নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল আস্থায় পথ চলা

রুবেল ১৯৮৪

প্রমাণ্যচিত্র নির্মাতা

রুবেল ১৯৮৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিরিয়ার প্রকৃতরূপ কী!

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৩

সিরিয়ায় আসাদ বাহিনীর হামলায় শিশুদের মৃত্যুর মিছিলের যেসব ছবি পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে তার অধিকাংশই পুরানো ছবি। ভাইরাল হওয়া শিশু হত্যার ছবিগুলো যে বেশ পুরোনো ইন্টারনেট ঘেটে তার সত্যতাও মিলেছে। কিন্তু সেগুলোকে বর্তমান সময়ের ছবি বলে চালানো হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, অতীতের বিভিন্ন দেশের আলোচিত ঘটনার ছবিকেও সিরিয়ার ছবি বলে দাবি করা হচ্ছে। অথচ এই সব ছবির মধ্যে বেশ কিছু ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক আগেই প্রকাশ হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই পুরোনো ছবিগুলো দিয়ে প্রপাগান্ডা চালাতে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো ব্যস্ত হয়ে উঠলো? কেন প্রকৃত ঘটনার ছবি প্রকাশের চেয়ে ভিন্ন ছবি প্রচার করে গণমাধ্যম সরব রাখা হচ্ছে? এক্ষেত্রে আন্তজার্তিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দেয়া সিরিয়ার বিরুদ্ধে এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ। এছাড়া সারা বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করা এবং নিজেদের মধ্যে হানাহানি ছড়িয়ে দিয়ে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করা নতুন এ প্রচারণার উদ্দেশ্য হতে পারে। সিরিয়া যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণেও রয়েছে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক সম্পদ্গত কিছু উদ্দেশ্য।

(১) ক্রন্দরত পিতা ও কন্যা :
এই ছবি প্রচার করে বলা হচ্ছে, সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সরকার বেসামরিক নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করছে। অথচ এই ছবি ২০১৭ সালের ৬ মার্চ ‘বিজনেস ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকায় এসেছিল, যার ক্যাপশন ছিল ‘ক্রন্দনরত এক পিতা তার বাচ্চাকে নিয়ে আইএস সন্ত্রাসী কবলিত এলাকা থেকে ইরাকি বাহিনীর দিকে পালিয়ে যাবার সময়’। বিজনেস ওয়ার্ল্ড’র ৬ মার্চ, ২০১৭ তারিখের নিউজ লিংকে গিয়ে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেন : US-backed Iraqi forces launch fresh push toward Mosul old city center; civilians caught in crossfire

(২) ছোট বোনকে মাস্ক পরিয়ে মৃত্যুর কোলে বড় বোন:
গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছবিটি অসংখ্যবার শেয়ার করা হয়েছে। আমাদের দেশীয় গণমাধ্যমেও এ সংবাদ এসেছে। দৈনিক কালের কণ্ঠ’র পরিবেশিত সংবাদে বলা হয়েছে “বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তুলতে এই একটি ছবিই যথেষ্ট। সিরিয়ায় এক ধ্বংসাত্মক রাসায়নিক গ্যাস হামলায় আহত হয় ছোট বোন। তাই তাকে কোলে নিয়ে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে ধীরে ধীরে নিজেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো বড় বোন! এই দৃশ্য দেখার পরও কি আমাদের বিশ্ব বিবেক চুপ করে থাকবে? মাত্র একটি ছিল অক্সিজেন মাস্ক আর প্রাণ ছিল দুটি। ছোট বোনের চেয়ে সে নিজেই আহত ছিল বেশী। বর্তমান সিরিয়ায় এরকম হৃদয়বিদারক ঘটনা অহরহই ঘটছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। মানবতা আজ কোথায়?”
এবার আসা যাক ছবিটি সিরিয়ার কিনা। গুগলে ম্যাচিং সার্চ করে দেখা যায় এটি ২০১৭ সালেও ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে ছবিটি আসলে ২০০৮ সালের। মঙ্গোলিয়ায় নির্বাচন পরবর্তী দাঙ্গার সময় তোলা। এবার তা সিরিয়ার বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।




