নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল আস্থায় পথ চলা

রুবেল ১৯৮৪

প্রমাণ্যচিত্র নির্মাতা

রুবেল ১৯৮৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৫ আগস্ট-এ জেনারেল জিয়ার ভূমিকা রহস্যময়

১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৫৭

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে সামরিক ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে মামলার দলিলের ভিত্তিতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন :
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিলো রহস্যময়। হত্যা মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যে প্রমাণ হয়েছে, একদিকে তিনি সংবিধানকে সবার উপরে রাখার কথা বলেছেন, অন্যদিকে খুনিদের বিরুদ্ধে সেদিন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেননি।

শুধু তাই নয়, হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহখানেক পর সেনাপ্রধান হয়ে তিনি যেমন খুনিদের 'যেমন খুশি' কার্যক্রম চালানোর সব ব্যবস্থা করে দেন, তেমনই তাদেরকে পরে পুনর্বাসিত করেন; হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশেও অনুমোদন দেন।

একইসঙ্গে আসামীদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন জেনারেল জিয়া। সেটা বন্ধে কোনো ব্যবস্থা তো দূরের কথা, উল্টো তিনি তাদেরকে উৎসাহ যুগিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ঘুরেফিরেই এসেছে প্রয়াত জেনারেল জিয়ার নাম। প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে সেসময়ের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহ মামলার ৪৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জানান: তার এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানের একইরকম যোগ্যতা থাকলেও 'বাই নম্বরে' জেনারেল জিয়াউর রহমান সিনিয়র ছিলেন। জেনারেল ওসমানীর পরে ১৯৭২ সালে জিয়াউর রহমানের জায়গায় তাকে চিফ অব আর্মি স্টাফ করা হলে তিনি (শফিউল্লাহ) নিজেই প্রতিবাদ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গেলে বঙ্গবন্ধু বলেন, তোমার কথা শুনেছি। দেয়ার ইজ সামথিং কলড পলিটিক্যাল ডিসিশন।

জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, স্যার, ফ্রম টুডে অ্যান্ড অনওয়ার্ডস আই অ্যাম অ্যা ভিকটিম অব সারকামস্টেন্সেস। বঙ্গবন্ধু তখন বলেন, তোমরা বড় বড় কথা বলো, যাও কাল থেকে তুমি জেনারেল ওসমানীর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবে।

শফিউল্লাহ অফিসে গিয়ে প্রথমেই কুমিল্লায় জিয়াউর রহমানকে ফোন করেন। টেলিফোনে তার নিয়োগসহ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত জানান। কথা শোনার পর জিয়া বলেন, ওকে শফিউল্লাহ, গুড বাই।

এর সপ্তাহখানেক পর একটা নতুন পদ ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ সৃষ্টি করে ওই পদে জিয়াকে নিয়োগ দেয়া হয়। এই পদ পাওয়ার পরও তার মনে ক্ষোভ থেকে যায় বলে শফিউল্লাহ বুঝতে পারতেন।

তিনি জানান: কর্নেল তাহেরও মনে করতেন, জিয়ারই আর্মি চিফ হওয়া উচিত। তাহের একদিন শফিউল্লাহর অফিসে এসে বলেন, স্যার, এতোদিন তো চিফ অব আর্মি স্টাফ থাকলেন, এখন এই পদটা জিয়াউর রহমানের জন্য ছেড়ে দেন।

তাহেরের কাছ থেকে এরকম অপ্রত্যাশিত কথা শুনে তখনই শফিউল্লাহ তাকে বলেন, ডু ইউ নো, ইউ আর ডাউন ক্যাটাগরাইজড? তুমি এখনই সিএমএইচে যাও এবং সসম্মানে মেডিক্যালি বোর্ড আউট হয়ে যাও। তা না হলে তোমাকে চাকুরি থেকে বহিষ্কারে বাধ্য হবো।

শফিউল্লাহ জানান: বঙ্গবন্ধুকে এই বিষয়টি জানানো হলে তিনিও এতে সমর্থন জানান। অবশেষে কর্নেল তাহের মেডিক্যালি অবসর গ্রহণ করেন। তাহেরের অবসরে আর্মিতে কিছু প্রতিক্রিয়া এবং অপপ্রচার হয়।

