নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল আস্থায় পথ চলা

রুবেল ১৯৮৪

প্রমাণ্যচিত্র নির্মাতা

রুবেল ১৯৮৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কওমি শিক্ষা সনদ, সংস্কার, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতীয় সংঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা সম্পর্কে মাদ্রাসার শিক্ষক

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৭



হেফাজতে ইসলামের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ১০০০ মাদ্রাসায় তদন্ত করতে গিয়ে গণকমিশনের প্রতিনিধিরা ৪ হাজারেরও বেশি ছাত্র-শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছেন। হেফাজত প্রভাবিত হলেও কওমি মাদ্রাসার ৮০ ভাগ ছাত্র-শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতীয় সংঙ্গীত গাওয়া ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। মাদ্রাসার শতকরা ৯০ ভাগ ছাত্র-শিক্ষক কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি এবং পাঠ্যসূচির সংঙ্কার চান। নিম্নোক্ত যে দশজন শিক্ষকের বক্তব্য প্রকাশ করা হল তারা হলে-
১. মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী, সাবেক শিক্ষক, আল-জামিয়া আজিজুল উলুম বাবু নগর মাদ্রাসা, বর্তমান মিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া জামিরিয়া কাশেমুল উলুম পটিয়া, চট্টহ্রাম। খতীব ঃ ফটিকছড়ি উপজেলা থানা গায়েবী জামে মসজিদ।
২. মাওলানা কবীর আহমদ, পরিচালক, জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল উলুম কওমি মাদ্রাসা, ফরিদপুর, কেন্দ্রীয় সদস্য, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
৩. মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, সাবেক শিক্ষা পরিচালক, চট্টগ্রাম রেলওয়ে, (পাহাড়তলী) কওমি মাদ্রাসা, লেখক, প্রবন্ধকার, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
৪. মাওলানা আবদুস ছাত্তার, কেন্দ্রীয় সদস্য হেফাজতে ইসলাম, পরিচালক, বরকল মাদ্রাসা আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
৫. মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী, পরিচালক জামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম পদুয়া, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক, হেফাজতে ইসলাম, সভাপতি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা হেফাজত।
৬. মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, পরিচালক, জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়া, বরিশাল, কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
৭. মাওলানা আবদুল জাব্বার জিহাদী, পরিচালক, জামিয়া রহমানিয়া, ছোটবনগ্রাম, রাজশাহী।
৮. মাওলানা মুফতি গোলামুর রহমান, পরিচালক, জামিয়া ইসলামিয়া মারকাযুল উলুম মাদ্রাসা, খুলনা, কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক, হেফাজতে ইসলাম।
৯. মাওলানা দৌলত আলী খান, লেখক, কলামিষ্ট ও শিক্ষক, আল জামিয়াতুল ইসলামীয়া নছিরুল ইসলাম, (নাজির হাট বড়) মাদ্রাসা, ফটিকছড়ি চট্টগ্রাম।
১০. মাওলানা আব্দুর রহমান বেতাগী, পরিচালক, মাদ্রাসায়ে নূরে মদিনা, বড় গ্রাম কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।
প্রশ্ন ঃ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার এবং সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী ঃ কওমি পাঠসূচীর (সিলেবাস) পরিবর্তন চাই। কিন্তু আমূল পরিবর্তন নয়। পুরাতন এমন কিছু বিষয় রয়েছে কওমি পাঠসূচীতে যা আমাদের আদৌ প্রয়োজন পড়ে না। সে সব বিষয় কে বাদ দিয়ে বাংলা-ইংরেজীর সমন্বয়ে আধুনিক কিছু বিষয় সংযোজন করে নতুন ভাবে সিলেবাস প্রণয়ন করার মত রয়েছে আমার।
সনদের স্বীকৃতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন পাকিস্তান-ভারতসহ যে সব দেশে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি রয়েছে তেমনি ভাবে আমাদের দেশেও সরকার থেকে সনদের স্বীকৃতি নিলে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না বরং ছাত্ররা লাভবান হবে এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে চাকরীর ব্যবস্থা হবে। দেশেরও লাভ হবে কর্মসংস্থান বাড়ার কারণে দেশ সমৃদ্ধও হবে।
মাওলানা কবীর আহমদ ঃ সরকারি স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই কারণ কওমি মাদ্রাসা আল্লাহর স্বীকৃতি দেয়া একটি প্রতিষ্ঠান। আল্লাহর স্বীকৃতি থাকলে সরকারের স্বীকৃতির প্রয়োজন পড়ে না। এই সিলেবাস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মুরব্বিদের (প্রবীণ) পরামর্শক্রমে এই সিলেবাস শত বছর ধরে বহাল রয়েছে। তবুও কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলি পরিবর্তন হয়েছে এবং আরো কিছু পরিবর্তন হওয়া দরকার।
মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ঃ কিছু সংস্কারের দরকার রয়েছে। বাংলা-ইংরেজীর আরও সংযোজন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় উর্দু-ফার্সি বাদ দিতে হবে। স্বীকৃতির বিষয়ে আমরা অনেক দিন হতে বলে আসছি। এখন কথা হলো কোন ধরনের শিক্ষা সিলেবাসের ভিত্তিতে সনদের স্বীকৃতি দেয়া হবে সেটা দেখার বিষয়। আমার মত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে এমনভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে যেন কওমি স্বকীয়তা বজায় থাকে।
মাওলানা আবদুস ছাত্তার ঃ আমরা সনদের স্বীকৃতি চাই না, স্বীকৃতি লাগবে কেন? কওমি মাদ্রাসা হলো দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে আল্লাহর স্বীকৃতি হলো আসল স্বীকৃতি। আমরা সরকারের টাকা দিয়ে এবং তাদের গোলাম হয়ে থাকতে চাই না।
সিলেবাস পরিবর্তনের প্রশ্নই আসে না। এই সিলেবাস শাহ ওয়ালিউল্লাহর (রঃ) সিলেবাস। এই সিলেবাস দেওবন্দি সিলেবাস। এটা হাটহাজারীর সিলেবাস। সুতরাং এটার পরিবর্তনের কোন কারণ দেখছি না।
মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী ঃ সনদের স্বীকৃতি এবং সংস্কার দুটুই চাই আমরা। ‘আমি খতীবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ এবং সুলতান যওক নদভীর অনুসারী। শিক্ষা সংস্কার বিষয়ে খতীবে আজমের লিখিত উর্দু গ্রন্থ এবং সুলতান যওক নদভীর ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার ডাক’ শিরোনামে গ্রন্থগুলো আমি প্রকাশ করেছি।’
এই গ্রন্থ গুলোতে তারা (২০/৫০ বছর পূর্বে) বলেছিলেন বর্তমান কওমিতে যে শিক্ষা সিলেবাস রয়েছে তার মধ্য থেকে উর্দু-ফার্সি কে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে বাংলা-ইংরেজি বাধ্যতামূলক করতে হবে। বর্তমান কওমি মাদ্রাসায় যে শিক্ষা সিলেবাস রয়েছে তা জাতির কোন কাজে আসবে না। এমনকি নিজেরও কোন ক জে আসবে না। আমরা অনেক বছর ধরে সংস্কারের জন্য আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আমাদের পুরাতন মডেলের আলেমরা তা বুঝতেছেন না। জমিরিয়া কাসেমুল উলুম পটিয়া মাদ্রাসা, দারুল মা’আরিফ মাদ্রসা এবং আমার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাসহ আরো হাজার মাদ্রাসা রয়েছে যারা আমাদের মত কওমি শিক্ষা সিলেবাস সংস্কার ও সনদের স্বীকৃতি চাই। আমি নিজেই আমার মাদ্রাসায় প্রচলিত হাটহাজারীর সিলেবাস গ্রহণ করিনি। আমার মাদ্রাসায় বর্তমান নতুন আধুনিক সিলেবাসে পাঠদান করে চলেছি। সরকার যদি কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি দেয় আমাদের দাবি অনুযায়ী, তাহলে সমস্যা হওয়ার কিছু দেখছি না। যার বিরোধীতা করেন সেটা তাদের পাগলামী ছাড়া কিছুই নয়।
মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব ঃ সনদের সরকারি স্বীকৃতি এবং কওমি শিক্ষা সিলেবাস সংস্কারের পক্ষে একমত আমার। কিন্তু সেটা আমাদের নিয়মে হতে হবে। না হয় আমরা তা প্রত্যাখ্যান করবো।
মাওলানা আবদুল জাব্বার জিহাদী ঃ কওমি স্বকীয়তা বজায় রেখে যদি স্বীকৃতি দেয়া হয় তাহলে আমি স্বীকৃতির পক্ষে, না হয় আমি স্বীকৃতি চাই না। পাঠ্যসূচীতে অবশ্যই কিছু আধুনিক বিষয় ঃ যেমন বাংলা-ইংরেজী সংযোজন করা যেতে পারে কিন্তু বিয়োজন করা যাবে না।
মাওলানা মুফতি গোলামুর রহমান ঃ কওমি মাদ্রাসার যুগোপযোগি সংস্কার আমরা চাই। কিন্তু যেন আমাদের কওমি মাদ্রাসার মূল ভিত্তি দারুল উলুম দেওবন্দের মূল সিলেবাস ধ্বংস না হয়ে যায়, সনদের স্বীকৃতিও খুব প্রয়োজন। তাই সনদের স্বীকৃতির পক্ষে আমি।
মাওলানা দৌলত আলী খান ঃ কওমি সিলেবাস সংস্কার করতে হবে। এমন অনেক কিতাব (বই) রয়েছে কওমি পুরানো এই সিলেবাসে, যার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। যেমনÍ উর্দু, ফার্সির কিতাবগুলো প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন ক্লাসে আরো অনেক কিতাব আছে যা ছাত্ররা বুঝে না। এই সিলেবাসে বাংলা-ইংরেজির সমন্বয় করে, অপ্রয়োজনীয় গ্রন্থ পাঠ্যসূচী থেকে বাদ দিয়ে কওমি সিলেবাস সংস্কার করে সনদের স্বীকৃতি নিতে হবে। সনদের স্বীকৃতি শুধু আমি নয় আমার মত হাজার শিক্ষকরা চায়। স্বীকৃতি দিলেই তো লেখা-পড়ার মান বাড়বে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুযোগ পাবে।
মাওলানা আব্দুর রহমান বেতাগী ঃ কিছুটা সংস্কার চাই কওমি শিক্ষা সিলেবাসের। যেখানে থাকবে বাংলা-ইংরেজি এবং যুগোপযুগি প্রয়োজনীয় শিক্ষা যেমন কম্পিউটার ইত্যাদি। সনদের স্বীকৃতি অবশ্যই চাই এবং সরকারকে স্বীকৃতি দিতেই হবে।

