নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাবিত সম্পর্কে

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:২৬

মনে পড়ে প্রথম যেদিন ঘুম থেকে উঠে মনে হয়েছিলো ‘জীবন কি?’- এই নিয়ে যা কিছু ভাবনা আছে তা অন্যদের আগে নিজেকে জানানো প্রয়োজন- ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠেছিলাম। কনফ্রন্টেশনে আমাদের অনীহা খুব সম্ভবত আমাদের ডিএনএর ভেতরেই। ভাবতে ভাবতে, আমার এমনটা মনে হয়েছিলো। নিজের সাথে কনফ্রন্টেশনে যাওয়াটাই সম্ভবত সবচেয়ে বেশী ভীতিকর।

মোহাম্মদপুরে তখন সন্ধ্যা, রাত আসি আসি করছে- শীতকালের; সাবিতকে শেষ দেখা দিতে এসেছি। কাল সকালে সে পড়তে চলে যাচ্ছে, চট্টগ্রামে। পরিচিতজন, পরিজন, আত্মীয়দের চাইতেও আত্মীয় বন্ধুবান্ধবদের ছেড়ে। চার বছরের জন্য। সাবিতের সাথে তার বন্ধুবান্ধবসহ আমরা যারা আছি প্রত্যেকেই অন্তত আবেগসংক্রান্ত বিষয়ে, গ্রাম্য নই। কাজেই আবেগকে ছুঁতে গিয়ে অন্তর্গত সকল আবেগকে খেলো করে দেওয়ার বিধ্বংসী খেলাতে মেতে উঠছিনা, কেউ।

মোহাম্মদপুরের প্রতিটা রাত এতো অনন্য; ঋতু ভেদে- অনেকবার এমন মনে হয়েছে আমার। গেলো বছরের এক বর্ষাকালের সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরিয়েছি- বিদ্যুৎ চমকের মতো উপলব্ধিটা মাথায় এসেছিলো। বীজ আগেই সুপ্ত ছিলো, মাত্রই অঙ্কুরিত হলো- তৎক্ষণাৎ মনে হয়েছিলো, বলাই বাহূল্য। তবু আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এতো বেশী আসা যাওয়া করা হয়েছে রাস্তাগুলোতে, মোহাম্মদপুরের- এরকম নিখাদ নির্মল ভাবনা আসে কি করে এর সম্পর্কে? রাস্তাগুলোর সাথে সম্পর্কটা নিবিড়- কখনো এমন অনুভব করিনি। জীবন সম্পর্কে নতুন করে এই ঐকান্তিক উপলব্ধি; যার কথা অন্যদের জানাবার পূর্বে নিজেকে জানানোটাই পূণ্যের- আমাকে অভিভূত করেছিলো।

দেইখো, চিটাগঙে গিয়ে মৌলবাদীদের খপ্পরে পইড়োনা। - সাবিতের উদ্দেশ্যে টিপ্পনী কাটি।

প্রমিথ ভাই, এইসব কি বলেন? বরং এই চিন্তা করেন চিটাগঙে গিয়া সাবিত ভেষজ ওষুধের সরবরাহ কইরা পোলাপানদের না বিগড়ায়া দেয়। সমবেত হো হো হাসির শব্দে আমার গলার আওয়াজও পাওয়া যায়। ইঙ্গিতটা কিসের, বুঝে নিতে কারো দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়না। এতোটাই স্বচ্ছ, এই প্রহর। কথাটা যে বলেছে, সাকিব- তার বিশেষ গুণগ্রাহী আমি। সেন্স অব হিউমারের জন্য। এতো স্বতঃস্ফূর্ত উইট কারো মাঝে দেখিনি, ওর সাথে পরিচিত হবার আগে।

সাবিতের দিকে আলোঅন্ধকারের এই হেঁয়ালীর মাঝেও একবার তাকাই। মনে হয় এমন কিছু ভাবনা তার মাথাতেও বুঝি খেলা করছে যার খবর অন্যদের জানানোর পূর্বে সে নিজেকে জানাতে চায়। মানুষকে দেখবার সময়ে তার চোখের দিকে মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করিনা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কাজটা একমাত্র ডিবির পুলিশ কি র‌্যাবের জন্যেই প্রয়োজনীয়। যারা একান্তই কাছের মানুষ তাদেরকেও কেনো চোখ দেখেই যা কিছু আঁচ করে নেওয়ার তা করে নিতে হবে? এই প্রশ্ন আমার অনেকদিনের। তবে ভাষার প্রয়োজন কি শুধুমাত্র বাজার, কর্মস্থল আর বিছানাতে? সত্যও যদি হয়ে থাকে- আমি আস্থা রাখতে চাইনা। সাবিতের চোখের দিকে না তাকিয়েও আমার পরিষ্কার বোঝা হয়ে যায়, বেরুবার আগে সে কয়েকবার কেঁদেছে। যেই কান্নায় অনেক স্মৃতি, যেই স্মৃতিতে অনেক ছেলেমানুষী, যেই ছেলেমানুষীতে একাধিক জীবন।

মায়াবী লন্ঠন ঘিরে বহু কাঁচ অতসীর মেলা।
হয়তো ধুলোর রেখা মুছে দিলে, তুমি ভাবো,
কোনো ভ্রান্ত কবি একদা জানাবে ঐ প্রত্যেক অতসী
মিথ্যে নয়। - উৎপল কুমার বসু (জন্মদিন)

আমার অনুভূতি এমন যে, একসময় নিতান্তই নির্বোধেরও জানা হয়ে যায় বালির সম্যকরুপ জীবনকে স্পর্শ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের কাছছাড়া হতে হতে সে নিজে একসময় ডুকরে কেঁদে উঠে। আমরা তবু পারিনা, যখন ইচ্ছা হয় সবাইকে সচকিত করে জানাতে- আমি কাঁদছি। সন্তর্পণে কাজটা কখনো সম্পন্ন করলে, খুব নিভৃতে- বাথরুমের বেসিনেও যেনো তার কোন ছাপ না থাকে, এতোটাই আয়োজন করে আমাদের কাঁদতে হয়।

আমরা হাউজিং সোসাইটির এক চায়ের দোকানে বসি। ঘন্টা দুয়েকের আড্ডা দিতে। তখন রাত এসে গেছে। আকাশে কোন ধ্রুবতারা নেই।
সাবিতকে জিজ্ঞেস করি- বইটই নিছো সাথে?

হ্যা, প্রমিথ ভাই। চট্টগ্রামে গিয়েও অনেক সুবিধা হবে। ক্লাস না থাকলে বাতিঘরে সারাদিন বই পড়ে সময় কাটিয়ে দিতে পারবো।- চা খেতে খেতে সাবিত স্বাভাবিক গলায় বলে।

জীবন কি- এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে সাবিতেরও কেঁপে উঠবার সময় হয়েছে, আগামীকাল থেকে যার শুরু।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শীত জাঁকিয়ে বসে।

আমরা তখন কেউ কারো দিকে তাকাইনা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৫২

খায়রুল আহসান বলেছেন: সুন্দর ছোটগল্প।
এই নিয়ে যা কিছু ভাবনা আছে তা অন্যদের আগে নিজেকে জানানো প্রয়োজন - অনেক বিষয় নিয়ে এমন ভাবনা থাকে, যা অন্যদের আগে নিজেকে জানানো প্রয়োজন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.