নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যদি পর জনমেও আসিতে হয় তাহলে আমি বার বার আসিবো তোমারই কোলে হে বাংলা মা!!!

এস কাজী

আমি তেমন কেউ নই। শুধু বুকের মাঝে আমার বাংলাদেশকে ধারন করি।

এস কাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্রান্সঃ আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি ক্ষমা প্রার্থী নই।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩০

এটা কোন চরমপত্র নয়। কিন্তু আপনি যদি তাই মনে করেন তাহলে ধরে নিবেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে আমি আমার মত প্রকাশ করে যাচ্ছি।



ফ্রান্সে একটি রম্য পত্রিকায় হামলার ঘণ্টা খানেক পর আমার এক বন্ধু আমাকে ব্যঙ্গ করে প্রশ্ন করল- " কেন? কেন সবসময় তোমরা মুসলিমরা হত্যা কর??"। অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এ কথাটি কিছুটা ব্যাঙ্গাত্তক করে বললেও আমার বন্ধুটি আমাকে আমার স্কুল জীবনের কথায় স্মরণ করিয়ে দেয় যখন ইন্দো-পাক কোন খেলার আগেই স্কুল বন্ধুরা আমাকে ব্যাঙ্গ করে বলত-" তো আজ পাকিস্তান, তাই না?"।



অনেকদিন ধরে এরকম অনেক প্রশ্ন আমি কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছিলাম।



বিশ্বাস একটি অত্যন্ত পবিত্র এবং অবশ্যই ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেই বিশ্বাসের কারনে আমি নিজেকে একজন গর্বিত মুসলিম মনে করি। আমার কর্মজীবনের সবকাজ ধর্মের আতশি কাঁচে পরখ করে মন্তব্যকারীরা সবসময় আমাকে ধর্মীয় গোঁড়ামিতে অন্ধবিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত করত। যেখানে আমার মতামতের উপরে দেয়া মন্তব্য দিয়েই অনেকে আমাকে বিচার করত।



অসত্য, বানোয়াট , মিথ্যা বা এরকম কোন ব্যপারে আমি যদি আওয়াজ তুলি বা মতামত প্রকাশ করি তাহলে তা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে দেখা হত এবং সেইভাবে আমার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হত। অথচ উপজাতি বা দলিতদের নিয়ে আমার অনুসন্ধানীমূলক কাজ যেগুলোর জন্য আমি অত্যন্ত সম্মানজনক এ্যাওয়ার্ড পর্যন্ত পেয়েছি তা আমার সমালোচক এমনকি আমার বন্ধুরা পর্যন্ত এরিয়ে গেছে বা যায়।



তাই এরকম মূর্খ ধারণা রেখে যখন আমার ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলে তখন ভাবলাম কিছুটা ধর্মীয় শিক্ষা আর কিছুটা আমার বাবার দেয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণকারীদের ধারণা একটু পরিষ্কার করি।



আমার বাবা " প্রগ্রেসিভ রাইটার্স মুভমেন্ট" এর একজন ছিলেন। ৭০ এর দশকে আমার বাবার কম্যুনিস্ট বন্ধুরা যখন মুশিয়ারায় হুইস্কি আর সিগেরেটে মত্ত থাকতেন তখন আমার তিনি আস্তে করে হাল্কা আলোর কক্ষে প্রবেশ করে তার নামাজ আদায় করতেন। এবং পরে জলসাতে ফিরে আসতেন গল্প আড্ডায় মেতে উঠার জন্য।



তার জন্য নামাজটা ছিল অত্যন্ত ব্যক্তিগত যেমনটা ব্যক্তিগত ছিল ওইসব মেহফিলে এগিয়ে দেয়া মদ ভদ্রতার সহিত না করে দেয়া।

তিনি যেমন কোনদিন মদ স্পর্শ করেননি তেমনি তাঁর বিশ্বাসী হওয়ার জন্য কাউকে চাপও দেননি। অথচ অইসব শুরায় কাইফি আজমি, সরদার জাফরি এবং ফরাজ আহমদ এর মত মুসলিম প্রগতিশীল লেখকরাও থাকতেন।



তাঁর ইসলাম এবং কোরআন শুরু হত একটা শব্দ দিয়ে "ইকরা(পড়)"। আর হয়ত এই একটি মাত্র কারনে একজন জমিদারের ছেলে হয়েও জমিদারি ব্যাবসার লাভ-লোকসানের হিসেব না করে শেষ বয়সে অবসর পর্যন্ত মুম্বাই এর একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করে গেছেন। যেখানে তাঁর বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী ছিল নন মুসলিম।



মাষ্টারজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় আমার বাবা স্কুলে ছাত্র ভর্তি করতেন, তাদের ফ্রি তে টিউসন পড়াতেন। আবার তাঁর আদর্শ পরিপন্থী শাখাগুলোতেও তিনি ঘুরতে যেতেন। গুরু পূর্ণিমাতে প্রথম বাবার হাতেই লাল ফিতে বেঁধে দিতেন সেই শাখার হেড।



