নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ দাস

সৌরভ দাস ১৯৯৫

চলুন, সবাই কথা বলি

সৌরভ দাস ১৯৯৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফরাসি বিপ্লব

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:১৫


সময়টা ছিলো ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ। তখন ষোড়শ লুই ছিলেন ফ্রান্সের সম্রাট। বিভিন্ন কারণে তখন সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের এই ক্ষমতার পতন ঘটে। (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, এই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দেই আমেরিকা ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং আমেরিকানদের সহায়তা করতে গিয়ে ফ্রান্স ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।) এই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ বেকারত্ব, খাদ্যদ্রব্যের উর্ধ্বমূল্য ইত্যাদি। সম্রাট তখন এই সংকট সামাল দেবার জন্য কর বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করার জন্য যাজক, অভিজাত এবং জনগণ এই তিন শ্রেণীর আমন্ত্রিত প্রতিনিধিদের নিয়ে “ফরাসি সোসাইটি” গঠন করেন। কিন্তু জনগণের প্রতিনিধিরা (জনগণের প্রতিনিধি হলেও নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে বিত্তবান মানুষেরাই ছিলো) তখন সম্রাটের সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানায়। সম্রাট ষোড়শ লুই তাদের হল থেকে বেরিয়ে চলে যেতে বলেন। তারা তখন বাইরে গিয়ে টেনিস কোর্টে জমায়েত হতে থাকে। এতে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সম্রাটের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে।
কিন্তু এই ঘটনায় ফ্রান্সে কেউ যে বিপ্লব ঘটে যাবে এটা ষোড়শ লুই কল্পনাও করতে পারেন নি। এটা তার কল্পনায় না আসার কারণও ছিলো বটে। ফরাসি রাজতন্ত্র ১০০০ বছর ধরে তাদের শাসন চালিয়ে আসছিলো। ১৪০০ বছর ধরে কোনো সমস্যা ছাড়াই তারা নিরঙ্কুশ ক্ষমতা উপভোগ করে আসছিলো। ফলে শুধু সম্রাট না, অনেক সাধারণ মানুষের কাছে সম্রাটকে হটিয়ে বিপ্লব করা হাস্যকর বিষয় হিসেবেই ঠেকত।
কিন্তু ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে যায়। সম্রাটের এরকম নির্যাতনমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সত্যি সত্যি প্যারিসের মানুষ রাস্তায় নেমে যায়। বিশেষ করে করে যে মানুষগুলো পূর্বে কখনই রাজনীতি নিয়ে ভাবেনি তারাও তখন রাজনীতি নিয়ে ভাবতে শুরু করে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সদস্যদের মাধ্যমে তখন প্যারিসে ক্লাবের উৎপত্তি হয়। সেখানে তারা সমসাময়িক প্রতিটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করে। বাড়তে থাকে প্রচারপত্র এবং সংবাদপত্রের জনপ্রিয়তাও। এভাবে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ফ্রান্সের দৃশ্যপট পাল্টে যায়।
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই। বিক্ষুদ্ধ জনতা তখন বাস্তিল দুর্গের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বাস্তিল দুর্গ তখন সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের একটি কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সম্রাটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তখন তাদের এই কারাগারে বন্দি করা হতো। সর্বোপরি বাস্তিল দুর্গ তখন স্বৈরতন্ত্রের একটি জলন্ত উদাহরণ হিসেবে ফ্রান্সের বুকে দাঁড়িয়ে ছিলো।
বাস্তিলের দালানটি ছিলো প্রায় ১০০ ফুট উঁচু। এই দুর্গের ভেতর প্রচুর সেনাবাহিনী এবং তাদের ব্যবহারের জন্য গোলাবারুদ মজুদ ছিলো। এসবই করা হয়েছিল দুর্গটির সুরক্ষা রক্ষার স্বার্থে। কিন্তু জনতা যে গতিতে এই দুর্গের দিকে এগিয়ে যায় তাতে বাস্তিলের এই ব্যাপক নিরাপত্তার বলয় মুহূর্তের মধ্যে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। বাস্তিলের ভেতরে থাকা সেনাবাহিনী এবং তাদের গোলাবারুদ এই ব্যাপক জনস্রোতকে মাত্র তিন ঘন্টা দুর্গের বাইরে রাখতে পেরেছিল। তারপরেই তারা এ দুর্গের দখল নিয়ে নেয় এবং একে ধ্বংস করে দেয় (উল্লেখ্য সেনাবাহিনীর গুলিতে এসময় ৮৩ জনের মতো বিক্ষোভকারী মারা যায়)। এজন্য এই দিনটিকেই অর্থাৎ ১৪ই জুলাইকে ফ্রান্স এখন তাদের জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে। এটিই ছিলো ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লবের সূত্রপাত।
কিন্তু এটিই বিপ্লবের সমাপ্তি ছিলো না। বাস্তিলের এ ঘটনার পর স¤্রাট ষোড়শ লুই বেশ চিন্তায় পড়ে যান। তিনি মিলিটারি আক্রমণ বাড়িয়ে জনগণকে শান্ত করার পরিকল্পনা করতে থাকেন। কিন্তু তার এসব পরিকল্পনার কোনোটিই তখন কার্যকর হয় নি। বিক্ষুদ্ধ জনতা এক পর্যায়ে ভার্সায়ে সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের প্রাসাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সেখানে বিশাল জনস্রোতের মুখে সেনাবাহিনীর কিছুই করার ছিলো না। বিক্ষুদ্ধ জনতা তখন ষোড়শ লুইসহ তার পরিবারকে বন্দি করে প্যারিসে এনে রাখে (যাতে ষোড়শ লুইকে তারা সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখতে পারে।)। পতন ঘটে সুদীর্ঘ বছর ধরে চলা রাজতন্ত্রের অহমিকার!

