নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Oh Allah Plz Save Bangladesh

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু

সৈয়দ মবনু, থাকি ছিলট

সৈয়দ মবনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিখোঁজ সংস্কৃতি এবং আমাদের নাগরিক নিরাপত্তা বিষয়ক ভাবনা

২২ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১:৫৫

সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার, তাঁর সহকর্মী জুনেদ এবং বিএপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা সভাপতি ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। তারা সবাই ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। বিষয়টা সবাইকে বেশ নাড়িয়েছে। বিশেষ করে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার দিন সিলেট ছিলো আতংকিত। এ বিষয়ে লিখবো কি না ভাবছি। ওদের কারো সাথেই আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান সেলিম আমাদের শাহী ঈদগার লোক। পাশের বাসাই। সেলিম ভাই এক সময় সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। প্রচেষ্টা নামে তাঁর একটা ম্যাগাজিনও ছিলো। আমার জীবনের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় সেলিম ভাইয়ের এই ম্যাগাজিনে। সেই ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের কথা। ৯০ এর দিকে সেলিম ভাই ইংল্যান্ড গেলে বার্মিংহামে আমাদের বাসায় আব্বার সাথে দেখা করতে যান। সাথে ছিলেন এম ইলিয়াস আলীও। তবে আমি ঐদিন লন্ডনে থাকায় তাঁদের সাথে দেখা হয় নি। সেলিম ভাই টেলিফোনে আমার সাথে আলাপ করেন। আমার বাবা এক সময় চারদলের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। অনেক মিটিং আমাদের বাসায় হতো। বিএনপি সহ চারদলের নেতারা প্রায় আসতেন, কিন্তু এম ইলিয়াস আলীকে এই সব মিটিং-এ কোনদিন দেখিনি। কিংবা আমি রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহী না থাকায় হয়তো তিনি আসলেও দেখা হয় নি। ব্যক্তি ইলিয়াস আলীর অনেক সুনাম-বদনাম লোকমুখে শুনি। আমার চোখে দেখা কিছু নেই। গতকিছুদিন আগে বেগম খালেদা জিয়া সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে এলে এম ইলয়াস আলী বক্তব্য রাখেন। আমি সরাসরি পাশের রেডক্রিসেন্ট-এর বিল্ডিং-এ বসে শুনলেও দেখিনি তাঁকে। তবু তাঁর নিখোঁজ সংবাদ আমাকে নাড়িয়ে যায় একজন নাগরিকের নিরাপত্তার ভাবনায়। আমি তাদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখতে চাই না। আমার কাছে তারা মানুষ, কিংবা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক, এই হলো কথা। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি একজন নিখোঁজ মানুষকে কোন নামে কিংবা বিশেষ পরিচয়ে বিচার করতে চাই না। তারা যদি বিচার পক্রিয়ায় আদলতের মুখোমুখি হতেন তবে তদের দোষ-গুণ হয়তো বিশ্লেষণ করতাম। তারা তো দোষগুণের আদালতে যান নি। তারা নিখোঁজ হয়েছেন। যারা মারা যান, তাদের পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়ে কেঁদে এক সময় শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু নিখোঁজ হওয়া মানুষের পরিবার অনেকদিন অশান্তিতে থাকে। আমি একটা নিখোঁজ হওয়া পরিবারকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমাদের গ্রাম সৈয়দপুরের সৈয়দ শাহ জামাল চৌধুরীর ঘটনা আমি বলছি। সৈয়দ শাহ জামাল ছিলেন সম্পর্কে আমার মায়ের চাচা। তিনি বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মামা। সৈয়দ শাহ জামাল ছিলেন জামায়েতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের (যা একাত্তরের পর ইসলামী ছাত্র শিবির) ঢাকা মহানগরীর সভাপতি। জামায়েতে ইসলামী যখন একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষ নিলো তখন এক জনসভায় সৈয়দ শাহ জামাল জামায়াতে ইসলামীর এই নীতির সমালোচনা করে পাক বাহিনীর স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। এই মিটিং-এর পর সৈয়দ শাহ জামালকে আর পাওয়া যায় নি। আমি তাদের পরিবারের হাহাকার খুব কাছ থেকে শুনেছি। এর মধ্যে এই পরিবারের অনেক মানুষই মারা গেছেন, কিন্তু সৈয়দ শাহ জামালের হাহাকার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ছিলো। বিশেষ করে তাঁর মা যতদিন বেঁচে ছিলেন। আমি পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন জমিয়তে তালাবার পঞ্চাশ বছর পূর্তি স্মারকে দেখলাম তারা সৈয়দ শাহ জামাল সম্পর্কে লিখেছেন-তাঁকে পাকিস্তানের কাদিয়ানী সৈনিকেরা শহীদ করেছে। সত্য-মিথ্যা আল্লাহ জানেন। এই সত্য-মিথ্যা নিয়েও আমার বক্তব্য এই মূহুর্তে নেই, আমি আমার (দ্রাবিড় বাংলার রাজনীতি, সুকুতে মশরিকি পাকিস্তান গ্রন্থদ্বয় সহ) অনেক লেখায় বিষয়টি আলোচনা করেছি। একাত্তরে নিখোঁজ হওয়া অনেক পরিবারের চিত্র আমার পড়া হয়েছে। আমি সেগুলোও আলোচনা করবো না। আমার আজকের বিষয় নিখোঁজ হওয়া মানুষ ইলিয়াস, দিনার, জুনেদ সহ বাকী যত আছেন। আমি আবারো বলছি, আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জাড়িত নয়, আমার কোন দলীয় পরিচয়ও আমি পছন্দ করি না। ব্যক্তি ইলিয়াস আলীর অনেক বিষয়, যা শুনি, তা সত্য হলে আমি তাকেও ভালোবাসতে পারছি না। কিন্তু নিখোঁজ হওয়া মানুষের প্রতি যে কষ্টবোধ তা আমাকে পূর্ণাঙ্গ একটি রাত ঘুমাতে দেয়নি। একটি প্রশ্নই মনে বারবার কাজ করছেÑকে করলো এই কর্ম? আনুসাঙ্গিক আরো কিছু প্রশ্ন সাথে নিয়ে মনে উঠেছ-তারা কেমন আছেন?