প্রশ্ন ঃ জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না কওমি মাদ্রাসায়। সে বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী ঃ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং উত্তোলন করতে হবে। কোন মাদ্রাসায় যদি বাংলাদেশের প্রতীক জাতীয় পতাকা না তুলা হয় তাহলে সরকারের পক্ষে হতে বাধ্য করতে হবে যেন অবশ্যই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। জাতীয় সংগীতের বিষয়ে আমাদের কিছু অভিযোগ রয়েছে। তারপরও জাতীয় সংগীত গায়লে তেমন বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
মাওলানা কবীর আহমদ ঃ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলে কি না করলেও কি! এখানে লাভ ক্ষতির কিছু দেখছি না। সরকার যদি বাধ্য করে তাহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় সংগীত তো গাওয়াই যাবে না। কারণ জাতীয় সংগীত গাওয়া না জায়েজ।
মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ঃ জাতীয় পতাকা উত্তোলনে বাধা নেই। কিন্তু জাতীয় সংগীত গাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে।
মাওলানা আবদুস ছাত্তার ঃ জাতীয় পতাকা উত্তোলন বিষয়ে আকাবিরে দ্বীন যদি বলেন (হাটহাজারীর মুরব্বিরা) তাহলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। তবে মাঝে মধ্যে আমরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি। জাতীয় সংগীত গাওয়া হারাম। এই সংগীত হিন্দুদের সংগীত। দ্বীনি মাদ্রাসায় সংগীত গাওয়া জায়েজ নেই।
মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী ঃ জাতীয় পতাকা তুলতেই হবে। আর যদি না তুলে সেটা অপরাধ। যদি কোন মাদ্রাসা সেই অপরাধ করে থাকে সেটা সরকারের দায়িত্ব অবহেলার কারণে হয়েছে বলে আমি মনে করি। সরকারকে বাধ্য করতে হবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে। না হয় শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় সংগীত গাইলে তেমন বেশি অসুবিধা হবে বলে আমার মনে হয় না। এর চেয়ে অনেক বেশি অপরাধ আমরা কওমিরা করে থাকি। এই দুটি বিষয়ে সরকারের উচিত বাধ্য করা, কওমি মাদ্রাসায় যেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।
মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব ঃ জাতীয় পতাকা হলো এই দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। তাই আমি জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পক্ষে এবং পতাকা তুলা মানে হলো স্বাধীনতার পক্ষে মত দেয়া। স্বাধীন দেশের স্বীকৃতির জন্য জাতীয় পতাকা তুলতেই হবে। জাতীয় সংগীত এর বিষয়ে আমার কিছু বক্তব্য রয়েছে যা আজ আমি বলতে পারছি না সময়ের অভাবের কারণে।
মাওলানা আবদুল জাব্বার জিহাদী ঃ জাতীয় পতাকা উত্তোলনে বাধা কোথায়? অবশ্যই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না। কারণ ইসলাম ধর্ম গান-বাদ্যকে বৈধতা দেয়নি।
মাওলানা মুফতি গোলামুর রহমান ঃ জাতীয় পতাকা উত্তোলনে আমার মনে হয় না কোন অসুবিধা আছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে কারণ এই পতাকাটা আমার স্বাধীন দেশের প্রতীক। জাতীয় সংগীতের ব্যাপারে ওলামায়ে দেওবন্দের অভিযোগ রয়েছে। তাই জাতীয় সংগীতের ব্যাপারে আমিও দ্বিমত পোষণ করছি।
মাওলানা দৌলত আলী খান ঃ জাতীয় পতাকা অবশ্যই তুলতে হবে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা মানে হচ্ছে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা। জাতীয় সংগীতের বিষয়ে কওমি আলেম-ওলামারা দ্বীমত পোষণ করেন। আমার নিজের মত হলো, জাতীয় সংগীত গাইলে কোন সমস্যা দেখছি না। আমি জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পক্ষে।
মাওলানা আব্দুর রহমান বেতাগী ঃ জাতীয় পতাকা মাঝে মাঝে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু আমি চাই প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক দিবসে সরকারি নিয়ম কানুন মেনে যেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সংগীত গায়লে তেমন বেশি অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু জাতীয় সংগীত নিয়ে আমাদের কওমি আলেমদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে।

