নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেস্ত সময়ের ফাঁকে যারা আমার ব্লগ পরেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ
নাইজার অভ্যুত্থানের সূচনা বক্তব্য
আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে যারা বিশ্লেষণ করেন তাদের সবার দৃষ্টি এখন পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ নাইজার এর দিকে। নাইজারের সেনাবাহিনী রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে ।ছাব্বিশে জুলাই , নাইজারের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ বাজুমকে আটক করে নিজ গৃহে বন্দি রাখা হয়। সর্বশেষ গত দশই আগস্ট নাইজারের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তারই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের কমান্ডার, জেনারেল আব্দুর রাহমান চিয়ানি নিজেকে নতুন সামরিক জান্তা প্রধান হিসেবে ঘোষণা করে। অভ্যুত্থান নাইজারের জন্য নতুন কোনো বিষয় না। নাইজার উনিশশো সাইট সালে ফ্রান্স এর কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তার পর থেকে নাইজারে এখন পর্যন্ত পাঁচ বার অভ্যুত্থান হয়েছে। শুধু নাইজার নয় এর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতেও রয়েছে একই রকম সমস্যা। দুই হাজার বিশ সালে থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় নয়টি সামরিক সফল ও বের্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা হয়েছে। নাইজারের পূর্ব পাশের দুটি দেশ চাদ ও সুদানে দুই হাজার একুশ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে নেয়। আর অন্য দিকে পশ্চিম পাশে মালি , বুরকিনাফাসো , গিনিতে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে আছে। স্বাধীনতার এতো বছর পরেও এখন পর্যন্ত নাইজারে কোনো নির্বাচিত সরকার পূর্ণ সময় ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই । দুই হাজার একুশ সালে প্রথম কোনো সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ,যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ বাজুম ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোর মতোই গণতন্ত্র আবারো বাধাগ্রস্থ হলো।খুব স্বাভাবিক ভাবেই জানতে ইচ্ছা হয় কেনো আফ্রিকার দেশগুলোতে বার বার সামরিক জান্তা ও অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে নেয় ? এতে জনগনের কি মনোভাব থাকে ?যাদের অর্থনীতি এতো দুর্বল তাদের সামরিক জান্তা এতো শক্তিশালী হয় কি ভাবে ? উন্নত দেশ গুলো কেন এতদিন নিশ্চুপ ছিলো ? যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের এতো আগ্রহের পিছনে কারণ কি ? রাশিয়া আফ্রিকাতে কি করে ? নাইজারের পরিস্হিতি সুক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করলে হয়তো এই রকম নানা কঠিন প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া কিছুটা সহজ হবে।
নাইজার দেশটির উপরে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য
নাইজারের অভ্যুত্থান বিশ্লেষণের জন্য দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান ,ইতিহাস , ঐতিহ্য , সংস্কৃতি ,অর্থনৈতিক ,সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় সমন্ধে কিছুটা হলেও ধারণা প্রয়োজন। ছোটো করে পয়েন্ট আকারে কিছু তথ্য তুলে ধরছি ।
রাষ্ট্রীয় নাম : রিপাবলিক অফ নাইজার।
স্বাধীনতা: তিন আগস্ট উনিশশো সাইট সাল ফ্রান্স থেকে
রাজধানী শহর: নিয়ামে।
অন্যান্য শহর: তাহুয়া, মারাদি, জিন্ডার, ডিফা, দোসো, আরলিট এবং আগাদেজ।
আয়তন :বারো লাখ সাতষট্টি হাজার বর্গ কিলোমিটার।
ভূখণ্ড : দুই-তৃতীয়াংশ মরুভূমি এবং পর্বত, এক-তৃতীয়াংশ সাভানা।
নাইজারের সীমান্ত : লিবিয়া ,আলজেরিয়া ,নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, মালি এবং চাদ।
সরকার প্রকার: প্রজাতন্ত্র, বহুদলীয় রাষ্ট্রপতি শাসন।
রাষ্ট্রপ্রধান: রাষ্ট্রপতি।
নাইজার দেশের কলিং কোড: +২২৭
আবহাওয়া : গরম, শুষ্ক এবং ধূলিময়; চরম দক্ষিণে গ্রীষ্মমন্ডলীয়। বর্ষাকাল জুন-সেপ্টেম্বর।
জাতীয়তা: নাইজেরিয়ান(গুলি)
জনসংখ্যা : দুই কোটি বায়ান্ন লাখ পঞ্চাশ হাজার
জাতি গোষ্ঠী: হাউসা ছাপ্পান্নো শতাংশ , জেরমা বাইশ শতাংশ ,ফুলা সাড়ে আট শতাংশ , তুয়ারেগ আট শতাংশ ,বেরি বেরি (কানুরি) চার দশমিক তিন শতাংশ ,আরব, তুবউ, এবং গোরম্যানচে এক দশমিক তিন শতাংশ।
ধর্মঃ ইসলাম পচানব্বই শতাংশ , অবশিষ্ট খ্রিস্টান এবং আদিবাসী বিশ্বাস।
ভাষা: ফরাসি (অফিসিয়াল) অন্যান্য ভাষাগুলো হচ্ছে হাউসা, জের্মা, ফুলফুলদে, কানুরি, তামাচেক, তুবউ, গৌরমান্তচে, আরবি।
সাক্ষরতা: তিরিশ শতাংশ
প্রাকৃতিক সম্পদ: ইউরেনিয়াম, কয়লা, লোহা আকরিক, টিন, ফসফেট, সোনা, পেট্রোলিয়াম।
কৃষি পণ্য: বাজরা, জোয়ার, চাল, ভুট্টা, ফল, সবজি, তুলা, চিনাবাদাম, কাসাভা, কাউপিস।
শিল্প: ইউরেনিয়াম খনি, সিমেন্ট, ইট, টেক্সটাইল, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রাসায়নিক।
রপ্তানি-পণ্য: ইউরেনিয়াম আকরিক, গবাদি পশু, কাউপিস, পেঁয়াজ।
রপ্তানি - অংশীদার: ফ্রান্স তিপ্পান্ন শতাংশ , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আঠারো শতাংশ ,নাইজেরিয়া বিশ শতাংশ ,বুর্কিনা ফাসো সাড়ে পাঁচ শতাংশ।
আমদানি-পণ্য: খাদ্যদ্রব্য, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও যন্ত্রাংশ, পেট্রোলিয়াম, সিরিয়াল।
আমদানি - অংশীদার: ফ্রান্স বত্রিশ শতাংশ চীন তেইশ শতাংশ ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ ,ভারত তিন দশমিক আট শতাংশ নাইজেরিয়া তিন দশমিক সাত শতাংশ।
মুদ্রা: CFA ফ্রাঙ্ক (XOF)
সংক্ষেপে নাইজারের ইতিহাস ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
