নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচার বহির্ভূত সময়ে একটি এন্টি-ফ্যাসিস্ট গল্প

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩৩

খবরটা শোনা মাত্রই বুঝে যাই আমাকে শান্ত থাকতে হবে। নাইলে তুষারকে অভয় দেওয়াটা সম্ভবপর হবেনা। এই মুহূর্তে তুষারের যা দরকার তা হলো একজন কুল হেডেড অবিচলিত সিনিয়র ফিগার। যে কিনা ধীরস্থির ভঙ্গিতে সাবলীলভাবে তার পাশে দাঁড়াতে পারে।

তুষার বয়সে আমার থেকে ছয় বছরের ছোট। সবেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করেছে। অসাধারণ মেধাবী ছেলে। যদিও তার অসাধারণত্ব তার পাশে দাঁড়াবার ব্যাপারে আমাকে প্ররোচিত করেনি। তার কাছে যখন ঘটনাটা শুনলাম তখন সাথে সাথে মনে হয়েছে যে পরিস্থিতি ট্যাকল দিতে হলে তুষারকে, তার ঘনিষ্ঠজনদের আইস কুল থাকতে হবে। নয়তো সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠবে। এক অপ্রত্যাশিত গহ্বরের মুখে পরে তুষারের জীবন হয়ে উঠতে পারে চিরকালের জন্য বিপন্ন।

ঘটনাটা হলো চার মাস হলো নীনার সাথে তুষারের সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছে। নীনা তুষারের ক্লাসমেট ছিলো। একই কলেজে পড়তো দুইজনে। তবে তাদের সম্পর্কের সূত্রপাত স্কুল থেকে। তারা যখন ক্লাস টেনে তখন থেকে। বেশ আগে থেকেই তুষারের কাছে শুনতাম যে তাদের মাঝে ঝগড়াঝাটি নিয়মিত লেগেই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ঠিক এক মাস আগে তারা মিউচুয়ালী সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা সম্পর্কটি আর রাখবেনা। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তারা একে অপরের জীবন থেকে দূরে সরে গিয়েছিলো। যেহেতু সম্পর্কচ্ছেদের ব্যাপারটা মিউচুয়াল তাই একে অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখবার ব্যাপারে তাদের কারোরই কোন আপত্তি ছিলোনা। ফলশ্রুতিতে নিয়মিত একে অপরের খোঁজখবর রাখবার ব্যাপারে তারা অলিখিতভাবেই কমিটেড ছিলো।

কিন্তু তুষারের মারফতে জানা গেলো সম্প্রতি নীনা নাকি র্যা ব অফিসের কাছে অফিশিয়ালী তুষারের নামে কমপ্লেইন করেছে। ফোনে এবং ফেসবুকে হ্যারাসমেন্টের। পরশুদিন তুষার দুপুরবেলায় ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরবে ভাবছিলো সেই সময়ে তুষারের কাছে আননোন নাম্বারে ফোন আছে।

‘হ্যালো’

‘হ্যালো আপনার নাম কি তুষার?’

‘হ্যা, আপনি কে বলছেন প্লিজ?’

‘আমি র্যা ব অফিস থেকে বলছি। নীনা নামের কোন মেয়েকে কি আপনি চিনেন?’

তুষার গড়গড় করে আমাকে বলে যায় র্যা বের অফিসার আর তার কথোপকথন। জানতে পারলাম নীনা নাকি র্যা বের সেই অফিসারের কাছে বানিয়ে বানিয়ে এও বলেছে যে তুষার ওকে ব্ল্যাকমেইল করছে। তাদের একান্তই গোপন কিছু ছবি নেটে ছেড়ে দিবে- র্যা বের অফিসারের কাছে প্রাক্তন প্রেমিকের নামে এই লেভেলের মিথ্যা এলিগেশন করতে নীনা দ্বিতীয়বার চিন্তা করেনি।

