নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিভাগঃ ড্রামা,
পরিচালকঃ অমিতাভ রেজা
প্রযোজনাঃ কন্টেন্ট ম্যাটারস লিমিটেড
হাফ স্টপ ডাউন পরিবেশকঃ টি ও টি ফিল্মস
কাহিনী সংক্ষেপ এই শহরের ভিতরে আরও একটা শহর আছে। যার গল্প এখন আমরা আর শুনি না। সিনেমা নাটকেও দেখা যায় না। আয়নাবাজি সেই শহরের গল্প। যে শহরে এখনও সকালে দুধওয়ালা আসে, ফেরিওয়ালারা হাঁকডাক দেয়, বাচ্চারা দল বেঁধে নাটক শিখতে যায়। মহল্লার পুরীর দোকানে চা খায়, ঠাট্টা-মশকরা করে বখাটেরা। আয়না সেই শহরেরই একজন বাসিন্দা। ছোট বাচ্চাদের নাটকের দল সহজ-সরল একাকী জীবন। হঠাৎ জীবনে প্রেম হয়ে আসে হৃদি। পাল্টাতে থাকে আয়নার জীবন। সে আটকে যায় নানা রকম মুখোশে। একসময় ফিরে আসতে চায় মহল্লার অতি চেনা আয়না হয়ে। কিন্তু ফেলে আসা প্রেম ও নাটকের স্কুলে ফিরে যেতে পারে না সে। যে অভিনয়কে ভালোবেসে আয়না শহরকে মঞ্চ বানাতে চায়, সেই মঞ্চ একদিন হয়ে যায় ফাঁসির মঞ্চ। এ যুগের স্পার্টাকাস আয়না যেন তার শেষ নাটকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে জল্লাদের।
প্রধান কলাকুশলী কাহিনী, চিত্রনাট্য গাউসুল আলম শাওন ,
অনম বিশ্বাস সংলাপ আদনান আদিব খান
সঙ্গীত পরিচালক হাবিব ওয়াহিদ, ফুয়াদ, অর্ণব সুরকার
আর অপেক্ষা নয় ১১ অক্টোবর ২০১৬ দেখার চেষ্টা করতেই হয়! আমরার পাঁচ বন্ধু মিলে “আয়নাবাজি” দেখতে শ্যামলী প্রেক্ষাগৃহে গমন। মুভি শুরু হওয়ার বেশ আগে পৌঁছেও দেখি- যা আশংকা করেছিলাম তাই- প্রচুর মানুষের সমাগম, ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে, এখন ভালোয় ভালোয় টিকিট পেলেই হয়! ১৫০ টাকার টিকেট ৪৫০ টাকা দিয়ে কিনলাম। তবে কাঙ্ক্ষিত সিটের টিকিট পাওয়া গেল না, তা আগেই হাউজফুল হয়ে গেল। মাথা উঁচু করে দেখতে হবে, তবে তাতেও সন্তুষ্টি এল- বাহ, প্রচার-প্রচারণা ভালোই হয়েছে আর দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের উন্মাদনা যে মুভিকে ঘিরে সেটা যে আগেভাগে দেখার সুযোগ পাচ্ছি সেটাই তো তৃপ্তির কথা!