এখানে বেশ কয়েকটা বিষয় লক্ষ্যণীয়। জনগণ যে এই বিক্ষোভগুলো করেছে এগুলোর কোনোটাই কিন্তু সংগঠিত কোনো উদ্যোগ ছিলো। সাধারণ মানুষের স্বত:স্ফূর্ত এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের মধ্য দিয়েই এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিজয় অর্জিত হয় (এক, বাস্তিল দুর্গের পতন এবং দুই, সম্রাটকে ভার্সাই ছাড়তে বাধ্য করা এবং প্যারিসে বিপ্লবীদের নজরবন্দী করে রাখা)। যেহেতু এই বিক্ষুদ্ধ জনতা নিজেদের মধ্যে সংগঠিত ছিলো না তাই প্যারিসে তখন জনতার শাসনের পরিবর্তে নতুন ধরনের এক সামরিক শাসন শুরু হয় (এটি শুরু হয় ন্যাশনাল গার্ডের অধীনে। এই ন্যাশনাল গার্ডও এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে এবং এটি ফরাসি সেনাবাহিনী থেকে পুরোপুরি পৃথক ছিলো)। প্রাক্তন অভিজাত জেনারেল লাফায়েত্তে তখন ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানের দায়িত্বে আসেন। তিনি তখন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অ্যাসেম্বলিতে একটি নতুন সংবিধানের রূপরেখা প্রণয়ন করেন। এই সংবিধান অনুসারে সম্রাট আরো দু বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেলেও অভিজাতদের বেশকিছু অধিকার খর্ব হয়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও অনেক দাবি পূরণ হয়।
তবে পরিস্থিতি এখানেই শান্ত হয় নি। পুরাতন বেশ কিছু বিশেষ অধিকার হারানোতে অভিজাতেরা ক্ষুব্ধ হয় (পুরাতন বিশেষ অধিকার হারানোতে অভিজাতেরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল)। তাদের অনেকেই তখন অন্যান্য দেশে চলে যায় এবং সেখান থেকে প্রতিবিপ্লবের পরিকল্পনা করতে থাকে। আর এই পরিকল্পনায় প্যারিসে বিপ্লবীদের তীব্র নজরদারিতে থাকা সম্রাট ষোড়শ লুই এবং তার স্ত্রী বিভিন্ন ভাবে মদদ দিতে থাকেন। তারা তাদেরকে সমর্থন জানিয়ে বেশ কয়েকটি চিঠিও লেখেন।
যে সময়টার কথা আমরা বলছি তখন ফ্রান্সের ক্ষমতা মূলত লাফায়েত্তের হাতে। কিন্তু এর মধ্যেই জনগণের মধ্যে তিক্ততা বেড়ে উঠতে থাকে। যে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তারা বিদ্রোহ করেছিল সেটির কোনো পরিবর্তন না দেখে তারা ক্রমশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একই সময়ে ফ্রান্সের মানুষের চিন্তা জগতেও এক বিরাট পরিবর্তন আসে। সংবাদপত্রের বিস্তারের সাথে সাথে এবং রাজনৈতিক ক্লাবগুলোর ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টির কারণে মানুষ তখন নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। তখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলো প্যারিসের জ্যাকুবিন ক্লাব। সেখানে এরাম শহরের রোবেসপিরি নামে এক আইনজীবির প্রবল প্রভাব ছিলো। একই রকম আরেকটি ক্লাবের নাম ছিলো কোর্ডেলিয়া। সেখানে ডান্টন নামে আরেক আইনজীবির প্রভাব বিস্তার করতেন। পাশাপাশি এই ক্লাবের সদস্যদের উপর জিয়ান পল মরাটের ÔL'Ami du peuple' পত্রিকাটিরও বিশেষ প্রভাব ছিলো।
