নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ দাস

সৌরভ দাস ১৯৯৫

চলুন, সবাই কথা বলি

সৌরভ দাস ১৯৯৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তান প্রসঙ্গে দু চারটি কথা

১৩ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৩৮


পাকিস্তান নিয়ে কিছু কথা বলা বেশ জরুরি মনে করছি। পাকিস্তানকে আমরা খুব ভালো করে চিনি। সম্ভবত আমাদের থেকে আরো কোনো দেশের পাকিস্তানকে ভালো চেনার কথা না। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের রমরমা প্রায়শই দেখা যায়। কদাচিৎ যুদ্ধ লাগলেও বেশির ভাগ হুমকি ধামকি দু একটা লাশ ফেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে এই পাকিস্তান দ্বিধাহীন ভাবে হত্যা করেছে। দু লক্ষ মা বোন ধর্ষণের স্বীকার হয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনীর দ্বারা। সেই পাকিস্তানের মানুষগুলোর বর্তমান কিছু চরিত্রের সাথে আপনাদের সবাইকে আজ একটু পরিচয় করিয়ে দিবো। বিষয়টা বেশ আগ্রহ সহকারে করছি কারণ এই নতুন প্রজন্মেও পাকিস্তানী চরিত্রগুলো আমি নিজে অবলোকন করেছি।

প্রথমেই বলে নিচ্ছি “পাকিস্তানী” বলতে আমি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চিন্তা চেতনায় গড়া মানুষগুলোকেই বুঝাচ্ছি। কিন্তু যেসকল বেলুচরা (বেলুচিস্তানের বাসিন্দা, যাদের বড় একটি অংশ আজো মনে করে তারা বেলুচ, তারা পাকিস্তানী নয়) এখনো তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন, সিন্ধের যে সংগ্রামী জনতা এখনো পাকিস্তান কনসেপ্টের বিরোধিতা করছেন, এছাড়াও পাকিস্তানের সকল প্রগতিশীল মানুষজনকে এই “পাকিস্তানী” শব্দটির মধ্যে ফেলে আমি বিবেচনা করি না। কারণ তারা এই পাকিস্তানী কনসেপ্ট থেকে বের হওয়ার জন্য লড়াই সংগ্রাম করছেন।

ইউরোপে আসার পর আমি অনেক পাকিস্তানী দেখেছি। আমার ক্লাসে, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে, আমাদের আশে পাশে সর্বত্র। বাঙালিদের মতো জীবিকার তাগিদে বৈধ অবৈধ নানা পথে পাকিস্তানীরাও ইউরোপের নানা দেশে পাড়ি জমিয়েছে। পাকিস্তানীদের আমার কখনো খুব একটা ভালো লাগতো না। কারণ একটাই- ১৯৭১। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন বর্তমান প্রজন্ম তো সেই হত্যাযজ্ঞের সাথে ছিল না। তাদের কেন ঘৃণা করবো। কথা সত্য। কিন্তু আমি ভালো ভাবে অবলোকন করে দেখেছি সেই পাকিস্তানী চিন্তা বর্তমান প্রজন্মকেও বেশ সুন্দর ভাবে গ্রাস করেছে। ইউরোপে আসার পর আমি পাকিস্তানীদের ভালো মতন পর্যবেক্ষণ করা শুরু করি। আমার এত দিনকার ধারণা ভুল হলেও তো হতে পারে এই ভেবে। আমি দেখতাম তারা যখন কারো সাথে মিশে তারা বেশ ভালো মতন নিশ্চিত হয়ে নেয় যে যার সাথে তারা মিশছে সে মুসলিম কিনা। লোকটা মুসলিম হলেই যেন সব সমস্যার সমাধান। কখনো তারা এটা সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসে, কখনো আবার একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করে। বর্তমান যুগে একটা মানুষের সাথে প্রথম পরিচয়েই তার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা একটা ইতর মার্কা প্রশ্ন এবং পাকিস্তানীরা এটা খুব দক্ষতার সাথে করে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ তো শুধু পাকিস্তান নয়। আরো অসংখ্য আছে। যেমন- তুরস্ক, মরক্কো, ইরান, সিরিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এই চারটির বাইরেও অনেক মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট দেশের মানুষকে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। তাদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করলেও তারা ধর্ম নিয়ে টু শব্দটিও করে। একেবারে প্রথম পরিচয়ে এরকম ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করাটা তারা অনেকটা অপমানজনক মনে করে। কিন্তু পাকিস্তানীদের মনে এ চুলকানি মারাত্মক। তারা যখন কোনো সিরিয়ান, তুর্কি অথবা আরবীয় ছেলের সাথে পরিচিত হয় বেশ উৎফুল্ল হয়ে তারা জবাব দেয়, “অহ! মুসলিম!”
আহ! কী যে মজা তার। তার আনন্দ এখন আর কে দেখে।
তাদের এরকম উন্মাদ সমান আচরণে অনেকে বেশ বিব্রত হয়। বিশেষ করে যাকে তারা এ প্রশ্নটি করে। পাকিস্তানীরা এরকম প্রশ্নের মাধ্যমে বলপূর্বক আরেকজনের মনে একটা উগ্র মুসলমানিত্ব জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। এগুলো এক প্রকার শয়তানি ছাড়া আর কিছুই না। একটি সমাজে এভাবেই কট্টোরপন্থা ছড়ায়। তুমি যখন মুসলমান পরিচয়ের কারণে আরেক মুসলমানের সাথে দু হাত শক্ত করে হ্যান্ডশেক করছো তার মানে এটা পরিষ্কার যে, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, ইহুদী এমনকি যারা কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না তাদের সাথে হ্যান্ডশেক করার সময় তোমার হাতটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তোমার মাথার শয়তানগুলো তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আর এই শয়তানি চিন্তাই যেকোনো ধর্মকে উগ্র থেকে উগ্রতর করে তোলে। পাকিস্তান তার একটা চাক্ষুষ প্রমাণ। ইসলামকে টেরোরিজমের সাথে মিলিয়ে দুনিয়া জুড়ে এখন যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় এই সব চিন্তার পটভূমি তৈরি করেছে পাকিস্তান এবং তার প্রতিবেশি রাষ্ট্র আফগানিস্তান। আর পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তারা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাঠামো এমনভাবে সাজিয়ে নিয়েছে যে এখান থেকে কেবল ১৯৭১ মার্কা উগ্রবাদই তৈরি হয়।

