নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল আস্থায় পথ চলা

রুবেল ১৯৮৪

প্রমাণ্যচিত্র নির্মাতা

রুবেল ১৯৮৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে নামে যা চলেছে!!!!!!!!!!!!

০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:২০

১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। ইতিহাসের বেদনাবিধুর ও বিভীষিকাময় এক দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এইদিন অতিপ্রত্যুষে ঘটেছিল ইতিহাসের সেই কলঙ্কজনক ঘটনা। সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী সৈনিকের হাতে সপরিবারে প্রাণ দিয়েছিলেন বাঙালির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই নৃশংস হামলার ঘটনায় আরো যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন তারা হলেন : বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকে। আগস্ট মাসটি তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে শোকের মাসে পরিণত হয়েছে।

ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলেও সেদিন আল্লাহর অসীম কৃপায় দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। সে সময় স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে সন্তানসহ অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। শেখ রেহানাও ছিলেন বড় বোনের সঙ্গে।
সকালে হাটার জন্য বের হয়েছিলাম। রাস্তাঘাটের সবখানেই শোক শোক একটা পরিবেশ পোস্টার ব্যানারের কারনে কিন্তু যতটা না শোক তার থেকে কেমনযেন খুশির আমেজটাই বেশি দেখলাম। এমন কোন পোস্টার ,ব্যানার দেখলাম না যেখানে শোকের কথা বলে অমুক ভাই তমুক ভাই দাঁত কেলিয়ে হাসি দেওয়া ছবি দেন নাই। সব ভাই ই শোক প্রকাশ করছেন কিন্তু সুন্দর একখানা হাসিমাখা মুখ নিয়ে।

কিছু পোস্টারে ,ব্যানারে লিখা "কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো"
জাতীকে কাদতে বলে নিজেরা এমন করে হাসি দিয়ে কি প্রকাশ করতে চাচ্ছে? তারা আমাদের বিদ্রুপ করছে না ত? না জাতীর কাঁদার কথা মনে করে তাদের হাসি পায়। কেউ একজন বল্ল
"দাদা ,বিরানী ভুরিভোজ হবে ত তাই শত শোকের মাঝেও হাসি চাপা রাখতে পারে নাই!"

একটু সামনে আগাতেই বৈশাখী টিভির অফিসের সামনে ছোট পার্কের (এটাকে ঠিক পার্ক বলাযায় না,উচু একটা যায়গা। যেখানে আগে মুখমুখি আওয়ামী-বিএনপির অফিস ছিল। দেশের অন্য কোথাও এমন বিরল জায়গা আছে কিনা জানা নাই। যার কারনে প্রতিদিনিই দু গ্রুপের বিবাদ লেগেই থাকত তাই অফিস উঠিয়ে জায়গাটা্র চারপাশে অনেকগুলা লোক বসার জায়গা করে দেয়া হয়েছে,এখন অবশ্য আওয়ামী নেতারা আবার তা দখলে নিয়েছে ৫ই জানুয়ারির পর বিএনপি অফিসের চিহ্নও দেখি নাই) সামনে দেখলাম ছোট একটা তাবু টানানো হয়েছে,কিছু সাউন্ড বক্স দেখলাম দেখলাম। বুঝলাম শোকদিবসের ভালই প্রস্তুতি চলছে।

গত ১৫ ই আগষ্টে দেখলাম এই পার্কের উচু জায়গায় কিছু নারী মঠেল মেকাপ নিয়া বসে আছে,স্পিকারে গান বাজতেছে,পাশে বিরাট পাতিলে কিযেন রান্না হচ্ছে। সবাই হাসি তামাশা করছে,নিজেদের মাঝে। শুরুতে ভাবলাম বৈশাখী চ্যানেলের কোন শুটিং হবে মনে হয়! কিন্তু পাশে থাকা একজন ভুল ভাঙ্গালো।
"আরে,শোকদিবসের কাঙ্গালী ভোজের রান্না হচ্ছে। আর ওনারা মঠেল না! আওয়ামী মহিলালীগের নেত্রী ইনারা!!"

আমার পাল্টা প্রশ্ন ছিল "শোক দিবস না বিরানী পার্টি? আর শোক দিবসের প্রোগ্রামে এত মেকাপ,গেটাপ,হাসি তামাসা কেন?" উত্তর পাই নি। কে জানে হয় ত এটাই তাদের শোক জানানোর ভাষা বা নিয়ম!

