নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল আস্থায় পথ চলা

রুবেল ১৯৮৪

প্রমাণ্যচিত্র নির্মাতা

রুবেল ১৯৮৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ড এবং জিয়া অবস্থান

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭

জাতীয় চার নেতার পুণ্য স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।



৩ নভেম্বর ১৯৭৫ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কালো দিন। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর সোমবার ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে ঠান্ডা মাথায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ৩ নভেম্বরের প্রায় ৩ মাস আগে ১৫ আগস্ট ভোরে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা করা হয়। আর এ বছর ৩১ অক্টোবর ৪ জন প্রকাশক-লেখক-সংস্কৃতিসেবীর ওপর জঙ্গি হামলা করা হলে একজন প্রাণ হারান। এক বছরে অন্তত ৪ জন বস্নগারকে হত্যা করা হয়েছে। আসলে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলে চার নেতা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, বস্নগার হত্যা ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা একই সূত্রে গাঁথা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যসহ জাতির জনককে হত্যার পর থেকে গত ৪০ বছর ধরে এই ধারাবাহিক হত্যাকা- চলছে। ১৯৭৫-এর আগে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলশামস, আলবদরদের সহযোগিতায় ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে। একাত্তরের ডিসেম্বরে বিজয়ের প্রাক্কালে রাজাকার আলবদররা হত্যা করে দেশের সেরা সেরা বুদ্ধিজীবীদের। কয়েক বছর আগে বইমেলা চলাকালেই হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয় লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর। এসব হত্যাচেষ্টা এবং হত্যাকা-ের মূল লক্ষ্য হলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা। একাত্তরের ঘাতক সাকাচৌ এবং মুজাহিদকে ফাঁসির দড়ি থেকে রক্ষার জন্যই সর্বসাম্প্রতিককালের দুই বিদেশি হত্যা, পুলিশ হত্যা, তাজিয়া মিছিলের প্রাক্কালে পুরান ঢাকায় বোমা হামলাসহ বিভিন্নভাবে ধ্বংসাত্মক অপতৎপরতা চালান হচ্ছে। ফাঁসির তারিখ যত ঘনিয়ে আসবে, খুনসহ ধ্বংসাত্মক অপকর্মও বাড়তে থাকবে। এক কথায় বলা যায়, একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যে হত্যাকা- শুরু করেছিল, সেই হত্যাযজ্ঞ আজও অব্যাহত রয়েছে।যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, তারাই জেলে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। যে দেশি-বিদেশি চক্র বঙ্গবন্ধু এবং চার নেতাকে হত্যা করেছে_ সে চক্রই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার জন্য বারবার হত্যা-ষড়যন্ত্র করছে। যারা একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারাই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বরের হত্যাকা- ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং জেলহত্যা ছিল একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ। পাকিস্তানের ভুট্টো, আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার, বাংলাদেশের মোশতাক, মাহবুব আলম চাষি, তাহের ঠাকুর গং যারা একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, সেই তারাই পঁচাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক ও নায়কদের হত্যা-ষড়যন্ত্র করেছে। হেনরি কিসিঞ্জারের ব্যক্তিগত স্টাফ রজার মরিস তার 'আনসার্টেন গ্রেটনেস' গ্রন্থে লিখেছেন_ 'কিসিঞ্জারের তিনজন বিদেশি শত্রু ছিলেন_ বাংলাদেশের শেখ মুজিব, ভিয়েতনামের থিউ এবং চিলির আলেন্দে।' এই তিনজনের প্রতি মার্কিনিদের মনোভাব ছিল প্রতিহিংসাপরায়ণ; অনেকটা_ 'আচ্ছা! খুব বাড় বেড়েছে, দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি' গোছের মনোভাব। কিসিঞ্জার গং-এর প্রচ- বিরোধিতা সত্ত্বেও অনুপস্থিত মুজিবের নেতৃত্বে ৯ মাসের যুদ্ধে একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। মুজিবের কালজয়ী নেতৃত্বে একাত্তরে এই বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এটাই ছিল মুজিবের কৃতিত্ব। বহু মুক্তিযোদ্ধা একাত্তরে 'জয় বাংলা_ জয় বঙ্গবন্ধু' বলে সম্মুখ সমরে জীবন দান করেছেন। বিজয়ের পর বায়াত্তরের ১০ জানুয়ারি মুক্তির মহানায়ক মুজিব বীরের মতো স্বদেশে ফিরে আসেন। রজার লিখেছেন, 'হাভানায় ট্যাংকে চড়ে কাস্ট্রোর পুনরাগমনের পর, নির্বাসিত নির্যাতিত নেতা হিসেবে মুজিবের পুনরাগমন সংবর্ধনা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য সবচাইতে বিব্রতকর মুহূর্ত।' অর্থাৎ মুজিবের বিজয়কে কিসিঞ্জার তার ব্যক্তিগত পরাজয় মনে করতেন। বীরবেশে বিজয়ী মুজিবের স্বদেশ ফেরাকে কিসিঞ্জার মেনে নিতে পারছিলেন না।বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাতীয় চার নেতার হত্যার বিষয়টি ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ শত্রুপক্ষ জানতো, যে উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, চার নেতা জীবিত থাকলে তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হবে না। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাণিজ্যমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতির গদিতে 'ডামি' হিসেবে বসালেও তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে তাকে সরিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের পছন্দের মানুষ জে. জিয়াকে ক্ষমতায় আনা হয়। জে. জিয়াকে ক্ষমতায় আনার মাত্র চার দিন আগে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার পুরস্কার হিসেবেই ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের ৯ দিন পর সেনাপ্রধান কেএম সফিউল্লাহকে সরিয়ে উপপ্রধান জে. জিয়াকে সেনাপ্রধান এবং পাকিস্তানপ্রেমিক এরশাদকে ৬ মাসের মধ্যে দু-দুটি পদোন্নতি দিয়ে উপ-প্রধান নিযুক্ত করা হয়। ঘাতক ফারুক-রশীদ-ডালিম-নূররা বঙ্গভবনে থেকে দেশ শাসন করতে থাকে।ঐ সময় সেনাবাহিনীর তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে সামনে নিয়ে নুরুজ্জামান-সাফায়াতরা সেনাবাহিনীতে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। ঘাতক ফারুক-রশীদরাও বুঝতে পারছিল, তাদের বিরুদ্ধে যে কোন সময় পাল্টা অভ্যুত্থান হয়ে যেতে পারে। বিদেশি (পাকিস্তানি) সাংবাদিক অ্যান্থনী মাসকারেনহাস এর লেখা 'বাংলাদেশ : এ লিগ্যাসী অব বস্নাড' গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং এর পরবর্তী ঘটনাবলীর বিশদ উল্লেখ রয়েছে। ঘাতক সর্দার ফারুক ম্যাসকারেনহাসকে জানান, তিনি, রশীদ ও মোশতাক পাল্টা অভ্যুত্থান হলে তাদের করণীয় সম্পর্কে আগেই ঠিক করে রাখেন। এই তিন কুচক্রী চিন্তা করে_ তারা যেভাবে শেখ মুজিবকে সরিয়েছে, ঠিক একইভাবে অন্য কেউ মোশতাককে সরিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া পাল্টা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তো ছিলই। তারা সিদ্ধান্ত নেয় পাল্টা অভ্যুত্থান যদি ঘটে বা মোশতাককে যদি হত্যা করা হয়, তাহলে তারা ২টি কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ পরিস্থিতিতে অতিশয় দ্রুততার সঙ্গে প্রধান বিচারপতি এএম সায়েমকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে হবে, যাতে রাষ্ট্রে কোন শূন্যতা সৃষ্টি না হয়। দ্বিতীয় কাজটি হলো একই সময় একটি ঘাতক দল ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে ঢুকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতাকে হত্যা করবে। এই কাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি ঘাতক দল গঠন করা হয়। এই ঘাতক দলের নেতৃত্বে থাকবে ঘাতক ফারুকের বিশেষ আস্থাভাজন রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। এই মুসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি ঘাতক দলই ১৫ আগস্ট ভোরে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার স্ত্রী আরজু মণিকে হত্যা করে। এভাবে ঠা-া মাথায় তিন খুনি মোশতাক, ফারুক ও রশীদ চার নেতা হত্যার পরিকল্পনা করে।