নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্ডিনারী

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:৫৭

সকালবেলায় শিপ্রার ফোন এসেছিলো। কন্ঠে কোন ব্রীড়া নয়, অনভ্যস্ততা নয়- সরাসরি জানিয়ে দিলো আগামী মাসে তার বিয়ে। বুঝতে পারি, পরীক্ষা করতে চেয়েছিলো। উল্টা আমিই পরীক্ষা করলাম। খাবারের মেন্যু কি এবং আসন্ন ঘটনাস্থল কোথায় জানতে চাইলাম। আমাকে চেনে তো কম সময় হলোনা- সাড়ে তিন বছর। ফোনে মানুষের চোখের উঠানামা দেখবার সুযোগ নেই। তবু পরিষ্কার দেখতে পাই- শিপ্রার স্যাডিস্ট ঝলমলে মুখটা আনন্দে জ্বলে উঠবার আগেই নিভে গেলো। দপ করে।

এতো সময় কোথায়? নাজিম হিকমত বলে গিয়েছিলেন বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর একবছর। আছি এখন একবিংশ শতাব্দীতে- অর্ধেকও যদি ধরি তবে শোকের সময়কাল হবে ছয় মাস। আমার জন্য বড্ড বেশীই সময়; এমনটা আমি মনে করি। এতো এতো জটিলতা আশেপাশে- শেয়ারবাজারে ধ্বস, ব্লগার হত্যা, মৌলবাদকে প্রমোট করবার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ধরি মাছ না ছুঁই পানি বক্তব্য, ক্রসফায়ারের ক্রমবর্ধমান ভায়োলেন্ট প্রভাব, সাপ্তাহিক বাজারে নিয়মিত পণ্যের আগুনঝরা দাম- এসবে মাথা না ঘামিয়ে উপায় কই? টক শো না হোক অফিস শেষে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডায় দুই চারটা কথা বলতেও তো জ্ঞান থাকা চাই; নয়তো পাত্তা দেবে কে? নিও-লিবারেল যুগে গন্ডমুর্খদের প্রতি কোন প্রকারের লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গী প্রদর্শন করা চলেনা- লন্ড্রিতে বসে প্রাণময় চোখের যেই ছেলেটা, সেই শামসু পর্যন্ত জানে। ভেবেছিলাম শিপ্রার সাথে আরো কিছু সময় কথা বলবো। কিন্তু হলোনা। এমনভাবে তাকে নিভিয়ে দিয়েছি; এই রাগ সহসা ভাঙ্গবার নয়। সারমর্ম খুব সহজঃ না হয় আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি খবরটা তোমাকে দিলামই; না হয় তুমি রাগত হলেনা- কিন্তু আমাকে আঘাত করে কথা বললে কেনো?

শিপ্রার ফোন ধরবার সময়ে বিছানায় শুয়ে ছিলাম। শুয়ে শুয়ে পত্রিকা পড়ছিলাম। খেলার পাতায় অনেককাল হলো চোখ দেওয়া হয়না। ইংল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ অসামান্য ভেলকি দেখিয়ে চলেছে। একের পর এক ম্যাচ হেরে চলেছে। সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফেসবুক, টুইটার খেলোয়াড়দের ফাঁসী চাইতে শুধু বাকি রেখেছে। বঙ্গবাসী বড় অভিমানী ক্রিকেটপ্রেমী জাতি। মাস ছয়েক আগে দেশের মাটিতে শ্রীলংকারে তুলোধুনো করছিলো- তখন ক্রিকেটারদের বীরশ্রেষ্ঠ বানাতে কেবল বাকি ছিলো। এখন সম্ভব হলে তাদের ওপেন এয়ার শুট করে। ঘুরেফিরে আবারো শিপ্রার মুখ ভেসে উঠলো।

এমনি এমনি সেই মুখ ভেসে উঠলোনা। ক্রিকেটপ্রেমী না হয়েও ক্রিকেটপ্রেমীর সহজাত ফ্লাকচুয়েশনে অবগাহন করতে তার জুড়ি ছিলোনা। মনের মতো আচরণ করছি সারাদিন- রিকশা থেকে পরম যত্নে নামিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া- সেই রাতে ফোনে কথা হলে; আসলে তোমার কাছ থেকে যা পাই অন্য কারো কাছ থেকে তা পাবোনা জানি। তাই এতোকিছুর পরেও তোমাকে ছাড়তে পারিনা। যেদিন ঝগড়া হয়ে যায়- হিংস্র হয়ে উঠি সেদিন ধরে পরের দুইদিন- তোমার মতো এতো অধৈর্য কারো সাথে প্রেম করা, উফ হরিবল!!! প্রথম প্রথম দ্বিচারীতা মনে করে আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতাম। ধীরে ধীরে আবিষ্কার করেছি এইসব আসলে কাস্টমারী। শুধু ভালোবাসার কথায় যেমন ভালোবাসা ছাড়া আর সবকিছুই থাকে তেমন এক প্যারাডক্সিকাল সিচুয়েশন আর কি। ক্লান্তি- আর কিভাবে তাকে সংজ্ঞায়িত করবো জানিনা। প্রেমহীনতায় ক্লান্তি আছে, শুধু প্রেম কি ভালোবাসাও ক্লান্তিকর। পলিগ্যামী হোক কি মনোগ্যামী- চলাফেরা, ভাবনাই যেখানে আড়ষ্ট- ক্লান্তি থেকে মুক্তি আসবে কিভাবে?