প্রশ্ন ঃ পাঠসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংযোজন করা এবং পাঠদান বিষয়ে আপনার মতামত?
মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী ঃ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এর ব্যবস্থা করে কওমি সিলেবাসে সংযুক্তি করে সরকারকে পাঠদানের বাধ্য করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের খুব বেশি জানা প্রয়োজন এবং জানতে হবে। এদেশের নাগরিক হলে এদেশ সম্পর্কে জানা থাকা অবশ্যই একজন ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ মানুষের অধিকার।
মাওলানা কবীর আহমদ ঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো দোষের কিছু না। আমাদের মুরব্বিরা যদি বলেন এবং সরকার যদি বাধ্য করেন তাহলে পাঠ্যসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংযোজন করা হবে।
মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ঃ পাঠ্যসূচীতে সঠিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংযোজন করে অবশ্যই পাঠদান করানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
মাওলানা আবদুস ছাত্তার ঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের মাদ্রাসায় রয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ইতিহাস আমরা পড়াই।
আমাদের মাদ্রসায় ইসলামের (যুদ্ধের) ইতিহাস পড়ানো হয় বেশি। এটা তো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তাই এখানে ইসলামের ইতিহাস বেশি থাকা দরকার।
মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী ঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না থাকাটা সরকারের অপরাধ। আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনটা রাখবো কোনটা সঠিক মনে করবো? সরকার যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেন এবং বাধ্য করেন আমার মনে হয় কওমিরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তাদের পাঠ্যসূচীতে সংযোজন করবেন এবং পাঠদান করাবেন।
মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব ঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবশ্যই সংযোজন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা হলেন এদেশের কৃতি সন্তান। নবী-সাহাবাদের যুগে যারা বদরের যুদ্ধ করেছেন তারা যেমন মুক্তিযোদ্ধা; তেমনি ভাবে এদেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন তারাও একই যোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা হলো ওহুদ এবং বদরের যুদ্ধের সাহাবাদের মত। কিন্তু আমাদের একটা দাবি থাকবে মুক্তিযোদ্ধারা যেন ইসলামের বিরুদ্ধে কথা না বলেন। পাঠ্যসূচীতে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংযোজন চাই।
মাওলানা আবদুল জাব্বার জিহাদী ঃ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অবশ্যই সংযোজন করা দরকার।
মাওলানা মুফতি গোলামুর রহমান ঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে আমি কোন মতামত দেব না।
মাওলানা দৌলত আলী খান ঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যসুচীতে অবশ্যই সংযোজন করতে হবে। বাধ্য করতে হবে যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয়।
মাওলানা আব্দুর রহমান বেতাগী ঃ পাঠ্যসূচীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংযোজন করা চাই এবং করতেই হবে।

