নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিসাইকেলড

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:২০

সে দেখতে ছিলো রোগা; ক্ষীণকায়, চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের অভাবটা প্রকট। তবুও তার জীবনে প্রেম ছিলো। কিন্তু জুন মাসের এক বিকালে; বাতাসে তখন উষ্ণতার ভাপ দুঃসহ, এমন সময়ে তার প্রেমিকা তাকে জানালো তাদের সম্পর্ক শেষ হতে যাচ্ছে। আসছে আগষ্ট মাসে তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, প্রবাসী এক ধনকুবেরের সাথে।

অনেক অলিগলি দিয়ে ঘেরা একটি অপরিষ্কার মেসের ঘুপসি একটি ঘর; যেখানে সে থাকে, সেদিন সেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ফিরতে ফিরতে তার মনে হলো সন্ধ্যাটা অন্যান্য সন্ধ্যার চাইতে অনেক দীর্ঘ। রাতেরবেলায় না খেয়েই বাতি নিভিয়ে সে শুয়ে পড়লো। কিন্তু দুই ঘন্টা বিছানায় এপাশওপাশ করবার পরেও নির্ঘুম কেটে গেলে সে উঠে বসে। ততোমধ্যে মেসের বাকি সবাই গভীর ঘুমে যার যার বিছানায় ঢলে পড়েছে। সে বিছানা ছেড়ে প্রথমে জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে খুব ধীরে তা খেতে শুরু করে। তার কন্ঠ দিয়ে পানি ধীরে ধীরে যখন নামতে থাকে; সে অনুভব করে, অনেকদিন হলো এতো তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে সে পানি খায়নি।

সে পুনরায় বিছানায় গিয়ে ভাবতে বসলো এখনো পর্যন্ত কে কে তার সাথে প্রতারণা করেছে; তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে প্রত্যাখ্যান নামক সেই আস্তাকুঁড়ে, যেখানে একবার পড়ে গেলে জীবনকে পুনরায় সূচনাবিন্দু থেকে দেখা আরম্ভ করতে হয়। ছয় বছর বয়সে তাকে এবং তার মাকে ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া পিতা, ক্লাস নাইনে থাকতে মিথ্যা অভিযোগে হেডমাস্টারের কাছে তাকে মার খাওয়ানো এক স্কুলবন্ধু- এভাবে সে আবিষ্কার করে তালিকাটা ক্রমশই দীর্ঘতর হচ্ছে। সেদিন সারারাত সে জেগে রইলো, কেননা সে ঘুমাতে পারলোনা।

পরদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলে বিকাল পর্যন্ত সে টানা ঘুমালো। দুপুরেও আহার করলোনা। বিকালবেলায় যখন উঠলো দেখলো রোদটা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে; মেসে তার সাথে যারা থাকে প্রত্যেকে অপর একটি ঘরে তাস খেলায় মত্ত। তাদের আনন্দময় উল্লাস, হইচইয়ের শব্দে সে মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। তার মনে হতে লাগলো চারপাশের পৃথিবী প্রকৃতপ্রস্তাবে তার জীবনের প্রতারণাকে তুচ্ছজ্ঞান করে নিজেদের জীবনের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। সে নিঃসঙ্গ পড়ে গেছে, জীবনের নিরানন্দের অধীনে। বিছানা ছেড়ে সে ফ্রেশ হবার পরে মনস্থির করলো সারাটি সন্ধ্যা রাস্তায় হাঁটবে। মেসে ফিরবে অনেক রাত করে। যখন প্রত্যেকে শুয়ে পড়বে।

পরিকল্পনামাফিক সে সারাটি সন্ধ্যা রাস্তায় হেঁটে বেড়ালো। রাস্তায় হাঁটবার সময়ে সে সচরাচর এমন কোন এলাকা কি স্থান বেছে নেয় যা নির্জন; কেননা তার মাঝে নিজের বুকের ধুকপুক অনুভব করতে সে ভালোবাসে। কিন্তু সেদিন সে বেছে নিলো কোলাহলপূর্ণ একটি স্থান কেননা নিজের স্পন্দন অনুভব করবার বিষয়ে সে সন্দিহান ছিলো। তার মনে হয়েছিলো অনেকদিন হলো মানুষদের সে মন দিয়ে দেখেনা। বিশেষত যেদিন থেকে সে প্রেম করতে শুরু করেছে। সে ধানমন্ডি লেকের ভেতরে গিয়ে চুপচাপ বসে চারপাশের মানুষদের; বিশেষত প্রেমাস্পদ যুগলদের মন দিয়ে দেখতে লাগলো। মাঝেমাঝে তাকালো লেকের ভেতরের কৃত্রিম সান্ধ্যকালীন বাতিতে স্বচ্ছ দেখানো জলধারার দিকে। এক পর্যায়ে তার মন বিষিয়ে উঠলো। পুনরায় তার মনে হলো জীবন তার সাথে ক্রমাগতই বিশ্বাসঘাতকতা করে যাচ্ছে। জীবনের কাছ থেকে যে আনন্দ, সন্তুষ্টি তার প্রাপ্য- সব থেকে সে বঞ্চিত। যে অফিসে সে চাকরী করে তার পরিবেশের কথা সে ভাবতে শুরু করলো। আবিষ্কার করলো সেখানেও একই চিত্র। তার দুইটি প্রাপ্য ইনক্রিমেন্ট আটকে দেওয়া হয়েছে। সহকর্মীরা পেশাগত প্রয়োজন বাদে তার বিষয়ে উদাসীন। তার কাছে কখনো কেউ এসে কোন সাহায্য চায়নি। ভাবতে ভাবতে উপলব্ধি করলো এভাবে নিজের জীবনকে সে ভাসিয়ে দিতে পারেনা। তার ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। সকলকে, তার প্রতি ঈর্ষান্বিত করে তুলতে সে মনে মনে ব্যাকুল হয়ে উঠলো।