আঠারোশো নব্বই সাল - ফ্রান্স এই অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে।
উনিশশো চার সাল - নাইজারের সামরিক অঞ্চল তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে বর্তমানে বুরকিনা ফাসো, মালি এবং নাইজার দেশগুলি রয়েছে যার রাজধানী নিয়ামে।
উনিশশো বাইশ সাল - নাইজার ফরাসি পশ্চিম আফ্রিকার মধ্যে একটি উপনিবেশে পরিণত হয়।
উনিশশো আটান্ন সাল - নাইজার ফরাসি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র হয়ে ওঠে।
উনিশশো সাইট সাল - নাইজার স্বাধীন হয়, একটি একদলীয় বেসামরিক শাসন হিসাবে। অর্থনৈতিক অসুবিধা, খরা, দুর্নীতি এবং খাদ্য ঘাটতি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়।
উনিশশো চুয়াত্তর সাল থেকে উনিশশো একানব্বই সাল - প্রথম সামরিক শাসন।
উনিশশো আশি সাল -এর দশকে, সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে রাজনৈতিক উন্নয়নের উপর তার নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে।
উনিশশো একানব্বই - বহু দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বেসামরিক শাসন।
উনিশশো নব্বই সাল থেকে উনিশশো পঁচানব্বই সাল - উত্তর নাইজারে স্বাধীনতার জন্য তুয়ারেগ বিদ্রোহ, আঞ্চলিক দুর্ভিক্ষের কারণে।
উনিশশো ছিয়ানব্বই সাল থেকে উনিশশো নিরানব্বই সাল - আবার ক্ষমতা নিতে সামরিক হস্তক্ষেপ।
উনিশশো নিরানব্বই সাল থেকে দুই হাজার নয় সাল - বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধার।
দুই হাজার সাত সাল থেকে দুই হাজার নয় সাল- উত্তর মালি এবং নাইজারের সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী তুয়ারেগ জনগণের মধ্যে নতুন করে তুয়ারেগ বিদ্রোহ।
দুই হাজার দশ সাল থেকে দুই হাজার এগারো সাল - সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক মেয়াদ বাড়ানোর প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান চালায়
দুই হাজার দশ সাল - গণভোটে অনুমোদিত বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধারের জন্য ডিজাইন করা একটি নতুন সংবিধান।
দুই হাজার এগারো সাল - বেসামরিক শাসন পুনরুদ্ধার করা হয় এবং মহামাদু ইসুফো রাষ্ট্রপতি হন।
দুই হাজার পনেরো সাল - অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা রাষ্ট্রপতি ইসুফোকে উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়।
দুই হাজার একুশ সাল - নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বাজুমের শপথ গ্রহণের আগে অভ্যুত্থানের চেষ্টা।
দুই হাজার তেইশ সাল - সামরিক অভ্যুত্থান বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে এবং রাষ্ট্রপতি বাজুমকে পদচ্যুত করে।
নাইজারের ভৌগোলিক অবস্থান
নাইজার পশ্চিম আফ্রিকার একটি ভূবেষ্টিত দেশ। এটি সাহারা এবং উপ-সাহারার মধ্যবর্তী সীমান্ত বা সাহেল অঞ্চলে অবস্থিত। নাইজার নদীর নামানুসারে দেশটির নামকরণ করা হয়েছে। দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর নিয়ামে। দেশটির আয়তন বারো লাখ সাতষট্টি হাজার বর্গ কিলোমিটার। দেশটি ফ্রান্সের মেট্রোপলিটনের আকারে দ্বিগুণেরও বেশি বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের আকারের দ্বিগুণের চেয়ে সামান্য কম। নাইজারের উত্তরে লিবিয়া ও আলজেরিয়া, দক্ষিণে বেনিন ও নাইজেরিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে বুরকিনা ফাসো, পশ্চিমে মালি এবং পূর্বে চাদ রয়েছে।এই সাতটি দেশের পাঁচ হাজার আটশো চৌত্রিশ কিলোমিটার সীমান্ত আছে নাইজারের।
নাইজারের আবহাওয়া
নাইজারের আবহাওয়া অত্যাধিক পরিমাণে উষ্ণ এবং শুষ্ক, সাহারা মরুভূমি নাইজারের প্রায় পয়ষট্টি শতাংশ জুড়ে। নাইজারের ভূখণ্ড প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মরুভূমি এবং বালিয়াড়ি। দক্ষিণে বিশাল সমভূমি এবং উত্তরে পাহাড় রয়েছে। সর্ব দক্ষিণে নাইজার নদীর অববাহিকার কিনারার কাছে গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান। এছাড়াও দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে চাদ হ্রদ ,নাইজার, নাইজেরিয়া, চাদ এবং ক্যামেরুনের মধ্যে বন্টিত হয়েছে। নাইজারের বেশিরভাগ মানুষ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করছে।
সাহেল অঞ্চল
নাইজারের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার পূর্বে সাহেল অঞ্চল সম্মন্ধে কিছুটা হোলেও ধারণা থাকা প্রয়োজন। সাহেল অঞ্চলটি এক হাজার কিলোমিটার প্রশস্ত একটি বলয় ,যা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত আফ্রিকা জুড়ে বিদ্যমান।যেটি সাহারা ও পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলীয় এলাকাগুলির মোটামুটি মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। উনিশশো সাইট এর দশকের শেষ দিকে এবং উনিশশো আশির দশকের শুরুর দিকে দীর্ঘায়িত খরার কারণে, এবং জনসংখ্যা ও পশুর সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে সাহেল অঞ্চলে মরুভুমি দ্রুতো বৃদ্ধি পেয়েছে । মাটি আর্দ্রতা হারাচ্ছে এবং সাহারা মরুভূমি ধীরে ধীরে অঞ্চলটিকে গ্রাস করছে। সাহেল অঞ্চলের প্রভাবে বেশির ভাগ এলাকায় চাষের জমি যেমন কমছে তেমনি প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে খরা ও দুর্ভিক্ষ এখন একটি নিয়মিত ঘটনা। দুই হাজার পাঁচ ও ছয় সালে নাইজারে খাদ্য সংকট একটি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছিলো ,ধারণা করা হয় এই পরিস্থিতি দুই হাজার চার সালের বৃষ্টিপাত দ্রুত সমাপ্তির কারণে ঘটেছিলো। কিছু তৃণভূমি ছিলো ঠিকই কিন্তু সেখানে মরুভূমির পঙ্গপালের আক্রমনে খাদ্যের দাম চড়া হোয়ে যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্রতা তৈরী হোয়েছিলো। পুনরাবৃত্তি খরা নাইজারের জন্য এখন একটি গুরুতর সমস্যা হোয়ে উঠেছে। দুই হাজার দশ সালের সাহেল খরার পরে আবারো দুই হাজার বারো সালে খরা হয়। খরায় ফসল নষ্ট, কীট-পতঙ্গের উপদ্রব, খাদ্যের চড়া দাম এবং দ্বন্দ্ব তৈরী হয়।দুই হাজার দশ সালের সাহেল দুর্ভিক্ষ থেকে বহু কষ্টে মুক্তি পাওয়া নাইজারের অনেক পরিবার আবারো দুই হাজার বারো সালের সাহেল খরা দ্বারা আক্রান্ত হয়। দুর্বল দেশটির উপর ঘনো ঘনো খরা ও অভ্যুত্থান মানুষকে বাস্তুচ্যুত এবং ব্যাপক দারিদ্র্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