যাই হোক। খাদ্যাভাব, মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব তখন কারিগর, সাধারণ ব্যবসায়ী (তারা San-culottes নামে পরিচিত ছিলেন। তখন হেবার্ট নামের এক জ্যাকুবিন প্রকাশিত le pire duchesne পত্রিকায় San-culottes-এর নেতৃত্বের প্রসঙ্গ উল্লেখ থাকত। San-culottes-এর অধিকাংশ সদস্য রাজনৈতিক ক্লাবগুলোতে যোগদানের পাশাপাশি প্যারিসের ক্লাবগুলোতে নিয়মিত ভিড় করতেন।) এবং শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে দেয়। ফলে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারির দিকে ব্যাপক খাদ্য দাঙ্গা দেখা দেয়। লাফায়েত্তের সরকারকে তাই এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একদিকে সম্রাটের ষোড়শ লুইয়ের প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা এবং অন্যদিকে জনগণের মধ্যে তিক্ততা। সব মিলে লাফায়েত্তে তখন বেশ ভয়ের মধ্যেই সরকার চালাচ্ছিলেন। ইতোমধ্যে আবার জ্যাকুবিন ক্লাবের মধ্যেই ব্রিসেটের নেতৃত্বাধীন “গিরোন্দিন” নামের একটি গ্রুপ গঠিত হয় (১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে)। তারা অন্যান্য দেশের সাথে যুদ্ধ করার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে।
তখন আসলে ইউরোপের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে অস্ট্রিয়া, প্রুশিয়া, গ্রেট ব্রিটেন এই বিপ্লবকে তাদের জন্য একটা অপমান বলে মনে করতো। তারা নানা ভাবে চাইতো সম্রাট ষোড়শ লুই পুনরায় ক্ষমতায় আসুক। মূলত এই কারণেই গিরোন্দিনরা ফ্রান্সের উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকার বিদেশী সেনাবাহিনীর (অস্ট্রিয়া এবং প্রুশ্রিয়া) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে। তাছাড়া তখন অনেকেই মনে করতো যে, ফ্রান্সের চলমান সমস্যার জন্য এই বিদেশী শক্তিগুলো বিশেষভাবে দায়ী। এটাও সত্য যে তখন তারা নানা ভাবে স¤্রাটকে সহায়তা করে বিপ্লবকে ধ্বংসের পায়তারা করছিল। কিন্তু জ্যাকুবিন ক্লাবের নেতারা সেই মুহূর্তে এই ধরনের যুদ্ধে যেতে চাচ্ছিলেন না। কারণ এরকম যুদ্ধ হলে সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের পুনরায় ফিরে আসা সহ প্রতি বিপ্লবের একটা বিশাল আশঙ্কা থেকে যায়। যাই হোক। গিরোন্দিন গ্রুপ ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে যুদ্ধের ব্যাপারে অ্যাসেম্বলিতে সম্মতি পায়।
শুরু হয় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব যুদ্ধে ফরাসি বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটতে থাকে। এতে ফরাসী সমাজের সংকট আরো বেড়ে যায়। ফ্রান্সের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে রোবেসপিরি, ডান্টন এবং মারাটের নেতৃত্বাধীন রেডিক্যাল মধ্যবিত্তরাও তখন প্রতিবিপ্লবের ভয়ে ভীতিগ্রস্থ হয়ে ওঠেন। তারা বুঝতে পারছিলেন পুনরায় একটি বিপ্লব শুরু করতে না পারলে দেশের ভেতরে এবং বাইরে দুই ক্ষেত্রেই তাদের পরাজয় ঘটবে।