তুষারের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ সুস্পষ্ট। মানুষের শরীরী অঙ্গভঙ্গির পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণে আমার কোনকালেই দক্ষতা ছিলোনা। কিন্তু আমি পরিষ্কার বুঝতে পারি রাতে ঘুমাতে গেলেই তুষার স্বপ্ন দেখে অন্ধকার নিশুতি রাতে জনমানবহীন, গাছের একটা পাতাও নড়েনা এরকম গুমোট আবহাওয়ায় কালো পোশাক পরিহিত একাধিক শরীরের ভিড়ে তার স্বপ্নবাস্তব একাকার হয়ে যাচ্ছে- তুষার চারিদিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে চাইছে অনেককিছু, কিন্তু বলতে পারছেনা কিছুই; একটা কুকুর একবার ডেকেই নীরব হয়ে গেলো। তুষারের মাথার উপরে ঠেকানো বন্দুক এবারে তুষারের বুকের ঠিক উপরে। দশাসই শরীরের একজন সানগ্লাস খুলে তুষারের দিকে স্পষ্ট চোখে তাকিয়ে তর্জনী তুলে ইশারা করতেই ঠা ঠা শব্দে তুষারের হৃৎপিন্ড ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে। তখন আকাশে হয়তো কিছু বাদুড় ঘোরাঘুরি করে থাকবে। তারা সাঁই সাঁই পালাবে হৃৎপিন্ড বিদীর্ণ করা সেই আওয়াজে। তুষার যা বলতে চাইছিলো, যা ছিলো সমগ্র পৃথিবীর প্রতি তুষারের অভিযোগ তার কিছুই সে জানিয়ে যেতে পারবেনা। অশ্রুত একগুচ্ছ ক্ষোভে পরিপূর্ণ বাক্যমালাকে সঙ্গী করে তুষারের নিথর শরীর পড়ে থাকবে ফুটপাথের এক কোনায়। তুষার সেই স্বপ্ন দেখে ধড়মড় করে উঠে বসবে। পাশের বেডসাইড টেবিলে সবসময় এক গ্লাস পানি থাকে। তুষারের মা ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুত্রের ঘরে এসে রেখে যান। তুষার ঢকঢক করে সেই গ্লাস শেষ করেও তৃষ্ণার্ত অনুভব করবে। তারপর পা টিপে টিপে যাবে ডাইনিং টেবিলে। যেনো পায়ের সামান্য আওয়াজ হলেই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে জনমানবহীন সেই রাস্তায়- যেখানে তুষার তার সমস্ত অভিযোগসমেত নির্বাক হয়ে অনিবার্যতাকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হবে।

আমি জানি এমন সময়ে মানুষ সবসময় তার পাশে শক্তসমর্থ দৃঢ়চেতা অস্তিত্বের সন্ধান করে। তুষারের অন্তর্গত সকল আতঙ্ক ও বিষাদকে বুঝে নিয়ে আমি তাকে পরামর্শ দেই। সে আগে নীনার সাথে যোগাযোগ করুক। তার সাথে খোলাখুলি কথা বলে জানতে চাক তুষারকে এই ভয়াবহতার মধ্যে ঠেলে দিয়ে নীনার কোন স্বার্থ হাসিল হবে।

