নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি নাইভ বিকাল

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:০২

দুপুরে খেয়ে নেওয়ার পর চোখ ধরে এসেছিলো। দুই ঘন্টার অসচেতন আরামদায়ক ঘুমের পর উঠে দেখি মেঘের নিরুচ্চারিত আক্রোশে আকাশ ভেঙ্গে অন্ধকার নেমে এসেছে। যে কোন মুহূর্তে হুড়মুড় করে বিস্ফোরিত হবার অপেক্ষায়।

সংশয়গ্রস্ত হলাম। আবারো ঘুমিয়ে পড়বো? নাকি জেগে উঠে নৈসর্গিক জটিলতা মন দিয়ে দেখতে দেখতে সুপ্ত থাকা কোন দার্শনিক প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করবো? অনেককাল হলো দার্শনিকতা থেকে দূরে আছি। চাকরীর খোঁজ করতে হবে- এই ভাবনাকে সঙ্গী করে দিন গুজরান করে যাচ্ছি। বাড়ি থেকে বেরোলে কিছু সময় পর আবিষ্কার করি হাঁটতে শুরু করেছি- পরিচিত সেই একই রাস্তায় নিজেকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়ার উপক্রম হয়। এই শহর এতোকিছুর পরেও আমাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত করেনি, ভেবে অবাক এবং কৃতজ্ঞ হই।

গতোকাল সন্ধ্যায় দেখা করেছিলাম- আকমল এবং রেজওয়ানের সাথে। আকমলের আবার কবিতা লিখবার, বলতেই হবে বদঅভ্যাস- তা আছে। রেডিমেড কৃষকদরদী কবিতা লিখবার জন্য বন্ধুমহলে বিখ্যাত এবং অর্ধশিক্ষিতজনদের কাছে সমাদৃত স্বীকার করতেই হবে। পরশু রাতে প্রথম তার গল্প পড়লাম। সেই একই প্রাগৈতিহাসিক বিষয়ে, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কি হাসান আজিজুল হকের পরে যেই বিষয়ের উপরে গল্প রচনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে বাংলা সাহিত্যের লাভ বই ক্ষতি হতোনা। একটি মাত্র স্ল্যাং ওয়ার্ড পর্যন্ত নেই এমন গল্প পড়তেও যে গা ঘিনঘিন করে উঠতে পারে এই অভিজ্ঞতার সাথে প্রথম পরিচয় ঘটলো। শিউরে উঠা ভানপ্রবণ দুর্বল রচনা। তবে একসাথে যখন ছিলাম সেই নিয়ে কথোপকথনে জড়াইনি। কলেজ থেকেই নিতান্তই প্রয়োজন হয়ে না থাকলে রুঢ় কথা বলতে ইচ্ছা করেনা। নিজের রুঢ়তার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা প্রবল বলে।

বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বারান্দায় গিয়ে বৃষ্টি দেখাটা নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক। নিজেকে তবু বঞ্চিত করি। এবং সেই বঞ্চনার বিষয়ে নিশ্চিত হলে তার গ্লোরিফিকেশনে ব্যাপৃত হই। সেলফ গ্লোরিফিকেশনের মাধ্যমে নিজের অসংখ্য অসহায়ত্ব ও অকর্মন্যতাকে দূরে ঠেলে দেওয়া আমার পুরনো প্রবণতা। কখনো কখনো অপরাধবোধে ভুগে থাকলেও বেশীরভাগ সময়েই সেই মন্দ লাগার নেতিকরণের উপরেই আমার আস্থা। আমি আন্তরিকভাবেই মনে করি আধুনিক মানুষ, বিশেষত যারা অনিবার্যভাবে ভঙ্গুর- সেলফ গ্লোরিফিকেশন ছাড়া জীবনকে যাপন করা প্রকৃতপ্রস্তাবেই তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠেনা।

টেলিভিশন খুলে বসি। প্রতিদিন টিভি অন করলে ইচ্ছা করেই দীর্ঘসময় ধরে সংবাদ শুনি- অমনোযোগী হয়ে। কতো বিচিত্র ধরণের রাষ্ট্রীয় ন্যারেটিভের মাঝে আমরা নির্বোধ থেকে নির্বোধতর হতে থাকি- চিন্তার বিষয় হিসাবে যথেষ্টই আকর্ষণীয়। বৃষ্টির দাপট আরো বেড়ে যেতে যেতে বারান্দায় শোঁ শোঁ শব্দ হতে থাকে। আমি বিচলিতবোধ করিনা। এই কয়েকদিনে জামাকাপড় কিছু ধোয়া হয়নি। ঝুলতে থাকা দড়ি ব্যতীত বারান্দার আর কিছুই ক্রমশ বেগবান বৃষ্টিতে সাফার করবেনা।

