নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Oh Allah Plz Save Bangladesh

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু, থাকি ছিলট

সৈয়দ মবনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাবিজ-কবজ বৈধ করতে আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মাদ্রাসার বক্তব্যের উত্তর-১

২৯ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:৫৬

আমার লেখা ‘কোরআন হাদিসের আলোকে তাবিজাত শিরিক নয় কি? গ্রন্থের প্রতিবাদে জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর, বিয়ানীবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘আল-হিলাল’-ম্যাগাজিনে জনৈক ইবনে তায়্যিব কিছু লিখেছেন কিংবা লিখতে চেষ্টা করেছেন। এই সংবাদ কিছু বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছলে আমি সত্যই কিছুটা আগ্রহি হয়ে উঠি ম্যাগাজিনটি সংগ্রহের জন্য। ‘কোরআন-হাদিসের আলোকে তাবিজাত শিরক নয় কি’ লেখাটি আমি প্রথমে লিখেছিলাম লন্ডনের সাপ্তাহিক নতুনদিন পত্রিকায়। অতঃপর তা দুই হাজার খ্রিস্টাব্দের ঈদুল আযহায় সিলেট থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয়। দেশ-বিদেশে এই ছোট্ট পুস্তিকাটি বেশ আলোচিত-সমালোচিত হতে থাকে। বিশেষ করে যাদের পেশা তাবিজাত, তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আমার উপর। নামে-বেনামে অনেকে গালি-গালাজও করেছেন। বাংলাদেশের আলেম সমাজের সাথে আমার পরিবারের গভীর সম্পর্ক জেনে কেউ কেউ দল বেঁধে বড় বড় আলেমদের কাছেও গিয়েছেন এই বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে। হযরতে উলামায়ে কেরামদের একেক জনের একেক ধরণের বক্তব্য এসেছে এই বিষয়ে আমার সামনে। বিশেষ করে দরগাহে হযরত শাহ জালাল (র.) এর মসজিদের সাবেক ইমাম ও জামেয়া ক্বাসেমূল উলুম দরগাহে হযরত শাহ জালাল (র.) মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা আকবর আলী (র.) আর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল হক (র.) সরাসরি আমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছেন। হযরত ইমাম সাহেব ছিলেন আমার মুর্শিদ, তিনি যখন এই বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা শুরু করেছিলেন তখন সত্যই আমি আতংকিত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানি তিনি নিজেও মানুষকে তাবিজ দিতেন। কিন্তু হুজুর আমার বক্তব্য শোনে মুচকি হাসলেন এবং বললেন-‘হযরত রাসুল (স.)এর সুন্নতে নেই। আকাবিরগণ দিতেন মূর্খ মানুষ আর বাচ্চাদেরকে। মানুষ মানে না তাই দিতে হয়।’ আর খতিব সাহেব হুজুর বললেন-‘আকাবিরগণ করেছেন সত্য, কিন্তু হাদিসে রাসুল (স.) এ এসবের কোন বৈধতা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তবে আমরা এই বিষয়ে নিরবতা প্রদর্শন করি হযরত আকাবিরদের সম্মানার্থে।’ এই দুই বুজুর্গের কথা আমাকে বেশ নাড়িয়ে গেলো। আমি বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ভেবেছি। এ ছাড়া অনেক এসেছেন ব্যক্তিগতভাবে, দলবদ্ধ হয়ে। অনেকে বলেছেন অনেক কথা। আর তাবিজ ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগের বক্তব্যই ছিলো এমন-তুমি মিয়া মার অযোগ্য পাপ করেছো এই বই লিখে। আমি তাদেরকে বলেছি-কলমের উত্তর কলম দিয়ে দিতে হয়, মুখে নয়। নসের (কোরআন-হাদিসের) উত্তর নস (কোরআন-হাদিস) দিয়ে দিতে হয়, অন্য কিছু দিয়ে নয়। কিন্তু পদ্ধতিগত উত্তর তেমন একটা আসেনি। মাসিক মদিনার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন খান লন্ডন সফরে গেলে আমার তাবিজের পরে বন্ধুরা তাকে জড়িয়ে ধরেন কিছু একটা লেখার জন্য। দুই হাজার খ্রিস্টাব্দের ৯ আগষ্ট মাওলানা মুহিউদ্দিন খান লিখলেন লন্ডনের ইসলামিক সমাচার ম্যাগাজিনে। মাসিক মদিনার সম্পাদক হিসেবে মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তবে রাজনৈতিক ময়দানেও তাঁর বেশ সুনাম আছে। সাহিত্যিক হিসেবে অনেকে তাকে মনে করলেও মৌলিক সাহিত্যে তাঁর খুব একটা কর্ম নেই। তবে অনেক গবেষণাধর্মী গ্রন্থের সম্পাদনা করে তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই বাংলার মুসলমানদের মনে এবং ইতিহাসে শ্রদ্ধার সাথে অমর হয়ে থাকবেন। আমি তাঁর প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধা রেখে বলবো, তাবিজের পে তিনি যে দলিলসমূহ দিয়েছিলেন তা বেশ দুর্বল ছিলো। তখন আমি এই দুর্বল দলিলগুলোর উত্তরও দিয়েছিলাম ২৫ অক্টোবর এবং ৮ নভেম্বর দুই হাজারে প্রকাশিত ইসলামিক সমাচারের দুই সংখ্যায়। খান সাহেব তখন লন্ডনেই ছিলেন। বার্মিংহামের আস্টন এলাকায় এক অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে আমার দেখা হলে তিনি আমার লেখা পড়েছেন বলে জানালেন। সেই অনুষ্ঠানে খতিব মাওলানা উবায়দুল হক (র.) সহ আরো বেশ কিছু উলামা উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সাথে এরপর আমার অনেক কথা হয়েছে এবং তিনি কেনো লিখেছেন, তাও সেই আলোচনায় স্থান পেয়েছিলো। মাওলানা মুহিউদ্দিন খান একজন বড় মনের মানুষ,তিনি তাঁর সম্পূর্ণ লেখায় আমার বক্তব্যের উত্তর দিতে চেষ্টা করলেও একবারও আকারে-ইঙ্গিতে আমার দিকে ইশারা পর্যন্ত করেননি। শুধু তাই নয়, পরবর্তিতে অনেকের সাথেই তিনি আমার প্রসংশা করেছেন। আর তাঁর ছেলে মর্তুজা ভাই’তো আমার ঘনিষ্টদের একজন। সে যাই হোক, মূল বিষয়ে আসা প্রয়োজন। যখন শোনলাম সিলেটের জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে আবার এই বিষয়ে কেউ একজন নাড়া দিয়েছেন, কিছু লিখেছেন, তখন ভাবলাম-হয়তো এখন কিছু সঠিক তথ্য পাবো, তাবিজের পে বিশুদ্ধ দলিল পাবো। আমি তাবিজের বিরুদ্ধে কোরআন-হাদিসের যে দলিলগুলো উপস্থাপন করেছি তা যদি কেউ ভুল প্রমাণিত করতে পারেন তাবে আমি তাওবানামা লিখবো না কেনো? আমিতো এসব লিখছি না নিজের ব্যক্তিগত কোন স্বার্থে, আমি লিখছি একান্ত দ্বীনি কারণে। যদি আমার কোন একটি কথাও দ্বীনের মখালিফ হয়, তবে আমি জেনে-বুঝে এই ভুলের উপর ইস্তেক্বামত থাকতে পারি না, যদি সত্যই আমার ভেতরে একবিন্দু ঈমান থাকে। ঈমানের তাকিদে আমি খুব ব্যস্ত হয়ে উঠি ‘আল-হিলাল’ ম্যাগাজিন সংগ্রহের জন্য। কিন্তু সিলেট শহরে পাওয়া গেলো না। শেষ পর্যন্ত রুহুল আমীন নগরী নামক একজন তরুণ আলেম আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর থেকে এনে এই ম্যাগাজিনখানা দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞ করলেন। ধন্যবাদ তাকে। তবে সত্যই আমি যেমন ভেবে ছিলাম তেমন তেইশতম সংখ্যা ‘আল-হিলাল’ ২০০৭-৮ এ ‘কোরআন হাদীসের আলোকে তাবিজাত শিরক নয় কি? বই প্রসঙ্গে কিছু কথা’ শিরোনামের লেখাটি শক্তিশালি দলিলের ভিত্তিতে হয়নি বলে খুব হতাশ হয়েছি। অবশ্য লেখাটি মাসিক মাদিনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন খান-এর লেখা থেকে কিছুটা তথ্যসমৃদ্ধ। কিন্তু লেখক আমাকে আশাহত করলেন ‘ধান ভাঙতে শিবের গীত গেয়ে’। অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়েছে লেখক পলাতক, লেখক নিজেই সন্দিহান নিজের দলিলগুলোর ওপর। ইবনে তায়্যিব লেখকের আসল নাম কি ‘তাখাল্লুস’ বা ‘কুনিয়াত’ তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আমার অপরিচিত বন্ধু ইবনে তায়্যিব এক নিঃশ্বাসে ‘কোরআন-হাদিসের আলোকে তাবিজাত শিরক নয় কি?’ বইখানা পড়ে লিখিত উত্তর দিতে যে একটা চেষ্টা করেছেন, সেজন্য তাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আমার মূল গ্রন্থ ‘ কোরআন-হাদিসের আলোকে তাবিজাত শিরক নয় কি? এবং তাবিজের পক্ষে মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের লেখা ও আমার উত্তর পাঠের পর আশা করি একজন পাঠক ইবনে তায়্যিবের লেখার উত্তর পেয়ে যাবেন। তবে তাঁর লেখায় কিছু নতুন তথ্য এবং আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উপস্থাপিত হয়েছে বলে পৃথক উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনিয়তা অনুভব করি। প্রিয় পাঠক, আসুন আমরা বন্ধু ইবনে তায়্যিবের তাবিজের পরে যুক্তিগুলোকে-আতিউল্লাহ, আতিউররাসুল এবং উলিল আমরের ভিত্তিতে বিবেচনা করি। স্মরণ রাখতে হবে, এটা ব্যক্তিগত কোন সম্পত্তি বিষয়ক আলোচনা নয়, তিনিও যা করেছেন আমার দৃঢ় বিশ্বাস তা দ্বীনি স্বার্থে। না, এখানে পক্ষ-বিপক্ষের কোন বিষয় নয়। বিষয়টা হলো-জানা এবং নাজানার। যে কোন ভুল কর্ম যখন প্রসিদ্ধ হয়ে যায়, তখন অনেকের মনে তা যে ভুল, একথাও থাকে না। ইসলামি কর্মে ভুল-শুদ্ধের নির্ণয় হয় আতিউল্লা, আতিউর রাসুল এবং উলিল আমরের ভিত্তিতে। ‘আতিউল্লা’ মানে আল্লাহর আনুগত্য এবং ‘আতিউর রাসুল’ মানে রাসুল (স.)এর আনুগত্য, এই কথাতো সবার সামনে স্পষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন হলো উলিল আমর নিয়ে। কারা এই উলিল আমর? মুফাস্সিরিনরা লিখেছেন-উলিল আমর হলেন যাদের জীবন ও কর্ম পূর্ণাঙ্গ কোরআন-হাদিস ভিত্তিক। কোরআনের ভাষায় মুসলমানদের আকাবির তাদেরকেই বলা যাবে যাদেরকে উলিল আমরের ভেতর পাওয়া যাবে। ব্যক্তি বিশেষকে প্রশ্নের মুখোমুখি না করে আমরা যদি উলিল আমরকে তার মূল নীতি অনুসারে বিবেচনা করি, তবে দ্বীনের বেশি উপকার হবে। ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক কথাই বলা যাবে, কিন্তু ব্যক্তিকে নিয়ে কথা না বলাটাই ভালো। কালামুল্লাহ এবং সুন্নতে রাসুলুল্লাহ আমাদের সামনে থাকতে আমরা কেনো ব্যক্তিকে নিয়ে প্রশ্ন করে প্রতিপকে বাধ্য করি ব্যক্তির ত্রুটিসমূহ আলোচনা করার। একজন ব্যক্তি, যিনি দেড় হাজার বছর পরের উম্মত, আমাদের প্রায় সমসাময়িক, তা ছাড়া তিনিও মানুষ, তিনি বড় আলেম হলেও মানবিক দুর্বলতা থাকতেই পারে। বর্তমান সময়ের আকাবিরদের এমন অনেক মানবিক দুর্বল ঘটনা আমাদের সামনে স্পষ্ট আছে, যা আলোচনায় নিয়ে আসা অনুচিত। আমরা আমাদের আকাবিরদের শ্রদ্ধা এবং অনুসরণ অবশ্যই করবো, কিন্তু অনুসরণটা অন্ধভাবে নয়। কোরআন-সুন্নাহের চশমা আমাদের চোখে রাখতে হবে। আমরা অতীতে দেখেছি এবং আজও দেখছি, একই ধারার আকাবিরদের মধ্যেও প্রচন্ড মতানৈক্য থাকে। ইলমি মতানৈক্য মানে একজন আরেকজনকে অস্বীকার কিংবা অসম্মান করা নয়। ‘খেলাফ’ এবং ‘ইখতেলাফ’ এর মধ্যে প্রচুর ব্যবধান রয়েছে। ‘ইখতেলাফ’ হলো পথ ভিন্ন কিন্তু ল্য এক, আর ‘খেলাফ’ হলো পথ এবং ল্য দু’টাই ভিন্ন। আমি আমার আকাবিরদের প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধা জানিয়ে বন্ধু ইবনে তায়্যিবের বক্তব্য সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। তবে তাঁর সাথে আমার ‘খেলাফ’ নেই, আছে শুধু ‘ইখতেলাফ’। তিনি আমার সম্পর্কে বলেছেন,‘লেখক কোরআন-হাদিসের কিছু ব্যাখ্যা সাপে আয়াত ও হাদীস দ্বারা সবধরনের তাবিজাতকে শিরক বলার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।’ না বন্ধু, মোটেও অপপ্রয়াস নয়। ‘কিছু ব্যাখ্যা সাপে’ বলে যখন আপনি কথাটা বললেন, তখন যদি আপনি ‘সাপে’ বাদ দিয়ে ‘ব্যাখ্যাগুলো’ দিয়ে দিতেন, তবে আমরা পাঠকেরা হয়তো অনুভব করতে পারতাম, আপনি তাবিজ বৈধ করার অপপ্রয়াস মোটেও চালাননি। তাবিজের পে আপনি ‘আহসানুল ফতোয়া’র আশ্রয় নিয়েছেন। এই গ্রন্থের লেখক আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন আলেম পাকিস্তানের মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.)। হযরত মুফতি সাহেব মরহুমের সাথে আমার বেশ কয়েকবারই দেখা হয়েছে পাকিস্তানের করাচি শহরে, তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত দারুল ইফতায়। তিনি আমাদের সময়ের একজন অন্যতম বুজুর্গ আলেম, বিজ্ঞ মুফতি এবং সাহসী বীর ছিলেন। আমার সাথে যখন তাঁর দেখা হয়েছিলো তখন তিনি খুব বৃদ্ধ। কিন্তু কথার ভেতর ছিলো তারুণ্যের প্রজ্জ্বলন। সেই সাাতের পর থেকে আজও মুফতি সাহেবের নাম শুনলে শ্রদ্ধা আসে মনে। অবশ্যই তিনি আমাদের আকাবির ছিলেন। তবে তাঁর সকল ফতোয়া চোখ বন্ধ করে হয়তো আমার বন্ধু ইবনে তায়্যিব নিজেও মানবেন না। আমি যদি কয়েকটি ফতোয়া ‘আহসানুল ফতোয়া’ গ্রন্থ থেকে এখানে আলোচনা করি তবে বিষয়টি দীর্ঘ হয়ে যাবে। পাঠকদের ধৈর্য্যরে কথা বিবেচনা করে শুধু দুটি ফতোয়ার দিকে আমার বন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। ‘আহসানুল ফতোয়া’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডে মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (রহ.) ‘ বিত্তশালীদের নিকট আলিমদের অপমান থেকে হেফাজত’ শিরোনামে মাদ্রাসাসমূহের চাঁদা আবেদনের প্রচলিত পদ্ধতি জায়েয নয় বলে যে ফতোয়া দিয়েছেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশের অধিকাংশ কওমি মাদ্রাসা এই ফতোয়া মানতে পারবে না। কারণ, তিনি এখানে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন-‘যারা বিভিন্ন লোকের বাড়িতে গিয়ে, দোকানে গিয়ে কিছু উসুল করার জন্য সীমাহীন অনুরোধ করে, বিশেষত রমজান মাসে দীনি মাদ্রাসাগুলোর প্রতিনিধিদের বিভিন্ন দল পরিলতি হয়, যাদের ভয়ে অধিকাংশ দোকানদার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে বসে থাকেন, এই রকমের চাঁদা করার পদ্ধতি সুনিশ্চিতরূপে না জায়েয। মুফতি সাহেবের স্পষ্ট বক্তব্য-‘ দীনি কাজ হবে অমুখাপেক্ষি। অমুখাপেক্ষি যতটুকু অর্থের ব্যবস্থা হয় ততটুকু কাজকে যথেষ্ট মনে করতে হবে। আর যদি চাঁদা করতেই হয় তবে সাধারণ সম্বোধনের অবকাশ রয়েছে, বিশেষ সম্বোধনের মোটেও অনুমতি নেই। যদি সাধারণ সম্বোধনের ক্ষেত্রে এমন হয় যে, বিশেষ কোন ব্যক্তি এখানে থাকেন, আর তিনি কিছু অর্থ না দেওয়াতে সংকোচ অনুভব করেন, তাবে তাও নাজায়েয। বিশেষ সম্বোধনে অধিক কাতরতা এবং মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা জায়েয নয় বরং অমুখাপেক্ষিতার সাথে ব্যয়ের খ্যাত প্রকাশ করেই কান্ত হওয়া উচিৎ। বিশেষ মাহফিল কিংবা ওয়াজ মাহফিল করে যে মাদ্রাসাসমূহের চাঁদা উঠানো হয়, এই পদ্ধতিকে মুফতি সাহেব নিকৃষ্টতম নাজায়েয এবং হারাম ঘোষণা করেছেন।’ প্রিয় পাঠক ‘আহসানুল ফতোয়া’ মূলত উর্দু ভাষায় হলেও তা এখন বাংলায় অনুবাদকৃত বাজারে পাওয়া যায়। মাদ্রাসার চাঁদা বিষয়ক ফতোয়া প্রথম খন্ডের বাংলা অনুবাদে ৫৬৫ পৃষ্টা থেকে ৫৮৮ পৃষ্টা পর্যন্ত বাংলাভাষী যে কোন পাঠক দেখতে পারেন। আমরা জানি না,বন্ধু ইবনে তায়্যিব এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর কিংবা আল-হিলালের প্রকাশকেরা মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.)এর এই ফতোয়ার সাথে কতটুকু ঐক্যমতে আসবেন? আল-হিলাল যে সংখ্যায় তাবিজের পে বন্ধু ইবনে তায়্যিব লিখেছেন, আহসানুল ফতোয়াকে সামনে রাখলে এই ম্যাগাজিনের অর্থযোগান পদ্ধতিটা কতটুকু বৈধ হবে? এই প্রশ্ন পাঠকের মনে জাগতেই পারে। কারণ, ম্যাগাজিনের প্রিন্টার লাইনে লেখা আছে লন্ডন প্রবাসী আইনুদ্দীন পীরের অর্থায়নে এই ম্যাগাজিন প্রকাশিত। এই ভাবে ম্যাগাজিনের দেহে দাতার নাম লিখে দেওয়াটা কতটুকু বৈধ? তা একজন পাঠক আহসানুল ফতোয়ার প্রথম খন্ড পড়লে বুঝতে অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া এই আইনুদ্দিন পীর কে? বিশেষ সূত্রে জানতে পারি, এই পির সাহেব লন্ডনে তাবিজ ব্যবসার সাথে জড়িত এবং তিনি শুধু এই লেখার জন্যই আল-হিলাল ম্যাগাজিনের অর্থায়ন করেছেন। এই কথার সত্য-মিথ্যা আল্লাহ ভালো জানেন। সে যাই হোক, বন্ধু ইবনে তায়্যিব যখন ‘ আল-হিলাল’ ২০০৭-৮ এ তাঁর ‘কোরআন হাদীসের আলোকে তাবিজাত শিরক নয় কি? বই প্রসঙ্গে কিছু কথা’ শিরোনামের লেখাটিতে সালাফীদের তাবিজ বিরোধী অভিযানের বর্ণনা দিয়ে আমার প্রতি যথেষ্ট আস্থার কথা বলে লিখেন-‘কিন্তু তাবিজাতের ব্যাপারে আমার মনে হয় লেখক বর্তমান যুগের সবচে ভয়াবহ বাতিল মতবাদ সালাফীদের চোরাবালিতে আটকা পড়ে গেছেন।’ তখন আমরা দেখি এখানেও ‘আহসানুল ফতোয়া’র সাথে বন্ধু ইবনে তায়্যিবের মতানৈক্য। তিনি আহলে হাদীস বা সালাফীদেরকে বলেছেন ‘যুগের সবচে ভয়াবহ বাতিল মতবাদ’, আর মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.) তাদেরকে আহলে হক বলে বর্ণনা করেছেন। মুফতি সাহেবের বক্তব্য-‘ প্রায় দ্বিতীয় তৃতীয় শতাব্দী হিজরীতে আহলে হকের মাঝে শাখাগত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের মতপার্থক্যের কারণে ৫টি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ মাযহাব চতুষ্টয় ও মাযহাবে আহলে হাদীস। সে যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত এই পাঁচটি পদ্ধতিতে হক সীমাবদ্ধ বলে মনে করা হয়।’ ( আহসানুল ফতোয়া, প্রথম খন্ড, মওদূদী মাযহাব অধ্যায়)। আমি ব্যক্তিগতভাবে সালাফি বা আহলে হাদিস মাযহাবের লোক নয়, মাসআলা-মাসায়েলের দিকে আমি মাযহাব হিসেবে সম্পূর্ণ হানাফি। কোথায় থেকে কী ভাবে তাবিজাতের সূত্র অনুসন্ধান শুরু করি, তা আমি আমার মূল গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছি। সালাফীদের বিভিন্ন কর্মের সাথে আমার নিজেরও যুক্তিগত বেশ মতানৈক্য আছে। এই মতানৈক্য খেলাফ নয়, ইখতেলাফ। আর ইখতেলাফটা মাসআলাগত। এই এখতেলাফের কারণেইতো আমি হানাফি মাযহাবকে অনুসরণ করি। আমি এতটুকু হানাফি, যতটুকু ইমাম আজম আবু হানিফা (র.) আমাকে তকলিদ করতে বলেছেন। আহসানুল ফতোয়ার লেখক মুফতি রাশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.)র মতো আমিও আহলে হাদিস গ্রুপকে পৃথক একটি মাযহাব মনে করি এবং এই মাযহাবটিও আহলে হক। হানাফিদের মধ্যে যেমন বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে, তেমনি আহলে হাদিসদের মধ্যেও বিভিন্ন গ্রুপ আছে। এই গ্রুপগুলোর মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়ে প্রচণ্ড ‘ইখতেলাফ’ রয়েছে। এবিষয়ে এখানে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বন্ধু ইবনে তায়্যিব সালাফিদের উগ্রতা আলোচনা করতে গিয়ে প্রকৃতপে নিজেই যখন বেশ উগ্র হয়ে তাদেরকে ‘যুগের সবচেয়ে ভয়াবহ বাতিল মতবাদ’ বলছেন, তখন তাঁর কাছে আমার প্রশ্ন-এই বাতিলদের পিছনে কি নামাজ জায়েজ হবে? কা’বা শরিফ এবং মসজিদে নব্বী সহ মক্কা-মদিনার বেশিরভাগ ইমামতো এই আহলে হাদিস মাযহাবের আলেমরাই। দু’চারজন অন্যান্য মাযহাবেরও আছেন। বন্ধুবর, যেহেতু আপনি হানাফি মাযহাবের লোক, তাই যে কোন ফতোয়া দেওয়ার আগে কমপে হানাফি মাযহাবের উসূলগুলো দেখে নিলে ভালো হয়। আপনার অভিযোগ-আমি সালাফিদের অন্ধ অনুকরণ করেছি এবং তাবিজাতের বিরোধী হাদিসগুলো দেখলাম কিন্তু পরে হাদিসগুলো দেখলাম না। আমার লেখা যারা পড়েছেন এবং আগামীতে পড়বেন, তারা সবাই স্বীকার করবেন, এই দুই অভিযোগই অগ্রহণযোগ্য। আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন আমি অধমের প্রতি যথেষ্ট আস্থার কথা এবং সাথে সাথে বলেছেন আপনি আমার রচনাবলীর ভক্তপাঠকও বটে। আমার বিশ্বাস, আপনি এই অধমকে কোথাও অন্ধ অনুকরণে পাবেন না। আর তাবিজাত শিরক হওয়ার হাদিস যেমন আমি দেখেছি, তেমনি প্রচুর খুঁজেছি পরে দলিলসমূহও। প্রকৃত অর্থে পরে দলিল খুঁজতে গিয়েই আমি পেয়েছিলাম বিরুদ্ধের দলিলসমূহ। তাবিজাতের সাথে আমার এমন একটা বন্ধন ছিলো যে, ইচ্ছে করলে এই পেশা অবলম্বন করতে পারতাম। আর এখনও যদি সহীহ হাদিস দ্বারা তাবিজাত হালাল বলে প্রমাণ পাই, তবে আমার নাখুশ হওয়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু মাসিক মদিনার সম্পাদক শ্রদ্ধাভজন মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এবং বন্ধুবর ইবনে তায়্যিব আপনি তাবিজাতের পক্ষে যে দলিলগুলো নিয়ে এসেছেন, তা খুবই দুর্বল এবং উসূলে ফেকাহ, বিশেষ করে হানাফি মাযহাবের ফেকাহসমূহের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। বন্ধু ইবনে তায়্যিব মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.)এর ‘ আহসানুল ফতোয়া’র ৮ নম্বার খণ্ডের ২৫৫ নম্বার পৃষ্টা থেকে তাবিজের পক্ষে দলিল দিয়েছেন। তবে বিস্তারিত আলোচনা করেননি। ‘আহসানুল ফতোয়া’র ৮ নম্বার খণ্ডের বাংলা অনুবাদ এখন পর্যন্ত হয়নি। তাই পাঠককে আমার নিয়ে যেতে হবে উর্দু সংস্করণে। আমরা জানি মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.)র কাছে মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে যেতো, তিনি এগুলোর উত্তর বলে দিতেন। সেখানে এমনও অনেক ফতোয়া আছে যা তাঁর সারে প্রকাশিত হলেও মূলত তা দিয়েছেন আশপাশের অন্য কেউ। অনেক বাংলাদেশি মুফতি সাহেবানও এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন। আমাকে এই ক্ষেত্র বিশেষ করে স্মরণ করতে হচ্ছে ফেনির শ্রদ্ধাভাজন মুফতি শহিদুল্লাহ সাহেবের কথা। তিনি দীর্ঘদিন মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.)এর ফতোয়া বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সাহিত্যের পাঠক যারা, তারা অবশ্যই বুঝেন একটি গ্রন্থে অনেকগুলো মানুষ কাজ করলে ভাষার ছন্দপতন কোথায় কীভাবে হয়। ‘আহসানুল ফতোয়া’ পাঠে একজন পাঠক স্পষ্ট দেখবেন, এখানে প্রচুর ছন্দপতন আছে। আহসানুল ফতোয়ার ৮ নম্বার খণ্ডের ২৫৫ নম্বার পৃষ্টায় তাবিজ সম্পর্কে কোন ফতোয়া পাঠক পাবেন না। মূলত এই পৃষ্টার শেষের দিকে তাবিজ সম্পর্কে প্রশ্নের সূত্রপাত করা হয়েছে। ‘তাওয়িজ কা হুকুম’ শিরোনামে এই অধ্যায়ের শুরু। এখানে কেউ একজন মুফতি সাহেবকে প্রশ্ন করেছিলো- ‘কিছু লোক বলেন ‘ রকিয়া’ (ঝাড়-ফুঁক) তো প্রমাণিত কিন্তু ‘ তামিমা’ (তাবিজ) প্রমাণিত নয়, বরং শিরিক, তাই প্রথমটি জায়েয এবং দ্বিতীয়টি জায়েয নয়। প্রকৃত অর্থে তাবিজের কী কোন প্রমাণ নেই? আর যদি থাকে তাবে কী শর্তে এবং কী ভাবে তাবিজ লিখতে হবে? মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.)এর উত্তর‘ সহীহ হাদিস দ্বারা রকিয়া (ঝাড়-ফুঁক) এর স্পষ্ট কোন দলিল নেই। আর তিন প্রকারের তামিমা (তাবিজ) সম্পূর্ণ হারাম। ১) টুটকা-যা পিতল, তামা অথবা লোহা ইত্যাদির টুকরা বেঁধে করা হয়।