আমাদের ঘরের বিপরীতে ছিল আয়াপ্পা মন্দির যেখানে আমরা ভাইবোনরা যেতে খুব পছন্দ করতাম শুধুমাত্র গুঁড় বিশেষ একটি প্রসাদ খাওয়ার জন্য। তাই কোন অনুষ্ঠানের সময় দেখা যেত আমরা যাওয়ার আগেই পূজারীরা কলা পাতায় করে প্রসাদ আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিতেন। বাৎসরিক আয়াপ্পা পুজায় আমাদের বাসা থেকে সব টব নিয়ে যাওয়া হত। আর আমার মা তাদের পানির শুবিধার জন্য আমাদের রান্না ঘরের পানির লাইনের সাথে তাদের লাইনের সংযোগ দিয়ে দিতেন।



ভারতের মত কসমোপলিটান দেশে বাস করার মজায় বোধহয় এটাই ছিল।



আজকে আমি যখন এই লেখাটা লিখছি আমার পরিচয় একজন ধর্মীয় গোঁড়ামি তে বিশ্বাসী ক্ষমাপ্রার্থী সন্ত্রাসী মুসলিম হিসেবে। অথচ আজকে আমাকে " পলিটিক্যালি কারেক্ট" করে এমন একটা জবাব সেই সব মানুষদের জন্য লিখতে হচ্ছে যেখানে আমরা সবাই জানি কিছু বিচ্ছিন্ন সুবিধাবাদী তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কিছু ইসলামিক ফ্যানাটিক দের দিয়ে এসব কাজ কর্ম করে যাচ্ছে। যার বিরুদ্ধে আমি সহ আরও অনেক মুসলিম প্রতিনিয়ত আওয়াজ তুলে গেছি এবং যাচ্ছি।



আমি অবাক হই যখন আমাকে একজন ক্ষমা প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আমি আরও অবাক হই এই ভেবে যে আমার তামিল বন্ধুরা এলটিটিই এর সন্ত্রাসী হামলার জন্য, সুইসাইড বম্বিং এর জন্য বা প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী হত্যার জন্য কখনো এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল কিনা যে " ক্ষমা চাও"!!!!



আমি আরও অবাক হই যখন খাইরলজি নামক জায়গায় দিনে দুপুরে নিম্ন বর্ণের একজন দলিতকে ব্রাহ্মণরা ধর্ষণ করার পর হত্যা করল অথচ ক্ষমা চাইতে কেউ বলল না! অথবা বিশ্বাসের নামে উচ্চবর্ণের মানুষরা নিম্ম বর্ণের মানুষদের অত্যাচার করার পরও যখন এই প্রশ্নের সম্মুখীন হল না!!



আমি অবাক হই আচ্ছা! খ্রিশ্ছিয়ান রা কখনো রাগ আর ক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছিল যখন তারা হাসপাতালে হামলা করল যখন সেই হাসপাতালে জন্মাছিল নতুন প্রজন্ম? অথবা একজন ইহুদিকে কখনো জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্যালেস্টাইনে হত্যাযজ্ঞের জন্য মাফ চাও!!! অথবা কখনো কোন আমেরিকানকে আফগান এবং ইরাকে নিরীহ মানুষ হত্যা বা তাদের সম্পদ ধ্বংস করার জন্য মাফ চাইতে বলা হয়েছিল!!!??



তাহলে কেন আমার বিশ্বাসের উপর মিথ্যা যুক্তি খাড়া করে আপনারা বসে থাকবেন আর আমাকে এসে জিজ্ঞেস করবেন "তাহলে এই অ্যাটাক সম্পর্কে তুমি কি বলবে??"



হ্যাঁ, যখন পেশওয়ারে বিশ্বাসের নামে শত শত স্কুল বাচ্চা কে হত্যা করা হল তখন তা আমি মেনে নেইনি। আর আপনি যদি মনে করেন ইসলাম আমাদের নির্মমতার শিক্ষা দেয়, তাহলে আমি বলব আপনিও ওইসব হত্যাকারীর মত ভুল পথে পরিচালিত। হতে পারে সেই জন্যই আপনাদের এবং ওইসব সন্ত্রাসীর বিশ্বাস করা ইসলাম ধর্ম একই।



আমি অবাক হচ্ছি এবং বাধ্য হচ্ছি জিজ্ঞেস করতে ফ্রান্স এর শারলি তে বসা সাংবাদিকদের বাঁচানোর জন্য যে অফিসার প্রান দিল কেন বার বার তার ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছিল!!!?? কেন??



আবার কেন আমি বাধ্য হচ্ছি বলতে যে "কশের সুপার মার্কেটে" বন্দুকধারীর দ্বারা যখন একজন ইহুদি আক্রান্ত হল তাকে বাঁচানোর জন্য জীবন বাজি রেখেছিল অই সুপার মার্কেটের একজন কর্মচারী যে কিনা একজন মুসলিম!!!!!!



কেন আমি বাধ্য হচ্ছি নিহত সাংবাদিকদের শান্তির জন্য নামাজ পড়ারত অবস্তায় তোলা ছবি মিডিয়াতে পোস্ট করতে????