প্রশ্ন ঃ কওমি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থান পায় না, আপনি কী বলবেন?
মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী ঃ ছাত্রদের শিক্ষা শেষে কওমি মাদ্রাসা, মসজিদ এবং মকতব ছাড়া আর কোন কর্মসংস্থান নেই, এটা সঠিক না।
মাওলানা কবীর আহমদ ঃ ওলামায়ে দেওবন্দের ছাত্ররা শিক্ষার্জন করেন চাকরীর জন্য নয়। আল্লাহকে পাওয়ার জন্য। তাই সরকারি চাকরী পেলেও কি না পেলেও কি? আমাদের চাকরীর দরকার নেই আমরা চাই ইসলামের খেদমত করতে।
মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ঃ ছাত্রদের শিক্ষা শেষে কওমি মাদ্রাসা, মসজিদ এবং মকতব ছাড়া আর কোন কর্মসংস্থান নেই। তাই কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি দিলে সে সমস্যাটা দুর হবে বলে আমি মনে করি।
মাওলানা আবদুস ছাত্তার ঃ মাদ্রাসার ছাত্ররা শিক্ষাজীবন শেষে সরকারি চাকরী করবে কেন? তারা ধর্মীয় শিক্ষার্জন করে মাদ্রাসা, মসজিদে দ্বীনের খেদমত করবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমার জানা মতে কওমি মাদ্রাসার কোন ছাত্র বেকার নেই ।
মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী ঃ কর্মসংস্থানের জন্যই তো আমরা কওমি সনদের স্বীকৃতি চাই। কওমি ছাত্ররা অনেক মেধাবী। তারা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পেলে সব জায়গাতেই সফল হবে। আমি চাই সরকার কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিক এবং ছাত্রদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হোক।
মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব ঃ ছাত্রদের চাকরীর ব্যবস্থা রয়েছে মোটামুটি। নুরানী মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় ছাত্ররা চাকরী করেন। কওমিতে যারা লেখাপড়া করেন তারা তো চাকরীর জন্য লেখাপড়া করেন না। তবুও চাকরীর দরকার পড়ে। স্বীকৃতি হলে সরকারি চাকরীরও ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
মাওলানা আবদুল জাব্বার জিহাদী ঃ মসজিদ মাদ্রাসায় চাকুরী এটাও একটা কর্মসংস্থান।
মাওলানা মুফতি গোলামুর রহমান ঃ কওমি ছাত্ররা শিক্ষা শেষে বেকার থাকে না। সনদের স্বীকৃতি হলে তো অবশ্যই সরকারি চাকরী করা যায়।
মাওলানা দৌলত আলী খান ঃ আসলে চাকরী পাই, কিন্তু সেটা মসজিদ-মাদ্রাসার চাকরী। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের কোন সরকারি চাকরী করার সুযোগ থাকে না। কারণ তাদের কোন সরকারি স্বীকৃতি প্রাপ্ত সনদ নেই। একসময় আমার মত কিছু কিছু ছাত্ররা কওমি মাদ্রাসায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আলিয়া মাদ্রাসার ফরম পূরণ করে পরিক্ষা দিত। আমিও দিয়েছি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছি। আমরা চাইলে চাকরী করতে পারবো। সবাইতো আর পারে না, সনদের স্বীকৃতি হলে চাকরী পাওয়া সহজ হবে।
মাওলানা আব্দুর রহমান বেতাগী ঃ হাজার হাজার কওমি শিক্ষার্থী শিক্ষা শেষ করে বেকার রয়েছে। টিউশনি, ইমামতি, মুয়াজ্জিন এবং কওমি নুরানী মাদ্রাস ছাড়া আর কোন চাকরীর ব্যবস্থা নেই এই ছাত্রদের। কওমি ছাত্রদের অনেক যোগ্যতা রয়েছে সনদের স্বীকৃতি পেলে তারা সরকারি অনেক কর্মসংস্থানে নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন।