পাকিস্তান তার দেশে সকল প্রকার প্রগতিশীল চিন্তাকে বলপূর্বক দমন করে রাখে। সেখানে প্রতিদিন সংখ্যালঘু হিন্দু এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়। তাদের অনেক ধর্মীয় নেতারা এই বলপূর্বক ধর্মান্তরকে বেশ ভালো মতন উৎসাহিতও করে থাকেন। যারা বর্তমান ইমরান খানের শাসন নিয়ে বেশ লাফালাফি করেন, তাদের সেই লাফালাফিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় বিগত কয়েক মাসে সিন্ধু প্রদেশে ঘটে যাওয়া বলপূর্বক ধর্মান্তর এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন।
অন্যদিকে ইউরোপে মানুষজন ধর্ম নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। বেশির ভাগ মানুষই এখানে ধর্ম বিমুখ। কিন্তু তাদের এই ধর্ম বিমুখতাকে তারা ব্যক্তিগত পর্যায়েই রাখে। এই মতবাদকে তারা খ্রিষ্টান, ইসলাম, হিন্দু, ইহুদী এরকম কারো উপর চাপিয়ে দেয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে না। আমি দেখেছি, রাস্তায় যখন শত শত মেয়ে ছোট ছোট জামা কাপড় পরে হাঁটে সেখানে কোনো মেয়ে বোরকা পরে হাঁটলে তাকে বেশ সহজে বোঝা যায় এবং খানিকটা বেখাপ্পা লাগে। কিন্তু এটা নিয়ে ইউরোপের লোকেদের কোনো কটুক্তি, কোনো অশালীন মন্তব্য করতে দেখিনি।
কিন্তু পাকিস্তানীরা কেন জানি এই ছোট ছোট কাপড় পরা মেয়েগুলোকেও তাদের পাকিস্তানের মত গৃহবন্দী করে রাখতে চায়। এই সুদূরে এসেও তারা বেশ সচেতনভাবে সেই স্বপ্ন দেখে। তাদের মতে, আজ হয়তো তারা এখাানে ৪-৫% আছে। কিন্তু আরো কিছু বছর নাকি অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে পুরো ইউরোপই মুসলমান হয়ে যাবে। তখন তারা পাকিস্তানের মত ইসলামী শাসন কায়েম করবে। এই চিন্তা আমি কেবল পাকিস্তানীদের মধ্যেই দেখেছি। আর কোনো দেশের মুসলমানেরা বিষয়টাকে এত উগ্রভাবে দেখে না। এমনকি এটা তারা কল্পনাও করে না যে পুরো ইউরোপকে তারা মুসলমান বানিয়ে ইউরোােপর মেয়েদের বোরকা পরাবে।

কিন্তু দু:খের বিষয় এক জায়গাতেই। এখানে কিছু গায়ে পড়া স্বভাবের বাঙালি দেখা যায় যারা পাকিস্তানীদের সাথে মিশতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পাকিস্তানীরা যখন ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করে তারা বেশ পুলকিত হয়ে জবাব দেয়। পাকিস্তানীরা যখন মুসলমান বলে পিঠে চাপড় দেয় তারা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। তারা ধর্মের ভাইটিকে বুকে জড়িয়ে নেয়। তাদের অনেকে নাকি পাকিস্তানীদের সাথে এও গল্প করেন যে, ১৯৭১ সালের ঘটনাটা নাকি কেবল ভারতের একটা ষড়যন্ত্র ছিল মাত্র। যাতে দুই মুসলমান ভাই একে অপরকে ভুল বুঝে আলাদা থাকে এজন্য ভারত নাকি ষড়যন্ত্র করেছিল এখানে।
তাহলে আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ ইজ্জত সবই বৃথা! আমাদের এই ত্যাগকে পিষ্ট করে যে সকল বাঙালিরা পাকিস্তানের বুকে জড়িয়ে ক্রীতদাসের হাসি হাসেন তারা ব্যাপারে আমি আজ কিছু বলবো না। তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ বলবে।