তুষার আমার পরামর্শে আশ্বস্ত হয়। শক্তসমর্থ যেই মানুষের উপস্থিতি তার কাম্য ছিলো, এমন পরিস্থিতিতে- আমার কাছ থেকে সেই কুল হেডেড ফিগারের প্রেজেন্স তাকে অভয় দিতে সক্ষম হয়। অনুমান করি একটা দীর্ঘসময় পরে সে বুকে শান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরে। আমি রাস্তায় হাঁটতে বেরোই। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছাই আমার প্রিয় রাস্তাটায়। সন্ধ্যা হতে যেখানে রাজ্যের অন্ধকার নামে। আশেপাশে মানুষ দেখা যায়না তেমন একটা। যেই রাস্তায় বাবা মা তাদের সন্তানদের সন্ধ্যা নেমে আসলে হাঁটতে বারণ করে। যেই রাস্তায় গাছগাছালী আছে, কিন্তু তাদের স্পন্দনের আওয়াজ শোনা যায়না। আমি চক্রাকারে রাস্তাটিকে ঘিরে হাঁটি। আমার মনে হতে থাকে এখনই তো রাস্তাটা প্রায় নির্জন- একটা আলপিন পড়লেও বুঝি চমকে উঠবো। আমি হাঁটতে হাঁটতে অনুভব করি কালো পোশাকের কিছু শরীরও আমার সাথে সাথে চলছে। তাদের সম্পূর্ণ দখল আমার মস্তিষ্কে।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সায়ন্তনীর বারোটা মিসকল। আমি নিজের কপাল চাপড়াই। দুইটা মিসকল হলেই তার আষাড় মাসের মুখের সাথে আমি সুপরিচিত। সেখানে বারোটা মিসকল- সম্ভাব্য পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে কল রিসিভ করে সে হ্যালো বলতে না বলতেই পরপর কয়েকবার সরি আওড়াই তোতা পাখির মতো। রাগত থাকলেও তা কিছুটা স্তিমিত হয়েছে আমি বুঝে যাই। সেই রাগ আরো স্তিমিত করতে তাকে আজকের দুপুরে নিজের ব্যস্ততার কথা জানাই। কাঁচুমাচু গলায়। সায়ন্তনী এবারে ঠান্ডা হয়। আমি তাকে কথা দেই দুপুরের কাজ সেরে বিকালে তার বাসার কাছাকাছি জোনাকী সুপারস্টোরের সামনে দাঁড়াবো। সেখান থেকে বসুন্ধরা সিটিতে যাওয়া হবে। সায়ন্তনী বোনের মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে কি জানি উপহার কিনবে। তার সাথে মার্কেটের বিরক্তিকর ঘোরাঘুরি হাসিমুখে করে আমি ফের তার প্রতি নিজের প্রেমকে ঘন করতে সচেষ্ট হবো।

দুপুরে চলে যাই আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে। মানবাধিকার নিয়ে সেমিনার। তুখোড় সব পাবলিক ফিগার এসে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। আমি এইসব সেমিনার এটেন্ড করি প্রগতিশীল ঘরানার গেট টুগেদার বিবেচনা করে। পরিচিত অনেকের সাথে দেখাসাক্ষাত হয়। প্রগতিশীল ধ্যানধারণার পারস্পরিক আদানপ্রদানের এই বাস্তবতা আমার কাছে সবসময়ই উপভোগ্য। একটা সেমিনারে কতোজনের সাথে মোলাকাত হয়। নতুন পরিচয় হয়। কতো কিছু শিখতে পারি, জানতে পারি। এই ধরণের শিক্ষাসফরের প্রয়োজনীয়তা সামনে উত্তরোত্তর বাড়বে বলেই আমার অনুমান। সেমিনার ফাঁকে ফাঁকে যখন বিরতি চলে তখন পরিচিতদের সাথে হাসিমুখে আলাপে এগিয়ে যাই। নিজের সোশাল স্কিলের প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। তাছাড়া যতোদূর বুঝতে পারি আমার ফানী কথাবার্তা অনেকের কাছেই এন্টারটেইনিং। এমনকি ফেসবুক, টুইটারে যারা আমার প্রোফাইলের ধারেকাছেও আসেনা তারাও নিজে থেকে এগিয়ে আসে কথা বলতে। আমি সেমিনারের আলোচনা শুনতে শুনতে ফের তুষারের বিষয়টি নিয়ে তন্ময় হয়ে যাই। আমার মনে হয় ঘটনাটা নিয়ে কি এখানে কারো সাথে আলাপ করবো? করাই তো যায়। মানবাধিকার সম্পর্কে সেমিনার চলছে। তারা আরেকবার নতুন করে জানতে পারলো আমাদের নিঃসঙ্গ ব্যক্তিক পরিসরে গালভরা এই বাংলা শব্দটির প্রকৃত তাৎপর্য্য কোথায়। পরক্ষণেই নিজেকে নিবৃত্ত করি। আলোচনায় বক্তারা যা যা বলছেন- পরিচিত অপরিচিত প্রায় সবাইকেই দেখছি অখন্ড মনোযোগে তা শুনছে। এমতবস্থায় আমার পরিচিত জনৈক অনুজের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিড়ম্বনার গল্প তাদের আকৃষ্ট করবে এই আশা করাটা মূঢ়তা। তাদের মতো আমিও অখন্ড মনোযোগে বক্তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে চেষ্টা করি। এবং ব্যর্থ হই।

