নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যদি পর জনমেও আসিতে হয় তাহলে আমি বার বার আসিবো তোমারই কোলে হে বাংলা মা!!!

এস কাজী

আমি তেমন কেউ নই। শুধু বুকের মাঝে আমার বাংলাদেশকে ধারন করি।

এস কাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত!!! (অভিজ্ঞতালব্ধ পর্যালোচনা)

২৪ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১

মূল বিষয়ে অবতারনার আগে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করা প্রয়োজন মনে করছি।

২০১২ সালের প্রথম দিকে ছোট্ট একটা রিসার্চ এর প্রয়োজনে কিছু বিষয় জানতে ছেয়ে আমি নায়লা কবির কে মেইল করি। যারা নায়লা কবির কে চিনেন না তাদের জন্য উনার ছোট্ট একটা পরিচয় তুলে ধরি। বাংলাদেশি মেয়ে নায়লা কবির বর্তমানে লন্ডন স্কুল অব একনমিক্স এর জেন্ডার ইন্সিটিউট এর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস ডিপার্টমেন্ট এর একজন নামকরা শিক্ষিকা। তিনি তার পিএইচডিও করেছেন এলএসসি থেকেই। কোন এক শনিবারে আমি উনাকে মেইল করে নিজেই মনে মনে হাসলাম যে এতবড় মাপের একজন মানুষের মেইলবক্স এর দামি দামি মেইল এর ভিড়ে আমার মেইল টা হারিয়েই যাবে। একদিন অপেক্ষা করে মেইল উত্তর না পেয়ে আমি তাই ধরে নিলাম। কিন্তু সোমবার দুপুরে (তখন মনে হয় লন্ডনে ফার্স্ট আওআর) মেইল খুলেই দেখতে পায় উনি আমাকে মেইল এর উত্তর দিয়েছেন। শুধু উত্তর নয় উনি উনার ফোন নাম্বার দিয়ে এও লিখেছেন যে এর বাইরে কোন প্রয়োজন পরলে আমি জানি অফিস টাইমে উনাকে ফোন দেই। উনাকে আমি ধন্যবাদ দিয়েছিলাম। তবে ফোন করা হয়নি।

পল ক্রুগম্যান কে আমরা কে বা না চিনি। ২০০৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদ ২০১১ সালের শেষের দিকে একটা লেকচার সিরিজে অংশগ্রহণ করার জন্য দিল্লীতে আসেন। জাওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত ওই লেকচার সিরিজে দর্শক সারিতে অনেক রতি মহারতিদের ভিড়ে ছিলাম নগন্য আমি ও আমার নেপালি রুমমেট। প্রচুর প্রশ্নের ভিড়ে উনি যখন আর প্রশ্ন নিতে পারছিলেন না তখন শেষ পর্যন্ত উনি উনার একটা মেইল এড্রেস দিয়ে বলেছিলেন যে কোন প্রশ্ন থাকলে মেইল করতে। উনি অবশ্যই সময় করে জবাব দিবেন। রুমে ফিরে এসে আমার রুমমেট তার একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে না পেরে আফসোস করতে লাগল। পরে আমার বুদ্ধিতে সে পল ক্রুগম্যান কে মেইল করল। না সে সাথে সাথে মেইল আনসার পেল না। ঠিক এক মাস ২০ দিন পর সে দেখতে পেল যে ক্রুগম্যান তাকে আনসার করেছে। নিচে নোটা বিনি দিয়ে লিখে দিয়েছে যে তিনি সব মেইল এর উত্তর দিচ্ছেন এবং এ পর্যায়ে তার মেইলটির উত্তর দিল। তাই উত্তর দিতে দেরি হওয়াতে উনি দুঃখ প্রকাশ করলেন।