চার মাস আগেও শেষ যেদিন শিপ্রার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম- শান্তিনগরের রাস্তায়; এতো এতো ফাস্টফুডের দোকানে ভরে গেছে জায়গাটি- রাস্তাটি কৃত্রিম; এই সত্যটিও নিজের কৃত্রিমতা আড়াল করতে আর সক্ষম নয়। তখন সন্ধ্যা নেমে চুরচুর করছে; রাস্তায় মানুষজনের চলাচল ক্রমশই উত্তরাধুনিক, গ্র্যান্ডন্যারেটিভের অভাবে পারস্পরিক সংযোগহীন- শিপ্রা এবং আমি দুইজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আর নয়।

আমরা এখন যা বলতেছি- তা মানতে পারবো তো দুইজনে? – আমার দিকে না তাকিয়ে আমার উদ্দেশ্যে শিপ্রার ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্ন।

কেউ তো আরেকজনের গলায় বন্দুক রেখে মানতে বাধ্য করতেছিনা। কিছুদিন একটু যাবে- কান্না কান্না পাবে, খুব কষ্ট হলে ফোনও দেওয়া হবে একে অপরকে। বুক হু হু করবে- আবার কেটেও যাবে। জানি বলেই তো দুইজনে মিলে ঠিক করলাম আর নয়। গুরুগম্ভীর কথা বলার সময়ে আমি সবসময় পাশের জনের চোখের দিকে চোখ রেখে কথা বলি।

হুম। শিপ্রা ঠিক যা শুনতে চাইনি- তাই আমি বলেছি; এবং যা শুনতে চাইছিলো- তার ধারেকাছেও আমি যাইনি, বুঝতে পারছিলাম স্পষ্ট।

চাকরী শুরু করেছি তিন মাস হলো। আমি বরাবরই লেট লার্নার। অফিস পলিটিক্স কি জিনিস আমার বন্ধুবান্ধবেরা সেই কতো আগে থেকে জেনে গেছে- আমি এখনো শিখতে পারলাম না কিছু। নিজের কাছে বড্ড হীনমন্য অনুভূত হয়।

সেই হীনমন্যতা টের পাই একা একা রাস্তায় হাঁটতে বেরুলে। হয় নিজের সাথে নিজে নয়তো অপছন্দ করি এমন কারো সাথে কাল্পনিক সংলাপে জড়াই।

খুব কাছাকাছি কেউ হাঁটলে সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। সবচেয়ে বেশী অবাক হয় রিকশাওয়ালারা। অথচ আমার মতে তাদেরই অবাক হবার কথা সবচেয়ে কম। গোটা শহরে কতো বিচিত্র ধরণের মানুষই না থাকে- এই সত্য জানবার জন্য কারো কাছে ছুটে যেতে হলে তো রিকশাওয়ালা শ্রেণীরই অগ্রগামী হবার কথা।

শিপ্রার সাথে কাল্পনিক সংলাপেও যেতে ইচ্ছা করেনা। যতোদিন প্রেমঘন ছিলাম তার সাথে- ঠিকভাবে কথাই আসতোনা মুখে; যেমনটা সে প্রত্যাশা করে থাকতো আর কি। মুখচোরা কি লাজুক বলে কখনোই পরিচিত মহলে পরিচিত ছিলাম না। তবুও আমি ঠিক পরিস্থিতিতে উপযুক্ত কথা বলতে বরাবরই ব্যর্থ হই। সম্পর্কচ্যুতির পরে আমার প্রথম অনুমান হয়; শিপ্রা যে ক্রমশই জনৈক গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা তানভীরের দিকে ঝুঁকে গেলো তা খুব সম্ভবত তানভীর উপযুক্ত কথাটি বলতে পারবার প্রবণতায় আমার থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলো- এই কারণে।

দিন দশেক পরে খুব বৃষ্টি হয়। স্থির, একমুখী, লক্ষ্যে অবিচলিত এমন। কিন্তু আমার মন চঞ্চল হয়ে উঠে। বাড়ি ফিরে আসলে উপলব্ধি করি অফিসের ঝুটঝামেলা নির্বোধ আমাকে বোধশক্তিহীনতা অনুভব করবার বুদ্ধি থেকেও বিচ্যুত করে ফেলছে। লম্বা একটা গোসল দিয়ে অনুভূত হয় ফ্রেশ লাগছে। চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ মনে হতে থাকে- একটু সফট টোনের মেলোডিয়াস হিন্দি গানগুলো খুঁজে খুঁজে শুনতে শুরু করি।

একসময় দেখি আমি গান শোনা কি কিছু নিয়ে ভাবার পরিবর্তে চুপচাপ বসে থাকতে শুরু করেছি।

কোন সিদ্ধান্ত নয়, নয় কোন সংকল্প। শরীর চাইছে, হৃদয় বলে কিছু থেকে থাকলে তাও সহযোগিতা করছে শারীরিক চাহিদার সাথে।
আমি চুপচাপ বসে আছি। সুখে থাকতে চাইবার চাহিদা কিছুদিন হলো খুব বেড়ে গেছে। সচেতনভাবে কখনো তো থাকতে চাইনি তেমনটা- রিভেঞ্জ অব নেচার সম্ভবত।

বাইরে মেঘ গর্জন করে উঠলো। বারান্দার থেকে একটু দূরেই পুরনো দিনের নারিকেল গাছ। পাতাগুলো বরাবরই স্বতঃস্ফূর্ত, ঝড়বৃষ্টি হলে কি প্রকান্ড বাতাস দিতে আরম্ভ করলে এদিক ওদিক দুলতে দ্বিতীয়বার দ্বিধা করেনা।

এদিকে মেলোডিয়াস হিন্দি গানগুলো তার সমগ্র মেলোডি হারিয়ে কেবল বেজে চলেছে; শ্রোতাবিহীন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫২

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: উপরে উপরে কিচ্ছু হবে না বললেও ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাওয়া আত্মসম্মানী প্রেমিকেরই পরিণতি।
গল্পে ভাল লাগা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.