সেমিনার থেকে বেরুতে বেরুতে দেখি সকালের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ততোমধ্যে রৌদ্রের ঝলমলে চেহারার কাছে পরাভূত। পরিষ্কার সূর্যের আলো শরীরে মেখে নিতে নিতে আমি পৌঁছে যাই সায়ন্তনীর বাসার কাছাকাছি- জোনাকী সুপারস্টোরের সামনে দাঁড়াই।

বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে সায়ন্তনী তার বোনের মেয়ের জন্য উপহার কেনে। কেনাকাটার ক্লান্তিকর পালা শেষে আমরা ফুডকোর্টে উঠি। তুষারের ব্যাপারটা তাকে জানাবো কিনা এই নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত থাকতে থাকতেই আমাদের তুমুল ঝগড়া বেঁধে যায়। সায়ন্তনী অনেকদিন যাবত সন্দেহ করে আসছে যে আমার বিবাহিতা বান্ধবী সুমাইয়ার সাথে আমার বুঝি আড়ালে প্রেমঘন কোন সম্পর্ক চলছে। কথায় কথায় সেই প্রসঙ্গ উঠে আসলে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি। আমার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে আপাদমস্তক কালো পোশাক, এক জোড়া শক্ত কালো বুট, একটা কালো সানগ্লাস এবং গুলিভর্তি একটি বন্দুক। আমার অতর্কিত এই আক্রমণ এই সময়ে সায়ন্তনীর কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমি তাকে নিচু কিন্তু স্পষ্ট শক্ত গলায় প্রকান্ডরুপে চেপে ধরি। আমার বিবেচনাহীন, ফ্যাসিস্ট বাক্যবাণে সে কাঁদতে শুধুমাত্র বাকি রাখে। সকলের সামনে সিন ক্রিয়েট হবে বলে নিজেকে সে সামলে রাখে। তবে খাওয়া শেষ হতেই আমাকে দ্বিতীয় কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে উধাও হয়ে যায়। ফুডকোর্টে থাকা সকলের কাছে আমাকে তর্কাতীত বিনোদনের খোরাকে পরিণত করে। আমি বিল মিটিয়ে যখন বসুন্ধরা সিটি থেকে বের হই দেখি অন্ধকার নেমে এসেছে। গুমোট বাতাস। ভ্যাপসা গরমের মাঝে কেনো কালো রঙের শার্ট পরে বেরুলাম- নিজের কমনসেন্সের অভাবে নিজে পীড়িত বোধ করতে থাকি।

দশদিন কেটে যায়। এর মাঝে বসুন্ধরা সিটিতে নিজের অভব্যতা নিয়ে সায়ন্তনীকে অজস্রবার সরি বলা শেষে প্যাচ আপ করে নিয়ে আরেকদফা তার সাথে ঝগড়া বেঁধে গিয়ে কথা বন্ধ হয়ে আছে। এই দফায় বিবেচনাহীন, ফ্যাসিস্ট আক্রমণের সকল দায় সায়ন্তনীর। সুমাইয়ার সাথে আমার কিছু একটা চলছে- এই বিষয়ে আমার বলা একটা যৌক্তিক কথাও সে গ্রাহ্য করেনি। ঝগড়াটে হিসাবে আমার খ্যাতি কিংবদন্তী। তার উপরে এবারে আমি নিজে সায়ন্তনীর ফ্যাসিস্ট আক্রমণের শিকার। নিজে থেকে সরি বলার প্রশ্নই আসেনা। বিকালবেলায় শুয়ে শুয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের দখল গল্পটি পড়ি। গল্পের সময়কাল ইন্টারেস্টিং। রক্ষীবাহিনীর আধিপত্যে যখন নব্যজন্মানো বাংলাদেশ থরথর করে কাঁপছে। একটা কথা মনে হতে আমার ভ্রু কুঁচকে যায়। সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করবো তখন তুষারের ফোন এলো।