(৩) “সিরিয়ায় চলছে এক ভয়ানক দাবার খেল” শিরোনামে দৈনিক কালের কণ্ঠ যে ছবিটি দিয়ে সংবাদ করেছে, সেটি আসাদ সরকারের হামলার ছবি নয়। ২০১৪ সালে খ্রিস্টানদের ওপর আইএসআইএস’র বর্বরতার খবরে এই ছবিটি ছিল। নিচের লিংক থেকে যাচাই করতে দেখতে পারেন।

এর সত্যতা যাচাই করতে পারেন : Syrian Jihadis ‘Take Aim’ at Christian Toddler

(৪) সম্প্রতি এই ছবিটি প্রচার করে সিরিয়ান সরকারের মুন্ডুপাত করা হচ্ছে, অথচ এই ছবি ৩০ অক্টোবর ২০১৩-তে প্রকাশিত ‘অলিম্পিক চ্যানেল’র ‘হ্যালোইন কিডস’ এডিশনের ছবি। অলিম্পিক চ্যানেলের ৩০ অক্টোবর, ২০১৩ এর নিউজ লিংকে গিয়ে দেখতে পারেন- Halloween Kids

(৫) এই ছবিটি দেখিয়ে বলা হচ্ছে সিরিয়ার, অথচ এটি ২০০৮ সালে মঙ্গোলিয়ায় নির্বাচনোত্তর দাঙ্গার ছবি যা ২ জুলাই, ২০০৮ তারিখ-এ ‘দ্য রাউটার্স’ এ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রমাণ, একই তারিখে নিউজ লিংকের এ গিয়ে দেখে আসতে পারেন- Five dead in Mongolia post-election violence

(৬) যেভাবে রং মা‌খি‌য়ে সি‌রিয়ায় আহত হওয়ার ভি‌ডিও বানা‌নো হয়:
শিশুদের শরীরে মাটি-বালি লাগিয়ে, রঙ মাখিয়ে গুরুতর আহত বানিয়ে ভিডিও ধারণ করে সিরিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে সেগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার ফাঁস হওয়া ভিডিও দেখতে এই লিংকে যেতে পারেন-
view this link

(৭) জীবিত মানুষদের কাফন জড়িয়ে লাশ বানানোর ভিডিও:
জীবিত মানুষদের লাইন ধরে শুইয়ে দিয়ে কাফন জড়িয়ে লাশ বানিয়ে সিরিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
তার ফাঁস হওয়া ভিডিও ক্লিপ্স দেখতে এই লিংকে যেতে পারেন- view this link

