নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল আস্থায় পথ চলা

রুবেল ১৯৮৪

প্রমাণ্যচিত্র নির্মাতা

রুবেল ১৯৮৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বিস্তারে ওয়াজের ভূমিকা পর্ব ২

০৫ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:০৮

১৯৭১ সালের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন একটি রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষতা, গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। বর্তমান সময়ে ধর্মের নামে ওয়াজের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং অসহিষ্ণুতা।
ওয়াজগুলোতে বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি, নারী, জাতীয় সংগীত এমনকি জাতির পিতাকে নিয়েও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। যার ফলে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে ভিন্ন ধর্মের এবং ভিন্ন চিন্তার মানুষ সম্পর্কে তৈরী হয় ঘৃণা।
এক ওয়াজে মামুনুল হক সরাসরি বলেন, ইসলাম মানে শান্তি নয়। তিনি বলেন, “আমি ৩৬ বছর ধরে আরবি ভাষা, কোরান হাদিস পড়াশোনা করতেছি। আজ পর্যন্ত কোথাও আমি পাই নাই ইসলাম মানে শান্তি। ইসলাম অর্থ শান্তি। আগা কাটলেই খালি মুসলমান হয় না। ইসলামের কোনো বিধানের প্রতি যদি তোমার অভিযোগ থাকে তবে তুমি মুসলমানই হইতে পারো নাই। ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ কোরান হাদিসে সবকিছু বলে গেছেন। এর বিপক্ষে কথা বললেই গজারির লাঠি ছাড়া কোনো উপায় নাই। অনেকে বলে হুজুর ওরে একটু বুঝাইয়া কন। আরে কি বুঝামু রে? কোরানের আয়াত বলে রাখছে ১৪০০ বছর আগে। নবিজি ১৪০০ বছর আগে বলে গেছে। তুই বুঝোস নাই? তাইলে গজারির লাঠিগুলো দুনিয়াতে আছে কী জন্য? লাঠিগুলারে তো কাজে লাগাতে হবে। বিভিন্ন সময়ে আল্লাহকে নিয়ে যারা কটুক্তি করে, বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদেরকে নসিহত করতে বলবেন না। সবসময় সোজা আঙুল দিয়ে ঘি উঠে না। এইজন্য অনেক সময় গজারির লাঠি দিয়াও সোজা করতে হয়। কেয়ামতের দিন এরকম বহু মানুষ মিলবে যারা জান্নাতে যাইতে চায় না, অথচ মুজাহিদরা শিকল দিয়া বাইন্ধা জান্নাতে নিয়ে গেছে। তারা সহজ পথে তো সোজা হয় নাই। গজারির লাঠি দিয়া এইগুলারে সোজা করা হইছে।”
বাংলাদেশের বাঙালিদের মধ্যে যে পরস্পর সহমর্মিতাবোধ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা কাজ করে সাম্প্রদায়িক, অসহিষ্ণু ওয়াজ এবং বক্তৃতার মাধ্যমে সেই সম্প্রীতিতে তৈরী করা হয় কৃত্রিম ফাটল। জঙ্গিবাদ এবং অসহিষ্ণুতা বিস্তার করার জন্য বর্তমান সময়ে ব্যবহার করা হচ্ছে কোমলমতি শিশুদেরকেও। তাদেরকে ভয়ঙ্কর ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক কিছু কথা মুখস্থ করিয়ে তুলে দেওয়া হয় স্টেজে। শিশু বক্তা স্টেজে উঠেই হুকুমের সুরে বলতে থাকে কী বর্জন করতে হবে আর কী গ্রহণ করতে হবে।
নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার বাইতুল কুরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার ৬ বছর বয়সী ছাত্র সোহানুর রহমান সোহান। একটি ওয়াজ মাহফিলে তাকে বক্তা হিসেবে দাড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে মাইক্রোফোনের সামনে। সে কী বলবে আগে থেকেই তাকে তা মুখস্থ করানো হয়েছে। শিশুবক্তা সোহানুর রহমান সোহান গড়গড় করে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার মানুষদের সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে থাকে স্টেজে।
শিশুবক্তা বলেন, “উপস্থিত সকল তরুণ-যুবক ভাইয়েরা। আমরা আজকে রাস্তাঘাটে, দোকান-পাটে, গাড়িতে-বাড়িতে, সমাজে, দেশের সর্বস্তরে একটা কথা শুনতে পাই, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষাই জাতির প্রাণ।’ তার মধ্যে কোন শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, কোন শিক্ষা জাতির প্রাণ? যেমন মনে করেন, কবি শামসুর রাহমান, তার শিক্ষা কি জাতির প্রাণ? হুমায়ুন আজাদের শিক্ষা কি জাতির মেরুদন্ড? তসলিমা নাসরিনের শিক্ষা কি জাতির প্রাণ?”
তৎক্ষনাৎ মজলিশ থেকে ভেসে আসে সমস্বরে উত্তরÑ ‘না না’।
যে শিক্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে, যে শিক্ষা নবীর বিরুদ্ধে, কোরাআনের বিরুদ্ধে, হাদিসের বিরুদ্ধে, সাহাবি একরামদের বিরুদ্ধে, আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে, মসজিদ মাদ্রাসার বিরুদ্ধে, মুসলমানগনের বিরুদ্ধে চলে সেটা কোনোদিন জাতির মেরুদণ্ড হতে পারে না, পারে না, পারে না। কথা বলেন ঠিক কিনা? সাথে সাথে জমায়েতের ভিতর থেকে অসহিষ্ণুভাবে স্লোগান ওঠে, নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর।
শিশুবক্তা তার বক্তৃতার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রগতিশীল বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ধারাকে প্রত্যাখান করার আহ্বান জানান এবং দেশের মানুষকে গ্রহণ করতে বলেন মধ্যযুগীয় শিক্ষা।
শিশুবক্তা আরো বলেন, “যেই শিক্ষা লাভ করেছেন চরমোনাইর পীর শাইখুল হাদিস আল্লামা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, যেই শিক্ষা লাভ করেছেন মুফতি আমেনি রহমাতুল্লাহি আলাইহি সেই শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, সেই শিক্ষাই জাতির প্রাণ। কথা বলেন ঠিক কিনা?” শ্রোতারা গলা ফাটিয়ে নারায়ে তাকবির স্লোগানের মাধ্যমে উত্তর দেয়।
ওয়াজকারি এসব তথাকথিত আলেম ওলামাদের কথা মানুষের মনে গভীর দাগ কাটে। এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানী ড. সামিনা লুৎফা বলেন, “আলেম ওলামাদের কথা বাংলাদেশের সাধারন মানুষ বিশ্বাস করে। তারা ভাবে আলেম ওলামারা জ্ঞানী মানুষ তারা কখনো ভুল বলেন না। সুতরাং তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া তৈরী হয় এবং এই প্রতিক্রিয়ার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে।”

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ুন আজাদ একজন খাটি মানুষ। জ্ঞানী মানুষ। তার কথা গুলো মেনে চললে সমাজের জন্য ভালো হতো।

২| ০৬ ই মার্চ, ২০২২ রাত ৩:৫৭

নূর আলম হিরণ বলেছেন: পোস্ট ঠিক আছে তবে এটাকে এত রিফ্রেশ করার কি দরকার?

৩| ০৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৮:৩২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আপনি এই পর্যন্ত কতবার ওয়াজ শুনেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.