নাইজারে জিহাদি সহিংসতা
সাহেল অঞ্চল এর দেশ গুলোর ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আবহাওয়া পরিবর্তন ক্রমে ভূমি ও অন্যান্য সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অভিবাসনকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে স্থানীয় জিহাদী ও জঙ্গি সংগঠন। নাইজার ও আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের দেশগুলোতে জিহাদি বিপর্যয়ের মাত্রা দিন দিন ভয়ঙ্কর হোয়ে উঠছে। সাহেলের পাশাপাশি, জঙ্গিরা উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়া এবং সোমালিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে।এই অঞ্চলগুলি সাব-সাহারান আফ্রিকার প্রতি দশজনের মধ্যে একজনের আবাসস্থল। জুন থেকে বারো মাসে জিহাদি-সম্পর্কিত সহিংসতায় বাইশ হাজারের বেশি আফ্রিকান মারা গেছে, যা আগের বছরের তুলনায় পঞ্চাশ শতাংশ বেশি। দুই হাজার চোদ্দো সালে ইসলামিক স্টেট যখন ইরাকে শীর্ষ অবস্থানে ছিলো সেই সময়ের নিহতের সংখ্যার চে দ্বিগুণ। দুই হাজার তেরো সালে সাহেল অঞ্চলে জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি ফরাসি নেতৃত্বাধীন সামরিক প্রচেষ্টা নেওয়া হোয়েছিলো। এমনকি বর্তমানে নাইজারের জিহাদী রুখতে কিছু দেশ ও স্থানীয়রা পশ্চিমা সমর্থনকে সন্দেহের চোখে দেখে যার কারণে ফলাফল হয়েছে হতাশাজনক। নাইজারের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বুরকিনা ফাসো এবং মালিতে নির্বাচিত সরকার পতনের পরে সেখানে জিহাদি সহিংসতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নাইজারের রাজধানী নিয়ামে জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ডিওরি হামানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত, এয়ার বেস 101 মার্কিন এবং ফরাসি বাহিনীর জন্য একটি যৌথ মিশন সাইট রয়েছে ।সেখানে প্রায় এক হাজার মার্কিন এবং পনেরোশো ফরাসি সৈন্য অবস্থান করছে। গত এক দশক ধরে পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল জুড়ে হিংসাত্মক জিহাদি, স্বৈরাচারী এবং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি হেরে যাওয়া যুদ্ধ চলছে। সাব্বিশে জুলাই নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেই সংগ্রাম এখন চূড়ান্ত সংকট পর্যায়ে পৌঁছেছে। মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে সাম্প্রতিক সামরিক দখলের পর এই অঞ্চলে এটিই ছিল শেষ আধা-কার্যকর রাষ্ট্র। মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে সামরিক জান্তা ও পশ্চিমা রাষ্ট্র গুলোর মাঝে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যরা। মুখে ওই অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বোললেও খনিজ সম্পদ হাতে পেতেই বেশি আগ্রহী ওয়াগনার।
অভ্যুত্থান ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ
প্রতিটা দেশ নাইজারের পরিস্থিতি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ।নাইজার এর সামরিক অভ্যুত্থান বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিভাজন স্পষ্ট ।এমনকি দেশগুলোর মাঝে রাজনৈতিক কোশল নির্ধারণেও ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে । প্রতিবেশী সাত টি দেশ এর কৌশল বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে ।প্রথমেই আসি বুরকিনা ফাসো এবং মালি এই দুটি প্রতিবেশী দেশ নিয়ে,বর্তমানে দুটি দেশেই সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে আছে। খুব স্বাভাবিক তারা চাইবে নাইজারেও যেনো তাদের মতো সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আসে।ওয়েস্ট আফ্রিকার পনেরোটি দেশের মিলিতো সংঘটন ইকোওয়াস। সেখানে সব রাষ্ট্র একত্রিত হয়ে জানিয়েছে নাইজারে গনতন্ত্র নির্বাচিত সরকারের হাতে ফিরিয়ে না দিলে তারা মিলিতো ভাবে নাইজারে সামরিক অভিযান চালাবে ।এমনকি তারা নাইজারের সাথে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ রাখবে। সব ধরণের আর্থিক লেনদেন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত থাকবে। ইকোওয়াস এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবেশী রাষ্ট্র বেনিন ও নাইজেরিয়া ইতিমধ্যে স্থল পথে এবং আকাশ পথে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে নাইজারের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।নাইজারের সত্তুর শতাংশ বিদ্যুৎ নাইজেরিয়া থেকে সরবরাহ করা হইতো ।বর্তমানে নাইজেরিয়া নাইজারের বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে।যার ফলে নাইজারে অনেক জায়গায় এক ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। সার্বিক পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে সামরিক জান্তা সরকার নাইজেরিয়া সহ আরো তিনটি দেশের রাষ্ট্রদূত দেরকে নাইজার ছেড়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ জারি করেছে। অবশ্য মালি ও বুরকিনা ফাসো বলেছে নাইজারের উপর কোনো আক্রমণ হইলে তারাও নাইজারের সামরিক জান্তার পক্ষে যুদ্ধে নামবে । প্রতিবেশী আরেক দেশ চাঁদকে সাবধান করে দিয়েছে আমেরিকা।