২) এই রকমের তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কোরআনের আয়াত, দোয়ায়ে মাসুরা নেই, বরং শিরক বাক্য রয়েছে।

৩) তাবিজের শক্তি আছে এমন মনে করা, যা জাহেল যুগে মনে করা হতো এবং বর্তমানেও অনেক জাহেল এমনটি মনে করে থাকে।

এই তিন অবস্থায় তাবিজ সন্দেহাতীত নাজায়েয, হারাম এবং শিরক। তাবিজের মধ্যে যদি আল্লাহর নাম, কোরআনের আয়াত এবং দোয়ায়ে মাসুরা থাকে তবে তা জায়েজ বলে প্রমাণিত। এগুলোকে নাজায়েজ এবং শিরিক মনে করা জাহালিয়ত। কারণ, এই সব তাবিজে সর্বশক্তিমান আল্লাহকেই মনে করা হয়।

এরপর মুফতি সাহেব আবার তাবিজ আর ঝাড়-ফুঁককে পৃথক করে তাবিজের বিরোধীতাকারিদেরকে অনুরোধ করে বলছেন-‘ তাবিজকে শিরক যারা বলেন তাদের উচিৎ শিরকের বর্ণনা এভাবে করা, যাতে ভেতরে শুধু তাবিজ থাকে আর দোয়া, ঔষধ, ঝাড়-ফুঁক বেরিয়ে যায়।’ (পৃষ্টা ২৫৬)। মুফতি সাহেবের এই বক্তব্য থেকেও ‘রকিয়া’ বা ঝাড়-ফুঁকের পক্ষে প্রমাণ হলেও ‘তামিমা’ বা তাবিজের পে কোন দলিল হয় না। অতঃপর মুফতি সাহেব আবার তিনটি শর্ত যুক্ত করে দিয়েছেন তাবিজ জায়েয হওয়ার ব্যাপারে-

১) লগাতে মাহফূমা (অর্থ বোধগম্য) হওয়া,

২) মাছুর (প্রভাবিত, বর্ণিত, প্রভাবাম্বিত) এবং মনকূল (বর্ণিত, স্থানান্তরিত, অনুবাদিত) হওয়া,

৩) নাফে বিজ-জাত, অর্থাৎ তাবিজের কোন শক্তি আছে এমন বিশ্বাসী না হওয়া।

অতঃপর মুফতি সাহেব লিখেছেন-‘গণনার অর দিয়ে তাবিজ লেখাও জায়েজ।’