তখন দুটি কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আগ্রহী বিপ্লবী স্বেচ্ছাসেবকদেরকে যুদ্ধে শত্রুর সম্মুখভাগে পাঠানো এবং রাজতন্ত্রী ও অভিজাতদের পুনঃআক্রমণ প্রতিরোধ করার একটা ব্যবস্থা নেয়া। সরকারের অগ্রভাগে যারা ছিল অর্থাৎ গিরোন্দিন, তাদের পক্ষে এই দুই কাজের একটিও পরিপূর্ণ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তখন ডান্টন এই কাজগুলো সম্পাদন করার মতো ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পেরেছিলেন। “স্পর্ধা, স্পর্ধা, আরো অধিক স্পর্ধা” স্লোগানের সাথে তিনি উদ্যমী স্বেচ্ছাসেবী বিপ্লবীদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে উৎসাহ প্রদান করেন। প্যারিসেও তখন জনগণ একটি চূড়ান্ত উদ্যোগ নেয়। তারা কারাগারে প্রবেশ করে গণহারে রাজতন্ত্রের বিশ্বাসী মানুষদের মারতে শুরু করে। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ২-৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে এ হত্যাকান্ড। এই ঘটনাই ইতিহাসে “সেপ্টেম্বরের হত্যাকা-” নামে পরিচিত। আসলে তখন এই ধরনের হত্যাকান্ড ছাড়া জনতার হাতে আর কোনো উপায় ছিলো না। জনগণ ভালো করেই জানত যে যদি শত্রুপক্ষ প্যারিস দখল করে নেয় তাহলে তারা গণহারে ফ্রান্সের বিপ্লবীদের গিলেটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবে। তবে এটাও ঠিক যে, জনগণকে পরিচালনা করার মতো নির্দিষ্ট কোনো সংগঠন না থাকার কারণে তারা তখন অনেকটা নির্বিচারে হত্যা চালায়। যার ফলশ্রুতিতে বিপ্লবের অতিশয় ক্ষুব্ধ প্রতিপক্ষের সাথে সাথে অনেক সাধারণ বন্দিও মৃত্যুর কবলে পড়ে। তথাপি, এই হত্যাকা-ই তখন রাজতন্ত্রীদের পরাজয় নিশ্চিত করেছিলো। এরপরই ফরাসী রাজনীতিতে গিরোন্দিনদের প্রভাব কমতে থাকে এবং রোবেসপিরিদের প্রভাব বাড়তে থাকে।
এরপর ২০ সেপ্টেম্বর বিপ্লবীরা ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ফ্রান্সকে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে। (বলে রাখা ভালো, ফ্রান্সের ভেতরে তখন একদিকে যেমন এই পরিবর্তনগুলো হচ্ছে, অন্যদিকে আবার বিপ্লবী সেনাবাহিনী বিদেশী শত্রুদের বিপক্ষেও যুদ্ধ করছিল।) এ বিপ্লবের ফলে ফরাসি প্রজাতন্ত্র গঠনের পাশাপাশি আরো অনেক সমস্যাও অনেক সহজে সমাধান করা সম্ভব হয়। সমাজের বিশপ ও মোহন্তদের পোষার জন্য জনগণকে তাদের আয়ের যে এক দশমাংশ দিতে হতো তা থেকে তাদের নিষ্কৃতি দেয়া হয়। পাশাপাশি ফরাসি সমাজ গঠনে তখন এনলাইটমেন্টের চিন্তা ভাবনা প্রতিষ্ঠার প্রতিও জোর দেয়া হয়।
তবে বিপ্লবের ঘটনা পরম্পরা এখানেই শেষ হয়ে যায় নি। সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ডের পর রোবেসপিরি এবং গিরোন্দিন এই দুই অংশের মধ্যে চরম বিরোধ তৈরি হতে থাকে। ফলে রোবেসপিরি এবং ডান্টন গিরোন্দিনদের দমন করা ব্যতীত আর কোনো বিকল্প খুঁজে পান নি। গিরোন্দিনদের প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে রোবেসপিরিকে এজন্য এক কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়। আর সেটি হলো গিলোটিনে প্রবেশ করিয়ে তাদের মুন্ডুচ্ছেদ করা! বিন্দুমাত্র প্রতিবিপ্লবের সন্দেহ কিংবা রোবেসপিরির সিদ্ধান্তে বিন্দুমাত্র এদিক সেদিক হলেই যে কাউকে তখন গিলোটিনে প্রবেশ করিয়ে হত্যা করার রেওয়াজ শুরু হয়।
