নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধচোখে তাকাই, চোখাচোখি হয়.... দেখা হয়না কখনো, কোনদিন......

স্বপ্ন সতীর্থ

কাউকে না কাউকে হেরে যেতে হয়, নয়তো বিজয়ী বলে কিছু থাকত না......

স্বপ্ন সতীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে আসার গান

০৯ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬

এক ঘন্টা আগে এসে ট্রেনে সিট পাব,ভাবিনি। তাও শোভন চেয়ার। অবিশ্বাস্য লাগছে। তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরছি। প্রচণ্ড রোদ। গরমে ঘামছে সবাই। পুউউউউউউউউউউ। ট্রেন ছেড়েছে। শহরটা ছেড়ে যাচ্ছি। প্রতিবার যাবার বেলায় আমার একই অনুভূতি হয়। মনে হয় আর ফিরে আসা হবে না। কিন্তু আবার ঠিকই ফিরে আসি। আমি অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, থাকার জন্য আমি এ শহরকে বর্জন করব। একদিন সত্যিই এ শহর ছেড়ে যাব তারপর আর ফিরব না।
আমার ঘুম পাচ্ছে। পাশের সিটটা এখনো ফাঁকা। আমি গা হাত পা ছেড়ে ঘুমানোর জন্য হেলান দিতে কেউ একজন মাথায় ঠোকা দিল। চমকে উঠে দেখি বন্ধু তনয়। বাহ। ভালই হলো। দুই বন্ধুতে মিলে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। তনয় অবশ্য খুবই পড়ুয়া ছাত্র। পড়ালেখার বাইরে কিছুই চিন্তা করেনা। থাকে শহীদুল্লাহ হলে। ফাঁকা আসনে তনয়কে বসতে দিলাম। দুজনের আড্ডা জমে উঠেছে। বাইরে তাকালাম ঝকঝকে রোদ। চোখ ঝলসে যাবার জোগাড়। তনয়কে বললাম আমি একটু ঘুমাই। বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ট্রেনের দুলুনিতে সত্যিই ঘুমিয়ে পড়লাম। চোখ খুলে দেখি বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। আমার পাশে তনয়ের বদলে একজন গোমড়া মুখো পৌঢ় বসে আছেন। উঠে দাঁড়িয়ে তনয়কে খুঁজলাম। ও আমার থেকে চার পাঁচ সিট পরেই বসেছে। ট্রেন যতো সামনে যাচ্ছে ততই বৃষ্টি বাড়ছে। চারপাশ কেমন অন্ধকার হয়ে আছে। খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজি। আমি আবারও চোখ বন্ধ করলাম। কল্পনার বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম তুমুল আনন্দে। সব যেন সত্যি সত্যি ঘটছে।
আবার যখন ঘুম ভাঙলো বাইরে তখন বৃষ্টির ছিটে ফোঁটাও নেই। বিকেল গড়িয়ে গেছে। ভালই ঘুমিয়েছি। পুউউউউউউউউউ। ট্রেনের হুঁইসেল শুনে একসাথে অনেকগুলো পাখি উড়ে গেল। বিরাট তেপান্তর পাড় হতে। বিশাল একটা বিলের মাঝদিয়ে ছুটে চলেছে ট্রেন। দূরে একটা তালগাছ দেখা যাচ্ছে। একদম একা, নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে। বড় অশ্লীল লাগে আমার কাছে এমন দৃশ্য গুলো। বিলের পানি কেমন অদ্ভুত স্থির হয়ে আছে। টলটল করছে। দেখলেই ঝাঁপ দিতে ইচ্ছে করে।
আকাশের একপাশ লাল হয়ে যাচ্ছে। সূর্য ডুবি ডুবি করছে। আকাশটাকে কেমন অসহায় দেখাচ্ছে। একসাথে অনেকগুলো পুকুর পড়লো। পুকুরের পাড়ে চারটা তালগাছ। পাশাপাশি দাঁড়ানো।একটা বেশ বড়, তারপরেরটা একটু ছোট। বাকী দুটো বাচ্চা। তাদের প্রতিবিম্ব পড়েছে। টলটিলে স্বচ্ছ জলে। সুখী পরিবারের মতন দেখাচ্ছে। দূরে গলা উঁচু করে স্থির দাঁড়িয়ে আছে একটা বক। শেষ বিকেলের আলোয় অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে।

ট্রেন একটা অখ্যাত স্টেশনে থেমেছে। এখানে থামার কথা না। ছোট্ট একটা স্টেশন। কোন ভীড়ই নেই। একজন বয়স্ক মানুষ একটা ছোট কাঁঠাল নিয়ে বসে আছেন। বিড়বিড় করে কি যেন বলছেন। ট্রেনটা ক্রসিং হবে। লেট হবে। যাত্রীরা যে যার মত নামছে। সন্ধ্যাও নেমেছে একই সাথে। স্টেশনের পেছনে বিরাটা একটা বট গাছ। বট গাছের মাথায় হঠাৎ করেই বেরিয়ে এলো ঝাঁ চকচকে চাঁদ। হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে। আমি তাকিয়ে আছি চাঁদের দিকে। যেন বহুকাল পরে প্রাক্তন প্রেমিক তার প্রেমিকার মুখ দেখছে। আমি তন্ময় হয়ে আছি। ট্রেন ছেড়েছে অনেকক্ষণ। আমি আর চাঁদ এখনো দেখছি একে অপরকে। কতকাল পরে মুখোমুখি হলাম....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.