রক্ষী বাহিনী গঠন এবং রক্ষী বাহিনীকে কার্যকর করার জন্য গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হলে সামরিক বাহিনীতে অপপ্রচার এবং অসন্তোষও দেখা যায় বলে শফিউল্লাহ জানান।

তিনি বলেন: পাশাপাশি ছিলো মেজর ডালিমের অবসরের ঘটনায় কিছু অপপ্রচার। ডালিমকে অব্যাহতি দেয়া হলে মেজর নূর সরকারের বিরুদ্ধে কিছু আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে। এ কারণে তাকেও চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিলো। জেনারেল জিয়ার পি.এস ছিলো মেজর নূর। তাদের অবসরেও কিছু অপপ্রচার চলে। সেই অপপ্রচারে সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এছাড়া বেতন-ভাতা নিয়েও কিছুটা ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিলো যার সমাধানের বদলে নীরব থেকে জেনারেল জিয়া তা কিছুটা উস্কে দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৪৭ নম্বর সাক্ষী মেজর জেনারেল (অব.) খলিলুর রহমান বলেন, ১৯৭৩ সালে ব্রিগেডিয়ার হিসেবে পাকিস্তান থেকে ফেরত এসে দুইমাস পর বিডিআরে পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীতে তিনি ক্ষুব্ধ ভাব লক্ষ্য করেন।

‘তখন সামরিক বাহিনীর জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠন না করার কারণে সামরিক বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ ছিলো। সামরিক-বেসামরিক যৌথ বেতন কমিশনে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন জেনারেল জিয়া। কিন্তু, জিয়া এই বিষয়টি বেতন কমিশনে তুলে ধরেননি,’ বলে জানিয়েছেন জেনারেল খলিল।

তাছাড়া, জেনারেল জিয়া নম্বরের ভিত্তিতে জেনারেল শফিউল্লাহর চেয়ে সিনিয়র থাকার পরও তাকে সেনাপ্রধান না করায় আর্মি অফিসাররা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় বলে দাবি করেছেন ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় বিডিআর প্রধান এবং পরে চীফ অব ডিফেন্স স্টাফ হওয়া জেনারেল খলিলুর রহমান।

সাক্ষীদের সাক্ষ্যে বোঝা যায়, সেনাবাহিনীতে এরকম অসন্তোষ এবং জিয়ার সেনাপ্রধান হতে না পারার ক্ষোভকে এক করে তাকে ব্যবহার করে মেজর রশিদ এবং মেজর ফারুক।

মেজর ফারুক তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিজেও এরকম বলেছে: ওই সময়ে লেডিস ক্লাবে মেজর ডালিমের স্ত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সারের কিছু অফিসার ও জওয়ান গাজী গোলাম মোস্তফার বাড়ি তছনছ করে। তাতে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে মেজর ডালিম, মেজর নূর ও আরো কয়েকজনের চাকুরি চলে যায়। সেসময় ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান মাঝে মাঝে পরিবারসহ আমার বাসায় হেঁটে হেঁটেই চলে আসতেন। তিনি দেশের পরিস্থিতি আলোচনা করতেন। একসময় বলেছিলেন, তোমরা ট্যাংক-টুং ছাড়া দেশের আর খবরা-খবর রাখো কি? আমি বলি যে, দেখছি তো দেশের অনেক উল্টাসিধা কাজ চলছে। আলাপের মাধ্যমে তিনি আমাকে ইনস্টিগেট করে বললেন, দেশ বাঁচানোর জন্য একটা কিছু করা দরকার। আমি বিষয়টিকে তখন গুরুত্ব দেই নাই।

তবে, তার দাবি ১৯৭৫ সালের প্রথমদিকে বাকশাল গঠন হওয়ার পর পরিস্থিতি ভিন্নরকম হয়ে যায়।

ফারুকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আছে: মেজর রশিদের সাথে দেশের আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা হতে থাকলে সিদ্ধান্ত হয় যে, একমাত্র শেখ মুজিবকে ক্যান্টনমেন্টে এনে তাকে দিয়ে পরিবর্তন করা ছাড়া দেশে কোনো পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। রশিদের বাসায় এসব আলোচনাকালে তার স্ত্রী জোবায়দা রশিদও (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় প্রথমে তাকে আসামী করা হলেও পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পায়) উপস্থিত ছিলো।