পার্থ সেন দিয়ে গুগল এ সার্চ দিলেই আপনারা দেখতে পাবেন পার্থ সেন কে। ইন্ডিয়ান এই বাঙালি ও এলএসসি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেছিলেন। উনার বাকি পরিচয় উইকি থেকে জানা যাবে। সৌভাগ্যবশত উনারও কিছু ক্লাস এ আমার বসার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। কোন একদিন কোমরে ব্যথার কারনে কমফোর্টেব্লি ক্লাস এ বসতে পারছিলাম না। উনি বুঝতে পেরে আমাকে আমার মত যেরকম ইচ্ছে সেভাবে বসতে বলেন। বেঞ্চে পা তুলে বসলে আরাম হবে জেনেও বিয়াদবি ভেবে বসতে পারছিলাম না। তারপর উনি বললেন যে বেঞ্চ পা তুলে বসলে বিয়াদবি হয়না। বিয়াদবি ব্যাপারটা হল ভিতরের। তুমি যদি একজন মানুষকে এমনি সম্মান না কর তাহলে যতই লোক দেখানো ভাব কর না কেন কাজ হবে না। আর মাস্টার্স লেভেলে আমরা স্টুডেন্টদের এই স্বাধীনতা দিয়ে থাকি। কারন কোন কিছু শিখতে এসে যদি আরাম করে বসা না যায় তাহলে আসল জায়গায় ফোকাস করা যায় না। তবে এর মানে এই নয় যে রাস্তাঘাটে এটা করতে যাবে। আমি বিশ্বাস করি কোথায় কি ধরনের ব্যবহার অথবা চলাচল করবে সেটা বুঝার মত বয়স তোমাদের হয়েছে!

এগুলো জাস্ট কিছু উদাহরণ। তাও আমার দৌড় ইন্ডিয়া পর্যন্ত সেখান থেকেই দিলাম। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে আপনি এরকম অনেক আড্ডা দেখতে পাবেন যেখানে বুঝতেই পারবেন না যে ছাত্র শিক্ষক একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে, সিগেরেত ফুকছে।

এত লম্বা উদাহরন টানার আসল কারনে আসি। কিছুদিন আগে আমি বাংলাদেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত শিক্ষককে মেইল করেছিলাম কোন এক বিশেষ প্রয়োজনে। উনি চাইলে হা বা না এই উত্তর দিয়ে আমাকে মেইল এর জবাব দিতে পারতেন। দেননি। পরে কোন এক জায়গায় আমি উনাকে একদম সফটলি এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি অনেক মানুষের সামনে আমাকে বকা দিয়ে বলেছিলেন যে উনি আমার মেইল এর জবাব দিতে বাধ্য নন। আর আমার সাহসই বা কেমন এ ব্যপারে আমি উনাকে জিজ্ঞেস করছি। উনি এ ও বলেছিলেন যে আমার মেইল এর জবাব দেয়া ছাড়া উনার আরও অনেক কাজ আছে। যাহোক স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছিলাম। এক্সপেকটেড।

আসুন এবার আরেকটি বিষয় খেয়াল করি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে টিচার্স লাউঞ্জ নামে আলাদা একটা ব্যপার থাকে যেখানে টিচার্স রা বসে খানাপিনা খায়, আড্ডা দেয়। পাশের দেশ ভারতে টিচার্স লাউঞ্জ নামে লাউঞ্জ আছে শুদু আন্ডারগ্রেড ইউনিভার্সিটিতে। পোস্ট গ্রেডে শিক্ষক ছাত্র একসাথে বসেই খাবার থেকে শুরু করে আড্ডা দেয়া, ধূমপান করা একসাথে হয়ে থাকে। এভাবে আড্ডার মাধ্যমে অনেক ছাত্র রিসার্চ এর বিষয় পর্যন্ত বের করে এনেছে বলে গল্প আছে। কিন্তু আমি কোনভাবেই এটা আমাদের দেশে কল্পনা করতে পারছিনা। ইন্ডিয়া তে ছাত্র শিক্ষক টেক্সটটিং কালচারটাও বেশ প্রচলিত। এরকম যে কোন টিচার এর সাথে কোন স্টুডেন্ট এর মিটিং ফিক্স করা আছে, টিচার বা স্টুডেন্ট এসএমএস এর মাধ্যমে জেনে নিল। বা এসএমএস এর মাধ্যমে মিটিং ফিক্সড করে নিল। আর মেইল এর আনসার দেয়াটাকে তো উনারা ধর্ম বলে মনে করেন। আমার তো মনে হয় বাংলাদেশে এরকম কোন বিশ্ববিদ্যালয় টিচার কে টেক্সট করলে বিয়াদবি ধরা হবে। ক্ষেত্র বিশেষে হয়ত ব্যপারটা সত্য নয়।