ছয় মাস কেটে গেলো। এর মাঝে সে নিজেকে বদলাবার জন্য অনেকরকমের চেষ্টা করলো; এবং সফলও হলো। চারপাশের সবার সাথে সে সম্পর্ক গভীর করতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে চারপাশের সাথে তার সংযোগ নিবিড় হয়ে উঠলো। সহকর্মী থেকে শুরু করে মেসের লোকজন- সকলের হাঁড়ির খবর তার ততোমধ্যে জানা হয়ে গেছে। এতোটাই স্বাচ্ছন্দ্য সে এখন, এসবে। অফিসে তার একটি ইনক্রিমেন্ট এবারে স্যাংশন হয়েছে। অন্তর্গত শক্তিকে সে ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। অফিস সেরে মেসে ফিরে বাদবাকি সকলের সাথে দীর্ঘসময় তাস খেলে যখন সে রাতে ঘুমাতে যায়; একটি তীব্র প্রশান্তিময় নিদ্রা তাকে আলিঙ্গন করে নেয় বিছানায় শরীর এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে।

চারমাস কেটে যাবার পর একদিন সে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায়। সচরাচর অফিস সেরে সোজাসুজি সে মেসে ফিরে আসে। মেসে বসবাসকারী বাকিদের সাথে সান্ধ্যকালীন চা নাশতা খেয়ে তাস খেলতে বসে; এবং রাত হলে প্রশান্তিময় নিদ্রার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়। কিন্তু সেদিন সে অফিস থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখন ধানমন্ডি লেকে আসে, তখন সন্ধ্যা চারপাশকে গ্রাস করে নিয়েছে। সে ঘন্টা দুয়েক চুপচাপ সেখানে বসে থাকলো। মোবাইলে মেসমেটদের একের পর এক ফোন আসলো, সে টের পেলোনা। ঘড়িতে যখন সময় দেখলো রাত সাড়ে আটটা বেজে গেছে; সে মনস্থির করলো এবারে উঠা যাক। তখন দেখতে পেলো তার প্রাক্তন প্রেমিকা; স্বামীসহ ফুরফুরে বাতাসে নিজেকে মেলে ধরেছে এমন এক ভঙ্গিমায় যা তার কাছে অভূতপূর্ব। তার সাথে যখন প্রেম ছিলো; সেই সময়তে এমনভাবে প্রেমিকাকে সে কখনো আবিষ্কার করেনি।

সেদিন হেঁটে হেঁটে যখন মেসে এসে পৌঁছালো; তখন বাদবাকি সকলে শুয়ে পড়েছে। মেসে আসবার পূর্বে নিকটবর্তী একটি এপার্টমেন্টের উঁচু একটি ঘরের দিকে তার চোখ চলে গেলে সে দেখেছিলো ঘরটির বাতি তখন নিভে যাচ্ছে। এক দম্পতি তখন ভালোবাসায় ব্যাপৃত হতে শুরু করেছে। সেই ঘরের পর্দা টেনে দেওয়া এবং বাতি নিভে যাওয়ারও অনেক পরে সে ঘরটি থেকে নিজের দৃষ্টিকে সরিয়ে নিতে পেরেছিলো।

সেদিন নিজের ঘুপচি ঘরটিকে অনেকদিন পরে তার কাছে দুঃসহ বলে মনে হলো। শুয়ে পড়বার পর দুই ঘন্টা বিছানায় এপাশওপাশ করবার পরেও তার সময়টা নির্ঘুম কেটে গেলো। সে খুব ধীরে ধীরে এক গ্লাস পানি খেলো। সারারাত সে জেগে রইলো। কেননা তার ঘুম আসলোনা। পরদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিলো। ফলে সে বিকাল পর্যন্ত টানা ঘুমালো।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


প্লটটি সামান্য মোড় নিয়ে আগের অবস্হানে ফিরে এসেছে, বৃত্ত

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪২

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: সাবলীল। সুন্দর। শুভ কামনা।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: গল্পটা অসহ্য ছিল। এটা আপনার সফলতা বলা যাক। এমন গল্প পড়ে হাসিখুশি থাকা মানে লেখকের কাজটা জমেনি।
খুব ভাল লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.