‘এ ব্যাপারে জিয়াউর রহমানের সাথে আলোচনা হয় এবং সাজেশন চাইলে তিনি বলেন, আমি কী করতে পারি, তোমরা করতে পারলে কিছু করো। পরে আমি রশিদের বাসায় গিয়ে জিয়ার মতামত তাকে জানাই। রশিদ তখন বলে, এই বিষয় নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। এটা পলিটিক্যাল ব্যাপার। আমি ডিল করব। রশিদ পরে জিয়ার সঙ্গে এবং খন্দকার মুশতাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে,’বলে জানায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ফারুক।

মেজর রশিদের সঙ্গে জিয়ার আসলে কি কথা হয়েছিলো, মৃত্যুদণ্ডে পাওয়া পলাতক রশিদ ছাড়া আর কারো জানা নেই।

তবে মামলার ৪৪ নম্বর সাক্ষী কর্নেল সাফায়েত জামিল তার সাক্ষ্যে বলেছেন, ১৫ আগস্ট ভোরে জিয়ার বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, জিয়া শেভ করছেন। ঘটনা শোনার পর জেনারেল জিয়া বলেন, সো হোয়াট প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার, আপহোল্ড দ্যা কনস্টিটিউশন।’

কেউ যদি উপপ্রধানের বক্তব্যের প্রথম অংশ শোনেন যে রাষ্ট্রপতি মৃত, তাতে কি হয়েছে(!), তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে এই হত্যাকাণ্ডকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু পরের অংশটা শুনলে মনে হবে, সংবিধানকে উর্ধ্বে তুলে ধরে উপরাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলছেন তিনি।

তবে এখানে জিয়াকে সংবিধানের রক্ষক মনে হলেও পরে আর কোনো কার্যক্রমে তার প্রমাণ মেলেনি। তিনি নিজে সেনাপ্রধান হয়েও সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেননি। এর আগে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে সেনাপ্রধান শফিউল্লাহও তার কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি।

শফিউল্লাহ তার সাক্ষ্যে বলেছেন, ১৯ আগস্ট ফর্মেশন কমান্ডারদের কনফারেন্স শুরু হওয়ার আগে ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল সাফায়েত জামিল তার সঙ্গে দেখা করে বলেন, ডু নট ট্রাস্ট ইওর ডেপুটি, হি ইজ বিহাইন্ড অল দোস থিংস।

এ বিষয়ে ৪৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে কর্নেল সাফায়েত জামিল বলেন, ২৪ আগস্ট সেনা প্রধান হলেও জেনারেল জিয়া আর্মিতে ‘চেইন অব কমান্ড’ ফিরিয়ে আনার কোনো চেষ্টাই করেননি। এর ফলে ৩ নভেম্বর একটি অভ্যুত্থান অত্যাবশক হয়ে পড়ে।

তিনি জানান: ১৫ আগস্টের খুনি অফিসারদের ‘চেইন অব কমান্ডে’ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ৩ নভেম্বর সিজিএস খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে তারা একটি সেনা অভ্যুত্থান ঘটান। ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সার ছাড়া সব ইউনিট তাদের সঙ্গে ছিলো।

‘এই অভ্যুত্থানের নেগোসিয়েশনের এক পর্যায়ে ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের (২ নভেম্বর দিবাগত রাতে) জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অফিসার মেজর রশিদ, মেজর ফারুক, মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর পাশা, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), ক্যাপ্টেন মাজেদ, কর্নেল শাহরিয়ার, রিসালদার সারোয়ার, রিসালদার মোসলেমসহ আরো কয়েকজন পরিবারসহ খন্দকার মুশতাকের উদ্যোগে ২ নভেম্বর রাতে দেশত্যাগ করে চলে যায়,’ উল্লেখ করে সাফায়েত বলেন, জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডে জড়িত অফিসারদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে চাকুরি দিয়ে পুনর্বহাল করেন।

তবে মেজর ফারুক ও মেজর রশিদ ওই চাকুরি নেয়নি।

তারা দু’জনই ১৯৭৬ সালে দেশে ফিরে আসে জানিয়ে সাফায়েত জামিল বলেন, মেজর ফারুক সাভারে, বগুড়ায় বিদ্রোহের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আর মেজর রশিদ টু ফিল্ড আর্টিলারির কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব গ্রহণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