এতগেল মহিলালীগের কথা,এবার আসি সোনার ছেলেদের কথা। তারা কিন্তু অনেক দায়িত্ববান এই প্রোগ্রামকে নিয়ে। এলাকা থেকে চাঁদা উঠানো থেকে শুরু করে স্পিকার ভাড়া করার কাজ বড়দের পরামর্শ নিয়ে এরাই করে।

সারা রাত কাজ করে তারা যখন ক্লান্ত তখন সেই লাউড স্পিকার থেকে ৭ ই মার্চের ভাষনের পরিবর্তে হিন্দিগানের আওয়াজ যদি শুনতে পান তবে অবাক হওয়ার মত কিছু না। শরীর বড়ই ক্লান্ত,একটু বিনোদন সবাই চায়। এর মাজে কেউ একজন সেই গানের তালে নেচে উঠে। গ্রাম হলে, পাশের গ্রাম থেকে চুরি করে আনা মুরগি বা খাসি দিয়ে হয় ভুরি ভোজের প্রথম প্রহর শুরু। আর শহুরেরা ত আর মুরগি ,খাসি চুরি করবে না! আসলে স্কোপ নাই ,তাই ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উঠানো চাদার টাকায় তারাও পরের দিন সকালের কাজ কর্মের শক্তি জোগাতে ভুলে না।

বোতল থেকে লাল পানি খেলে নাকি মাংস বেশি খাওয়াযায়! পুর্ব প্রস্তুতি হিসাবে তারা এই কাজটাও করে নেয়।

সকালে আসে বড়ভাই নেতাকর্মীরা,চলে মিটিং,বক্তিতা শেষে অনেকে নেমে পড়েন যারযার কাজে। কোথাও খাসি জবাই বা কোথাও গরু জবাই দেয়া হয়। সেটাকে কেটেকুটে রান্না করার উপযোগী করতে করতে দুপুর। তারপর সেই গরু বা খাসি উনুনে বসানো হয়। গানের তালে তালে হয় রান্না। এই রান্নাটা হচ্ছে এলাকার গরীবদের জন্য। যেটাকে কাঙ্গালী ভোজ বলে তারা।

রান্না শেষ হতে হতে প্রায় বিকেল হয়েযায়। নেতাকর্মীদের পেটে তখন রাজ্যের খুদা। তারা বেমালুম ভুলেযায় রান্নাটা কাদের জন্য করা হয়েছিল। খেতে বসে সবাই। নিজেরা খাওয়দাওয়া শেষ করতে করতে সুর্যি মামা বিদায় নিল বুঝি। বাহিরে এসে দেখে গরীব দুখি কেউ নাই। দেশ মধ্যম আয়ের দেশ। গরীবের বড়ই অভাব তাই দু-চারজন যা আছে তাদের কয়েক প্যাকেট দিয়ে বিদায় করা হয়।

কাঙ্গালী ভোজ বিতরন শেষে নেতা দেখলো এখনো অনেক বিরানী বাকি। আশেপাশের নিজেদের লোকদের বাসায় তা পাঠানো হয়। বড় ভাই আবার বলে, তোদের ভাবি বিরানী অনেক পছন্দ করে। আজকের বিরানীটাও ভাল হইছে। কে আছরে বাসায় কয়েক প্যাকেট দিয়ে আয়। আদেশ পাওয়া মাত্র ২০/৩০ প্যাকেট নিয়া দৌড় বড়ভাইয়ের বাসায়। এভাবেই শেষ হয় শোক দিবসের প্রোগ্রাম। তবে ব্যতিক্রমও আছে,অনেক জায়গায় ধর্মীয় উপাসানালয়ে নিহতদের জন্য দোয়া চাওয়া হয় যেটা খুবই নগণ্য।


দিন শেষে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, যাদের জন্য এই আয়োজন করা হল বা যার জন্য করা হল ,কাজের কাজ কি হল?
নেতাকর্মীদের চাদাবাজী,ভুরিভোজ,হাই ভলুউমে স্পিকারে গানবাজনা,ছাত্র-ছাত্রীদের পরাশুনার ক্ষতি ছাড়া কিছুই না।

মাননীয় প্রধান মন্ত্রী হয় ত জানেন না,শোক দিবসের নামে,তার পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু দিবসে ,তার পরিবারকে ঘিরে কতটা উল্লাশ,হাসি-তামাশা,বিদ্রুপ করা হয়! যদি জানতেন তবে প্রত্যেক নেতা কর্মীকে আদেশ দিতেন। যাও ধর্মীয় উপাসানালয়ে যাও,মৃত্দের আত্তার শান্তির জন্য প্রার্থনা কর।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.