তিনদিন আগে শনির আখড়ায় পরকীয়া প্রেমের সূত্র ধরে এক পরিবারের ছয়জনের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবরে চারপাশ বেশ সরগরম। টিভি চ্যানেলগুলোও প্রতিদিন নিয়ম করে ফলো আপ দিচ্ছে। বিস্মিত হইনা। মস্তিষ্কের পুরোটা অন্ডকোষের দখলে চলে যাওয়া যখন পপুলার ট্রেন্ড তখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোই বা বসে থাকবে কেনো? সেই প্রত্যাশাও তাদের কাছ থেকে করা যায়না। কিছু সময় মনোযোগ দিয়ে সেই সংবাদের ফলো আপ দেখলাম। রিপোর্টার কামেল আদমি, মানতেই হবে। কন্ঠে পর্যাপ্ত উত্তেজনা এনে যেভাবে বকে যাচ্ছে- পাবলিকের কাছে ঘটনাটি আবেদন সৃষ্টি করবে এই নিয়ে সংশয়ের অবকাশ সামান্যই।

মোবাইল ফোন বেজে উঠে। কলার লিস্টে নাম দেখি তূর্য ভাই। টেলিভিশনের সাউন্ড কমিয়ে দিলেই চলতো- কিন্তু আমি টেলিভিশনই বন্ধ করে দেই। ইদানিং তোপখানা রোডে তার পত্রিকা অফিসে নিয়মিত ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছি। চাকরীর উদ্দেশ্যে। তূর্য ভাই মানুষ ভালো। স্ত্রীর নাইভিটির সুযোগ নিয়ে একইসাথে দুইখানা প্রেম চালিয়ে যাবার প্রতিভার বিষয়টি বাদ দিলে আর বড় রকমের কোন ব্লেইম তার চরিত্রের উপরে দেওয়া যায়না। ফোন রাখতে রাখতে আশ্বস্তবোধ করি। তূর্য ভাই যখন কথা প্রায় পাকাপাকি করে ফেলেছে এবারে চাকরীটা সম্ভবত হয়েই যাচ্ছে।

বারান্দায় এসে দাঁড়াই। বৃষ্টি শেষ হয়ে গ্রিলের মাঝে আটকে থাকা বড় ফোঁটাগুলোর দিকে চোখ পড়ে গেলে দেখি- বৃষ্টি হবার আগে আকাশের দিকে ধেয়ে আসা অন্ধকারের পুনরাগমনে মনোজাগতিক চরাচর নির্বাক। সম্ভাবনাহীন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২০

শামীম সরদার নিশু বলেছেন: খুব ভালো লাগল।

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:১৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: একটি নাইভ বিকাল - শিরোনামটা আকর্ষণ করে নিয়ে এলো। পড়ে চমৎকৃত হ'লাম। এটুকু লেখায় অনেক কিছু ভাল লাগা কথা শুনে গেলামঃ
এই শহর এতোকিছুর পরেও আমাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত করেনি, ভেবে অবাক এবং কৃতজ্ঞ হই - বেশ ভাল।
আমি আন্তরিকভাবেই মনে করি আধুনিক মানুষ, বিশেষত যারা অনিবার্যভাবে ভঙ্গুর- সেলফ গ্লোরিফিকেশন ছাড়া জীবনকে যাপন করা প্রকৃতপ্রস্তাবেই তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠেনা - চমৎকার দর্শন!
প্রতিদিন টিভি অন করলে ইচ্ছা করেই দীর্ঘসময় ধরে সংবাদ শুনি- অমনোযোগী হয়ে। কতো বিচিত্র ধরণের রাষ্ট্রীয় ন্যারেটিভের মাঝে আমরা নির্বোধ থেকে নির্বোধতর হতে থাকি- চিন্তার বিষয় হিসাবে যথেষ্টই আকর্ষণীয় - বিনোদিত হলাম!
মস্তিষ্কের পুরোটা অন্ডকোষের দখলে চলে যাওয়া যখন পপুলার ট্রেন্ড তখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোই বা বসে থাকবে কেনো? - :)
স্ত্রীর নাইভিটির সুযোগ নিয়ে একইসাথে দুইখানা প্রেম চালিয়ে যাবার প্রতিভার বিষয়টি বাদ দিলে আর বড় রকমের কোন ব্লেইম তার চরিত্রের উপরে দেওয়া যায়না - এই একটি লাইনেই একটা চরিত্রের অবয়ব পরিস্ফূট হয়েছে।
শেষের দুটো লাইন চমৎকার হয়েছে। যথার্থ পরিসমাপ্তি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.