সিজিএস খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত ৩ নভেম্বর ক্যু'র মূল নায়ক ছিলেন কর্নেল শাফায়াত জামিল ও ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান। আসলে ক্ষমতা দখল নয়, খালেদের মূল লক্ষ্য ছিল সেনাপ্রধান হওয়া। মেজর ডালিম 'যা দেখেছি, যা বুঝেছি, যা করেছি' শিরোনামে তার গ্রন্থে লিখেছেন, সেনাপ্রধান হওয়ার জন্য খালেদ ১৫ আগস্টের ঘাতকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। ১৫ আগস্টের পর ঘাতক ফারুক-রশীদরা এমন একটা ভয়ভীতির মধ্যে ছিল_ যে কোন সময় পাল্টা অভ্যুত্থানে তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে শাফায়াত-নুরুজ্জামানসহ যেসব অফিসার ১৫ আগস্টের হত্যাকা- মেনে নিতে পারেনি, তারা আশঙ্কা করছিলেন, যে কোন সময় তাদের সেনাবাহিনী থেকে অবসর বা বরখাস্ত করা হতে পারে। ঐ সময় ৩৬ জন অফিসারকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আমলে ডালিম, নূরসহ অবসর পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। কিন্তু ৩৬ জন অফিসারের তালিকা থেকে সেনাপ্রধান জিয়া মাত্র দুজন অর্থাৎ কর্নেল রউফ এবং কর্নেল মালেকের চাকরিচ্যুতির আদেশে সই করিয়ে নেন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। ফারুক-রশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শাফায়াতরা জে. জিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন। জে. জিয়া বলেছিলেন, 'তোমরা আমাকে সময় দাও, আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।' শাফায়াতরা তখন ভাবেন, বেশি সময় দিলে তারা নিজেরা বাদ পড়তে পারেন।এমন পরিস্থিতিতে ২ নভেম্বর '৭৫ মধ্যরাতে খালেদের নেতৃত্বে শাফায়াত-নুরুজ্জামানরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। ক্যু-এর পর তিন খুনির পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রিসালদার মুসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে ঘাতক দলটি ঢাকা জেলে যায়। সশস্ত্র লোকদের ভেতরে প্রবেশে জেল কর্মকর্তারা বাধা দেন। মাসকারেনহাস তার গ্রন্থে লিখেছেন_ রশীদ তার স্মৃতিচারণে বলেছেন, 'ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ টেলিফোন বাজলো। টেলিফোন তুলতেই অপর প্রান্ত থেকে একজন বললেন, 'আমি ডিআইজি প্রিজন বলছি। আমি মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চাই।' রশীদ মোশতাকের কাছে ফোন দিলেন।' মোশতাক ও রশীদ দুজনেই মুসলেহ উদ্দিনের কথা মতো কাজ করতে ডিআইজিকে নির্দেশ দেন। এরপর মুসলেহ উদ্দিনরা জেলের ভেতরে ঢুকে ঠা-া মাথায় চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর দ্রুত একটা জিপে চড়ে তারা বাইরে চলে যায়। এর কিছু সময় পর তারা আবার জেলের ভেতরে ঢুকে নেতাদের বেয়নেট চার্জ করে। এটা প্রমাণিত সত্য যে, অবৈধ রাষ্ট্রপতি মোশতাক ও রশীদের নির্দেশেই মুসলেহ উদ্দিনরা জেলে ঢুকে চার নেতাকে হত্যা করেছিল।খালেদ মোশাররফের নির্বুদ্ধিতার জন্য ৩ নভেম্বরের সফল ক্যু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। খালেদ মোশাররফ যদি মোশতাক-জিয়াকে হত্যা করতেন, তাহলে তাকে এবং কর্নেল নজমুল হুদা বীরবিক্রম ও কর্নেল এটিএম হায়দার বীরোত্তমকে অসহায়ের মতো জীবন দিতে হতো না। ৩ নভেম্বরের ক্যু-এর নায়কদের আরও ভুল ছিল জেলে জাতীয় চার নেতার নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা। তবে সবকিছু ল-ভ- হয়ে যায় ক্ষমতালোভী কর্নেল তাহেরের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে। বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহেরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, তার সন্ত্রাসী সিপাহী বিপ্লবের কারণে জিয়ার ক্ষমতা দখল ত্বরান্বিত হয়েছে। এক বনে দুই রাক্ষস থাকতে পারে না। তাই এক রাক্ষস তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য অন্য রাক্ষসকে সাজানো বিচারে হত্যা করেছে। ৩ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় ১৫ আগস্টের ঘাতকদের দেশের বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। অবশ্য ক্যু-এর নেতারা তখন পর্যন্ত জেলে চার নেতা হত্যার খবর নাকি জানতে পারেনি। ৬ নভেম্বর রাতে কর্নেল তাহেরের সন্ত্রাসী সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে জে. জিয়া পুনরায় ক্ষমতায় চলে আসেন। অবশ্য মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে তার হঠকারিতার জন্য শেষ পর্যন্ত চরম মূল্য দিতে হয়। জে. জিয়া গোপন বিচারে তাহেরকে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ঠা-া মাথায় ফাঁসিতে হত্যা করেন। মুক্তিযোদ্ধা জে. জিয়া তার ৬ বছরের দুঃশাসনে স্বাধীনতাবিরোধীদের এদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা তাদের ২৫ বছরের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যাকা-ের বিচার বন্ধ, স্থগিত ও প্রলম্বিত করেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যার বিচারের উদ্যোগ নেয়।