ভাবনার বিষয় এটা বলা যায় না যে, সিরিয়ান সরকারের অপারেশনগুলোতে একদমই সাধারণ কেউ মরছে না। এটা কোনো যুদ্ধের ব্যাপারেই, কেউ দাবি করতে পারবে না। যদি তেমন দাবি করে, সে ডাহা মিথ্যুক। বরং যুদ্ধ মানেই মৃত্যুর মিছিল, তা হোক আগ্রাসী অথবা প্রতিরোধী যুদ্ধ। কোথাও কম, কোথাও বেশি, কোথাও ইচ্ছাকৃত হত্যাযজ্ঞ। যেমন ফিলিস্তিনের ওপর; রাখাইনে, ইয়েমেনে অথবা প্রতিরোধী মিলিটারি অপারেশনের অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যা। এটাই যুদ্ধের সবথেকে প্রাথমিক খারাপ দিক। কিন্তু বিস্ময়কর কথা হচ্ছে, যখন ইয়েমেনের মতো একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরে গিয়ে গত ছয় বছর যাবত সৌদি যে আগ্রাসন চালাচ্ছে, তখন ‘সেইভ ইয়েমেন, সেইভ ইয়েমেনী বাচ্চাকাচ্চা’ বলে কেউ কাঁদেন না! সিরিয়ার গৌতায় সামরিক অভিযান নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তারা কিন্তু সিরিয়ার আফরিনে কুর্দিদের ওপর তুরস্কের হামলার সমালোচনা করছেন না। সিরিয়ায় আমেরিকার হামলায় প্রতিদিন বেসামরিক মানুষ নিহত হলেও তা নিয়ে কোনো কথা নেই। কেন এই স্ববিরোধিতা? বরং একটা বিশেষ কমিউনিটি ইয়েমেনে সৌদির, সিরিয়ায় তুর্কির এসব আগ্রাসনকে সমর্থন করে আসছে।
কেন এই অপপ্রচার? ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর মিশর, তুরস্ক-সহ ক্ষমতাধর মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ‘অসলো’ ও ‘ক্যাম্প ডেভিড’ চুক্তিতে সই করে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় এবং ‘অবৈধ রাষ্ট্রটির’ সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু সিরিয়া হচ্ছে একমাত্র আরব দেশ, যে ইসরায়েলের সঙ্গে আপোস করেনি। আসাদ সরকার আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতিরও বিরোধী। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ১৯৭৯ সাল থেকে ইরান মনে করে, আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইসরায়েল মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়া ক্রুসেড চালাচ্ছে। ইরানের সহায়তায় ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী লেবাননে হিজবুল্লাহ বাহিনী গড়ে তোলা হয়। ২০০৬ সালে ইসরায়েলের সাথে অসম যুদ্ধে লেবাননের হিজবুল্লাহ গেরিলারা যে সাহসিকতা ও সাফল্য দেখিয়েছে, তা ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু ইরান থেকে ইরাকের মধ্য দিয়ে সিরিয়া পার হয়ে লেবাননে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র যায়। সে কারণে ইরাকের পর সিরিয়ার সরকারকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আমেরিকা-ইসরাইলসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
বর্তমান সিরিয়ার এর সত্যতা যাচাই করতে পারেন : অন্যান্য ছবিগুলো আপনাকে দেখাবে সিরিয়া কতোটা সুন্দর ছিলো!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩২

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
পশ্চিমা মিডিয়াগুলো বিশ্বকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যা কেউ না মেনে অন্য পথে হাটতে পারবে না। আবার মানতে গিয়ে ভ্রষ্ট হবে এবং হচ্ছেও।

ধন্যবাদ, তথ্যবহুল আলোচনায়।

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৫

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
এই মন্তব্যটি মুছার সাথে সাথে আপনার শিরোনামের 'কি' টাকে 'কী' করে দিয়েন।
আপাতত এতটুকুই ;)
ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম!

জায়ানিষ্ট মিডিয়ার খেলায় কাৎ পুরা বিশ্ব! বিকল্প মিডিয়া দাড়াতেও পারছে না।
আর এ প্রচারণা্ও যেন হঠাৎ করে আসা প্লাবনের মতো ইনবক্স ভরে যাচ্ছে একের পর এক লিংকে!
ভয়ংকর এক খেলায় মগ্ন সাম্রাজ্যবাদী গং!

সত্য প্রকাশিত হোক। মিথ্যা ধ্বংস হোক।

৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১

আমানউল্লাহ রাইহান বলেছেন: এই কটা ছবি আগের হলেও বর্তমানে যে সেখানে আসাদ, এরদোগান, পুতিন ও হাসান রূহানির জোট গণহত্যা চালাচ্ছে তা তো স্পষ্ট।

৫| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০২

তাহ্ফীর সাকিন বলেছেন: সত্য মিথ্যা যাচাই এখন আর মানুষ করতে পারছে না । ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে । পৃথিবী কোথায় যাচ্ছে

৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৩

তাহ্ফীর সাকিন বলেছেন: সত্য মিথ্যা যাচাই এখন আর মানুষ করতে পারছে না । ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে । পৃথিবী কোথায় যাচ্ছে

৭| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৫০

আবু তালেব শেখ বলেছেন: কিন্তু বর্তমানে নৃহ মানুষ মারা হচ্চে এটাতো সত্য

৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: খুব অল্প কিছু মানুষ পৃথিবীর শান্তি নষ্ট করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.