নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্তমান প্রগতিশীলতা ও গজল সংগীত

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৪

বাংলা ভাষায় গজল বা ইসলামি সংগীতকে সবচেয়ে সমৃদ্ধ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর কালজয়ী গজলগুলো এখনও সমান জনপ্রিয়। এখনও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, 'ত্রিভূবনে প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়' কিংবা 'তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে' অথবা 'আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ সেই পথে হেঁটে যেতেন নূরনবি হযরত' ও 'মুহাম্মদ নাম জপে ছিলি বুলবুলি তুই আগে' ইত্যাদি গজলগুলো। সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি বাংলা গজলের তালিকা করলে দেখা যাবে কাজী নজরুলের তিনটি গজল রয়েছে। নজরুলের গজল আব্বাস উদ্দিন কিংবা আব্দুল আলীমের কণ্ঠে উঠলে তখনকার সংগীত প্রিয় মানুষদের মন ভরে যেত। ক্যাসেট বিক্রি হতো আশার চেয়েও বেশি। কলের গান, ক্যাসেট প্লেয়ার হতে বর্তমান ইউটিউবেও কাজী নজরুলের গজল মর্যাদার সাথে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। প্রবীণ কিবা নবীন গজল প্রিয় শ্রোতাদের কাছে সেসব গজলের আবেদন এখনও একটুও কমেনি। ইউটিউবে ভিউয়ার্স বিবেচনায়ও দেখা যায় নজরুলের গজল ভিউয়ার্স সংখ্যায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে। অপর দিকে তিনি শ্যামা সংগীত রচনায়ও ছিলেন অনন্য। কাজী নজরুল ছাড়াও মওলানা আকরম খাঁ, ফররুখ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ আলী আহসান, কাজী দীন মুহাম্মদ, দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ, অধ্যাপক শাহেদ আলী এঁদের রচনায় এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতি ওঠে এসেছে। প্রখ্যাত কবি ফররুখ আহমেদকে তো বলা হয় ইসলামী রেনেঁসার কবি।
আমি যেহেতু সাহিত্যের একটি ধারা সংগীত নিয়ে কিছু কথা বলছি সেহেতু অন্যদিকে না যাই। বাংলা সাহিত্যে অবদানকারী যেসব কবি ও সাহিত্যিকের নাম নিবেদন করলাম তাদেরকে পরবর্তীতে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করতে পারি।
নজরুল পরবর্তী সংগীত চর্চায় গজল সংগীত রচনা হয়েছে বহু। এখনও হচ্ছে। কিন্তু নজরুলের গজলের মত সর্বজনীয়তা পায় নি বা পাচ্ছে না। এখনও গজল সংগীতের চাহিদা প্রচুর। ইউটিউবে আধুনিক প্রেমের গান বা অন্য যেকোন ধরণের সংগীতের তুলনায় বর্তমান সময়ের গজলগুলোর ভিউয়ার্স সংখ্যা একেবারেও কম নয়। তারপরেও গজল সংগীত কেন যেন এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর নিকট গ্রহণযোগ্যতার অন্তরায়। প্রগতিশীল পরিচয়দানকারী কবি সাহিত্যিক বা গীতিকারদের কাছে অবহেলার বিষয় হয়ে আছে।। কেন প্রগতিশীলদের কাছে গজল সংগীত অবহেলার বিষয় সে বিষয়ে আমার এই সামান্য নিবেদন।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে প্রগতিশীল পরিচয় দানকারী মুসলিম সাহিত্যিকেরা ইসলামি সাহিত্য চর্চা চরম ভাবে অবহেলা করেছেন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধীতাকারী কিছু মানুষের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাহিত্য ও সিনেমা-নাটকে তুলে ধরতে গিয়ে এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলামকে নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরেছেন। সেই প্রভাব পড়েছে গজল সংগীতের ওপর। বিষয়টা এমন জটিল পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, ইসলামি সাহিত্য চর্চাকারীদের মৌলবাদী অপবাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য হতে ইসলামি সাহিত্য বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। ব্যাপারটা