যাচ্ছি। প্রথমে সিটি কলেজের রাস্তাটা। সেখান থেকে রাইফেলস স্কোয়ার। তারপর সন্ধ্যা হয়ে এসে জিগাতলায় প্রবেশ করবো। দীর্ঘদিনের চেনা জিগাতলা বদলে গেছে- এই উপলব্ধিকে সঙ্গী করে শর্টকাটের ব্যবহারে চলে আসবো সাত মসজিদ রোডের বিপরীতে। তারপর রাস্তা পার হয়ে শিমুল মোস্তফার আবৃত্তির অনুষ্ঠান হতে পারে- এই সম্ভাব্যতার কথা মাথায় রেখে রবীন্দ্রসরোবর এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে চলে আসবো। তারপর সেখানে মুখোমুখি হবো অনস্বীকার্য কর্তৃত্বে্র। সেই প্রহর কেটে গেলে তবেই আমার চোখের সামনে চাঁদ নেমে আসবে।

‘হ্যা আশেপাশেই হাঁটবো। আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো, মাকে বলে দিও।’ বাবার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে আমি দরজা খুলি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০১

বিজন রয় বলেছেন: ইংরেজীতে যাকে বলে glance আমার আগ্রহ সেটাতেই। ইংরেজীতে যাকে বলা হয় look, সেটা আমার সচরাচর তেমন একটা হয়ে থাকেনা।

মনে রাখার মতো কথাবার্তা।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৮

অশ্রুত প্রহর বলেছেন: ভালই লিখেছেন ভাই। :)

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: এখন সময় নেই পরে পড়ে নিবো।

প্রিয়তে রেখে দিলাম।

শুভেচ্ছা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.