কোন জিনিষ জায়েয এবং কোন জিনিষ নাজায়েয, তা মুফতি সাহেবদের রায় দেওয়ার বিষয়। আমরা তাদের রায়কে শ্রদ্ধার সাথে মেনে নেবো। কিন্তু তাদের নিজের বক্তব্যেই যদি স্ববিরোধীতা স্পষ্ট হয়ে উঠে, তবে আমাদের সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে উপায় নেই। আহসানুল ফতোয়ায় এমন অনেক স্ববিরোধী বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে উঠে আমাদের সামনে। এটা অবশ্যই মুফতি সাহেবের দুর্বলতা নয়, এটা বিভিন্নজন কর্তৃক ফতোয়া লিপিবদ্ধ করার ফলাফল। তাবিজ জায়েয হওয়ার ব্যাপারে যে তিন শর্ত দিয়েছেন মুফতি সাহেব, একজন সাধারণ পাঠকও বুঝতে পারবেন যে, তা দিয়েই প্রমাণিত হয় তাবিজ জায়েয নয়। আর গণনার অরকে আজ পর্যন্ত কোন ভাষা বিজ্ঞানি ‘লগাতে মাহফূমা’ বলেননি। এটা মূলত সাংকেতিক অর। আর মুফতি সাহেব যখন বলেন-এই রকমের তাবিজ শিরক যাতে আল্লাহর নাম, কোরআনের আয়াত, দোয়ায়ে মাসুরা নেই, তখন আমাদের প্রশ্ন জাগে গাণিতিক অরে আল্লাহর নাম, কোরআনের আয়াত, দোয়ায়ে মাসুরা কোথায়? হাজার বার কেউ যদি ৭৮৬ পাঠ করে তবে কি একবার বিসমিল্লাহ পড়ার ফজিলত লাভ করবে? গোয়েন্দাগিরিতে সাংকেতিক অরের প্রয়োজন থাকলেও ইবাদতের ক্ষেত্রে এর কোন গুরুত্ব নেই। তা ছাড়া মুফতি সাহেবের তাবিজ সম্পর্কিত আলোচনায় যে কয়েকটি দলিল পেশ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ মুফতি মুল্লা আলি ক্বারি (র.)এর বক্তব্য। আমরা মুফতি সাহেবের লেখা আহসানুল ফতোয়ার ৬৫৮ পৃষ্টায় দেখতে পাই তিনি (‘মিরকাত’-এর পাঁচ নম্বার খণ্ডের ৩২১ নম্বার পৃষ্টার তথ্যসূত্রে) মুল্লা আলী ক্বারীর এই বক্তব্যকে নকল করেছেন যেখানে ক্বারী সাহেব লিখেছেন-‘ হিব্রু কিংবা সমপর্যায়ের অন্য কোন ভাষায় তাবিজ লেখা হারাম, কারণ এতে শিরকের সম্ভাবনা রয়েছে।’ মুল্লা আলি ক্বারি (রহ.)এর এই বক্তব্য থেকে প্রমাণ হয়, আরবি ছাড়া অন্যকোন ভাষায় তাবিজ লেখা জায়েয নয়। মুফতি সাহেবের নিজের এবং মুল্লা আলি ক্বারি (রহ.)-এর বক্তব্য সামনে রাখলেই গণনা দিয়ে তাবিজ লেখার বৈধতা অকার্যকর হয়ে যায়। মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী(রহ.) তাঁর আহসানুল ফতোয়ার তাবিজ বিষয়ক আলোচনার শেষ অংশে কয়েকটি হাদিস এবং কয়েকজনের আরবি উক্তির খণ্ডাংশ বর্ণনা করেছেন। উক্তিগুলোতে শিরকমুক্ত তাবিজগুলোর কিছু বৈধতা পাওয়া গেলেও হাদিসগুলোতে তামিমা বা তাবিজকে জায়েয বলা হয়নি, শুধু শিরকমুক্ত রাকিয়া অর্থাৎ ঝাড়-ফুঁক জায়েজ বলা হয়েছে। সম্মানিত পাঠকদের বিষয়টি বুঝতে নিম্নে আহসানুল ফতোয়ায় উল্লেখিত হাদিসগুলো বর্ণনা করা হলো-

হযরত আউফ বিন মালিক আশজয়ি (রা.) বলেন-আমরা জাহিলিয়াতে ঝাড়-ফুঁক করতাম। একদিন হযরত রাসুল (স.)কে জিজ্ঞাস করলাম-এব্যাপারে আপনার রায় কি? তিনি বললেন- তোমরা তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার সামনে পেশ করো, এতে যদি শিরক না থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই।( মুসলিম শরিফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্টা ২২৪)।

এই হাদিসে তাবিজ শব্দের কোন উল্লেখ নেই। এখানে ‘রাকা’ এবং ‘ রাকি’ শব্দের উল্লেখ আমরা দেখতে পাই। স্বয়ং আহসানুল ফতোয়ায় ‘রাকিয়া’ শব্দের অর্থ বলা হয়েছে-দম, আর ‘তামিমা’ শব্দের অর্থ-তাবিজ।(পৃষ্টা ২৫৫, উর্দু সংস্করণ)। ‘দম’ বলা হয় ঝাড়-ফুঁককে।

* হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন-হযরত নবি করিম (স.) আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণ করলে আমরা এক গোত্রে গিয়ে উপস্থিত হই এবং তাদের কাছে থাকার জায়গা চাই। তারা আমাদেরকে থাকার জায়গা দিলো না। অতঃপর তাদের সর্দারকে বিচ্ছু কামড় দিলো। তারা আমাদের কাছে জানতে চাইলো, আমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে বিচ্ছুর কামড়ের ঝাড়-ফুঁক জানে? আমি বললাম-হ্যাঁ! আমি জানি। তবে আমি ততণ পর্যন্ত ঝাড়ফুঁক করবো না যতণ পর্যন্ত তোমরা এর বিনিময়ে একপাল বকরি দেবে না। উত্তরে তারা বললো- আচ্ছা, আমরা তোমাদেরকে ত্রিশটি বকরি দেবো। আমরা এই প্রস্তাব গ্রহণ করলাম এবং তার ওপর সাতবার সুরা ফাতেহা পড়ে ফুঁক দিলাম।( তিরমিজি, ২ খণ্ড, পৃষ্টা ২৬)।