শরাফত করিম আয়না (চঞ্চল চৌধুরী) –সাধারণ অভিনয় শিক্ষক আর পার্টটাইম জাহাজের কুকের ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা এক ক্রিমিনাল! তবে ক্রাইমের জগতে তার বিচরণ হল অন্য দাগী অপরাধীদের হয়ে জেল খাটা- অন্যের হাঁটাচলা থেকে অঙ্গভঙ্গি সুনিপুণভাবে অনুকরণ করতে পারা মানে তার অভিনয়গুণই এক্ষেত্রে তার বড় যোগ্যতা। সাধারণের চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও এক হতাশাগ্রস্ত ক্রাইম রিপোর্টার (পার্থ বড়ুয়া) সত্য উদ্ঘাটনের জন্য আয়না-র পিছু নেয়, অন্যদিকে পাড়ায় নতুন আসা মেয়েটি (নাবিলা)-র প্রতিও আয়না অনুরক্ত হয়ে পড়ে। ক্ষমতা আর টাকার জোরে বড় বড় অন্যায় আর ক্রিমিনালদের এভাবে পার পেয়ে যাওয়ার খেলায় আয়না তার আয়নাবাজি কতদিন চালাতে পারবে? এমনি প্রশ্ন রেখে , “ক্রিমিনাল জেলের ভেতরে নয়,বাইরে থাকে” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এগিয়ে যায় অমিতাভ রেজা পরিচালিত, গাউসুল আলমের চিত্রনাট্যে , কনটেন্ট ম্যাটারস এর ব্যানারে নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্র “ আয়নাবাজি”।
প্রথমেই বলা যায়, মুভির স্টার্টিং গতানুগতিকতার চেয়ে ভিন্নভাবে শুরু হয়েছে যেখান থেকে আয়নার মোটিভ আর মানসিকতা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা মেলে। তারপর পুরো মুভির দৃশ্যায়নেও আছে ঢাকা শহরকে তুলে ধরার প্রয়াস- ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহারে দৃষ্টিনন্দন লং শট, আসামী বদল, প্রাত্যহিক জীবনধারা তুলে ধরা থেকে কাকবৃষ্টিভেজা দৃশ্যায়নেও যত্নের ছাপ পাওয়া যায়। আবহসঙ্গীত আর গানের ব্যবহারও যথাযথ- শানের গাওয়া “সূর্য যদি ওজন মাপে উঠে” গানটি খানিকটা ড্রামাটিকভাবে শুরু হয়েছে আর কী। কাহিনীর মাঝেও আছে কমেডি থেকে রোমান্স, থ্রিলার থেকে সাসপেন্সের ভাব।
এবার যদি আসি অভিনয়ে – প্রথমেই তো আয়না-চঞ্চল চৌধুরী-ই যেখানে প্রাণ! পোস্টমাস্টার-এর ক্ষণস্থায়ী চরিত্রটিকে গোনায় ধরলে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র রূপদান করেছেন চঞ্চল চৌধুরী- প্রতিটি চরিত্র রূপায়নেই নিজের মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। দর্শকরা প্রথম থেকেই করতালির মাধ্যমে তার এনট্রান্স বরণ করে নিয়েছে, তার প্রতিটি কমেডি পারফরমান্সে হেসে উঠেছে, চরিত্র পরিবর্তনের খেলা দেখে হাততালি দিয়েছে, তার চরিত্রের রোমান্স থেকে সাসপেন্স দারুণ উপভোগ করেছে। এক সময়ের থিয়েটারের নিবেদিত কর্মী চঞ্চল চৌধুরী সন্দেহাতীতভাবেই জাত অভিনেতা , কিন্তু কত নাটকেই তাকে গ্রাম্য যুবকের একঘেয়ে খোলসেই বন্দী থাকতে দেখা গেছে! মনপুরা-র গান গুনগুন করে গেয়ে উঠেছিলেন, তবে এই তিনি “আয়নাবাজি”-র একজনই আয়না-ভোল পাল্টে দর্শককে বিচলিত করতে যে সময় নেয় না!- সব্যসাচী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী সেজন্য যতটা প্রশংসার ভাগীদার, তার এ বৈচিত্র্যময় অভিনয়ের সুযোগ ও পরিবেশ তৈরি করে দেয়ায় পুরো “আয়নাবাজি” টিম ততোটাই অভিনন্দন পাওয়ার দাবিদার!
এরপর নায়িকা চরিত্রে মাসুমা রহমান নাবিলা- অভিষেকে ভালোই করেছেন। সব মিলিয়ে আয়না-র লাভ ইন্টারেস্ট চরিত্রই ছিল তার, কিন্তু তাতে কোন ন্যাকামি বা নাটুকেপনা না দেখিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন চরিত্রটিকে। আর বাদবাকি পার্শ্বচরিত্রগুলো- ক্রাইম রিপোর্টার চরিত্রে পার্থ বড়ুয়া, পারভারট ক্রিমিনাল লুৎফর রহমান জর্জ থেকে শুরু করে চিত্রনাট্যকারের উপস্থিতিও ছিল চরিত্রানুগ। পরিচিত শিশু মুখ থেকে মিরাক্কেল খ্যাত জামিলের কমিক উপস্থিতি-ও দর্শক উপভোগ করেছে- ছোটখাটো চরিত্রগুলোর মাঝেও কোন অতি-অভিনয় দেখা যায় নি। আর “Last but not the least!”- অতিথি চরিত্রে যার অভাবনীয় উপস্থিতি দেখে হতবাক হয়েছিলাম- সেজন্যও ধন্যবাদ!