কিন্তু সবশেষে এটাই বলবো যে, পাকিস্তানীদের কোনো পরিবর্তন হয় নি। পরিবর্তন হওয়াটাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ একটাই- এই পাকিস্তান চিন্তাটি কেবল ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত। রাষ্ট্র আর ধর্ম যখন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় তখন একটা দীর্ঘমেয়াদী বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয়। যেটা বন্ধ্যাত্ব আজো পাকিস্তান পার করছে।


লেখক
সৌরভ দাস
ইউনিভার্সিটি অব কাসেল
জার্মানি


মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:০৮

রায়হান চৌঃ বলেছেন: ভাইয়া ভারত ও পাকিস্থান এর যুদ্ব টা কি ১৯৪৭ এ ছিল না ?

২| ১৩ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:১৮

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি।

আমার সাথে যে কয়জন পাকিস্তানীর ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে, তাদের মধ্যে যাদের জন্ম সেদেশে, তারা আপনার বর্ণনানুযায়ীই আচরণ করে। আবার কয়েকজন আছে যাদের জন্ম এদেশে (বৃটেনে) তারা প্রথমদিকে এমন আচরনই করতো কারন এটা তারা তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে প্রাপ্ত। কিন্তু তাদেরকে যখন আমি ইতিহাস বলি, যুক্তি বলি, তথ্য দেই....তখন তাদের চিন্তাধারা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়।

অন্ততঃ দু'জন আছে যারা আমার কাছ থেকে শুনে শুনে এখন ভুট্টোকে 'গাদ্দারের বাচ্চা' বলতেও দ্বিধা করে না। তাদের উপলব্ধি হচ্ছে, ভুট্টো সে'সময়ে যদি বেইমানী না করতো, তাহলে আমরা একসাথে থেকে এ'অন্চলে একটা উল্লেখযোগ্য শক্তিতে পরিনত হতাম।

ভালো লিখেছেন।

১৩ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৯

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৩ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৩

সাাজ্জাাদ বলেছেন: কথা সত্য। আজ পর্যন্ত ঘুরে ফিরে যত পাকিস্তানি দেখেছি সবার-ই গোঁড়া এক। আর কিছুক্ষন মিশলেই আপনি বুঝে যাবেন কি পরিমান স্বার্থবাজ তারা। তারা শুধু অন্যদের সাথে না, নিজেদের মধ্যেই স্বার্থ নিয়ে কাড়াকাড়ি করে।
আর যাবতীয় অন্যায় আর স্বভাব শেষমেশ ধর্ম দিয়ে জাস্টীফাই করার চেষ্টাই থাকে।
ফালতু এক জাতি।

৪| ১৩ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৮

টারজান০০০০৭ বলেছেন: কথা সত্য, মতলব খারাপ!

পাকিস্তান ও পাকিদের অপছন্দ করার হাজারো কারণ থাকিলেও, পাকি ও পাকিস্তানের যে চিত্র আঁকিলেন ইহার অনেকগুলোর ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তন করিয়া ভারত ও ভারতীয় বসাইয়া দিলেও ব্যতয় হইবে না !! যে আকাম পাকিরা বেলুচিস্তানে করিতেছে, ইহার চেয়েও শতগুনে বেশি ভারত করিতেছে কাশ্মীরে !

পাকিস্তানে অন্তত গরুর মূল্য মানুষের চেয়ে বেশি নহে !!

৫| ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ১১:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর একটি পোষ্ট। সহজ সরল ভাষায় সুন্দর লিখেছেন।

৬| ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ১১:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: পাকিস্তানীরা আজও আমাদের কাছে ক্ষমা চায়নি।

৭| ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ১১:৩৭

চাঙ্কু বলেছেন: পাকিদের কোনকিছুতেই বিশ্বাস করি না। পাকিরা আমাদেরকে ফুল দিলেও কাঁটার আঘাত দেওয়ার জন্যই ফুল দেয়!

৮| ১৪ ই জুন, ২০১৯ ভোর ৪:৩৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
পাকিরা আমাদের কোন সমস্যা না।
পাকিরা তো পাকিদের পক্ষে কথা বলবেই। বলুক।

সমস্যা আমাদের দেশের বাংপাকিদের নিয়ে। দেশের খেয়ে পাকিদের নিয়ে উল্লাশ করে। আগে প্রকাশ্যেই করতো এখন করে চিপা দিয়া। দেশের একটি বড় পত্রিকা পারজ প্রথমআলোও এধরনের পাবলিক মনস্তত্ত বুঝে পাকি বন্দনায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে, দিচ্ছে। তারাও মার্কেটিং বুঝে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.