এই হাদিসে ‘ ফাকারা’তু’ শব্দ দিয়ে নিশ্চয় তাবিজ-কবজ বুঝানো হয়নি। ‘ক্বেরাত’ শব্দের অর্থ যে পাঠ, এটা একজন সাধারণ মুসলমানেরও জ্ঞানে আছে। তা ছাড়া এখানে যদি ‘তামিমা’ শব্দও আসতো তবু মনে হয় শরিয়তের সাধারণ বিধানে তাবিজ জায়েয হতো না। শুধু শব্দ দিয়ে যে শরিয়তের বিধান হয় না তা আমরা সবাই জানি। যে কোন হাদিস কিংবা কোরআনের মর্মকথা বুঝার জন্য শাব্দিক অর্থের পাশাপাশি শানে নুজুল বা ইসতেলাহি অর্থ বুঝতে হবে। হযরত আবু সাঈদ কুদরি(রা.) থেকে তিরমিজির এই যে হাদিসটি আহসানুল ফতোয়ার লেখক আমাদেরকে শোনালেন, তা ছিলো মূলত জিহাদের প্রোপট, সফরের অবস্থা এবং তারা ছিলেন তখন আশ্রয়হীন অনেকটা অসহায়। এই যে তিন অবস্থা, এর প্রত্যেকটিতে শরিয়তের বিধান সাধারণ বিধান থেকে প্রচুর ভিন্ন। জিহাদের পথে যে মুজাহিদ বেরিয়ে যায় ঘর থেকে, কিংবা যিনি মুসাফির, তাঁর জন্য এমন অনেক কিছুই হালাল হয়ে যায় যা সাধারণ জীবনে সম্পূর্ণ হারাম। তাই বলছিলাম, যদি এখানে ‘ক্বেরাত’ শব্দ না বলে ‘তামিমা’ বলা হতো, তবু শরিয়তের সাধারণ নিয়মে তাবিজ জায়েয বলা যেতো না, যেহেতু অন্য হাদিসে তাবিজকে শিরক বলা হয়েছে। আর এখানেতো তামিমা বলাই হয়নি। কোরআনের আয়াত কিংবা মাসনুন দোয়া পড়ে ফুঁক দেওয়ার বৈধতা সম্পর্কে যেহেতু হাদিসে স্পষ্ট আছে, তাই কোন মুসলমানের আপত্তি থাকার কথা নয়। মূলকথা হলো বিষয়টিকে পৃথক করে দেখতে হবে। শরিয়তের অনেক বিষয়কে আমরা পৃথক করে না দেখার কারণে অনেক সময় বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, হযরত নবি করিম (স.) হাসান এবং হোসেনের জন্য নিরাপত্তা কামনা করে বলতেন, আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ নামের মাধ্যমে আমি তোমাদের দু’জনের নিরাপত্তা চাচ্ছি প্রত্যেক শয়তান, অনিষ্ট এবং কুদৃষ্টি থেকে। যে ভাবে হযরত ইব্রাহিম (আ.) চাইতেন ইসমাঈল এবং ইসহাকের জন্য।( তিরমিজি শরিফ, পৃষ্টা ২৬, খণ্ড ২)।

এই হাদিসেও তামিমা শব্দের কোন উল্লেখ নেই। হযরত নবি (স.) হযরত হাসান এবং হযরত হোসেন (রা.) কে কোন তাবিজ দেননি। দিয়েছেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)এর মতো দোয়া। ‘ আউযু কামা কালিমাতুল্লাহ’ বাক্যের অর্থ নিশ্চয় তাবিজ নয়, বরং দোয়া প্রমাণিত হয়। হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, এই দোয়া হযরত নবি করিম (স.) প্রত্যেক সকাল-বিকাল করতেন।

হযরত আয়েশা (রা.) বলেন-‘ যা বিপদ আসার পর লটকানো হয় তা ‘ তামিমা’ নয়। ‘ তামিমা’ হচ্ছে যা বিপদ আসার পূর্বে লটকানো হয়।(আত-তারগিব, খণ্ড ৫, পৃষ্টা ২৭১,

এই হাদিস বর্ণনা করে হযরত হাকিম (র.) বলেছেন এর সনদ সহীহ)।

হযরত আয়েশা (রা.) বলেন- বিপদ আসার পর যা লটকানো হয় তা ‘তামিমা’ নয়।( শহরে মাআনিল আশার, খণ্ড ২, পৃষ্টা ৩২৩)।

এই হাদিস সম্পর্কে ইতোমধ্যে আমি আলোচনা করেছি ‘কোরআন-হাদিসের আলোকে তাবিজাত শিরক নয় কি’ গ্রন্থে। এই হাদিসের ব্যাখ্যায় উলামায়ে ইসলামের রায় হলো- হযরত আয়েশা (রা.) মুছিবত আসার পর কুরআনের আয়াতের তাবিজ ব্যবহার জায়েজ বলেছেন কিন্তু মুছিবতের পূর্বে ইহা নাজায়েয। হযরত আয়েশা (রা.) (আত-তামাইমু) শব্দ দ্বারা ব্যাপকভাবে সকল তাবিজ বুঝাননি। বরং শুধু কুরআনের আয়াতের তাবিজ বুঝানোই তার উদ্দেশ্য। কারণ, অন্যান্য তাবিজাবলী যে রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে এবং পরে সর্বাবস্থায় শিরকের অন্তর্ভুক্ত তা হযরত আয়েশা (রা.) কাছে অজানা ছিলো না। (ফাতহুল বারী)। যারা হযরত আশেয়া (রা.)-এর উক্তিকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, হযরত আয়েশা (রা.) যে কথা বলেছেন তা তাবিজ ব্যবহরের পে কোন দলিল নয়, বরং তা হচ্ছে তাবিজ কি?-এর ব্যাখ্যা। তা ছাড়া যেহেতু ইসলামপূর্ব জাহেল যুগ থেকে তাবিজাতের প্রথা ছিলো, যদি তা বৈধ হতো তবে কুরআন কিংবা হাদিসে স্পষ্ট কিংবা ইঙ্গিতে অনুমতি দেয়া হতো। দেওয়া তো হয়নি, বরং বিরোধীতা স্পষ্টভাবে করা হয়েছে। হাদিসে রাসুল (সা.) যে জিনিসের বিরোধীতা করেছেন আমরা কী ভাবে মনে করবো হযরত আয়েশা (রা.) সেই জিনিসের পে উক্তি দিয়েছেন?

হযরত হাফিজ (র.) বলেন- তামিমার বহুবচন তামাইম, তা কবজজাতীয় জিনিস। যা জাহিলিয়াতের সময় মাথার মধ্যে লোকেরা এই ধারণা করে লটকিয়ে রাখতো যে, তা বিপদ-আপদ দূর রাখবে। (ফতহুল বারি, খণ্ড ১০, পৃষ্টা ১৬৬)।

হযরত হাফিজ (র.)-এর এই উক্তিও হযরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মতো তাবিজের পরিচিতি মূলক। এবং তাদের উভয়ের এই উক্তি দিয়ে তাবিজের অবৈধতাই প্রমাণিত হয়। বিশেষ করে হযরত হাফিজ (র.) এর এই উক্তি দিয়ে স্পষ্ট হয় যে, তাবিজ-কবজ জাহিলযুগের কর্ম।

মুল্লা আলি ক্বারি (র.) বলেন-এবং পবিত্র কোরআনের আয়াত, আল্লাহ পাকের সিফাত এবং নাম, এবং দোয়ায়ে মাসুরাসমূহ এক্ষেত্রে কোন দোষ নেই, বরং তাবিজ হোক অথবা ঝাড়-ফুঁক, তা মুস্তাহাব, তবে তা হিব্র“ অথবা সমপর্যায়ের অন্য কোন ভাষায় লিখা নিষেধ, কারণ তাতে শিরকের সম্ভাবনা আছে। (মিরকাত, খণ্ড ৮, পৃষ্টা ৩২২)।