সময়ের দাবিকে উপেক্ষা করে যারা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আকাঙ্খা এবং পক্ষপাতের আশ্রয় নিয়েছিল তাদের নিয়েও রোবেসপিরির মনে সংশয় তৈরি হতে থাকে। তাদেরকেও তিনি গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দিতে থাকেন। এক সময় রোবেসপিরি তার অত্যন্ত কাছের একজন মিত্র ডান্টনের মধ্যেও এরকম ব্যক্তিগত আকাঙ্খা এবং পক্ষপাতমূলত আচরণ দেখতে পান। মূলত ডান্টন ছিলেন প্রচুর বিপ্লবী উদ্দীপনা এবং উদ্যমপরায়ণ এক ব্যক্তি; কিন্তু সম্পদশালী সন্দেহজনক লোকদের সাথে মেলামেশা করাও তার ধাঁচে ছিল। (আর তার এই বন্ধুরা ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুর্নীতির সাথেও সম্পৃক্ত ছিল)। রোবেসপিরির আশঙ্কা হয় নয় মাস আগে গিরোন্দিনেরা যে কাজটি করেছিল ডান্টনও সেই একই পথ অবলম্বন করতে যাচ্ছেন। এজন্য রোবেসপিরি হার্বাটকে হত্যার ৫ দিন পর ডান্টন, ডেসমাউলিনস এবং অন্যান্যদের গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করে তাদেরও গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন।
এসব কর্মকান্ডের পর রোবেসপিরি এবং তার অন্যান্য মিত্রেরা নিজেদের অবরুদ্ধ ভাবতে শুরু করেন। অনেকেই তখন প্রতিবিপ্লবের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছিল। তবে রোবেসপিরি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন তিনি সমাজকে নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছেন। তিনি তার অভিষ্ট লক্ষকে “সদগুণ” হিসেবে বর্ণনা করতেন। এজন্যই ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ঘোষণা দেন, “সদগুণ ব্যতীত সন্ত্রাস মূল্যহীন; সন্ত্রাস ছাড়া সদগুণ বলহীন।”
তবে একটা পর্যায়ে এসে রোবেসপিরিও বুঝতে পারেন যে এক এক করে সবাই তার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তখন মধ্যবিত্ত শ্রেণির নিজেদের মধ্যেকার বিরোধও বাড়তে থাকে। বিরোধ বাড়ছিলো San-culottes এর অনুসারীদের মধ্যেও। প্রত্যেকটি বিরোধকেই রোবেসপিরি তখন গিলোটিনে হত্যার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু এরকম সন্ত্রাস তাকে আরো বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অবশ্য এটাও ঠিক যে, এই সন্ত্রাস বন্ধ করলে রোবেসপিরি ও তার অনুসারীদের নিশ্চিত বিরোধী শিবিরের প্রতিহিংসার শিকার হওয়া লাগতো। সবকিছু ভেবে রোবেসপিরি তাই এই সন্ত্রাসকে অব্যাহত রাখাটাকেই সঠিক মনে করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের শীতকালের মধ্যে রোবেসপিরির নেতৃত্বে জ্যাকুবিনরা একক শাসনব্যবস্থা কায়েম করে (বলে রাখা ভালো, এই হত্যাকান্ডের মেলায় আমেরিকান বিপ্লব এবং ব্রিটিশ পেলটিয়ান সংস্কারপন্থী মতবাদের মহান লেখক টম পেইন অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। বিদেশি হয়েও তার কতক গিরোন্দিনদের সাথে বন্ধুত্ব করার অপরাধে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু যেভাবেই হোক তিনি তখন রেহাই পেয়ে গিয়েছিলেন।)।