প্রশ্ন ঃ কওমি মাদ্রাসায় জঙ্গি তৈরীর কারখানা হিসেবে অনেকের অভিযোগ রয়েছে আপনি কী বলবেন?
মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী ঃ কথাটি সম্পূর্ণ অবাস্তব কাহিনী। কওমি মাদ্রাসা আগেও জঙ্গির কারখানা ছিল না এখনো নেই ভবিষ্যতেও হবে না। কারণ এটি একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। ইসলাম শান্তির ধর্ম এখানে ইসলামের শিক্ষা দেয়া হয়। মারামারি খুনা-খুনির শিক্ষা ইসলাম কখনো দেয়নি।
মাওলানা কবীর আহমদ ঃ কওমি মাদ্রাসায় জঙ্গী তৈরি হয় না।
মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ঃ কওমি মাদ্রাসায় জঙ্গি তৈরি হয় না। এসব মাদ্রাসায় ইসলামের জন্য মুজাহিদ তৈরি হয়। যারা ইসলাম রক্ষার আন্দোলনে সব সময় কাজ করে চলেছেন। যেসব জঙ্গি ইসলামের নামে মানুষ হত্যাসহ জঘন্য কাজ করে চলেছে তারা ইসলামের শত্রু। তাদের কারণে কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা ঠিক নয়।
মাওলানা আবদুস ছাত্তার ঃ কওমি মাদ্রাসায় কোন জঙ্গিবাদী আস্তানা নেই। এখানে জঙ্গি তৈরি হয় না এখানে ইসলামের সৈনিক (মুজাহিদ) তৈরি হয়। জঙ্গি তৈরির কথা বলে অপবাদ দেয়াটা নাস্তিকদের কাজ।
মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজী ঃ জঙ্গি আস্থানা বলাটা নাস্তিক-মুরতাদের কাজ। এখানে কোন জঙ্গিবাদী কার্যক্রম হয় না। এখানে দ্বীনি শিক্ষা পাঠদান করা হয়।
মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব ঃ কওমি মাদ্রাসায় জঙ্গি তৈরি হয় না, এখানে দ্বীনের জন্য মুজাহিদ তৈরি হয়। কিছু কিছু কওমি পড়ুয়া যেমন, হাফেজ ইয়াহইয়া, শেখ ফরিদ মুফতি হান্নানসহ যারা জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আছেন তারা পথ ভ্রষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকজন এরকম হতেই পারে। স্কুল-কলেজে কি সন্ত্রাসী-জঙ্গি নেই?
মাওলানা আবদুল জাব্বার জিহাদী ঃ ইদানিং মন্ত্রী মহোদয়ও বলেছেন মাদ্রাসায় জঙ্গি তৈরি হয় না। আমরাও বলি মাদ্রাসায় জঙ্গি তৈরির কারখানা নয়। বরং স্কুল, কলেজে গিয়ে দেখুন সেখানে জঙ্গি সন্ত্রাসী তৈরি হয় কিনা।
মাওলানা মুফতি গোলামুর রহমান ঃ কওমি মাদ্রাসা জঙ্গি তৈরির আস্তানা নয়। এই মাদ্রাসা কোরআন হাদিস এর শিক্ষা দেয়। এখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। ইসলামে মারা মারি নেই। যদিও যে সব কওমি শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছেন/হচ্ছেন তারা পথভ্রষ্ট। যেমন মুফতি হান্নান, শেখ ফরিদ, হাফেজ ইয়ইহভয়াসহ আরো অনেকে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
মাওলানা দৌলত আলী খান ঃ কওমি মাদ্রাসায় জঙ্গি আস্তার অভিযোগটা ইহুদি, নাসারা, নাস্তিক-মুরতাদের একটা অপবাদ। এখানে জঙ্গি তৈরি হয় না। ইসলাম রক্ষার মুজাহিদ তৈরি হয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে হানাহানি নেই। কিন্তু যখন কাফের বেদীনরা ইসলাম ধ্বংস করবার জন্য মাদ্রাসা-মসজিদে হামলা করবে তখন ইসলামের মুজাহিদরা বসে থাকবে বলে আমার মনে হয় না।
মাওলানা আব্দুর রহমান বেতাগী ঃ কওমি মাদ্রাসা জঙ্গিদের আস্তানা নয়। এটা একটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।
উৎস : মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশনের শ্বেতপত্র; প্রকাশ ৩০ জুলাই ২০১৬

