নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

SSS

Its Me.

এসএসএসমিতা২৯

Life is here,so make it beautiful.

এসএসএসমিতা২৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

"জীবনের রূপকথা"

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

ছোটবেলায় রূপকথার একটি গল্পে পড়েছিলাম, এক কাঠুরিয়ার মেয়ের সাথে চাঁদের বুড়ীর দেখা হয়। মেয়েটি চাঁদের বুড়ীর অনেক কাজে সাহায্য করে। চাঁদের বুড়ী খুশি হয়ে তাকে বর্ দেয়। মেয়েটাকে বলে, "যাও, পুকুরে যেয়ে ৩বার ডুব দিয়ে আসো। কিন্তু মনে রেখো ৩ বারের বেশি যেনো দিওনা।" মেয়েটি যথারীতি ১বার ডুব দিল, উঠে পুকুরের পানিতে তার নিজেকে দেখে চমকে উঠলো, দেখলো তার গায়ের রং হয়েছে ধবধবে ফর্সা আর চেহারা রাজরাণীদের মত। ২বার ডুব দিল, আবারও অবাক হবার পালা। এইবার তার গায়ে অনেকগুলো সোনার গহনা। ৩বারে বিস্ময় আরো বাড়লো, এইবার তার গায়ে হীরা জহরত দেয়া এতগুলো গহনা যে সেগুলোর ভারে তার হাটাই মুশকিল। যাক, বুড়ীর কথা মত সে উঠে চলে এলো। বুড়ী তাকে দেখে খুশি হয়ে বললো, "গহনাগুলো সব তোমার।"





এবার যথারীতি ভিলেনের আগমন। মেয়েটি বাড়ী ফিরে যেতেই তার সত্‍ মা সব কাহিনী শুনলো। শুনে তার নিজের মেয়েকে শিখিয়ে দিল কিভাবে চাঁদের বুড়ীর মন জয় করতে হবে। ছোট মেযয়েটিও সেই পথে গিয়ে বুড়ীর দেখা পেলো, মায়ের শিখানো মত বুড়ীর সেবা যত্ন করলো। এবারও বুড়ী খুশি হয়ে মেয়েটিকে বর্ দিল। বললো "যাও, পুকুরে যেয়ে ৩বার ডুব দিয়ে আসো। কিন্তু মনে রেখো ৩ বারের বেশি যেনো দিওনা।" সত্‍ম বোনের মত এই মেয়েটিও ১ম ডুবে রূপ, ২য় ডুবে সোনা, ৩য় টাতে পেলো হীরা জহরত। কিন্তু ৩বার ডুব দিয়ে এত কিছু পেয়ে মেয়েটি ভাবলো, আরও ডুব দিলে না জানি আরো কত কিছু পাওয়া যাবে। তাই সে আবার ডুব দিল। এবার উঠে দেখে তার সকল গহনা তো নেই হয়ে গিয়েছেই, তার সারা শরীরে কেলো কেলো দাগ। পুকুর থেকে উঠে আসার পর বুড়ী বললো. "অতি লোভের পরিনাম এমনই হয়!"





যাক, এটাতো ছিল রূপকথা। এবার আসি সিনেমায়।



একটা সিনেমা দেখেছিলাম,"জাস্ট মাই লাক" . সেখানে এক মেয়ে থাকে যার ভাগ্য খুবই ভালো, সে যেখানে যায়, যা করে তাই ভালো হয়ে যায়। আর থাকে এক ছেলে তার ভাগ্য এতই খারাপ যে অনেক চেষ্টা করেও সে কোন উন্নতি করতে পারেনা। এইবার যথারীতি সিনেমায় একটা প্যাঁচ! মেয়েটার সাথে হঠাত্‍ একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়ে যায় ছেলেটির। তারপর তাদের ভাগ্য অদল বদল হয়ে যায়। শুরু হয় মেয়েটার দুর্ভাগ্য আর ছেলেটার উন্নতি। মেয়েটা তার জীবনের দূর্দশা ঘুচাতে ছেলেটাকে খুজে বের করে আর জোর করে তার সৌভাগ্য ফিরায় নেয়। ছেলেটার আবার শুরু হয় পতন। ছেলের এই করূণ পরিণতির কথা শুনে মেযেটা ফিরে যায় ছেলেটার কাছে। ছেলেটা আর মেয়েটা মিলে আর একটা পিচ্চি মেয়েকে তাদের কিছুটা ভাগ্য দিয়ে দেয়। আর ওরা দুজন হয়ে যায় কখনো কিছুটা সৌভাগ্য কখনো কিছুটা দুর্ভাগ্য এর মানুষ। স্বাভাবিক সিনেমার নিয়ম অনুযায়ী এই ছেলে মেয়ে দুজনই হয়ে গেলো নায়ক এবং নায়িকা অতঃপর "তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো"।