জেনারেল জিয়া তার সময়ে অনেক অভুত্থান চেষ্টায় অনেককে ফাঁসিতে ঝুলালেও, এমনকি তাকে ক্ষমতায় আনা ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের কারণে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলেও, ফারুক-রশিদের বিরুদ্ধে জেনারেল জিয়া কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে জানান কর্নেল সাফায়েত জামিল।

তবে, তিনি জানান, ১৯৮০ সালের শেষদিকে ১৫ আগস্টের খুনি অফিসাররা জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে জিয়া তাদের সকলকে (বিদেশে বাংলাদেশ মিশন থেকে) চাকুরিচ্যুত করেন। তখন থেকে তারা বিদেশেই ফেরারি জীবন যাপন করতে থাকে।

কিন্তু, সাফায়েত জামিল জানান, এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখল করে দ্বিতীয়বার তাদের পুনর্বাসন করেন এবং আগের সমস্ত বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দেন। ‘সেই থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সকল সরকারের আমলে তারা পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে,’ বলে সাফায়েত জানান।

তাদের মধ্যে ফারুক-রশিদ অবশ্য পরে ফ্রিডম পার্টি গঠন করে দেশেই থেকে যায়। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ফারুক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলো। আর ১৯৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এমপি হয়েছিলো কর্নেল রশিদ। পরে ৯৬’র ১২ জুনের নির্বাচনের পর পর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে রশিদ বিদেশে চলে যেতে পারে। আর কয়েক মাসের মধ্যে গ্রেফতার হয় মেজর ফারুক, মেজর সুলতান শাহরিয়ার, আব্দুল ওয়াহাব জোয়ার্দার, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এবং ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাড়ি লক্ষ্য করে কামান দাগানো সেসময় পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে থাকা আর্টিলারির কর্নেল মুহিউদ্দিন। জোয়ার্দার এবং ঠাকুর অবশ্য বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা থেকে খালাস পায়। আর বিদেশ থেকে ফেরত আনা বজলুল হুদা ও ল্যান্সারের মহিউদ্দিনসহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয় ফারুক, শাহরিয়ার ও মুহিউদ্দিন।

এই মুহিউদ্দিন তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে পাঠানো সকল মেজরকে কূটনৈতিক মিশনে চাকুরি দেন। কিন্তু, মেজর রশিদ ও মেজর ফারুক চাকুরি নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আর্মিতে পুনর্বহালের ষড়যন্ত্র করতে থাকে। মেজর রশিদ, মেজর ফারুক ও মেজর ডালিম ১৯৭৬ সালে গোপনে হঠাৎ বাংলাদেশে চলে আসে এবং মেজর ফারুক সাভার সেনানিবাসে গিয়ে বেঙ্গল ক্যাভালরি (সাবেক ল্যান্সার) এর কমান্ড হাতে তুলে নেয়।

‘বগুড়ায় অবস্থানরত বেঙ্গল ক্যাভালরির অন্য ইউনিটের সৈনিকরাও ফারুক রহমান সেখানে না গেলে মার্চ করে ঢাকা আসবে বলে হুমকি দিলে ফারুক রহমান বগুড়া চলে যায় এবং সেখানে গিয়ে ল্যান্সার ইউনিটের কমান্ড গ্রহণ করে। জেনারেল জিয়া ফারুক রহমানকে ঢাকায় ফেরত আনেন। পরে এই অপরাধে এই ইউনিটের অনেক সৈনিকের কোর্ট মার্শালে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন, এমনকি ইউনিটটি বাতিল করে দেন। কিন্তু মেজর ফারুককে সাজা না দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেন,’ এভাবে ফারুকের প্রতি জিয়ার ভালোবাসার কথা জানান মুহিউদ্দিন।

তিনি বলেন: মেজর ফারুকের সঙ্গে আসা মেজর রশিদ এবং মেজর ডালিম ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে টু ফিল্ড আর্টিলারির কমান্ড এবং কন্ট্রোল হাতে নেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং সৈনিক লাইনে গিয়ে বিদ্রোহের উস্কানি দিতে থাকে। কিন্তু জিয়াউর রহমান তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ৩/৪ দিন পর বিদেশে ফেরত পাঠান। এতে আমার (কর্নেল মুহিউদ্দিনের) মনে হয়, ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা ছিলো যার জন্য ফারুক ও রশিদের প্রতি খুবই দুর্বল ছিলেন জেনারেল জিয়া।
সূত্র: চ্যানেল আই

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.