চাদ যদি নাইজারের জান্তার পক্ষে যায় তে হইলে তাদের সব ধরণের আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করে দিবে আমেরিকা। ফলশ্রুতিতে চাদ জানিয়েছে এই বিষয়ে তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে পর্যবেক্ষণ করবে। রইলো বাকি আলজেরিয়া এক মাত্র দেশ যারা খুব ঠান্ডা মাথায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আলজেরিয়া সামরিক জান্তাকে সহযোগিতা করবে না। আবার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা কইরা সীমান্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মার্কিন ও নাইজারের সামরিক জান্তার মাঝে যোগাযোগ রাখছে। আলজেরিয়া চেষ্টা করছে যাতে যুদ্ধ না করে সামরিক জান্তাকে বুঝিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ফেরত আনা যায়। আলজেরিয়া মনে করে নাইজারে সামরিক অভিযান চালালে লিবিয়ার মতো অবস্থা হবে।
অভ্যুত্থান ও ফ্রান্স
নাইজার স্বাধীনতার আগে ফ্রান্সের একটি উপনিবেশিক রাষ্ট্র ছিল।উনিশশো সাইট সালে নাইজার ফ্রান্স এর কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার এতো বছর পরেও বিভিন্ন কৌশলে ফ্রান্স নাইজার সহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছিলো। ফ্রান্সের অন্যতম কৌশল গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ফ্রেঞ্চ ভাষার ব্যবহার । অবাক করার মত বিষয় আফ্রিকার ঊনত্রিশটি দেশে ফ্রেঞ্চ ভাষার ব্যবহার হয়।এর মাঝে একুশটি দেশের দাপ্তরিক ভাষা ফ্রেঞ্চ।দীর্ঘস্থায়ী কৌশল গুলোর মাঝে আরেকটি অন্যতম কৌশল আফ্রিকাতে ফ্রেঞ্চ মুদ্রার ব্যবহার। যা সিএফএ (আফ্রিকান ফাইন্যান্সিয়াল কমিউনিটি) ফ্রাঙ্ক নাম পরিচিতো। ইতালীয় মন্ত্রীরা সিএফএ ফ্রাঙ্কের মাধ্যমে ফ্রান্সকে আফ্রিকাকে দরিদ্র করার জন্য অভিযুক্ত করে। পরবর্তীকালে, পশ্চিম আফ্রিকার সিএফএ ফ্রাঙ্কের একটি সংস্কার শুরু হয়। দুই হাজার বিশ সালের মে মাসে, ফরাসি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পশ্চিম আফ্রিকার সিএফএ ফ্রাঙ্কে ফরাসি নিযুক্তি শেষ করতে সম্মত হয়েছিল। মুদ্রা ব্যবহারকারী দেশগুলিকে এখন থেকে আর তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্ধেক ফরাসী কোষাগারে জমা না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এখনো ফ্রান্স আফ্রিকার দেশ গুলোতে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নানা রকম নিত্য নতুন কৌশল খাটায়। যেমন নাইজার এ জিহাদী ও জঙ্গি সংগঠন গুলোর অপরাধ ঠেকানোর নামে ফ্রান্স সেখানে পনেরশো সৈন্যের একটি ঘাঁটি তৈরী করেছে।খুব স্বাভাবিক নাইজারের জনগণ নিজ দেশে ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি খুব একটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে নাই। আফ্রিকার জনগণের কাছে নির্বাচিত সরকার গুলো ফ্রান্সের পুতুল সরকার হিসেবে প্রতীয়মান হয়। অভিযোগ আছে ফ্রান্স নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য নির্বাচিত সরকার গুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলে। এমনও শুনা যায় দুর্নীতি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ফরাসি রাজনীতিবিদরা ও আফ্রিকার রাজনীতিবিদরা ভাগাভাগি করে নেন।যেমন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নিকোলাস সারকোজি, ইতিমধ্যেই একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী, উদাহরণ স্বরূপ লিবিয়ার প্রয়াত নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। বছরে দুই বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উন্নয়ন সহায়তা পাওয়া সত্ত্বেও, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ দেশ নাইজার পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে একটি, যেখানে সাক্ষরতার হার মাত্র তিরিশ শতাংশ। নাইজারের জন্মহার পৃথিবীর সর্বোচ্চ গড়ে প্রতি মহিলা ছয় থেকে সাত জন শিশু জন্ম দেয়। দুর্ভক্ষ খরার কারণে এখনো খাদ্য ও চিকিৎসা অপ্রতুল। বেকারত্বের হার উর্ধমুখী। তারা মনে করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হওয়া এবং দুর্দশার পিছনে মূল কারণ দুর্নীতি। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ফ্রান্সের মদদে নানা রকম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে গেছে যার ফলশ্রুতিতে সামরিক জান্তা আবার নির্বাচিত সরকার সরিয়ে ক্ষমতা নিয়েছে। সামরিক জান্তার পক্ষে বিপুল মানুষের মিছিল, ফ্রেঞ্চ দূতাবাসে আক্রমণ ও ফ্রেঞ্চ পতাকাতে আগুনে দেয়া থেকে নাইজারে মানুষের ফ্রান্সের প্রতি কি মনোভাব তা আরো স্পষ্ট হোয়ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশ নাইজারের প্রতি ফ্রান্সের আগ্রহের পিছনে মূল কারণ খুঁজতে গেলে একটা সমীক্ষা সামনে চলে আসে ।গত বছর নাইজারের ইউরেনিয়ামের পঞ্চাশ শতাংশ রপ্তানি করা হয় ফ্রান্সে। যা ফ্রান্সের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলোর কাঁচামালের সত্তুর শতাংশ। নাইজারের ইউরেনিয়ামের বাকি প্রায় চব্বিশ শতাংশ অন্যান্য ইইউ দেশগুলিতে রপ্তানি করা হয়েছিল। ইউরোপের বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোর কাঁচামাল ইউরেনিয়ামের চার ভাগের এক ভাগ যোগান দিয়েছে নাইজার ।বুঝতেই পারছেন ফ্রান্স বা পশ্চিমা রাষ্ট্র গুলো এতো সহজে নাইজার ছাইরা যাবে না।
অভ্যুত্থান ও মার্কিন বাহিনী
নাইজার সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব কৌশলের এখন লেজে গোবরে অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র নাইজারে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করার মাধ্যমে সাহেল অঞ্চলে তাদের প্রভাব বলয় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।বর্তমানে কার্যক্রম সীমিত রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র কার্যক্রম সীমিত ছিলো।তখন রাজধানী নিয়ামে ডিওরি হামানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত, এয়ার বেস 101 এক মাত্র মার্কিন সাইট হিসাবে কাজ করেছে ।সেখানে শুরুতে এক হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করতো। পরবর্তী সময়ে মালিতে যখন সেনা অভ্যুত্থান হয় তখন ফ্রান্স এর সামরিক বাহিনীকে মালি থেকে বিতাড়িত করা হয় । তখন তারা কোনো উপায় না পেয়ে নাইজারের মার্কিন বাহিনীর সাথে এয়ার বেস 101 যৌথ ভাবে ব্যাবহার শুরু করে ।সেখানে বর্তমানে পনেরোশো ফরাসি সৈন্য অবস্থান করে । মার্কিন ও ফরাসি বাহিনী ছাড়াও ইইউ দেশগুলির কর্মীদের সামরিক এবং বেসামরিক প্রশিক্ষণ দেবার জন্য এই ঘাঁটি ব্যাবহার করে । এই ঘাঁটিটি আটটি মিরাজ টু থাউজেন্ড ডি ফাইটার জেট, চারটি এম কিউ নাইন রিপার সশস্ত্র মানবহীন এরিয়াল ভেহিকেল ইউ এ ভি ,একটি বোয়িং সি ওয়ান থার্টি ফাইভ রিফুয়েলিং বিমান, একটি লকহিড সি ওয়ান থার্টি হারকিউলিস সামরিক পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, এবং এনএইচইন্ডাস্ট্রিজ এন এইচ নাইনটি সামরিক হেলিকপ্টার ,ইউরোকপ্টার টাইগার সহ বিস্তৃত বিমান পরিচালনা করে। নাইজারে মার্কিন বাহিনী থেমে থাকে নাই পরবর্তী সময়ে তারা আরো একটি ঘাঁটি নির্মাণ করে । যা নাইজার এয়ার বেস 201 নামে পরিচিত। নাইজার এয়ার বেস 201 আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম মার্কিন ঘাঁটি হিসাবে দাঁড়িয়েছে। নাইজেরিয়ান সরকারের কাছ থেকে দশ বছরের জন্য লিজ নেওয়া, বেস 201 কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল ড্রোন বেস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণে একশো দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বার্ষিক তিরিশ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বেসটি সাহেল অঞ্চলের প্রাথমিক গোয়েন্দা ও নজরদারি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। বেসটি দুই হাজার উনিশ সাল থেকে উচ্চ-প্রযুক্তি স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে কাজ করছে। পঁচিশ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত, বেসটিতে ইউ এ ভি এবং মনুষ্যবিহীন যুদ্ধের আকাশযান এবং এম কিউ নাইন রিপার এবং সি সেভেনটিন পরিবহন বিমান সহ একটি বিস্তৃত বহর রয়েছে। বর্তমানে নাইজারে মার্কিন সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের পরে আকাশসীমা বিধি নিষেধের কারণে ঘাঁটি থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে অক্ষম।
অভ্যুত্থান ও ইকোয়াস
নাইজারের অভ্যুত্থানে ইকোয়াস এর ভূমিকা বারবার সামনে চলে আসছে। উনিশশো পঁচাত্তর সালে ওয়েস্ট আফ্রিকার ষোলো টি দেশ নিয়ে এই ব্লকটি তৈরী হয়েছিলো ।পরবর্তীতে দুই হাজার সালে মরিতানিয়া ইকোয়াস ত্যাগ করলে এর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় পনেরো টিতে ।এটাকে অনেকটা আফ্রিকার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলা যায়। ওয়েস্ট আফ্রিকার দেশ গুলোর মাঝে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা , দেশ গুলোর মাঝে বিবাদ মিটানো, দেশগুলোর মাঝে এক ও অভিন্ন মুদ্রা ব্যাবস্থা চালু করা , দেশগুলোর মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা , অবৈধ ভাবে কেউ ক্ষমতা দখল করে রাখলে তাকে সরিয়ে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা ,অভ্যুত্থান বা বিদ্রোহ হলে তা দমন করা এগুলো ইকোয়াস এর কিছু কাজ।খুব স্বাভাবিক ভাবেই নাইজার এর অভ্যুত্থান এখন ইকোয়াস দেশগুলোর জন্য মাথা ব্যথার কারণ । প্রথম দিকে ইকোয়াস দিন তারিখ ঠিক করে যুদ্ধে শুরু করতে চেয়েছিলো ।পরবর্তী সময়ে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগে অন্যান্য পদ্ধতিতে চেষ্টা করে দেখবে সামরিক জান্তাকে কোনো ভাবে বুঝিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে গনতন্ত্র ফেরানো গেলে ভালো না হলে সর্ব শেষ ধাপ যুদ্ধ ।উত্তেজনা কিছুটা কমে আসলেও এটা নিশ্চিত নাইজার এর সামরিক জান্তার উপর তারা নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করবে। ইকোয়াস দেশগুলোর সাথে নাইজারের সীমান্ত পথ বন্ধ, আকাশ পথেও যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ, এমনকি সব ধরনের আর্থিক লেনদেন ও স্থগিত রয়েছে।
অভ্যুত্থান ও রাশিয়ান ওয়াগনার গ্রুপ
ওয়াগনার গ্রুপ লিবিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং মালি সহ বিশ্বব্যাপী সংঘাতে জড়িত।রাশিয়ায়, ওয়াগনার কোনো অফিসিয়াল কোম্পানি নয়। কারণ রাশিয়ার আইন বেসরকারী সামরিক কোম্পানিগুলির অস্তিত্বের অনুমতি দেয় না। ফলে মস্কো এবং অন্য দেশগুলোর সরকারের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রেখে বিদেশি শেল কোম্পানিগুলির মাদ্ধমে একটি জটিল পক্রিয়াতে এটি পরিচালিতো হয়। যদিও পশ্চিমা ব্লকটি তার শেল কোম্পানিগুলির মাধ্যমে ওয়াগনার গ্রুপের জন্য সারা বিশ্বে কাজ করা আরও কঠিন করার চেষ্টা করছে,তবুও প্রতিষ্ঠান টি বিভিন্ন ফ্রন্টে গোপনীয়তা বজায় রেখে অর্থ পাচারের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বণ করে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াগনার গ্রুপের কার্যক্রম আফ্রিকায়, বিশেষ করে সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং লিবিয়ায় প্রসারিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, মালি, সুদান এবং মহাদেশের আরো বেশ কিছু দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণের জন্য ওয়াগনার ভাড়াটেদের নিজুক্ত করেছে।ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধের শেষ বছরে, ওয়াগনার গ্রুপ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে তার নেটওয়ার্ক আরও প্রসারিত করেছে, সেখানে তাদের খনি গুলো থেকে এক বিলিয়ন ডলার লাভ হয়েছে বলে জানা গেছে।দুই হাজার বিশ সালে, গোষ্ঠীটি একটি কারিগর সোনার খনির নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং এটিকে একটি শিল্প কমপ্লেক্সে পরিণত করার জন্য সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে সৈন্য পাঠায়।একই বছর, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক খনিতে নিযুক্ত একটি কানাডিয়ান কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করে, এবং প্রিগোজিনের মালিকানাধীন একটি রাশিয়ান সত্তা মিডাস রিসোর্সেস নামক একটি মাদাগাস্কার-নিবন্ধিত কোম্পানিকে পঁচিশ বছরের জন্য নিযুক্ত করে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব সম্প্রতি সুদানের সোনার খনির কোম্পানি মেরো গোল্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এই বলে যে এটি প্রিগোজিনের "মালিকানাধীন এবং নিয়ন্ত্রিত" এবং "সুদানে কর্মরত ওয়াগনার বাহিনীর একটি কভার হিসাবে" কাজ করছে ।পোর্টেবল পণ্য এবং মূল্যবান রত্ন, যেমন সোনা এবং হীরা, ওয়াগনারের জন্য অর্থ আয়ের আদর্শ উপায় কারণ সেগুলি সহজেই হোয়াইটওয়াশ করা যায়।সেন্ট পিটার্সবার্গে আর এন ট্রেডিং নামে নিবন্ধিত একটি অস্পষ্ট কোম্পানি দ্বারা এই রত্নগুলির ব্যবসা করা হয়েছে। গত বছর, ওয়াগনারের আমন্ত্রণে সুদানের কর্মকর্তারা খার্তুমে রাশিয়াগামী একটি বিমান পরিদর্শন করেছিলেন এবং কুকি হিসাবে লেবেলযুক্ত বাক্সে সোনা খুঁজে পেয়েছিলেন।শুধু মূল্যবান রত্ন নয় তারা নিজেদের অন্যান্য লাভজনক ব্যাবসায় সম্পৃক্ত করেছে।যেমন একটি ওয়াগনার কোম্পানিকে কঙ্গো বেসিনের একটি এলাকায় কাঠ ব্যবসার জন্য তিরিশ বছরের বনায়ন পারমিট বরাদ্দ পেয়েছে, যা বিশ্বের অনুন্নত রেইনফরেস্টের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশগুলির মধ্যে একটি।দুই হাজার একুশ সালে বনায়নের ছাড়ের দরপত্র ঘোষণার সময় কাঠ কোম্পানি বোইস রুজ অংশ নিয়েছিলো। ফেব্রুয়ারিতে এই কোম্পানিকে ছাড় বরাদ্দ করা হয়েছিল।সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত, বোইস রুজ কোম্পানির সাথে প্রিগোজিনের নিকটবর্তী ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। সেই সময় ওয়াগনার ভাড়াটেরা বোদা শহরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এবং একই সময়ে ওই অঞ্চল থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সেন্ট্রাল আফ্রিকান সরকারী সেনাবাহিনী ওয়াগনার ভাড়াটেদের দ্বারা সমর্থিত একটি সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল,আন্তর্জাতিক বাজারের হিসাবে যখন কঙ্গো বেসিনের তিরিশ শতাংশ কাজ শেষ হবে তা থেকে তখন সম্ভাব্য আয় হবে আটশো নব্বই মিলিয়ন ডলারে।যদিও এখানে সমূর্ণ হিসাব নাই তারপরও বুঝাই যাচ্ছে কাঠের ব্যাবসার মধ্যেমেও ওয়াগনার বাহিনী ভালো লাভ করেছে। ওয়াগনার গ্রুপকে সিরিয়ায় ভাড়াটে কাজের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল এবং গ্যাসের অর্থ প্রদান করা হয়েছিল।দুই হাজার আঠারো সালে, মার্কিন-অনুমোদিত কোম্পানি ইভিরোপোলিশ, আরেকটি প্রিগোজিন-নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি, ওয়াগনার ভাড়াটেদের বিনিময়ে দায়েশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দখলে থাকা তেলক্ষেত্র দখলের বিনিময়ে সিরিয়ার সরকার এর কাছ থেকে জ্বালানি ব্যাবসার লাভের ভাগ নিয়েছিলো। ইভিরোপোলিশ কোম্পানির অ্যাকাউন্টিং রেকর্ডগুলি নির্দেশ করে যে সিরিয়ার হোমসে আল-শায়ের গ্যাস প্ল্যান্ট এবং অন্যান্য তিনটি শক্তি উৎপাদন সাইট শুধুমাত্র দুই হাজার সতেরো সালে প্রিগোজিনের ফার্মের জন্য প্রায় এক শত বাষট্টি মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।ওয়াগনারের ও শেল কর্পোরেশন এই সম্পর্ক স্পষ্ট। তারপরও গ্রুপটি রাশিয়ান রাষ্ট্র থেকে তহবিল পায় কিনা এমন প্রশ্নে পরোক্ষভাবেও কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।
নাইজারের সেনা অভ্যুত্থানের পর সামরিক জান্তার পক্ষে নাইজারে সাধারণ মানুষ মিছিল বের করে।নাইজারের উত্তেজিতো মানুষ মিছিল নিয়ে ফরাসি দূতাবাস আক্রমণ করে। ঢিল দিয়ে দূতাবাসের জানালা দরজা ভাঙ্গে ও ফ্রান্সের পতাকায় আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকে।ফ্রান্সের দূতাবাসের সামনে মিছিলে তারা রাশিয়ার পতাকা ও পুতিন এর ছবি নিয়ে রাশিয়ার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ইকোয়াস যখন নাইজারের সামরিক জান্তার বিপক্ষে যুদ্ধের ঘোষণা করলো তখন অবস্থা বেগতিক দেখে নাইজারের জেনারেলরা রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্য বাহিনী ওয়াগনারের কাছে সাহায্য চাইলো।তখন ওয়াগনারের নেতৃত্বে ছিলেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। পরবর্তী সময়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণে ইয়েভজেনি প্রিগোজিন মালিতে যান এবং এক ভিডিও বার্তায় জানান আফ্রিকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এখন তার মূল লক্ষ্য। জঙ্গি সংগঠন গুলোর বিরুদ্ধে তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন । ওয়াগনার প্রধান আফ্রিকা ভ্রমণ শেষে ভিডিও বার্তা দিয়ে যখন নিজ বিমানে করে রাশিয়াতে ফেরত যাচ্ছিলেন। সেই সময় তার বিমান আক্রমণের শিকার হয়। দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয় তার বিমানে আক্রমনের পিছনে রাশিয়ান গোয়েন্দা বাহিনী সংশ্লিষ্ট ছিলো। ওয়াগনার প্রধানের মৃত্যুর পর খুব স্বাভাবিক রাশিয়ান কৌশলে অনেক পরিবর্তন আসবে। আফ্ৰিকার ক্ষেত্রে ওয়াগনার বাহিনী কে পুতিন ও রাশিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী আবার নতুন করে ঢেলে সাজাবে। এতে নিশ্চিত নেতৃত্বে অনেক পরিবর্তন আসবে। নতুন ভাবে ওয়াগনার বাহিনী আত্মপ্রকাশ পেতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। রাশিয়ার কাছে এখন মালি ও বুরকিনা ফাসো তে তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখাটাই মূল বিষয়। নাইজারের অভুত্থানে রাশিয়া ও ওয়াগনার বাহিনী নিজেদের কতটা জড়াবে তা কিন্তু এখনো বুঝা যাচ্ছে না।