এমন হয়ে গিয়েছে যে, যারা প্রগতিশীল পরিচয় দিয়ে সাহিত্য বা সংগীত রচনা করেন তারা গজল বা ইসলামি সাহিত্য চর্চা করতে পারবেন না। করলেই রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা হয়ে গেল। কারণ, বর্তমানে সাহিত্য বা সংগীত যেটার কথাই বলি না কেন, রচনার চেয়ে রচয়িতার রাজনৈতিক মতাদর্শ বেশি বিবেচনা করা হয়। গজল সংগীত রচনা করলে কিংবা গজল সংগীতের শিল্পী হলে তাদের চেতনা ভিন্ন জ্ঞান করে থাকেন অনেকেই। তারা কিছুতেই দেশপ্রেমিক হতে পারে না বিষয়টা এমন। আবার সেসব কবি ও গীতিকার প্রগতিশীলতা ও সেকুলারিজম বলে পরিচিত তাদের কিছুতেই গজল সংগীত রচনা ও পরিবেশন করা যাবে না। করলেই প্রগতিশীলতা ও সেকুলারিজমের খাতা হতে নাম কর্তন হয়ে যাবে। বিতর্ক হবে তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। মৌলবাদী বলে অবজ্ঞা করা হবে। গুরুত্ব কমে যাবে প্রগতিশীল সাহিত্য অঙ্গনে। যেমনটা দেখেছি কবি আল মাহমুদের বেলায়। একুশে পদক প্রাপ্ত প্রখ্যাত এ কবি জীবন সায়াহ্নে এদেশের বৃহত ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়ে আন্তরিক হওয়ার পর হতে কথিত প্রগতিশীল সাহিত্যিকেরা তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। কমে যায় তার গুরুত্ব। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এদেশের মূল ধারার গণমাধ্যম হতে শুরু করে শিল্প সাহিত্যের সকল জায়গায় অবহেলার পাত্র হয়ে থাকেন।
শিল্প সাহিত্য সংগীত। সকল ক্ষেত্রে বিভক্তি। সকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা। এটা সংগীত ও সাহিত্যকে চরম ভাবে দূষণীয় করে তুলছে। কাজী নজরুলের গজলে কোন সমস্যা নাই। ফররুখ আহমেদ ও গোলাম মোস্তাফার কবিতায় কোন সমস্যা নাই। তারা ঠিকই প্রগতিশীল ও সেকুলারিজমদের কাছে গ্রহণযোগ্য। মূল ধারার জাতীয় পত্রপত্রিকায় তাদের সাহিত্য নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনাও দেখা যায়। কিন্তু আল মাহমুদ ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ করলে সমস্যা। মতিউর রহমান মল্লিক কিংবা তারেক মনোয়ারের গজল সংগীতে সমস্যা। প্রগতিশীলদের কাছে মৌলবাদি। মূল ধারার জাতীয় পত্রপত্রিকায় তাদের গজল সংগীত নিয়ে কোন আলোচনা চোখে পড়ে না। কিন্তু অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে দেখা যায় 'আয়লো রে নয়া দামান' গানের তুলনায় 'আমার যেদিন ফুরাবে দিন আসবে গভীন রাতি' গজলের ভিউয়ার্স সংখ্যা একেরারেও কম নয়। কথিত প্রগতিশীলেরা এদেশের বৃহত জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতি অবজ্ঞা ও আড়াল করতে চাইলেও ইন্টারনেট ও ভিউজিয়াল মিডিয়ার বিস্তারে আড়াল থাকছে না। ঠিকই বের হয়ে আসছে।
এজন কবি, সাহিত্যিক বা গীতিকারের প্রধান্য দেওয়া উচিত মানুষের আবেগ ও অনুভূতি। হোক না সেটা ধর্মীয় অনুভূতি তাতে কি! যখন আপামরজনসাধারণের আবেগ ও অনুভূতি কবিতা কিংবা সংগীতে ওঠে আসবে তখন সেটা সার্থক কবিতা কিংবা সংগীত।


সোহাগ তানভীর
কথাসাহিত্যিক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৮

শেরজা তপন বলেছেন: আমার মনে হচ্ছে গজল ও ইসলামিক সংগীত/ হামদ/ নাত-কে আপনি এক করে ফেলছেন।
আপনি যে ইসলামিক সংগীতগুলোকে 'গজল' বলছেন সেগুলো আদপে গজল নয়।


আপনার এনালাইসিস অনেকাংশে ঠিক আছে। লেখা ভাল লেগেছে।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫১

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। হামদ নাত বা ইসলামি সংগীতকে গজল সংগীত হিসেবে জানি। আপনার ভাষ্যমতে আমি যেহেতু এক করে ফেলেছি সেহেতু আপনি একটু আলাদা অর্থাৎ গজল সংগীতের সংজ্ঞা ও দু একটি উদাহরণ দিলে উপকৃত হতাম।

লেখাটি পড়ে মন্তব্য প্রদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.