নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কমলা আকাশ , পুরনো ওষুধ এবং সিনিসিজম

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৩

বৈশাখের এক বিকালে, টানা এক ঘন্টা তুমুল বৃষ্টির পরে আকাশ কমলা রঙে রঞ্জিত হলো। পথচারীদের মনে হলো আজকে রাতে বুঝি গাঢ় ঘুম হবে। তারা বৃষ্টি শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়েও ফেরেনা। তাদের আরো মনে হয় কমলা রঙে ছেয়ে যাওয়া আকাশের নিচে একাকী হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাওয়া যাবে সেই স্বপ্নের কাছাকাছি যাকে তারা প্রাত্যহিক জীবনের নিষ্ঠুর নান্দনিকতায় ভুলতে বসেছিলো। তারা নিজেদের মতো করে নতজানু হয়, নিসর্গের কাছে। আমরা অনুভব করি ওষুধের পুরনো গন্ধে কারো কারো মন উতলা হয়ে উঠে। বাবা যতোদিন বেঁচে ছিলো বাসায় নানা রকমের ওষুধ আসতো বাসায়। তার ঘ্রাণ নিতে নিতে মাকে একদিন সবার চোখ এড়িয়ে কাঁদতে দেখে ফেলেছিলো কেউ কেউ। সেই রাতে আকাশে চাঁদ উঠেছিলো। পুরনো ব্যথা অন্তর্গত সমস্ত বর্তমান বিষাদকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছিলো। একটা টিকটিক বড় দেয়াল ঘড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলো। সে অপেক্ষা করছিলো সেই মুহুর্তের জন্য যখন সে নিস্তব্ধ হতে পারবে। কিন্তু কাঙ্খিত মুহূর্তটি আসেনি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষজন ক্রিকেট খেলা দেখে। বাংলাদেশ বনাম ভারত। দিন পনেরো আগে দিল্লীতে বিশজন দরিদ্র মুসলমানের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনজন মুসলমান কিশোরী ধর্ষিতা। ডাক্তারের রিপোর্টে যৌনাঙ্গ ব্যবচ্ছেদের নিদারুণ যন্ত্রণাময় সেই গল্পগাঁথা ক্রিকেট খেলা দেখতে থাকা দর্শকদের আচ্ছন্ন করে। তারা ক্রিকেট খেলায় সেই ধর্ষণের, সেই অপমানের বদলা চায়। খানকির পুত কোহলী আউট হয়না ক্যান? মাদারচোতরে দেখতে পারিনা। শরীরের তলে তলে ফুটানি। জনমানসের তপ্ত রোষ কোহলীকে দমাতে পারেনা। সাবলীল সেঞ্চুরীতে সে ভারতকে জিতিয়ে দিলে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়। বিকালে কমলা রঙের আকাশে মানুষ যখন ভেবেছিলো আজকে রাতে তাদের গাঢ় ঘুম হবে তাদের সেই আশা ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে ভেস্তে যায়। তাদের অনেকেই রাতটি কাটায় বিনিদ্র। মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পে সেই রাতেও গরুর চাপ এবং পরোটা ভাজা হয় গরম তেলে। কিন্তু ভাজতে ভাজতে দোকানীরা কোহলীর নামে শাপশাপান্ত করতে ভোলেনা। সেইদিন বিহারী ক্যাম্পে যারা গরুর চাপ এবং পরোটা গলাধঃকরণ করতে এসেছিলো সবান্ধব তাদেরকেও বারোমাস অচ্ছ্যুত বিহারীদের সেন্টিমেন্টের সাথে একাত্মতা পোষণ করতে দেখা যায়। বিনিদ্র রাত কাটানো মানুষদের কেউ কেউ স্ত্রী-সন্তান ঘুমিয়ে পড়লে পা টিপে টিপে ডাইনিং রুমের দিকে এগোয়। পানির পিপাসা তীব্র হয়েছে। তৃষ্ণা মেটানো শেষে তারা অনুভব করে তাদের উরুসন্ধি আজকে বড্ড বেশী অসহিষ্ণু। বাচ্চার মাকে এতো রাতে ডেকে তোলা যাবেনা। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরে বাচ্চা সামলে তারা রাতের রান্নাবান্না সম্পন্ন করেছে। সাংসারিক দায়িত্বের চাপে কমলা রঙের আকাশের সান্নিধ্য তারা পায়নি। তাই বিনিদ্র রাত কাটানো স্বামী, পিতা সর্বোপরি পুরুষদের সে রাতে কাজের মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে। তৃষ্ণা মেটাতে পরপর দুই গ্লাস পানি খেয়ে ফেলার পর সামান্য শব্দও না হয় এমনভাবে তারা রান্নাঘরের দরজা খোলে। ক্যাচ করে একটা শব্দ শুরু হয়ে শেষ হবার আগেই দরজাটা পুরুষেরা স্থির করে দিতে পারে বলে ঘুমন্তদের কেউ জেগে উঠেনা। তবে মাকে স্বপ্ন দেখে ডুকরে কেঁদে উঠতে যাওয়া কাজের মেয়ের সেই ঘোর ভেঙ্গে যায়। বাস্তবে ফিরে আসলে পিচুটিভরা চোখে সে দেখে বাড়ির কর্তা, যাকে সে এতোদিন সজ্জন বলে জেনে এসেছিলো- শক্ত হাতে তার ডানবাহু চেপে ধরে নিজের ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। কাজের মেয়েটিকে বিছানায় ধপাস করে ফেলে দেওয়ার আগে বাড়ির কর্তাকে দেখা যায় খুব সন্তর্পণে ড্রয়ার থেকে এক প্যাকেট কনডম বের করতে। চকোলেট ফ্লেভারের। পুরুষাঙ্গে একটি কনডম পরে নিয়ে কর্তা মৃদু স্বরে বলে উঠে আফরোজা তুই উল্টাদিকে ঘুর। আফরোজা তখন মায়ের গন্ধভরা স্বপ্নকে বিদায় জানিয়ে কর্তার আদেশমতো দুই পা যথাসম্ভব ছড়িয়ে দিয়ে উপুড় হয়। রাত যতো ঘন হয় মৈথুন ততো বেশী তীক্ষ্ণ হয়। আফরোজারা অনুভব করে বারো বছর বয়সে যখন তাদের বিয়ে হয়েছিলো মরতে বসা এক পয়সাওয়ালা বুড়োর সাথে- সেই রাতেও তারা তীব্র ব্যথায় কঁকিয়ে উঠছিলো। বাইরে একটা চাঁদ উঠেছিলো। বাসরঘরে ঢুকবার আগে একফালি সেই চাঁদকে দেখবার পর তারা বাসরঘরে নিজেদের প্রেমিককে কল্পনায় এনে বিদীর্ণ করে দেওয়া সেই যৌনব্যথাকে প্রশমিত করেছিলো। কিন্তু আজকে তা সম্ভব হচ্ছেনা। বাসার সাহেব অবিরাম তাদের পায়ুপথে আঘাত করে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। যেনো তার প্রতি সাহেবের শতাব্দীজুড়ে জমে থাকা সমস্ত ক্রোধের চূড়ান্ত ফয়সালা আজকে রাতেই হতে যাচ্ছে। ক্লান্তিহীন গৃহকর্মী সঙ্গমের শেষ পর্যায়ে সাহেবদের নাকে পুরনো সেই ওষুধের গন্ধ ভেসে আসে। তারা দেখতে পায় তাদের সুস্থির দৃঢ় কঠিন চিত্তের পিতারা পরম আদরে ওষুধগুলোর গন্ধ শুঁকছে। তাদের পিতাদের মৃত্যুর পরে সেই ওষুধের পুরনো কৌটাগুলোই তাদের মা সবার অলক্ষ্যে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখে। পরদিন সকালে সেই গৃহকর্তারা নিখাদ সংসারী। যেনো গতোকাল রাতে কিছুই ঘটেনি। কোন পুরনো ওষুধের গন্ধে তারা অপরাধবোধে ভোগেনি। পাউরুটির সাথে নিঁখুত অভ্যস্ত হাতে বাটার লাগাতে লাগাতে তাদের কারো চোখ আফরোজার দিকে যায়না। কেনোনা তারা জানে তাদের স্ত্রীদের অত্যন্ত তীক্ষ্ণ চোখ। কাজের মেয়েটির হাত থেকে স্বাভাবিকভাবে পত্রিকা নিতে নিতে তাদের চোখ কেঁপে উঠেনা। শেয়ারবাজারের দরপতনে হতাশা ব্যক্ত করতে করতে তাদের স্ত্রীরা জেনে যায় অফিস শেষ হলে আজকে তারা বাইরে কোথাও থেকে খেয়ে আসবে। সম্ভাব্য ডেস্টিনেশন বসুন্ধরা সিটি। কিছু টুকটাক কেনাকাটা আছে। সেসব সেরে ডিনারটা ফুডকোর্টেই সেরে আসা যাবে। মেড সারভেন্ট রাত পর্যন্ত বাসায় একা থেকে অভ্যস্ত। সূর্যটা দেখতে দেখতে তীব্র হয়ে উঠে। তীব্র রোদে রাস্তাঘাট জেরবার। মালিবাগ থেকে পুরনো পল্টন, নাজিরাবাজার থেকে চাংখারপুল, ধানমন্ডি থেকে মোহাম্মদপুর, শান্তিনগর থেকে হাতিরপুল- চারিদিকে তপ্ত রোদে মানুষের প্রাণ যায় যায়। অফিসে অফিসে খুব আলোচনা চলে। গতোকালকের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে। দেশের ক্রিকেটারদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো হয় এই সিদ্ধান্তে সকলে বিনাপ্রশ্নে উপনীত হবার পরে রোজকার নিয়মে অফিস পলিটিক্সের পালাপর্ব শুরু হয়। খসরু সাহেব ইদানিংকালে পেশাগত সার্ভিস ভালো দিতে পারছেন না। তার বউ তাকে ছেড়ে তারই আপন ছোটভাইয়ের সাথে পালিয়ে গেছে এই খবরে সহকর্মীদের প্রত্যেকের মুখেই তার প্রতি ঠাট্টাঘেরা নরম তুলতুলে সহানুভূতি লেগে আছে। খসরু সাহেব বিষয়টা স্পষ্ট বোঝেন বলে নিজের ঘর থেকে পারতপক্ষে বের হন না। এমনকি লাঞ্চ আওয়ারেও নিজের ঘরেই লাঞ্চ সেরে নেন। এভাবে দুপুর পেরিয়ে বিকাল হতে থাকে। প্রেসক্লাবের সদ্য ঢালাই করা পিচের গরমে একটি বামপন্থী দলের কর্মীরা মিছিল শেষ করে তেতে উঠে। তাদের শরীর চটচট করে। তবুও বৈপ্লবিক দায়িত্বের তাড়নায় তাদের ক্লান্ত পরিশ্রান্ত কন্ঠ থেকে ‘দুনিয়ার মজদূর, এক হও লড়াই করো’ শ্লোগানটি নাজুকভাবে বেরিয়ে আসে। তখন আশেপাশের রেস্টুরেন্টগুলো থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি শোনা যায়। কয়েকটি খিস্তিও শোনা যাবে হয়তো। তবু বামপন্থী দলের সেই তরুণ কর্মীরা হতোদ্যম হয়না। তারা নিজেদের একটু জিরিয়ে নিয়ে ফের শ্লোগান দিতে দিতে নেতাদের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়। তাদের তরুণ রক্তে অনুরণন জাগে। আকাশে ক্রমশ মেঘ জন্মে। এয়ারকুলার এসিতে কাজ করতে করতে বাড়ির পুরুষদের মনে পড়ে আজকে অফিস শেষে স্ত্রীকে পিক আপ করে তারা স্বামী-স্ত্রী-সন্তান মিলে বসুন্ধরা সিটিতে বেড়াতে যাবে। কিছু টুকটাক কেনাকাটা সেরে ফুডকোর্ট থেকে ডিনার সেরে নিয়ে তারা তৃপ্ত মনে বাড়ি ফিরবে। দরজা খুলে