মুল্লা আলি ক্বারি (র.) এর এই বক্তব্য থেকে আমাদের সামনে বেশ কিছু মাসআলা প্রমাণিত হয়। আমার বন্ধু ইবনে তায়্যিব এই আহসানুল ফতোয়া থেকে মুল্লা আলি ক্বারি(র.)এর এই উক্তিকে দলিল করেছেন। যদিও অগণিত সহীহ হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের সামনে এই উক্তির গুরুত্ব খুব একটা বেশি নয়, কিন্তু আমাদের কাছে মুল্লা আলি ক্বারি (র.)-এর গুরুত্ব প্রচুর। তাই এই উক্তি নিয়ে কিছুটা হলেও ভাবতে হচ্ছে এবং আমাদেরকে ভাবতে হবে জেনেই আমার বন্ধু ইবনে তায়্যিব এই উক্তিকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু এখানে ইচ্ছায়Ñঅনিচ্ছায় একটু চালাকি হয়ে গেছে। মুল্লা আলি ক্বারির বক্তব্যকে একসাথে বর্ণনা না করলে মূল বক্তব্য বুঝা যায় না, তাই মনে হয় তিনি তাবিজ-কবজকে বৈধ বলেছেন। আহসানুল ফতোয়ায় এই উক্তির কোন ব্যাখ্যা করেননি মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভী (র.)। আমরা আগেই বলেছি এই উক্তির মাধ্যমে গণিত দিয়ে তাবিজ লেখা জায়েয নয় প্রমাণিত হয়, যা স্বয়ং আহসানুল ফতোয়ার লেখকের মতের উল্টো।

..........................................................................

বাকী অংশ আগামী পোষ্টে দেখুন।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-২

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১০ সকাল ১০:২২

মাহফুজশান্ত বলেছেন: তিন প্রকারের তামিমা (তাবিজ) সম্পূর্ণ হারাম-
১) টুটকা-যা পিতল, তামা অথবা লোহা ইত্যাদির টুকরা বেঁধে করা হয়।
২) এই রকমের তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কোরআনের আয়াত, দোয়ায়ে মাসুরা নেই, বরং শিরক বাক্য রয়েছে।
৩) তাবিজের শক্তি আছে এমন মনে করা, যা জাহেল যুগে মনে করা হতো এবং বর্তমানেও অনেক জাহেল এমনটি মনে করে থাকে।


কিন্তু প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরছি পড়ে নিজের ও বাচ্চাদের বুকে ফু দেয়া, রাতে ঘুমাবার আগে সুরা ফালাক ও নাছ পড়ে নিজের ও বাচ্চাদের বুকে ফু দেয়া এবং আল্লাহর কালাম পড়ে ঘর বন্ধ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে অনুগ্রহকরে জানালে বাধিত হব।

২৯ শে জুন, ২০১০ সকাল ১০:৪৭

সৈয়দ মবনু বলেছেন: এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ।

২| ২৯ শে জুন, ২০১০ সকাল ১০:৫৭

মিঃ পলাশ বলেছেন: লেখককে ধন্যবাদ। হুম (!) জানার আছে অনেক কিছু।

৩| ২৯ শে জুন, ২০১০ দুপুর ১২:৫৪

সজীব আকিব বলেছেন: তয় যারা তাবিজের ব্যবসা করে তারা বাচবে কিভাবে হুজুর।
দোয়া করি আপনি নবুয়তি পান, আমিন!!

৪| ২৯ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৪:১৫

রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন: তাবিজই যদি হালাল তাইলে আল্লাহ কেন
শিরকের উপর শিরক

৫| ৩০ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৪:৩৮

সৈয়দা মারহামা বলেছেন: কারো গলায় তাবিজ দেখলে আমার খুব ভয় লাগে। মনে হয় এই মানুষ খুব বড় বেমারী।

৬| ০৩ রা জুলাই, ২০১০ রাত ১:৪১

রোদেলা খাতুন বলেছেন: তাবিজ দেয়া বন্ধ হবে না। তাবিজ আদি হতে চলছে একটি সংস্কার হিসেবে। আর আধুনিক মানুষ গলায় লকেট হিসেবে ফ্যাশন করে তাবিজের মতো কিছু একটা ঝুলিয়ে রাখে। তাহলে কী বুঝতে পেরেছেন এ থেকে? কু-সংস্কার কিংবা শিরক বলে ফতোয়া দিলেও এটি ফ্যাশন হিসেবে টিকে থাকবে।
লক্ষ্য করুন রেডক্রসের ক্রস চিহ্নটি কিসের প্রতিক? নিশ্চয় এটি ধর্মীয় ক্যাথলিকদের প্রতিক। কিন্তু এটি বিভিন্ন স্টাইল ও মানবিক প্রতিকে রূপ নিয়েছে। এমনকি মানুষ বিজ্ঞানমনস্ক হলেও এসব সংস্কার যাবে না।
তবে কথা আরো আছে। এর কারণে আপনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে বলা যাবে না। যেসব মানুষ এই তাবিজাতের কারণে অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের রক্ষার দায়িত্ব এই জনগোষ্ঠীর উপরই বর্তায়। সে হিসেবে সংস্কারের কাজটি আপনি চালিয়ে যাচ্ছেন এর জন্য কোথাও না কোথাও নির্দিষ্ট ফলাফল অপেক্ষা করছে যা আমরা কেউ জানি না।

আপনি নিশ্চয় আগামীতে এ বিষয়ে আরো লিখবেন। কিন্তু একটু সংক্ষিপ্ত করে আনুন যাতে মূল বিষয়ে মানুষ দ্রুত পাঠ করতে পারে। প্রথম দিকে বিস্তারিত লেখা ঠিক আছে। এখন আর এতো বিস্তারিত বলার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। আপনি যদি মনে করেন লোকে বুঝে না বলেই প্রচুর ব্যাখ্যা করা দরকার। কথাটা কিন্তু ঠিক না। কারণ যারা প্রতিবাদ বা না মানতে মনস্থির করে রেখেছে তাদের হাজার ব্যাখ্যা করলেও সে মানবে না।

সময় সহায় হোক।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ রাত ১:২১

সৈয়দ মবনু বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ পরামর্শের জন্য। কিন্তু আমি আমার সম্মানিত পাঠককে আমার মতো মূর্খ ভাবি না। কিন্তু যারা তাবিজের পক্ষে তারা কিছু দলিল দিয়েছে তাবিজের পক্ষে, যদি এগুলোর উত্তর না দেই তবে তারা মনে করবেন তাদের দলিল সঠিক।
ধন্যবাদ আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.