একজন বটবৃক্ষ

০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৫০

প্রকৃতিতে স্বাভাবিক কিছু নিয়ম আছে, যার ব্যতিক্রম হলে আমরা তাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে থাকি। যেমন: সুর্য পূর্ব দিকে উঠবে, মাছ পানিতে বাস করবে, সন্তান ও মা-বাবা উভয় উভয়কে ভালবাসবে ইত্যাদি। সন্তান তার বাবা মাকে ভালবাসবে, এটা খুবই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক। বাবাকে তার সন্তান ভালবাসে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বরং ভাল না বাসাই অস্বাভাবিক এবং প্রকৃতি বিরুদ্ধ। এক্ষেত্রে 'বাবা আমি তোমাকে ভালবাসি' বললে মনে হয় যেন বাবার জন্য ভালবাসার মাত্রা বা গভীরতা অনেকটা কম।

জম্মদাতা বাবার আঙ্গুল ধরেই এই পৃথিবীতে হাতেখড়ি। এই বাবার শ্রমের বিনিময়ে আজ আমি এত বড়। বাবাই আমাকে সমুদ্রের গভীরতা ও পাহাড়ের উচ্চতার পার্থক্য বুঝিয়েছেন। বিপদে ও ঝড়ে যেন নুয়ে না পড়ি তাতে সাহস জুগিয়েছেন আমার বাবা। বিশাল আকাশের এই বর্ণিলতা যে শুধুই মরিচিকা তাও তোমার কাছে শিখেছি। মরুভুমির তপ্ত রৌদ্রেও নির্মল পানির পুকুরের মরিচিকা দেখা যায় তা তোমার কাছে জেনেছি। বাবা হলেন সন্তানের আত্মবিশ্বাস বিপদহীন কন্টকমুক্ত পথ। সকল কষ্ট, যন্ত্রনা ও বিপদ নিজ কাঁদে নেওয়ার নামই বাবা।

ভালবাসা প্রকাশের ভঙ্গি একেক জনের একেক রকম। বাবা সর্বদা মায়ের মত কাছে থাকেন না। তাই তার ভালবাসা প্রকাশের ধরণও ভিন্ন। অনেকটা মৌন প্রকৃতির। তার মানে এই নয় যে, তিনি মায়ের চেয়ে কোন অংশে কম ভালবাসেন তার সন্তানকে। তিনি ভালবাসা ও অভিমান মায়ের মতো মেলে ধরতে পারেন না। সন্তানের উপর একজন পিতার ছায়া একটি বটবৃক্ষের মত। বাবার উপস্থিতিতে সন্তানের কঠিন সমস্যাও সহজে পার পাওয়া যায়। পিতাহীন একটি সন্তান পদ্মা পাড়ের মাটির মত, যেকোন সময়ে ধ্বসে পড়ে যেতে পারে এমন আশংকা বিরাজ করে। পৃথিবীর কোন সমস্যাই সন্তানকে মাড়াতে দেয়না একজন বাবা। একটি চারার মত বৃক্ষে পরিনত হওয়ার আগ পর্যন্ত সকল ঝড় ঝঞ্জায় ভেঙ্গে পড়া থেকে রক্ষা করে একজন বাবা এবং জগতের সকল বিরুপ পরিবেশের বিরুদ্ধে সংগ্রামী হওয়ার শিক্ষা দেয় বাবা।

আব্বু, আব্বা, ডেডি, ডেড যেভাবেই ডাকিনা কেন বাবাকে, বাবা হলেন একটি শক্তি সকল আশংকার বিরুদ্ধে এবং সন্তানের মাথার উপর মেঘহীন ছায়া। আমারও তোমার মত বলা হয়না ‘আব্বা তোমাকে ভালবাসি’। আমারও ইচ্ছে করে তোমাকে আলিঙ্গন করি। বলতে না পারা আমাদের এই মৌন ভালবাসার শক্তি,মাত্রা ও গভীরতা অসীম।

০ টি +০/-০