কেন আমি বার বার আমার বন্ধুদের বলতে বাধ্য হচ্ছি- " বন্ধু শোন, তুমি কি জান সেই সব সন্ত্রাসীদের মারার জন্য ফাইনাল যে রেইড দেয়া হয় তার কমান্ডিং অফিসার ছিলেন একজন মুসলিম!!??"



আমি হতাশ হচ্ছি এবং বলতে বিরক্ত হচ্ছি আমার বিশ্বাসের সাথে সেই সব সন্ত্রাসীদের বিশ্বাসের কোন মিল নেই, যদিও তারা বিশ্বাস করে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস রক্ষা করে চলেছে তারা। তারা ভুল পথে পরিচালিত, যেমনটি মায়ানমারে বুদ্ধ ভিক্ষুরা মুসলিমদের হত্যা করছে। যেটা বুদ্ধের চিন্তাধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।



হ্যাঁ, আমি অবশ্যই ইসলামের প্রতি কেউ ভুল আঙ্গুল তুললে প্রতিবাদ করে যাব। তবে তা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের প্রতি সহমরমি হয়ে নয়। না আমি "মোডারেট মুসলিম" নই। এই টার্ম তা অত্যন্ত অপমানজনক সেটা শুধু মুসলিম কেন কেউ যদি বলে মোডারেট হিন্দু বা বুদ্ধ বা জিউস। কারন ধর্মীয় বিশ্বাস হল সেই বিশ্বাসের প্রতি আপনি কতটুকু সৎ তা। এর কোন গাণিতিক হিসেব হতে পারেনা যে ঠিক এত টুকু আপনি বিশ্বাস করলেন, বাকিটা না।



আজকে আমি লিখছি এবং বলছি এই সব ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং নির্বোধের মত লোকদের ইসলামফবিয়া ইসলাম নয়, আর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে যারা আমার বিশ্বাস রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে বলছে সেই সব নির্বোধ অবশ্যই মুসলিম নয়।



এটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক যে একজন রুপারট মারডক যখন এরকম ধর্মীয় গোঁড়ামির মূলে ঘি ঢেলে দেন, তখন পৃথিবীর আনাচে কানাচে শত শত সাংবাদিক, এক্তিভিসট, হিউম্যানিশট শুধুমাত্র সত্যিকার অর্থের মুসলিমদের ডিফেনড করার জন্য কলম যুদ্ধ করে যাচ্ছেন শুধু এই কুসংস্কার থেকে বাঁচানোর জন্য।



" দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট" এর সাংবাদিক ওয়েন জোন্স যিনি গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লিখনির জন্য প্রচুর জনপ্রিয় একবার লিখেছিলেন-" আমরা যারা সত্যিকারের মুসলিমদের ডিফেনড করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত, তুলে ধরে যাচ্ছি গোঁড়ামিদের ইসলাম আসলে মুসলিমদের ইসলাম নয় তারা এমন একটা যুদ্ধ করছি যা খুবই অজনপ্রিয়। কিন্তু এটাই সত্যিকারের কাজ এবং ইতিহাস আমাদের অবশ্যই দায়মুক্তি দিবে"।





বিঃদ্রঃ- বাংলায় রূপান্তরিত লেখাটি এনডিটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সাংবাদিক রানা আইয়ুব এর মতামত। রানা আইয়ুব একজন এ্যাওয়ার্ড ওইনিং পলিটিক্যাল রাইটার।

ভুল রুপান্তরন হলে আমি ক্ষমা প্রার্থী।



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হাজার ক্ষমাও তাদের মন ভরাবে না। কারণ তারা চায় ইসলাম না থাকুক।

আল্লাহ কোরানুল করীমে পরিস্কার বলেছেন- তারা চায় তোমরা তাদের মতো হয়ে যাও! তারা ততক্ষন সন্তুষ্ট হবেনা যতক্ষনা তোমরা ইসলাম থেকে ফিরে যাচ্ছ!

তাই কোন সুশীলতায় নয়। বরং নিজের বিশ্বাসের প্রতি দৃঢ় ভাবে সৎ থেকেই নিজের সত্যকে তুলে ধরতে হবে সময়োপযোগী করে।

+++

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৯

এস কাজী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৪

প্রফেসর মরিয়ার্টি বলেছেন:
Exceptions cannot be an example.

কিন্তু বর্তমানে মিডিয়া ও অমুসলিমরা গুটিকয়েক ধর্মান্ধ মুসলমানের কার্যকলাপ দিয়ে ইসলামকে বিচার করে থাকে।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৮

এস কাজী বলেছেন: ্মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৫

শেখ মফিজ বলেছেন: সারা বিশ্বে মুসলমানরা নিজেদেরকেই বেশী হত্যা করছে ।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

এস কাজী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: অতি চমৎকার লেখা । সমস্যা হলো, এমন যুক্তিশীল মধ্যপন্থী ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা আজ প্রায় সংখ্যা লঘু , তাদের চিন্তাচেতনা খুব বেশি মিডিয়ায় প্রকাশ হতে দেখি না। উগ্রপন্থি বা এদের সমর্থকরা তাদের কাজের জন্য আর মিডিয়ার কল্যানে বেশি হাইলাইটেড ......।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

এস কাজী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.