নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধচোখে তাকাই, চোখাচোখি হয়.... দেখা হয়না কখনো, কোনদিন......

স্বপ্ন সতীর্থ

কাউকে না কাউকে হেরে যেতে হয়, নয়তো বিজয়ী বলে কিছু থাকত না......

স্বপ্ন সতীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বটবৃক্ষ আমার, সমুদ্র আমার

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৬

বাড়ি থেকে পালিয়েছিলাম বহুবার । সারারাত ঘুরতাম। বন বাঁদাড়, কবর-শশ্মান, বিল- নদী সব চষে বেড়াতাম রাতভর। ঘুটঘুটে অমাবস্যা, ফিনিক ফোটা জোৎস্না, রাত ভর বৃষ্টির কান্না বহুবার দেখেছি আমি। জীবনের এই আট হাজার নয়শ দিন বেঁচে থাকার মধ্যে এই রাতগুলোর কাছেই আমি শিখেছি অনেক। পালাতাম দুটো কারণে । এক স্কুল ফাঁকি দেওয়ার জন্য। দুই, দোকান থেকে টাকা চুরি করে সিনেমা দেখার জন্য। প্রচুর সিনেমা দেখেছি একটা সময়। এমনকি একদিনে একই ছবি তিন শো দেখেছি এমনও হয়েছে বহুবার।
আব্বা খুব রাগী মানুষ । প্রচুর মার খেতাম এইজন্য তাঁর হাতে। আব্বার হাতে মার খেতাম যে কারণগুলোর জন্য তার মধ্যে এগুলোর পাশাপাশি সবচেয়ে অবাক করা কারণ যেটি ছিলো তা হলো । বই পড়ার জন্য । অবাক করা এই জন্য যে আব্বা নিজে খুব পড়ুয়া মানুষ । প্রচুর বই এর সংগ্রহ তাঁর । বাড়িতে বিশাল এক লাইব্রেরী দিয়েছেন। তিনি নিজেই আমার হাতে বই তুলে দিয়েছিলেন খুব ছোট থাকতেই। অথচ বই পড়ার জন্য আমাকে প্রচুর মার খেতে হয়েছে। কেনইবা হবে না । কোন কিছুইতো বেশি বেশি ভাল না। যতই মার খাই বই পড়া থামেনি। টয়লেটে ঢুঁকু, খাটের তলায়, গাছের উপর , অন্য কারো বাড়ি গিয়ে , খেলার মাঠে । বই পড়া থেমে থাকেনি। রাতে বই পড়ার জন্য অভিনব এক পদ্ধতি আবিষ্কার করলাম। বাজারে ছোট এক ধরণের বাল্ব কিনতে পাওয়া যেত । ওর সাথে বাসায় থাকা রেডিওর পুরনো ব্যাটারি দিয়ে একটা আলোর ব্যবস্থা করলাম। কাঁথা মুড়ি দিয়ে বই পড়তাম। ঘেমে একসা হয়ে যেতাম গরমে। বই পড়ার অভ্যাস কমে এলেও এই অভ্যাস এখনো আছে । শীত গ্রীষ্ম কোন ঋতুতেই কাঁথা ছাড়া আমার ঘুম আসেনা। কেমন যেন অস্তি লাগে।
বাসার মানুষ আমার বই পড়ার উপর মহা বিরক্ত ছিল একটা সময়। কারণ, বই পড়লে গোসল খাওয়া ঘুম কিছুই মনে থাকত না। যার জন্যই মার খেয়েছি । খাবার গ্রহণ বিষয়টা খুব বিরক্তিকর একটা ব্যাপার ছিল আমার কাছে । (স্বাস্থ্য দেখলেই বোঝা যায়) বই পড়ার বিষয়ে সকল বাঁধা নিষেধ চলে গেল ২০০৮ সালে । সে বছর প্রথম আলো গোল্লাছুট গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাই। নিজের লেখা গল্প বইয়ের পাতায় দেখে খুশিতে আটখানা আমি। আব্বাও খুশি হন। এর আগে ২০০৬ সাল থেকেই আজকের কাগজ, যুগান্তর, সংবাদ আর প্রথম আলো পত্রিকায় অনেকগুলো লেখা ছাপা হয়েছিলো । যা বাসায় কখনো দেখাইনি ভয়ে। মা জানতো । বোন জানতো । কিন্তু আব্বাকে দেখাইনি।
আমার আব্বাও লেখালেখি করেন। তাঁর লেখা নিবন্ধগুলো পাঠে আমি মুগ্ধ হই এখনো। বাসায় বেশ কয়েকটা মাসিক পত্রিকা রাখা হতো । ওগুলোতে আব্বা লিখতো । মাঝে মাঝে আমি ক্যুইজ এর উত্তর পাঠিয়ে প্রাইজবন্ড পুরষ্কার পেতাম। অনেকগুলো প্রাইজবন্ড জমা হয়েছিলো আমার ।
আমার লেখালেখির হাতেখড়ি যার হাতে তিনি কবি রইস মনরম। তাঁ লেখার হাত, তাঁর দর্শন , তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা সবই অনুসরণ করার মত। অসাধারণ মানুষ তিনি। সাদা মনের মানুষ বলতে কেউ থাকলে পৃথিবীতে তিনি আছেন । কবিতা লেখা, আবৃত্তি শেখা, নাটক , গান, সাহিত্য বাসর, খেলাঘর সব কিছুর শুরুটা তাঁর হাত ধরে । মহৎপ্রাণ এ মানুষটি আমার আত্মিক জগতের পিতা। তাঁর কাছে আমি অনেকদিন ধরে একটা আবদার করে আসছি পিকিমিকি এ্যাডভেঞ্চার বইটা যেন লিখে শেষ করেন । তিনি আবদারটা এখনো রাখলেন না।
আমার আব্বা এখন অনেক বুড়িয়ে গেছেন । কমে গেছে তাঁর রাগ। হঠাৎ হঠৎ রেগে উঠা মানুষটা কেমন যেন হাঁপিয়ে গেছেন । পড়ার পরিধিটা ছোট হয়ে গেছে তাঁর । আমারও । আমি এই রাগি অথচ অসম্ভব ভালো বাবাটাকে কখনো বলতে পারিনি ভালোবাসি শব্দটা। আসলে যাদেরকে সত্যিকারের ভালোবাসা হয় তাদেরকে এই কথাটা কখনো বলতে হয়না। বলাও হয় না।। ভালোবাসার মানুষগুলো ভালো থাকুক…

সবার মঙ্গল হোক..
সবার বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকুক…
সবার শনির দশা কাটুক….

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮

অবনি মণি বলেছেন: সুন্দর স্মৃতিচারণ!!

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪

ক্লে ডল বলেছেন: আপনার লেখালেখির অভ্যাস আছে তা এই লেখায় পরিপক্কতার ছাপ থেকে বোঝা যায়।

ছোটবেলায় ডানপিটে ছিলেন মনে হচ্ছে।

বাবার প্রতি ভালবাসাও প্রকাশ পেয়েছে দারুণ ভাবে।

সবার মঙ্গল হোক..
সবার বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকুক…
সবার শনির দশা কাটুক….

সুন্দর বলেছেন।

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০

মারিয়া ফেরদৌসী বলেছেন: সুন্দর বলেছেন। ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.