প্রেমিক মন আমার খুব দূর্বল। এরশাদ শিকদারের নির্যাতনের চিত্র যখন পত্রিকায় পড়তাম তখন আমার চোখে জল আসতো। তাকে প্রচণ্ড ঘৃণা করতাম। কিন্তু যেদিন তাকে ফাঁসি দেওয়া হলো সেদিনও আমি কেঁদেছি একজন মানুষ মরলো বলে। তেমনি মনির যখন শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের মেয়ে রীমাকে হত্যা করলো, সেদিন মনিরকে প্রচণ্ড ঘৃণা করলাম। কিন্তু যেদিন মনিরকে ফাঁসিতে ঝুলানো হলো সেদিন মনিরের জন্য নীরবে কেঁদেছি। হয়তো জালেমের জন্য চোখের জল ফেলা কারো কারো দৃষ্টিতে অন্যায়, কিন্তু আমি যে ফাসির মঞ্চের একজন মানুয়ের অসহায় চিত্র ভাবলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না প্রেমের ঘরে। একজন জালেম যাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলো, সে মৃত্যুর সময় যে ভাবনায় অসহায় ছিলো, এই জালেম যখন বিচারের আদালতে রায় পেয়ে ফাঁসির মঞ্চে, সেও কিন্তু সেই রকম অসহায় হয়ে যায়। শুধুমাত্র এই একটি সময় সবাই মানুষ হয়ে যায়। মৃত্যু মানুষকে প্রকৃত মানুষের অনুভূতি এনে দেয়। তাই হাদিসে আছে প্রতিদিন কম হলেও শতবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে। প্রকৃত অর্থে সৎ মানুষের জন্য মৃত্যু থেকে সুন্দর কিছুই নেই। ভালো এবং খারাপ মৃত্যুযাত্রীর জন্য আমি চোখের জল ফেলি। খারাপের জন্য চোখের জল ফেলে যদি কারো ঘৃণার কারণ হই, তবুও। বরং ক্ষেত্র বিশেষ আমার ভালো মানুষ থেকে বেশি খারাপ মানুষের জন্য চোখে জল আসে। কারণ, এই মানুষতো আর সংশোধন হতে পারবে না। পৃথিবীতে কোন মানুষ অপরাধি হয়ে জন্মায় না। সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার মানুষকে অপরাধী হতে সাহায্য করে। আবার যখন সে অপরাধের সীমা অতিক্রম করে তখন এই সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারই তাকে দমনের চেষ্টা করে। সন্তানকে যদি আমরা ছোটবেলা থেকে সচেতনভাবে নজর রাখতে পারতাম তবে হয়তো অপরাধির সংখ্যা হ্রাস করা যেতো। আমাদের পারিবারিক-সামাজিক অবস্থা এমন যে আমরা সময় মতো সময়ের গান গাই না। যারা অপহরণ করেছে এবং যারা অপহরণ হয়েছে তাদের মধ্যে কি নিয়ে সংঘাত? তা আমার জানা নেই। কিন্তু ওদের এক গ্র“প অবশ্যই অপরাধি। প্রকাশ্য দৃষ্টিতে অপহরণকারী অপরাধি, কিন্তু ভেতরে অন্যকিছুও থাকতে পারে। যেমন, কিছুদিন আগে আমি এক সালিশে গিয়ে দেখলাম সবাই প্রকাশ্য যাকে অপরাধি ভাবছেন সে মূল অপরাধী নয়, কিন্তু তবুও তাকে নির্দোষ বলা যাচ্ছে না। এমনকি সে নিজেও চাচ্ছেন না তাকে নির্দোষ করার জন্য যা যা বলার তা বলা হোক। ঘটনাচক্রে এই সালিশের আমিও একজন সদস্য ছিলাম। সব স্থানেই কিছু মানুষ থাকে যারা বিষয় না বুঝে শুধু চিৎকার করে বিষয়কে নানামূখি সমস্যায় আটকিয়ে ফেলে। তেমনি আমাদের সেদিনের সালিশেও কেউ কেউ ছিলো। আমি এখানে ত্রিমুখি বিপদে আটকে যাই। একদিকে ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন, অন্যদিকে বেহুদা হৈ চৈ, আরেকদিকে বাদি পক্ষ আর সালিশের অন্যান্য সদস্যরা।