অভ্যুত্থান ও সারাংশ
নাইজারে সামরিক অভুত্থান নতুন কোনো বিষয় না। দেশটির জনগণ এর আগেও বহুবার সামরিক জান্তার শাসন দেখেছে। বরং কোনো গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকার যদি পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারতো তে হইলে নাইজারের ইতিহাসে নতুন একটা অধ্যায় যুক্ত হইতো। সর্বশেষ তেইশ সালের অভুত্থান দেশের মানুষের কাছে স্বাভাবিক মনে হইলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পরিস্থিতি একে বারেই ভিন্ন। সমগ্র বিশ্ব নাইজারের সামরিক জান্তার প্রতিটা পদক্ষেপ খুব সাবধানতার সাথে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করলে বুঝা যায় পূর্বের সামরিক অভ্যুত্থান গুলোর সাথে এই বারের অভ্যুত্থানের অনেক পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ মানুষের মৌন সমর্থন না থাকলে কখনোই এই রকম রক্তপাত হীন সামরিক অভ্যুত্থান সম্ভব না। দেশের জনগণ নির্বাচিত সরকার না চেয়ে কেনো বার বার সামরিক জান্তাকে বেছে নিয়েছে। এর পিছনে মূল কারণ দেশের জনগণের কাছে নির্বাচিত সরকার ভিন্ন দেশের পুতুল সরকার হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে। পশ্চিমা রাষ্ট্র গুলো ঠিক মতো নাইজারে দৃষ্টি দেয় নাই এবং নানা ভাবে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। দুর্নীতির পিছনেও পশ্চিমা রাষ্ট্রের ইন্ধন এখন মানুষের কাছে স্পষ্ট। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে অযাচিত ভাবে ভিন্ন ভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর অবস্থান খুব স্বাভাবিক ভাবেই দেশটির মানুষকে ভাবিয়ে তুলে। এমনিতেই নাইজার দেশটি পৃথিবীর সব থেকে দরিদ্র দেশ গুলোর মঝে একটা।শিশু জন্মের হার পৃথিবীর সর্বোচ্চ। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান প্রতিকূল অঞ্চলে হওয়াতে দেশটির আবহাওয়া কৃষিকাজের জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়। বার বার দুর্ভিক্ষ আর খরা এখন নাইজারের জন্য খুব স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠেছে। এর সাথে আবার যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন জিহাদি ও জঙ্গি তৎপরতা।অভ্যুথানের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের ভিন্ন কৌশলের কারণে পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে আরো কঠিন পর্যায়ে পৌঁছাবে। ইকোয়াস পশ্চিম আফ্রিকার পনেরোটি রাষ্ট্র সামরিক জান্তার বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে সীমানা সম্পূর্ণ বন্ধ। আকাশ ও স্থল পথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। সব ধরণের আর্থিক লেনদেন বন্ধ। যার ফলশ্রুতিতে নিত্য দিনের ব্যবহারের বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্য দ্রব্যের মূল্য লাগামহীন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালি ও বুরকিনা ফাসো তে সামরিক জান্তা ক্ষমতায় থাকায় তারা নাইজারের সামরিক জান্তাদের সহিংসতার দিকে উসকে দিচ্ছে। আর অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলো নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পশ্চিমা রাষ্ট্র গুলো সামরিক জান্তার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতা সম্পূর্ণ ভাবে স্থগিত করা হয়েছে। দেশটির বাৎসরিক বাজেটের চল্লিশ শতাংশ পশ্চিমা রাষ্ট্রের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। ফ্রান্স নাইজারের বিষয়ে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের নিয়েছে ও ভুল কৌশল অবলম্বন করছে।যার ফলে নাইজারে জনমত এখন সমূর্ণ নাইজার বিরোধী। গোটা আফ্রিকাতে ফ্রান্স এখন খুব করুন পরিস্থিতিতে আছে। নাইজার ফ্রান্সের জন্য শেষ আফ্রিকার দেশ যে খান থেকে বিতাড়িত হোল সাহেল অঞ্চলে তাদের প্রভাব পুরোপুরি শেষ হয়ে আসবে।মার্কিনি দের কাছেও ফ্রান্সের বিষয়টা স্পষ্ট যার কারণে কৌশল প্রণয়নে মার্কিনিরা ফ্রান্সের থেকে একটু দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছে। সাহেল অঞ্চল সহ গোটা আফ্রিকাতে গোয়েন্দা নজরদারি রাখার জন্য তারা নাইজারকে বেছে নিয়েছিলো। বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে এয়ার বেইজ তৈরী করেছিলো। যা এখন তাদের জন্য গলার কাটা হয়ে উঠেছে। পশ্চিমা দেশ গুলোর সাথে সামরিক জান্তার দূরত্বকে কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া। আফ্রিকার বিভিন্ন অভুত্থান হওয়া রাষ্ট্র গুলো এখন রাশিয়ার কাছে সাহায্য চাইছে। রাশিয়া কৌশলে করে তাদের ভাড়াটে সামরিক বাহিনী ওয়াগনার কে কাজে লাগিয়েছে।এক দিকে ওয়াগনার সামরিক জান্তা গুলোকে নিরাপত্তা দিচ্ছে বিনিময়ে অন্য দিকে হাতিয়ে নিচ্ছে সব খনিজ সম্পদ। সামরিক অভ্যুথানের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বুঝাই যাচ্ছে সামনের দিনগুলো নাইজারের সাধারণ জনগণের জন্য খুব কঠিন হবে আবার দুর্ভিক্ষ হইলে অবাক হবো না।