২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জেলহত্যা মামলায় পলাতক ৩ আসামিকে মৃত্যুদ- এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। এরপর হাইকোর্ট ২০০৮-এর ২৮ আগস্ট মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৩ জনের মধ্যে ২ জনকে খালাস এবং যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত ১২ জনের মধ্যে ৪ জনকে অব্যাহতি দিলে দেশের জনগণ স্তম্ভিত হয়ে যায়। অবশেষে অনেক চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে জেল হত্যাকা-ের ৩৮ বছর পর ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্ট রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবদুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদ- ও ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করেন। অবশ্য মৃত্যুদণ্প্রাডপ্ত ৩ জন পলাতক রয়েছে।জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারে ঘাতকদের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদ- হলেও এ ভয়াবহ হত্যাকা-ের আসল নির্দেশদাতা খন্দকার মোশতাক ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেল। একইভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যকা-ের মৃত্যুর কারণে মোশতাক ও জিয়াকে বিচারের আওতামুক্ত রাখা হয়। তবুও বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলে চার জাতীয় নেতার হত্যাকা-ে মোশতাক, জিয়াসহ আরও যারা নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন, তা দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে। ইতিহাসের প্রয়োজনেই তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত ছিল।৩ নভেম্বর ক্যু ও খালেদ হত্যার সঙ্গে জে. জিয়ার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অদ্যাবধি অস্পষ্ট রয়েছে। জিয়াকে বন্দী করার কথা বলা হলেও তিনি বন্দী ছিলেন না। জিয়া কথিত বন্দীদশা থেকে ফোনে তাহেরের সঙ্গে কথা বলে তাকে উদ্ধার করার অনুরোধ করেন। ফারুক রশিদ তাদের 'মুক্তির পথ' বইয়ে স্পষ্টভাবে লিখেছেন, ৩ নভেম্বরের ক্যু-এর সঙ্গে জিয়া ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তাছাড়া ক্যু-এর ব্যাপারে জিয়ার সঙ্গে খালেদ-শাফায়েতদেরও একটা বোঝাপড়া ছিল। জিয়া-তাহেরের যৌথ ষড়যন্ত্রের কারণে ৬ নভেম্বর রাতে সিপাহীদের হিংস্র থাবায় নারীসহ বহু নির্দোষ নিরপরাধ সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। কোনদিন একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত হলে হয়তো জানা যাবে, জিয়া শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রে নয়, জেলে ৪ নেতা হত্যা, খালেদ-হায়দার-হুদা হত্যা-ষড়যন্ত্রের জড়িত ছিলেন।বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যা ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ২টি বিচারেই হত্যাকা-ে যারা সরাসরি জড়িত বা সরাসরি অংশ নিয়েছে তাদেরই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি যারা বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেলহত্যা ষড়যন্ত্রে নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন, যারা ঘাতকদের মদদ দিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন, লেলিয়ে দিয়েছেন, শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন_ তাদের অনেকেই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি দলনিরপেক্ষ কমিশন গঠন করতে পারে। কমিশন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিনষ্টকারী এই দুটি জঘন্য ও নির্মম হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের নাম খুঁজে বের করবে। আর তা না হলে ইতিহাসের আদালত এবং পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের একদিন আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ইতিহাস পড়েন। খামাখা দলকানাদের মত লিখবে না...

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩

রুবেল ১৯৮৪ বলেছেন: জেল হত্যার ইতিহাস কোথঅয় পাবো ভাই।

৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:০২

রুবেল ১৯৮৪ বলেছেন: ভাই আমিও খুজছি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.