দু’একটা সিকোয়েন্সের সাথে হালকা খটকা লাগার বিষয় বলতে গেলে- ক্রাইম রিপোর্টার চরিত্রটির অধিকাংশ সময় এমনকি দায়িত্ব পালনে গিয়েও মদ্যপ থাকাটা- মদ্যপানের উপকারিতাই তুলে ধরা হল কী না! যদিও এ ধরনের “জাতে মাতাল, তালে ঠিক” চরিত্র শুধু বাংলা না, বিশ্ব চলচ্চিত্রে-ই বহুল দৃশ্যমান। সাথে নায়িকা-র চরিত্রের তেমন গভীরতা না থাকা, তার বাবা আর কাজের লোকের উপস্থিতি থাকলেও সে নায়ক আয়না-র লাভ ইন্টারেস্টের বেশি কিছু নয়, আর যেভাবে হুট করে আয়না-র প্রতি এত অনুরক্ত হয়ে পড়ল। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ছোট্ট ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে- নায়িকার অতীত জীবনে কোন ঘটনা থাকতে পারে, তাই আর সাতপাঁচ না ভেবে গোবেচারা প্রকৃতির নায়ক দেখেই আয়না-র প্রতি তার গভীর অনুরাগ হয়ে গেল! আর এন্ডিং নিয়েও কেউ কথা তুলতে পারেন, কিন্তু নাহ, এমন সমাপ্তি না টানলে মন ভরত না! নীতি-দুর্নীতির দ্বন্দ্ব নয়, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই-ই প্রতিপাদ্য হয়েছে ছবিটিতে।
তাই সব মিলিয়ে- অমিতাভ রেজা তার প্রথম চলচ্চিত্রেই অনেকটা বাজিমাত করেছেন। হলভর্তি দর্শকরা শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত যেভাবে হাস্যরস আর করতালির মাধ্যমে উপভোগ করেছে, বোঝাই গেছে- মুভিটি দেখে তাদের পয়সা উসুল হয়েছে, “আয়নাবাজি” টিমের প্রচার-প্রচারণাও সার্থক! তাছাড়া নির্মাতা সাক্ষাৎকারেও জানিয়েছেন, বাজেট সীমাবদ্ধতার মাঝেও তিনি সেরা কলাকুশলীদের নিয়ে কাজের প্রয়াস চালিয়েছেন, মুভিটি নিয়ে যে কোন আলোচনা-সমালোচনা তিনি সাদরে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার ভবিষ্যৎ পথচলা নিয়ে তাই আরও শুভকামনা রইল।
“আয়নাবাজি”- আমার দর্শক দৃষ্টিতে সর্বোপরি রেটিং- ৯/১০!
পরিশেষে, হে বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক ঘরানার নির্মাতারা- ভালোবাসার সেই একঘেয়ে গৎবাঁধা কাহিনী [অনেক ক্ষেত্রে নকল!] চোখকান খোলা দর্শকরা কিন্তু আর দেখতে চায় না, তারা চায় বিনোদনের মাঝে এমন অভিনবত্ব আর ভিন্নতার ছোঁয়া। দেশবিদেশের বিভিন্ন পুরস্কার উৎসবে, পারতপক্ষে অস্কার-এও বাংলাদেশ থেকে “আয়নাবাজি” চলচ্চিত্রটিকে পাঠানো হোক, সেখান থেকে সম্মাননা বয়ে আনুক- চঞ্চল চৌধুরী সেরা অভিনেতা-র ,অমিতাভ রেজা সেরা নবাগত পরিচালকের পুরস্কার লাভ করুন! আর দেশের সকল চলচ্চিত্রপ্রেমীরা- এ ধরনের নির্মাণকে প্রণোদনা দিতে এবং নিজেরা সদলবলে বিনোদিত হতে- অতিসত্বর আপনাদের নিকটস্থ প্রেক্ষাগৃহে “আয়নাবাজি”-র ভেলকি লাগ উৎসবে শামিল হোন!
২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪
রুবেল ১৯৮৪ বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:২৩
নতুন বলেছেন: “আয়নাবাজি”- আমার দর্শক দৃষ্টিতে সর্বোপরি রেটিং- ৯/১০!
আমার রেটিং ৬/১০
গল্প খুবই দূবল`..
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: আমি মুভিটি দেখি নাই -- আপনার রিভিউ পড়ে যাহোক সাধ মিটলো -- আন্তরিক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য