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৬

চাঁপাডাঙার চান্দু বলেছেন: পোস্টটা দুইবার চলে আসছে। প্রশ্নগুলো যৌক্তিক এবং তারা সিংহভাগ যে উত্তর দিয়েছে তাও প্রশংসাযোগ্য।
আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে গণকমিশনের সাথে ঘাদানিকের কি সম্পর্ক?

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৭

রুবেল ১৯৮৪ বলেছেন: ঘাদানিকের গঠিত গণকমিশন

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২২

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: তাদের স্বীকৃতি এবং এলেমের সুরক্ষা উভয় প্রয়োজন।

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৬

প্রতিদিন বাংলা বলেছেন: বর্তমান কওমিতে যে শিক্ষা সিলেবাস রয়েছে তার মধ্য থেকে উর্দু-ফার্সি কে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে বাংলা-ইংরেজি বাধ্যতামূলক করতে হবে
মুক্তি যুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী ,ভাসানী ,শেরেবাংলা ,তাজউদ্দীনের নাম কোথায় ?

৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:০০

সত্যপীরবাবা বলেছেন: প্রতিদিন বাংলা বলেছেন:
মুক্তি যুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী ,ভাসানী ,শেরেবাংলা ,তাজউদ্দীনের নাম কোথায় ?

মুক্তিযুদ্ধের সময় সোহরাওয়ার্দী আর শেরেবাংলা কি জীবিত ছিলেন?

৫| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৩৯

নতুন বলেছেন: আমেরিকায় আমিশ বলে একটা সম্প্রদায় আছে, আমাদের দেশের মোল্যা সম্প্রদায় আমাদের দেশী আমিশ হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতে।

৬| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: মাদ্রাসায় পড়ে অতি দরিদ্র ছেলে মেয়েরা। সরকার যদি তাদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয় তাহলে ভালো হতো। সবাই সুশিক্ষা পেতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.