রোবেসপিরির এই হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে এক ইতিহাসবিদ বলেন, “বিপ্লব তার নিজের শিশুদের সাবাড় করে ফেলে; এবং এই কারণে বিপ্লবের ফলাফল সবসময় বৃথা হয়” (যদিও এটা একটা মিথ্যা সরলীকরণ। ইংল্যান্ডের বিপ্লব তার নেতাদের শেষ করে দেয়নি, এমনকি আমেরিকান বিপ্লবেও এটা দেখা যায়নি।)।
যাই হোক। রোবেসপিরির চারপাশ তখন শত্রুতে ভরে যায়। এক পর্যায়ে থার্মিডারিয়ানরা (আরেকটি রাজনৈতিক গ্রুপ। যাদের প্রতিষ্ঠা হয় ২৭ জুলাই ১৭৯৪) বেশ শক্তভাবে রোবেসপিরির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা তখন রোবেসপিরিকে বন্দি করে ২৮ জুলাই গিলোটিনের মাধ্যমে রোবেসপিরিরও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে। এর মধ্য দিয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরে চলা মহান আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।
তবে থার্মিডারিয়ানরাও আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে নি। থার্মিডারিয়ানরা ক্ষমতায় আসার পর যারা এতদিন ধরে বিপ্লবকে ঘৃণা করে আসছিলো তারা এক নতুন উদ্যম ফিরে পায়। তারা তখন বিপ্লবী আদর্শ ধারণকারীদের নির্যাতনের করা শুরু করে। এর মধ্যেই রাজনৈতিক প্রবাসীরা শীঘ্রই রাজতন্ত্রের পুন:আবির্ভাবের আশায় ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তন করতে থাকে। এতে থার্মিডারিয়ানরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় না পেয়ে সেই জ্যাকুবিনদের কাছে এসেই সাহায্য চাইতে আসে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট নামের এক উদীয়মান সেনাবাহিনীর অফিসার এগিয়ে আসেন। তিনি সফলভাবে রাজতন্ত্রীদের দমন করেন। এরপর ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে কিছু সংখ্যক প্রাক্তন জ্যাকুবিন এবং অভিজাতদের (যারা নির্বাসন থেকে ফিরেছিলেন) সমর্থনে নেপোলিয়ান বোনাপার্টকে ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
মূলত ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের পরপরই (মানে রোবেসপিরির মৃত্যুর পর) বিপ্লব শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আসা অনেক পরিবর্তন তখনও সমাজে রয়ে যায়। এই সমস্ত পরিবর্তনগুলোকে একত্রিত করেই নেপোলিয়ানের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তখন সামন্তীয় খাজনা রহিত করা, স্বাধীন চাষাবাদ ব্যবস্থার সৃষ্টি, অভ্যন্তরীণ শুল্ক শিথিল করা, নিরপেক্ষ জাতীয় প্রশাসনব্যবস্থার সৃষ্টি, সর্বোপরি সরকারি পরিকল্পনায় রাজতন্ত্রী এবং অভিজাতদের বদলে বুর্জোয়া শ্রেণীকে অগ্রাধিকার দান ইত্যাদি বিষয়ের পরিবর্তন করা হয়। তাছাড়া নেপোলিয়ানের সেনাবাহিনী অতি অল্প সময়ে ইউরোপের অনেক অঞ্চল দখল করতে সক্ষম হয়। বিপ্লবের সময় থেকে বিপ্লবী গণবাহিনীর পদ্ধতি অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানোয় (নতুন এ সেনাবাহিনীর সর্বোত্তম জেনারেলরা ছিলেন বিপ্লবের কালে মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতি পাওয়া সৈন্য) নেপোলিয়ান তার প্রত্যেকটি অভিযানেই সফলতা পেতে শুরু করেন। এটি নেপোলিয়ানকে প্রভাব বিস্তার করতেও অনেক সাহায্য করে।