দেবে……গতোরাতের স্মৃতি সেইসব পুরুষদের মনে ভেসে আসে। একটি নারী শরীরকে চূড়ান্ত নগ্ন দেখবে বলে পা টিপে টিপে রান্নাঘরের দিকে যাওয়া; অতঃপর চোখের পলকে নগ্ন আফরোজাকে বিছানায় ফেলে দেবার অনেকক্ষণ পরে নাকে পুরনো ওষুধের গন্ধ…… না না আর ভাবতে চাইনা। তারা স্বগতোক্তি করে উঠে। এই পাপের কোন সাক্ষী থেকে যাবে এই বেদনায় তাদের ইচ্ছা করে একটা ছুরি এনে নিজেদের শিরাটা কেটে ফেলতে। গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে, মাথায় ঝিম ধরানো এক আনন্দের সম্ভাবনা; কিন্তু সামনেই সাদমানের ফাইনাল পরীক্ষা, ম্যাথে সে ভালো করলে তাকে দামী ডিভিডি প্লেয়ার কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা মনে পড়ে গেলে আত্মহত্যার কল্পিত আনন্দে তাদের অবগাহন করা হয়না। বিকাল হয়। আকাশে মেঘ ক্রমশ পুরু হতে শুরু করেছে। আজকের ওয়েদার কি ফোরকাস্ট করেছিলো? পত্রিকা ভালোভাবে দেখাই হলোনা। শেয়ারবাজারের দরপতন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ কেলেংকারী, ক্রিকেট দলের সমালোচনায় ভরপুর গোটা দুয়েক বস্তাপচা ক্রিকেট কলাম- এসবের বাইরে পত্রিকায় আর কি দেখবার আছে? উঠতি মডেল কি নায়িকার অর্ধনগ্ন শরীর চেয়ে চেয়ে আর কতোক্ষণ কাটিয়ে দেওয়া যায়? আজকে ডিনারটা যেহেতু বাইরেই সেরে আসা হবে কাজেই বাড়ি ফিরে সময়টা কাজে লাগানো যেতেই পারে। আগামীকাল ছুটির দিন। তাই সাদমানের মা কোন অজুহাত দেখাতে পারবেনা। ইদানিং শুরু হতে হতেই হাই তোলে। গতোকালকের আগ পর্যন্তও তো টানা দশদিন পর্ন দেখে দেখে……অনেকদিন স্ত্রীকে কিছু হলো উপহার দেওয়া হয়না। আজকেই দামী কোন উপহার হাতে পেলে গোটা রাতটায় তার একচ্ছত্র রাজত্ব। সন্ধ্যা হয়। বসুন্ধরা সিটি জনসমাগমে গমগম করে উঠে। উপচে পড়া ভিড়ে শহরকে ভালোভাবে চিনে নেওয়া যায়। বাড়ির পুরুষরা নিজেদের পরিকল্পিত ছকমাফিক স্ত্রী-সন্তানদের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটে। তাদের গর্বিত দেখায়। এদিকে স্ত্রী এবং মা- নিজেদের কর্মস্থলের ঝঞ্ঝাটের কথা ভুলতে প্রাণপণে চেষ্টা করে। আজকে অফিসে বিশ্রী এক হ্যারাসমেন্টের ঘটনা ঘটেছে। কারো সাথে শেয়ার করা যায় সেই উপায় নেই। গতো বছরের করেসপন্ডিং এক ফাইলের আদানপ্রদান করতে ইমিডিয়েট বসের ঘরে ঢুকেছিলো। বসের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। ইয়া বড় ভূড়ি, বড় মাথায় টাকটা স্পষ্ট বোঝা যায়, কথাবার্তাতেও আনস্মার্ট- ধপ করে কিনা তার উরুতে হাত দিয়ে বসলো! শিউরে উঠতে গিয়েও পরমুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিতে হয়েছে। মিষ্টি করে একবার হেসে বসকে মিথ্যা অভয় দিয়েছে। কিন্তু এভাবে কতোদিন নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়? হ্যান্ডসাম