২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৫৯
শিশির খান ১৪ বলেছেন: হুম ,ঠিক বলছেন বিশাল আলোচনার বিষয় মজার বিষয় কি জানেন ১৯৬০সালে নাইজার স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকার সেখানে পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই ।
২| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২২
কামাল১৮ বলেছেন: বিশ্ব মোড়লরা আফ্রিকার খনিজ সম্পদ লুটের জন্য গুটি চালাচালি করে।বৃটিশ এবং মার্কিনিরা মিলে নতুন সাম্রাজবাদ চালু করেছে।তার হাওয়া বাংলাদেশ ভালো ভাবে টের পাচ্ছে।
২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:০৪
শিশির খান ১৪ বলেছেন: ভাই আফ্রিকা ফ্রান্স এর উপনিবেশ ছিলো ব্রিটেনের না । মনে হয় মার্কিন ও ফ্রান্স গুটি চালাচালির কথা বলতাছেন। ব্রিটেন আফ্রিকাতে খুব একটা শক্তিশালী না।
৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৩২
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: খুব সম্ভবত নাইজেরিয়া এবং মালি যৌথভাবে নাইজারে সেনা অভিযান পরিচালনা করবে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহয়তায়।
৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:০৯
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: নাইজার অভ্যুথান নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রিয় ব্লগার ভুয়া মফিজ যেভাবে সুন্দর ভাবে মন্তব্য করেছেন তারপর আর নতুন করে আর বলার কিছু নাই। নাইজারে ফ্রান্স-আমেরিকার হিসাব-নিকাশ যে একটু বেশিই কঠিন হয়ে গেল তা সহজেই অনুমান করা যায়।
৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:১২
শিশির খান ১৪ বলেছেন: না ভাই মালিতে অভ্যুত্থান হয়েছে গত বছর। এখন মালিতে সামরিক জান্তা ক্ষমতায় মালির সামরিক জান্তা নাইজারের সামরিক জান্তাকে সাপোর্ট করতাছে। মানে নাইজার আর মালি এখন বন্ধু। হে এটা ঠিক বলছেন নাইজেরিয়া আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোকে সাথে নিয়ে ফ্রান্স ও মার্কিন সহায়তায় হয়তো আক্রমণ করতে পারে ,এইরকম একটা সম্ভবনা আছে। তবে আমার মনে হয় ওরা যুদ্ধ করলে আরো আগেই করতো এতো দিন অপেক্ষা করতো না।
৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:১২
শাহ আজিজ বলেছেন: বিশাল পোস্ট । ধীরে পড়তে হবে ।
২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৪১
শিশির খান ১৪ বলেছেন: হুম আগ্রহ থাকলে পরে সময় নিয়ে পড়তে পারেন। আর না হইলে লাস্ট এর পেরা সারাংশ টা পইরা নেন।
৭| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: আজ অর্ধেক পড়লাম। বাকিটুকু আগামীকাল পড়বো।
৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৪
শিশির খান ১৪ বলেছেন: ধন্যবাদ ,রাজিব ভাই সময় নিয়ে পড়ার জন্য .......
৮| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:৪৩
শাহ আজিজ বলেছেন: বদমাশ পুতিন নাইজারের খনিজ সম্পদ হাতিয়ে নেবার যে কৌশল নিয়েছে তা এখন পরিস্কার । প্রিগোশিনের কাছে জমা সব বস্তুগত সম্পদ নিজের দখলে নেবার জন্য তাকে খুন করল । বিষয়টি এখন পরিস্কার , ধন্যবাদ আপনাকে ।
৩০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:১৫
শিশির খান ১৪ বলেছেন: বলেছেন: হুম , এই তো পয়েন্টে চইল আসছেন বেচারা প্রিগোশিনের সব টাকা এখন পুতিনের। জলে থাইকা কুমির এর সাথে মারামারি কইরা টিকা যায় না ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোর মতোই গণতন্ত্র আবারো বাধাগ্রস্থ হলো।খুব স্বাভাবিক ভাবেই জানতে ইচ্ছা হয় কেনো আফ্রিকার দেশগুলোতে বার বার সামরিক জান্তা ও অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে নেয় ? এতে জনগনের কি মনোভাব থাকে ?যাদের অর্থনীতি এতো দুর্বল তাদের সামরিক জান্তা এতো শক্তিশালী হয় কি ভাবে ? উন্নত দেশ গুলো কেন এতদিন নিশ্চুপ ছিলো ? যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের এতো আগ্রহের পিছনে কারণ কি ? রাশিয়া আফ্রিকাতে কি করে ? নাইজারের পরিস্হিতি সুক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করলে হয়তো এই রকম নানা কঠিন প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া কিছুটা সহজ হবে।
গনতন্ত্র মানে সব সময়েই ভালো কিছু না। ক্ষমতাশীলরা গনতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা পাওয়ার পরে যদি জনগনের জন্য কাজ না করে বিদেশী প্রভুদের জন্য কাজ করে, তাহলে সেই গনতন্ত্রের কোন গ্রহনযোগ্যতা থাকে না।
নাইজারের ইউরেনিয়ামের কারনেই সেই দেশটার প্রতি আমেরিকা-ফ্রান্স তথা পশ্চিমা বিশ্বের এতো আগ্রহ। ফ্রান্সকে তো আফ্রিকার দেশগুলোকে শোষণের ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন বলা যায়। নাইজারের গনতান্ত্রিক সরকার পশ্চিমাদের চামচামি করার কারনেই সেনাবাহিনী এবং সাধারন জনগনের রোষানলে পড়েছে।
উন্নত দেশ গুলো কেন এতদিন নিশ্চুপ ছিলো? কারন, তাদের স্বার্থ হাসিল হচ্ছিল। এখন সেখানে টান পড়ায় তাদের টনক নড়েছে।
রাশিয়া আফ্রিকাতে কি করে? সহজ সমীকরণ। শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়। রাশিয়া সেই কাজটাই করছে।
নাইজারের জনগন এখন পশ্চিমাদের শোষণের বিরুদ্ধে দাড়ানো সেনাবাহিনীকে সমর্থন করছে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব যদি সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হয়, তাহলে নাইজারের জনগণের কপাল ভালো। দেশের পরিবর্তন ভালোর দিকে যাবে। নয়তো, যেই লাউ, সেই কদু!!!
অত্যন্ত সংক্ষেপে বললাম। এটা একটা বিশাল আলোচনার বিষয়।