২০ বছর পর বিপ্লবের দিকে তাকিয়ে ঔপন্যাসিক স্টেন্ডহাল বলেন, “২০০০ বছরের পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথা, চিন্তা এবং বিশ্বাসের এত বিপ্লবীকরণ আগে কখনই ঘটেনি। বিপ্লবীরা পরাজিত হয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু বিপ্লবের সম্পত্তিগত বুনিয়াদগুলো আধুনিক পৃথিবীকে ঢেলে সাজানোর জন্য বেঁচে ছিলো।”
অ্যালবার্ট সবুল বলেন, “সংকটগুলোর উত্তরণের জন্য জ্যাকুবিনরা নিজেদের সামগ্রিক শ্রেণী চেতনাগত কোনো উপায় দাঁড় করাতে পারেনি। তারা সর্বোচ্চ মজুরির জন্য লড়াই করতে পারত, কিন্তু চূড়ান্ত উৎপাদনের উপায়সমূহ দখল করার মতো অবস্থায় তখন তারা ছিল না। যেহেতু বিপ্লবের ভবিষ্যতের উপর সামগ্রিকভাবে তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছিলো না সে কারণে যারা বিপ্লবের উপর অন্তর্ঘাত হানতে যাচ্ছিল শুধুমাত্র এটি রুখতেই তাদের সদা সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়েছিল।”
তবে জ্যাকুবিনরা প্রতি বিপ্লব ঠেকাতে যে সন্ত্রাসের পথ নিয়েছিলো মানে যাকে তাকে সন্দেহ হলেই গিলোটিনে প্রবেশ করাচ্ছিলো এটা নিয়ে অনেক ইতিহাসবিদ অনেক মত পোষণ করেন। অনেকের মতে, অভিজাত এবং রাজতন্ত্রীদের ২০০ বছরের দীর্ঘ হত্যাকান্ডের বুনিয়াদও খতিয়ে দেখা আবশ্যক। সেই ব্যবস্থায় হত্যাকান্ড ছিলো একটা নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। গরিব লোকদের এক টুকরো কাপড় চুরির দায়ে ফাঁসিতে চড়ানো হতো। সেই তুলনায় জ্যাকুবিনদের এই হত্যাকান্ড কিছুই ছিলো না। মার্ক টোয়েন যেটাকে বিবৃত করেন এভাবে, “সন্ত্রাসের দুটো আমল ছিল। একটা টিকেছিল কয়েক মাসের মতো, অন্যটা হাজার বছর ধরে।” তাছাড়া তখন উত্তরাঞ্চল থেকে প্যারিসের দিকে যে সেনাবাহিনী এগুচ্ছিল, তাদের জঙ্গিপনা ছিল জ্যাকুবিনদের সন্ত্রাস থেকে অনেক বেশি। যদি তারা প্যারিসের দখল নিয়ে নিতে পারত, তাহলে তারাও রাজতন্ত্রী এবং অভিজাতদের ব্যবহার করে জ্যাকুবিনদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যাপারে একই সিদ্ধান্ত নিতো।
তবে প্রতিবিপ্লবের এবং বিপ্লবের কোনোটাই অনেক ঔপন্যাসিক এমনকি চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস “দুই শহরের গল্প” র মধ্যেও বিশদভাবে বর্ণনা হয়নি। এসব লেখকদের কাছে সম্মানিত ভদ্রলোক কিংবা ভদ্রমহিলাদের মৃত্যু ছিল ট্র্যাজেডি, প্রজাতন্ত্রী কারিগর কিংবা দর্জিদের মৃত্যুর তাদের কখনই ভাবায়নি। এজন্য এ বিপ্লবকে অনেকে কেবল খুনোখুনি হিসেবেই বর্ণনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তখন সন্ত্রাসের এই উন্মাদনা সমাজের নিচের স্তর থেকেই এসেছিল- যারা পুরানো শাসনব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছিল। তারা ভালো করেই জানত যে যদি পুরাতন ব্যবস্থা ফিরে আসে তাহলে তারা আরো বেশি ভোগান্তির সম্মুখীন হবে এবং তাদের আত্মীয়স্বজনরা মুনাফাখোরদের প্রতারণা এবং দুর্নীতির কারণে প্রতিদিন সম্মুখযুদ্ধে মারা যাবে। কিন্তু জ্যাকুবিনদের মূল নেতারা এ রকম সন্ত্রাসের আহ্বানে তখন সাড়া দেননি। রোবেসপিরিকে তাই একাই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। যেহেতু রোবেসপিরিকে এটি একাই চালিয়ে যেতে হচ্ছিলো তাই নির্মমতা ছাড়া এটিকে অব্যাহত রাখার কোনো উপায় ছিল না।