রাকায়েত সাহেব হলেও সে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠতে পারতো। কি ম্যানলী আচার-ব্যবহার, তাকানোর ভঙ্গি, এমনকি হাঁটবার ধরণটাও দুর্দান্ত স্মার্ট। রাকায়েত সাহেব একবার এপ্রোচ করলে রেজিস্টেন্সের সম্ভাবনা কি প্রশ্ন কোনটাই আসেনা। অনেকদিন ধরে সাদমানের বাবার আহ্বানে সাড়া যে দিতে পারছেনা তা তো আর এমনি এমনি নয়। না পারা যায় সইতে, না পারা যায় কিছু বলতে। এখন এসবের কিছু নিয়েই ভাবা যাবেনা। সাদমান তাদের সাথে থাকলে সম্পূর্ণ সমীকরণই আলাদা। বসুন্ধরা শপিংমলে খুব হইহল্লা হয়, আনন্দ হয়। কেনাকাটা, ডিনারের পরে গাড়িতে বসলে কাঁচ না নামিয়ে বাইরের ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে বাসায় ফেরা হয়। তারপরে সে রাতে স্বামী-স্ত্রীর নিজস্ব সকল টেনশন নির্বাপিত হয়। সামনের বড় কোন ছুটিতে থাইল্যান্ড নাকি সিঙ্গাপুর এই নিয়ে মিষ্টি মধুর ঝগড়া হয়। বাইরে হু হু করে বাতাস বাড়ে। সে রাতেও কর্তাদের গভীর রাতে পা টিপে টিপে ডাইনিং রুমে আসতে দেখা যায়। আজকেও তাদের তীব্র তৃষ্ণা পেয়েছে। তারা জগ থেকে পানি ঢেলে পরপর দুই গ্লাস পানি খায়। আজকে বাকি রাতটায় তাদের আর কোন নগ্ন নারীর প্রয়োজন নেই। স্ত্রীর দ্বারা আজকে রাতে অনেকদিন পর তারা তৃপ্ত। কিন্তু তারা আচমকা অনুভব করে কিছু একটা নেই। কি নেই তা তাদের বোধগম্য হয়না কিন্তু তারা স্পষ্ট অনুভব করে কিছু একটা নেই। অনস্তিত্বের সেই অস্তিত্ব তাদের ক্রমশ গ্রাস করে নেয়। বিছানায় যাবার পরেও তাদের ঘুম আসেনা। স্ত্রীর মুখের দিকে পিঠ দিয়ে তারা জাগ্রত চোখেই কি নেই তা খুঁজে বের করবার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। এদিকে সাহেব যখন ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খাচ্ছিলো তখন আফরোজার শরীর আতংকে জমে গিয়েছিলো। তবে কি আজকেও? চিৎকার করে উঠতে যাবে- এমন সময়ে যখন সাহেবের দরজা বন্ধ করবার মৃদু আওয়াজ পেলো তার মনে পড়লো এলুমিনিয়ামের থালায় গরম ভাত, একটা কাঁচামরিচ এবং পাতলা ডালে দুপুর তো দুপুর, গোটা রাতটাই মায়ের স্বপ্ন দেখে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেওয়া যায়। তার ছয় মাস পরে আবারো তুমুল বৃষ্টি হলে আকাশ কমলা রঙে রঞ্জিত হয়। বাড়ির কর্তাদের মনে হয় আজকে বুঝি গাঢ় ঘুম হবে। কিন্তু গভীর রাতেও তাদের ঘুম আসেনা। তখন তারা তৃষ্ণার্ত অনুভব করলে পা টিপে টিপে ডাইনিং রুমে গিয়ে পরপর দুই গ্লাস পানি খায়। তারা অনুভব করে একটি নগ্ন নারী শরীরকে তখন তাদের খুব প্রয়োজন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫

বিজন রয় বলেছেন: কি বলি!!

কখনো কখনো পুরুষরা জানোয়ারদের থেকেও খারাপ।

ভাল লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.