আমাদের তদন্তে প্রকাশিত বাদি পক্ষ অন্যায়কারী, বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থন না করে নিরবে নিজকে ধ্বংস করার মানসিকতায় দৃঢ়, বাদি পক্ষের যারা জানেন তারা অন্যায়কারী তারাও চাচ্ছেন না বিষয়টি প্রকাশ হোক। আমরা যদি সরকারী আদালত হতাম তবে কে বাঁচলো, কে মরলো? তা না ভেবে সিদ্ধান্ত দিতাম। এতে সমস্যার সমাধান না হয়ে বিষয়টি আরো গভীরে চলে যেতো। এমনি বিষয়টা প্রথমে থানাতে-ই ছিলো। থানার অফিসার বিষয়টির বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে অবশেষে আমাদের প্রস্তাবে সালিশ কমিটির হাতে ছেড়ে দেন। আমাদেরকে এমনভাবে শেষ করতে হয়েছে যাতে কারো উপর জুলুম না হয়, কেউ নারাজ না হয়, পরবর্তীতে তা নিয়ে আর কথাও না হয়। আল্লাহর হুকুমে সেই এলাকার কয়েকজন মুরুব্বীর সহযোগিতায় বিষয়টি এভাবেই শেষ হয়েছে। কিন্তু যারা এই দিন গ্রামের সালিশে উপস্থিত ছিলেন তাদের অনেকেই বিষয়টির মূল রহস্য আজও হয়তো জানেন না। তেমনি একটা রাষ্ট্র চালাতে গেলে সরকারকে অনেক কিছুর রহস্য লুকিয়ে রাখতে হয়। বাংলাদেশের মতো দেশের সরকারকে বিভিন্ন ছাপের মুখে বিভিন্ন কাজ করতে হয়। সব ছাপ কিন্তু প্রকাশ করা যায় না। আবার চিৎকার পাটিকেও থামিয়ে রাখতে হয়। নিজেদের দলীয় লোকদের ক্ষমতালোভ-অর্থলোভকেও শান্ত করতে হয় উপাদান দিয়ে। বহুমূখি সমস্যা সাথে নিয়ে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্র চালাতে হয়। তাই অনেক সময় অনেক বিষয়ের সাথে সরকার জড়িত না থাকলেও ঘটনা ঘটে যায়। সরকার জানলেও কথা বলতে পারে না। গরীবের বিধবা বউ সকলের ভাবি। দাতারা যেভাবে পরামর্শ দেন সেভাবে রাষ্ট্র চালাতে হয়। এর অতিরিক্ত কিছু হলে নিখোঁজ সংবাদ। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন, মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনে মোবারক, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আসাদ প্রমূখকের অবস্থা এই নিখোঁজের মধ্যেই। যে যত বড় তার নিখোঁজ হওয়াটা হয় ততই বড়। ছোট রাষ্ট্র প্রধানকে নিখোঁজ করে বড় রাষ্ট্র প্রধান। বড় নেতাকে নিখোঁজ করে তার থেকে বড় নেতা। অর্থাৎ ছোট কেউ যদি বড় কারো কথার খেলাফ করে তবে বড় যে কোনভাবে ছোটকে নিখোঁজ করে দেয়। অনেক মানুষ এই কথাগুলো জানলেও অনেক সময় নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে কথা বলেন না। অথচ এই কথা না বলায় প্রকৃত অর্থে কেউ-ই রক্ষা পাচ্ছেন না। আমাদের ছোটদের মধ্যে ঐক্য নেই বলেই বড়রা আমাদেরকে নিখোঁজ করে। ইলিয়াস আলী একজন বড় নেতা, আজ তার জন্য সারা বাংলাদেশে হরতাল হলো। কিন্তু দিনারের জন্য একটা হরতাল ডাকা হয়নি। কারণ, সে ছোট নেতা। অথচ দিনাররা আছে বলেই ইলিয়াস আলী বড় নেতা। আজও যারা ইলিয়াস আলীর জন্য ডাকা হরতাল সফল করবে, তারাও দিনারের মতো কেউ। মানুষ হিসাবে বিষয়টি বিবেচনা করলে আমার কাছে ইলিয়াস আর দিনারে কোন ব্যবধান নেই। দলীয় নেতা ছোট কিংবা বড় হয় দলের কাছে। আমাদের কাছে তো সবাই মানুষ। আমি নিখোঁজ হওয়া সৈয়দ শাহ জামাল, একাত্তরের বুদ্ধিজীবীগণ কিংবা দিনার-ইলিয়াস আলী কাউকে পৃথক করে ভাবতে পারছি না। আমার সামনে প্রত্যেকটি নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির পরিবারের চোখের জল স্পষ্ট হয়ে ভাসে। আগেই বলেছি আমি মানুষ হিসাবে প্রেমিক, নিউটন কিংবা আলজাবিরের সূত্র বুঝি না। প্রেমের দৃষ্টিতে বিষয়টিকে দেখছি। যে চুরি করে এবং যার চুরি হয় দু জন নিয়েই আমার দুঃখবোধ আছে। এই দুঃখবোধ থেকেই আমার বিভিন্ন কর্মে অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যান। যারা আমাকে চুরের সাথে দেখেন তারা ভাবেন আমি চুর। আর যারা দেখেন ভালো মানুষের সাথে তারা ভাবেন ভালো মানুষ। প্রকৃত অর্থে প্রেমিক ছাড়া আমার আর কোন পরিচয় আছে বলে আমি জানি না। যে যা ভাবেন, সে মূলত তাঁর চশমায় দেখেন।

