নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল আস্থায় পথ চলা

রুবেল ১৯৮৪

প্রমাণ্যচিত্র নির্মাতা

রুবেল ১৯৮৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তরুণদের ভাবনা

০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ৮:৫৫

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে এসে বলেছিলেন, ‘দুনিয়ার সব রাষ্ট্রের কাছে আমার আবেদন আমার রাস্তা নাই, আমার ঘাট নাই, আমার খাবার নাই, আমার জনগণ গৃহহারা, সর্বহারা, আমার মানুষ পথের ভিখারি। তোমরা আমার মানুষকে সাহায্য কর, মানবতার খাতিরে তোমাদের কাছে আমি সাহায্য চাই। দুনিয়ার সকল রাষ্ট্রের কাছে আমি সাহায্য চাই। তোমরা আমার বাংলাদেশকে তোমরা রিকোগনাইজ কর। জাতিসংঘের ত্রাণ দাও দিতে হবে। উপায় নাই দিতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ছবি চোখের সামনে ফুটে ওঠে। একটু সময় নিয়ে কল্পনা করলে কারো পক্ষে তা বোঝা অসাধ্য হবে না। সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশ আজ কোথায় উঠে এসেছে ভাবা যায়? আমরা তো এগিয়ে যাবই। এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র তো আমার জাতিসত্তার গভীরে রাখা। ওই দিনের ভাষণে বঙ্গবন্ধুই তো বলেছিলেন, ‘আমি আমরা হার মানবো না। আমরা হার মানতে জানি না।’
যে জাতি হার মানতে জানে না, তাদের কি চাইলেও আটকে রাখা যাবে, থামিয়ে রাখা যাবে এগিয়ে যাওয়ার গতি? পিছিয়ে থাকতে শেখেনি বাঙালি। এই প্রজন্মের শিরায় তো পূর্বপুরুষের রক্ত বইছে। তবে তারা কেন পিছিয়ে থাকবে?
আমরা বর্তমান প্রজন্ম খুব ভাগ্যবান। মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েই একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। চোখে অদেখা ছিল সাধারণ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন শোষণ নির্যাতন। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমাদের অনেকের কাছে পৌঁছায়নি বলেই পূর্বসূরিদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা আমাদেরকে তেমনভাবে হয়তো নাড়া দেয় না, মহান বিজয় সত্যিকার অর্থে উল্লসিত করে না, উজ্জীবিত করে না। শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই নয়, আমাদের নবীন প্রজন্মদের অনেকেই জানে না আমাদের বাংলা সংস্কৃতি, সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবেই তারা বড় হচ্ছে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে; এই দেশে জন্মে এই দেশের আলো-বাতাস গায়ে মেখে। তারা জানে না ষড়ঋতু মানে কি বা কয়টি ঋতু আছে আমাদের, তারা জানে না বাংলা বারো মাসের নাম তবুও তারা বিশ্বাস করে তারা বাঙালি, তারা বাংলাদেশি।
আমরা কি পেরেছি স্বাধীনতার সুফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে? এখনো অনাহারে অর্ধাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে শত সহস্র বাংলাদেশি; এখনো বস্ত্রের অভাবে লজ্জা ঢাকতে পারছে না অনেকেই কিংবা শীতবস্ত্রের অভাবে বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর খবর ভেসে আসে পত্রিকার পাতায় কিংবা টেলিভিশনের পর্দায়; এখনো লাখো বাংলাদেশি ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন; আমাদের শিক্ষাঙ্গন আজ কলুষিত, রাজনীতি, সন্ত্রাসী, দখলবাজি, চাঁদাবাজির ও নানা রকম অপরাধের কালো থাবায়, শিক্ষকদের কাছেও আজকাল শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়, স্বীয় শিক্ষক দ্বারাই আজ শিক্ষার্থীরা ধর্ষিত হচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে, শিক্ষকরাও সমান তালে প্রকাশ্যে নানা অপরাধে নিজেদের জড়াচ্ছে; চিকিৎসকরাও আজকাল চিকিৎসাসেবাকে মহৎ পেশা হিসেবে দেখছেন না।
আমরা সবাই জানি, যে বিষয়টি ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের কথা ভাবাও যায় না সেটি হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জানা উচিত। বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে এই ইতিহাস জড়িয়ে আছে। আজকের প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুধু ইতিহাসই নয়, এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য শক্তি, সাহস, প্রেরণা এবং সকল বাধার মুখে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এক মহান মন্ত্র। এদেশের তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার আগ্রহের কমতি নেই। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যখন নানা মতভেদ দেখে তখন বিভ্রান্তির শিকার হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রজন্ম যেমন চোখে দেখে সত্যটা জেনেছে। তার পরবর্তী প্রজন্মও অগ্রজের মুখে শুনে শুনে সঠিক ইতিহাসটা কিছুটা হলেও জেনেছে। কিন্তু বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস পৌঁছাতে ক্ষণে ক্ষণে নানাভাবে বিকৃত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকারগুলোর মধ্যে অনেকেই নিজেদের স্বার্থানুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করেছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছানোর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের। আর সে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন তাঁরা যদি সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয় তবেই সঠিক ইতিহাসটা তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছাবে। আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকের মধ্যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়ে জানাশোনা তলানিতে। এর দোষ পুরোপুরি তাদের, তা বলা যাবে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার প্রথম পাঠশালা পরিবারের দায়িত্বও কম নয়। তথ্যপ্রযুক্তিতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ঠিক। নতুন উদ্ভাবন কিংবা আবিষ্কারের সঙ্গে নতুনদের সখ্য বেশি হবে- এটাই স্বাভাবিক। কারণ, কিশোর-তরুণদের স্বচ্ছ মস্তিষ্ক খুব কম সময়ে অনেক জটিল বিষয় ধারণ করতে পারে। অনেক সূক্ষ্ম বিষয়ও তাদের ভাবনায় দ্রুতই ছড়িয়ে যায়। এভাবেই তাদের চিন্তাশক্তির ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় ধীরে ধীরে। অন্তর্জালের বিস্তৃতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বান ডেকেছে।
এই বানে পলি জমছে আমাদের চিন্তাশীল মস্তিষ্কের পরতে পরতে। এদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা বেশি। যারা এ প্রজন্মের পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা বা পিছিয়ে পড়া তরুণদের মধ্যে একটি বড় অংশ এখনও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গোড়ার কথা জানে না।
তবে আশার কথা হলো, তরুণদের অনেকেই বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাভাবনায় এগিয়ে যাচ্ছে ঈর্ষণীয়ভাবে। ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনৈতিক গতিধারা সব বিষয়ে খোঁজখবর করার অভ্যাস গড়ে উঠছে তাদের। তাদের মতান্তর, লেখালেখি, আলাপ-আলোচনাতে এর প্রমাণ মেলে। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এসব নিয়ে গবেষণাও করছে। পড়াশোনা করছে। তরুণ প্রজন্মের ভাবনার এ বিকাশ এক দিনে হয়নি। মুক্তমত প্রকাশ, জানার ইচ্ছে, জানানোর ইচ্ছে সব কিছুর মিলে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে পড়ছেন মাকসুদা পারভীন ইভা। রাষ্ট্রচিন্তার মৃদু ছাপ আছে তার মননে। খুব একটা গভীরে না গেলেও এ তরুণীর ভাবনাতে আছে স্বচ্ছতা। তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত করার কথা বলা হয়। বিপরীতে উদ্যোগ আছে কতটুকু? পাঠের অভ্যাস কমেছে। জানার আগ্রহ কমেছে। কিন্তু কেন? এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
দেশের অস্তিত্বের সঙ্গে যেসব চেতনা, দর্শন জড়িয়ে আছে তা আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। ফেসবুক-প্রজন্ম বলে যাদের চিহ্নিত করা হয়, তরুণদের ওই অংশের প্রতি আরও গুরুত্ব দিতে হবে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সঙ্গে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জ্ঞানার্জন তো সাংঘর্ষিক কিছু নয়, তবে কেন অভিভাবকরা এ বিষয়ে মন দেবেন না? খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, দফায় দফায় সামরিক অভ্যুত্থান, রাজনীতির অতীত-বর্তমান সম্পর্কে সচেতন করার আগ্রহ কম অভিভাবকেরই আছে। তারা মনে করে, এসব বাহুল্য। পরীক্ষার খাতায় বা মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এসবের যতটুকু পড়া দরকার, ততটুকু হলেই হবে। আমাদের স্বাধীনতা দিবস কবে? উত্তরে যেন সন্তানটি ২৬ মার্চ বলতে পারে। অতটুকুই যথেষ্ট। অথবা বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, এর বেশি জানার কী আছে? আবার বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন যে মুক্তিযুদ্ধের বীজতলা রচনা করেছিল—এসব জেনে প্রতিযোগিতামূলক কর্মজীবনে কতটুকুই কাজে আসবে? অভিভাবক ও পরিবারের সদস্যদের এমন ধ্যান-ধারণা নতুন প্রজন্মের প্রকৃত নাগরিক হওয়ার অন্তরায়, এটা কজন বোঝেন?
আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের যে পথে হাঁটছে, সেই পথ ভবিষ্যতেও পাড়ি দিতে হবে। তরুণ প্রজন্মই নেতৃত্ব দেবে আগামীদিনের বাংলাদেশ। তাই তাদের গড়ে তুলতে হবে প্রকৃত আদর্শে। যে আদর্শের তাড়নায় তারা সৎ হবে। দেশপ্রেমে থাকবে অটল। প্রকৃত দেশপ্রেমের চেতনা তাদের শিরায় বইবে। এই দেশ নিয়ে তারা গর্ব করবে। নোংরা রাজনীতি করা অসুস্থ প্রজন্ম নয়, মেধাবী ও সৎ সন্তানরাই দেশ গড়তে পারবে স্বপ্নের সমান করে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:




শেখ সাহেবের রক্তের মাঝে ভিক্ষা করার স্বভাব ছিলো; ১৯৭১ সালের মুক্তিযু্দ্ধে যা ক্ষতি হয়েছিলো, সেটা জনতার; সরকারের কোন ক্ষতি হয়নি। উনি যদি মানুষকে কাজে লাগিয়ে দিতেন দেশ হতো জাপানের মতো; উনি ভিক্ষা করে এনে রিলিফ দিয়েছেন, মানুষ হয়েছে ইয়েমেনের মতো।

২| ০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:২৩

চাঁদগাজী বলেছেন:




তরুণদের অনেক বুদ্ধি, সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ফেলে!

৩| ০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৪৯

নয়া পাঠক বলেছেন: অথচ- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই যারা যুদ্ধ করেনি তারা মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে সরকারী তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে প্রতিমাসে ২৫,০০০/- টাকা ভাতা, মাসিক রেশন, আবাসিক সুবিধা সহ অন্যান্য সরকারী সুবিধা ভোগ করে চলেছে।

অথচ এমন অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন যে, তারা সনদপত্রও নেয়নি নাম অন্তর্ভূক্তিও করেনি।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনেক বড় পাওয়া। অথচ আমরা ভুল কারনে মুক্তিযুদ্ধ শব্দ টা ব্যবহার করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.