নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধচোখে তাকাই, চোখাচোখি হয়.... দেখা হয়না কখনো, কোনদিন......

স্বপ্ন সতীর্থ

কাউকে না কাউকে হেরে যেতে হয়, নয়তো বিজয়ী বলে কিছু থাকত না......

স্বপ্ন সতীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেখানে সাধ চলে যাও

১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৩৫

নগর পরিবহন এ চড়েই ঘরে ফিরি রোজ। আজকে দোতলার সামনের সিটে বসে ফিরছি। বাস মৎস্য ভবন মোড়ে সিগন্যালে। হঠাৎ একটা গাছে চোখ গেল আটকে। এই জিনিস এতদিন ধরে এখানে। রোজই তো এই পথে ফিরি কই চোখে তো পড়ে না। স্থাপত্য অধিদপ্তরের একটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ। ভরা বর্ষায় ফুল ধরে আছে। অবশ্য এ বছর সব গাছেই কৃষ্ণচূড়া দীর্ঘ স্থায়ী রূপ পেয়েছে। তবে আমার চোখ আটকেছে অন্য কিছুতে। কৃষ্ণচূড়ার গাছের লাগোয়া আরেকটা গাছ। নীল কৃষ্ণচূড়া। Blue Jacaranda যার নাম। কয়েকটা মাত্র ফুল। কিছুদিন আগে ছিল এর ফুলের মরশুম। আমার চোখ ছানাবড়া। এই অপূর্ব রঙ এতদিন কেন দেখিনি। অবশ্য ঢাকা শহরে এই বস্তু আরেক জায়গায় আছে। ধানমণ্ডি ৩২ এ বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে। বিভিন্ন গাছের ফোকর গলে একটু একটু দেখা যায়।

মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল। আমি তাকিয়ে আছি গাছটার দিকে। হঠাৎ নিচে একটা হইচই শোনা গেল। উঁকি দিয়ে দেখি একটা লোক দৌড়ে পালাচ্ছে। পেছনে ছুটছেন আরও একজন। বেশ স্বাস্থ্যবান ভদ্রলোক। কিন্তু ধরতে পারলেন না। জানা গেলো বাস থেকে নামার সময় উনার মানিব্যাগ নিয়ে দৌড় দিয়েছে। বেশ বিমর্ষ হয়ে গেলেন ভদ্রলোক। পুলিশ বক্সে গেলেন সঙ্গে সঙ্গেই। এই রাস্তায় কয়েকজন পানি বিক্রি করছে। তাদের পাশ দিয়েই দৌড়ে গেল। উনি তাদের ধরতে বলেছিলেন , তাদের ভ্রুক্ষেপও হয় নি।

সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে। সবার অনেক তাড়াহুড়ো। তুমুল গতিতে ছুটে যাচ্ছে একেকটি বাহন। আমাদের বাস অবশ্য সেই গতিতে আটকে আছে বলা যায়। সামনেই একটা রিকশা পড়েছে। বেচারা না পারছে সাইড দিতে না পারছে খুব জোরে টানতে। রিকশায় তিন তরুণী বসে আছে। বেশ হাসিখুশি তারা। গল্পে গল্পে হাসিতে ভেঙে পড়ছে একেকজন।

রিকশা বাহন হিসেবে এক সময় আমার খুব পছন্দের ছিলো। মানুষের সব পছন্দ সব সময় এক থাকে না। এখন অপছন্দের শীর্ষে এই জিনিস। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষে আমার একজন বন্ধু ছিলেন। যিনি আমাকে এই শহরে পরম মমতায় আগলে রাখতেন। তার সাথে বের হতাম প্রায় দিনই। ঘণ্টা চুক্তি রিকশা নিতাম আমরা। দুই ঘণ্টা ১০০ বা ১২০ টাকা নিতো। এই ভাড়ায় রিকশা ওলা বেশ খুশিই থাকতো। আমরা হুড খোলা রিকশায় ঘুরতাম। গলা ছেড়ে গাইতাম। কখনো সখনো আমরা ভিজতাম অকস্মাৎ নেমে আসা বৃষ্টিতে।

আমার সেই বন্ধুটি আর নেই। হারিয়ে গেছেন। তার শোক চেপে রেখেছি অনেক বছর। শেষ বার তিনি এসেছিলেন এক সন্ধ্যায়। বইমেলায় ঘুরেছিলাম। ক্লান্ত হয়ে বসে জিরিয়ে নিয়েছিলাম এক বেঞ্চিতে। সেই আমাদের শেষ আলাপ। এখনো চোখে লেগে আছে ঠোঁটের কোণে মেখে থাকা হাসিটুকু।

একটু আগের মন ফুরফুরে ভাবটা চলে গেছে। একরাশ বিষণ্ণতা ভর করলো হঠাৎ। ভারী হয়ে আসছে যেন সব। গলার কাছে এক বলক কান্না থমকে আছে। মন খারাপ হয়ে গেছে আমার।

হাতে কবি হাফিজ শিরাজির অনন্য সৃষ্টি। আমি দুঃখ ভুলতে চোখের সামনে মেলে ধরলাম এই -
ওগো সাকি, দাও বিলিয়ে প্রাণ পেয়ালায় শরাব তোমার..
প্রথমে প্রেম সহজ ভেবে পদে পদে খাচ্ছি তো মার...

আমার চোখ ভিজে আসছে। বাস ছুটছে। তীব্র বাতাসে আদ্র গলার থমকে থাকা আরও যন্ত্রণা দিচ্ছে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর।

২০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:১৪

স্বপ্ন সতীর্থ বলেছেন: ধন্যবাদ!

২| ২১ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৫:০৬

আখেনাটেন বলেছেন: যান্ত্রিক জীবনেের যাঁতাকলে বহমান জীবন।

চমৎকার লিখেছেন চলতে ফিরতের গাঁথা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.