অনুবাদ: সৌরভ দাস ও প্রবাল রায় প্রান্ত
মূল: অ্যা পিপলস হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ড

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: খাদ্যভাব, মূল্য বৃদ্ধি আর বেকারত্ব সব সময়ই ছিলো? সব যুগেই ছিলো?

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৩৭

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: কথা সত্য। তবে মাঝে মাঝে এই সংকট তীব্র থেকে তীব্র তর হয়ে উঠত।

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এখন ফরাসি বিপ্লব থেকে শিক্ষানিয়ে নিজের দেশে বিপ্লব করার সময় এসেগেছে।

৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১০

অধীতি বলেছেন: সভ্যতার আধুনিক ধাপ শুরু হয়েছিল ফরাসি বিপ্লেবের থেকে। নেপোলিয়ানকে বলা হয় ফরাসি বিপ্লবের শিশু। ফরাসি বিপ্লব ছাড়া ইউরোপ হত না।

৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৪

অনল চৌধুরী বলেছেন: ফরাসীদের এইসব বিপ্লব ফিব্লব ফাজলামি ছাড়া কিছু না।
এই তথাকথিত বিপ্লবের পরই ফরাসীরা অন্যান্য স্বাধীন দেশ দখলে ইংল্যান্ডের সাথে প্রতিযোগদিা শুরু করে এবং এখনো অনেক দেশ দখলে রেখেছে।

৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


ফরাসী বিপ্লব বিশ্বকে কি দিয়েছিলো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.