এই সিনেমাটা দেখে যা বুঝলাম, যে কাজটা করে সৌভাগ্য হারায় সেই কাজটা আবার করলে সৌভাগ্য ফিরেও আসে। কিন্তু হায়! সিনেমা যে জীবন না, আবার সব সিনেমা যে জীবন থেকে নেয়াও না তা বুঝতে বড়ই দেরী করে ফেলেছি।



এবার রূপকথাও না, সিনেমাকথাও না। এইবার জীবনকথা। একবার একটা ঘটনার পর আমার ভাগ্যে এমন শনি নেমে আসলো যে ভাগ্যে মঙ্গল আসা তো দূর, রবি-সোম এরই দেখা মেলে না! সে যাই হোক ভাবলাম ঔ ঘটনা আবার হলে হয়তো সব আগের মত হয়ে যাবে। সমস্যা হলো সেই ঘটনা ঘটাতে হলে আর একজনের সাহায্য লাগতো যে প্রথমবারের সময় সাথে ছিলো। তাকে বললাম, আরেকবার একটু সাহায্য করতে, সে ভালো বালকের মতো আচরণ করে বললো "আচ্ছা"। আচ্ছা শুধু মুখেই থেকে গেলো, তার দেখা আর মিললো না। এর পর তাকে আবার বললাম, বস, আরেকবার একটু সাহায্য করেন। এইবার তার কোন উত্তরও নাই। এমনিকি আর দুর্ভাগ্য বলছি। দরিদ্র শিক্ষক আমি, বাটার বা তেল কেনার পয়সাও তো নাই যে তেল দিয়ে কথা বলে তাকে রাজি করাবো। কি আর করা, শুরু হলো অপেক্ষা। কিন্তু নাহ্! বস এর সময় আর হলোনা। অবশেষে একদিন তাকে কাঁকড়া-অনুরোধ (কাঁকড়া যেমন ছাড়ানো কঠিন তেমন আরকি) করে রাজী করালাম। বস এর সাহায্যে কাজটা দ্বিতীয়বারের মত করলাম। এইবার আমি খুশি। যাক! আবার তাহলে আগের মত সুখময় জীবনে ফিরে পাব।



কিন্তু হারানো জিনিস তো ফিরে পাওয়া যায়নারে পাগল! এইবার যা হলো তার ফলাফল ভয়াবহ! আগে যাওবা দুর্ভাগ্য এর মধ্যে কিছুটা কমতি ছিল, এবার তা পূরণ হলো। ঠিক চাঁদের বুড়ীর গল্পে যেমন প্রতিবারে ভালো কিছু হচ্ছিলো আমার তার উল্টো সব খারাপ হচ্ছিলো। কোন বুড়ী, বুড়া, বাচ্চা কেউতো বলেনি এক কাজ দুইবার করতে নেই। তাহলে এমন হলো কেন এই প্রশ্নের উত্তর একটাই.....এটাই জীবন। কিন্তু তাই বলে এতগুলো ঘটনা সব আমার জন্য খারাপ?



নতুন যাই করি, হয় খারাপ হয় না হয় ভুল। যাই করব ভাবি পরে দেখি সেই সুযোগ আগে ছিলো এখন আর নাই। এমনকি অনেক আগে যে কাজটা করে রেখেছি, যেটা সবাই ভালো বলেছিল, সেটাতেও এমন ছোট কিন্তু মারাত্মক ভুল বের হয় যে সব কষ্ট ধূলোয় মিশে যায়।



ওগুলো না হয় কাজে সমস্যা। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো.....

জীবন সমস্যা! যেখানে জীবনের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে সেখানে টুকটাক কিছু ভাল থাকেই বা কি করে।

মুখে হাসি আর আমি, এটা ছিল সবচেয়ে সহজলভ্য। আর এখন সেই হাসি যে কোথায় হারিয়ে গেছে, অনেক খুঁজেও পাইনা। কি সুখের জীবনই না ছিল। মাঝে মাঝে মনে হত নিজের সুখে যেন নিজেরই নজর লাগবে। আজ সুখ তো নেই ই, চারিদিক দিয়ে কতভাবে দুঃখ জীবনে ঢুকতে পারে যেন সেই প্রতিযোগিতা। দুঃখ, গ্লানি, হতাশা, দীর্ঘশ্বাস এগুলো এখন জীবন জুড়ে। সুখ বলতে এখন শুধু স্মৃতি।



ইস্! আবার একটা দিনও যদি পেতাম সেই প্রাণবন্ত হাসি, সেই সুখভরা মন, শান্তিময় জীবন। এখন যেটা সেটাতো শুধু কালক্ষেপন মাত্র, জীবন তো না।



জীবনটা কেনযে রূপকথা নয়! তাহলে পুকুরে আর একটা ডুব দিয়ে সব ভুলে যেতাম। জীবন!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.