আত্মিক দৃষ্টিতে ইলিয়াস আলী প্রমূখের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এভাবে একজন অতিপরিচিত ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে গেলো, বিষয়টিকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের। ইলিয়াস আলী বিএনপি, না আওয়ামীলীগ, তা আমার বিষয় নয়। আমার বিষয় দেশের নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা। সাংবাদিক সাগর-রুনিকে হত্যা করা হলো। কারা করলো? আমরা আজও সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি বলেই দিনার-ইলিয়াস নিখোঁজ হয়েছে, তা যদি আমি বলি তবে কি অস্বীকার করা যাবে? সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ যদি ইচ্ছেকৃত বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যায় তবে এই দেশের ভবিষ্যতের কপালে হাত। আমি প্রত্যেকটি গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যকে বলবো-বিষয়গুলোকে নিজেদের পরিবারের সাথে সংযুক্ত করে বিবেচনা করে দেখুন। আমরা যে যাই করছি সবই থেকে যাচ্ছে আমাদের প্রজন্মের জন্য। ক্ষেত্র বিশেষ নিজেরাও ভুক্তভোগী হতে হয়। আমি অনেক ঘুষকুর অফিসারকে দেখেছি অন্য অফিসে নিজের কাজ করাতে গিয়ে ঘুষ দিতে হচ্ছে। চাকরী থেকে পেনশনে গেলে টাকা উঠাতে সব অফিসারকেই কমবেশি ঘুষ দিতে হয়। অনেকে খুব কষ্ট করে গালিও দেন। অথচ একবারও ভাবেন না নিজে যখন ঘুষ নিতেন তখন অন্যজন যে এভাবে গালি দিতো। ইলিয়াস আলী-দিনার প্রমূখরা নিখোঁজ হয়েছে, যদি সরকার তাদেরকে কোন কারণে গোপনে গ্রেফতার করে তাকে তবে তাতে রাষ্ট্রিয় সৎ স্বার্থ জড়িত থাকলে আমার কোন আপত্তি নেই। রাষ্ট্রীয় সৎ স্বার্থকে আমি সর্বদাই সকল আবেগের উর্ধ্বে দেখি। আর যদি সরকারের দলীয় স্বার্থ হয় তবে বিষয়টি অসৎ কর্ম বলে নিন্দা জানাই। দাবী করবো অবিলম্বে নিখোঁজ ব্যক্তিদ্বয়কে ফিরিয়ে দিতে। আর যদি সত্য বিষয়টির সাথে সরকারের কোন যোগসূত্র না থাকে তবে সরকারের উচিৎ সর্বশক্তি দিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান বের করা এবং দোষিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।