লেখা শেষ করব ভাবছি। কেমন সম্পর্ক হওয়া উচিত ছাত্র শিক্ষক এর মাঝে?? বন্ধুত্বপূর্ণ??? জিগ্রি টাইপ?? না আমার মতে এরকম কোনটিই নয়। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক হওয়া উচিত এমন একটা সম্পর্ক যেখানে মাঝখানে থাকবেনা কোন ব্যবধান। যে ব্যবধান এর কারনে ছাত্র শুধু দুরেই সরে যাবে বা ভয়ের কোন ব্যপার থাকবে যেটা স্বাভাবিক আমাদের হয়ে থাকে। আবার শিক্ষক ও মনে করবেনা যে আমি শিক্ষক, তাই আমার ছাত্র থেকে দূরে থাকা উচিত। অথবা উপরের যে উদাহরণগুলো দিলাম আস্তে আস্তে যদি আমাদের দেশের শিক্ষকরা চর্চা শুরু করেন তাহলে শিক্ষা নামের ব্যপারটা শুধু শিক্ষা নয় বা দুরের আলো নয় সুশিক্ষায় পরিনত হবে।

শিক্ষক এবং শিক্ষয়িত্রীর মাঝে যত ব্যবধান থাকবে শিক্ষা শিক্ষয়িত্রীর থেকে ঠিক তত দূরে থাকবে। আর বিপরিতটা হলে ভালটাই হবে।

(ব্যক্তিগত মতামত)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১:০৩

ফাহাদ ইবনে মুরতাযা বলেছেন: আমি আন্ডারগ্রাড, দেশের এক প্রাইভেট ইউনিভারসিটিতে , ডিপার্টমেন্টের দুই স্যারকে কে একটা সমাধান চেক করানোর জন্য একাধিকবার মেইল করেছি, কোন হুশ নাই, ভদ্রতা কইরা একবার উত্তরও দেয় না!!

২৫ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৯

এস কাজী বলেছেন: দু:খজনক। তবে আমি যতটুকু জানি প্রাইভেট ইউনি তে এটা কিছুটা কম। আমার কিছু বন্ধু কাজ করে তাদের কাছেই শোনা।তবে যেখানেই হোক এরকম হওয়া উচিত নয়।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:০৬

বোকামানুষ বলেছেন: শিক্ষক এবং শিক্ষয়িত্রীর মাঝে যত ব্যবধান থাকবে শিক্ষা শিক্ষয়িত্রীর থেকে ঠিক তত দূরে থাকবে। আর বিপরিতটা হলে ভালটাই হবে। সহমত

আমাদের কপাল ভাল বলতে হবে কিছু ভাল বন্ধুর মতো শিক্ষক-শিক্ষিকা পেয়েছি যদিও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩৩

এস কাজী বলেছেন: প্রাইভেট ইউনি তে পড়া হয়নি। তবে ওই যে বললাম আমার কিছু ফ্রেন্ড প্রাইভেট ইউনি তে আছে। সু আমি জানি তারা খুবই ফ্রেন্ডলি। এবং ব্যাপার গুলো দিন দিন চেঞ্জ হচ্ছে। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.