ফোন ধরে আমি বিস্মিত হই। তুষারের কন্ঠ আনন্দময়। আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হয়না। সে নিজেই গড়গড় করে সব বলে যায়। আসলে ঘটনা হলো যে নীনা তার এক বান্ধবীর কাছে এই কথা শুনেছে যে তুষার নাকি সম্প্রতি তন্বী নামের কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছে। কথাটা শুনতেই নীনা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়। তুষারকেও সম্পর্কচ্ছেদের পরে যা সে এতোদিন জানায়নি তা হলো এখনো সে ভেতরে ভেতরে তুষারের প্রতি তীব্রভাবে অনুরক্ত। এইসব জটিলতায় বিপর্যস্ত হয়ে হুইমজিকাল নীনা তুষারকে কঠিন শাস্তি দিতে উদ্যত হয়। ফলশ্রুতিতে র্যা বের অফিসে নীনার অভিযোগনামা, অতঃপর তুষারের কাছে অফিসারের ফোন- এতোসব নাটকের মঞ্চস্থ। তুষার এবং নীনা আজকে একসাথে গেছে র্যা বের অফিসে। সেখানে নাকি তারা অফিসারের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। সেই অফিসার সব শুনে খুব খুশী। তুষার এবং নীনা- তারাও সন্তুষ্ট। তুষার আমাকে ফোনে আনন্দে গদগদ হয়ে জানায় তারা সবকিছু ভুলে আবারো সম্পর্কটি শুরু করতে যাচ্ছে। আমি সব শুনে নিস্পৃহ থাকতে চেষ্টা করি। সম্ভবত তাতে সফলও হই। তাদের দুইজনের প্রতি শুভকামনা জানাবার পরেও তুষারের কন্ঠে উল্লাস অনুভব করি।

তুষারের সাথে কথোপকথন শেষে পুনরায় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পে ফিরে যাবো সিদ্ধান্ত নেই। কল থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে শব্দ শুনি। বাথরুমে গিয়ে কল বন্ধ করে বিছানায় যাবো এমন সময়ে ফোন বেজে উঠে। না দেখেই বলতে পারি কার। সায়ন্তনী। আমি ফোন রিসিভ করে ঠান্ডা গলায় কথা বলি। অপরপ্রান্ত থেকে সায়ন্তনীর গলা শুনে বুঝতে পারি ফ্যাসিজমের থাবা থেকে সে বেরিয়েছে। এবারে সে সন্ধির জন্য উদগ্রীব। তাকে প্রত্যাখ্যান করবার প্রশ্নই আসেনা। চিরবহমান ফ্যাসিজমের মাঝে আমাদের নিরন্তর বসবাস। এর মাঝে আমরা স্বকীয়ভাবে নিজেদের ভালোলাগাও গড়ে নিয়েছি। ফ্যাসিজম নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক- এইসকল শ্লোগান রাজনৈতিক পরিসর পর্যন্ত ঠিকই আছে। তার চাইতে বেশী নয়।

সায়ন্তনীর সাথে প্যাচ আপ করে আগামীকাল একসাথে কিভাবে কাটাবো সেই নিয়ে আলাপ শুরু করতে করতে তুষারের এসএমএস আসে। এই কয়েকটা দিনে আমার মানসিক সাপোর্টের কথা তার আজীবন মনে থাকবে। সে আমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

এসএমএস পড়ে আমার কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। কালো পোশাক, কালো সানগ্লাস, একজোড়া শক্ত বুট এবং গুলিভর্তি বন্দুক- এসবের বাইরেও আরো কতো রকমের দৈনন্দিন ক্রসফায়ার আছে তার খবর সে এখনো পায়নি। এই সত্য সে যেদিন আবিষ্কার করবে সেদিনই সে বিস্মৃত হবে; আমার এই দিন দশেকের এন্টি-ফ্যাসিজম এক্টিভিটি সম্পর্কে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.