এই ঘটনার বিশ্লেষণে অপহরণকারীকে একেকজন একেকভাবে চিহ্নিত করছেন। একদল বলছেন সরকার এবং সরকারের নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থা একাজ করেছে। আমরা অবিশ্বাস করছি না, যেহেতু ইলিয়াস আলী বিরোধী দলের একজন আন্দোলনমুখি এবং সাহসী ব্যক্তি। রাজপথে আন্দোলনের জন্য কিন্তু এমন সাহসী লোকেরই বেশি প্রয়োজন। ইলিয়াস আলীর সাথে এমন অনেক প্রচুর তরুণের সম্পর্ক আছে যারা রাজপথে যে কোন আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারবে। ওদের মধ্যে অনেক ক্যাডারও আছে। তাই ইলিয়াস আলীকে থামানোর চেষ্টা। কেউ বলছে- নিজ দলের গ্র“পিং রাজনীতির কারণে দিনার এবং ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। এই কথাকেও আমরা উড়িয়ে দিতে পারছি না, যেহেতু সিলেট বিএনপিতে প্রধানত দুটি গ্র“প অনেক আগ থেকেই ছিলোÑইলিয়াস এবং সাইফুর গ্র“প। সাইফুর রহমানের ইন্তেকালের পর এই গ্র“প বেশ দুর্বল হলে ইলিয়াস আলী সিলেটে একক নেতা হয়ে যান। কিন্তু সাইফুর গ্র“প তা এখনও মেনে নিতে পারেন নি, যদিও অনেক গিয়ে ইলিয়াস আলীর সাথে মিশেছেন। এই গ্র“পিংটা ঢাকাতেও আছে। তা ছাড়া অদ্য সিলেটে দিনার-জামানের সংঘাত ইলিয়াস গ্র“প বিভক্ত হয়ে গেছে। এই নিখোঁজ হওয়া গ্র“পিং-এরও কারণ হতে পারে। আরেক দল বলছেন-দেশের রাজনৈতিক অবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে কোন তৃতীয় শক্তিও এখানে কাজ করতে পারে। এই তৃতীয় শক্তি হতে পারে দেশি কিংবা বিদেশি।

আমরা মনে করি এই সব বিষয় মাথায় নিয়ে সরকার এবং জনগণকে ভাবতে হবে। আমি বিষয়টিকে শুধু ইলিয়াস কিংবা দিনারের সমস্যা হিসেবে দেখছি না। দেখছি গোটা দেশের নাগরিকদের সমস্যা হিসেবে। আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামায়াত-খেলাফত-জমিয়ত-জাসদ-বাসদ আমার বিষয় নয়, আমার বিষয় নাগরিকের নিরাপত্তা। আজ ইলিয়াস-দিনার নিখোঁজ হয়েছে, কাল আমি কিংবা আপনি নিখোঁজ হতে পারেন। এম ইলিয়াস আলী তো ছোট নেতা নয়, তাঁর তো নিজেস্ব গাড়ি এবং ড্রাইভার সাথে ছিলো। আমরা যারা নেতা নয় সাধারণ মানুষ, একা একা চলি, গাড়িও নাই, ড্রাইভারও নাই, তাদের অবস্থা কি? বিষয়টি ভাবতেও শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। আজ যদি বাংলাদেশ কোন যুদ্ধ পরিস্থিতি এলাকা হতো তবে কথা ছিলো। এই স্বাধীন দেশের যদি এই অবস্থা হয় তবে মুখের ভাষাই হারিয়ে যায়। সরকারের কাছে আমাদের সাধারণ মানুষের অনুরোধ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.