নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাকে যাচাই করার পূর্বে নিজেকে যাচাই করুন ।
‘ভালোবাসা’ অনেক জটিল একটা বিষয় । আমাদের সমগ্র জীবনে বহুবার মনেহয় আমি তাকে ভালোবাসি । এই সংখ্যাটা এক হয়‚ একাধিক হয়; কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মানুষ কিন্তু সেই একজনকেই চায় । মনের মানুষটিকেই চায় । লালন যেমন সারাটিজীবন ধরে খুঁজে গেছেন‚ “মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষেরই সনে!”
আমাদের দেশের প্রচলিত অধিকাংশ ‘প্রেম এবং ভালোবাসা’ দু’টোই হাস্যরত্নক বিষয় লাগে আমার কাছে । তাঁর কারণ বলছি— কোনো ছেলের কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে সে চেষ্টা করে মেয়েটাকে বাগে আনতে বা পটাতে । এই বাগে/পটাতে চাইলে স্বভাবতই প্রচুর মিথ্যে কথা বলতে হয় । নানা রঙিন স্বপ্ন দেখাতে হয় । কারণ এটা না করলে মেয়েটি ধরা দিবেনা । যেন এটি একটি বড়শি দিয়ে মাছ ধরার বিষয়!
আবার এই পটানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ মেয়ের লক্ষ্য থাকে ছেলেটির অর্থবিত্ত বেশি আছে কি-না‚ তাঁর ক্যারিয়ার সুউচ্চ কি-না । যখন এই হিসেবনিকেশ আশানুরূপ হয় তখন মেয়েটি রাজি হয়ে যায় । ছেলেটির মিথ্যার প্রভাবে মেয়েটিকে একটি মাকড়সার জালের মতো বিস্তার করে ফেলে । অন্যদিকে মেয়েটি ভাবে আরে সমস্যা নাই তো ওঁর তো টাকা আছে । আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবেনা । পুরা লাইফ সেটল!
এই যে মিথ্যা দিয়ে প্রেম শুরু হয়‚ তারপর দু’জন দু’জনকে বলে ‘ভালোবাসি’ । অতঃপর অনেক সম্পর্কের বিয়েও হয় । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রেমের বিয়ে এই সমাজে টেকেনা । কেনো টেকেনা তা ব্যাখা করছি— প্রথমেই মনে রাখা দরকার মিথ্যার রাজ্যে কখনও কোনো সম্পর্ক টেকেনা । সেটা ভালোবাসা হোক কিংবা অন্যসব সম্পর্কও । ঐ যে বিয়ের আগে ছেলেটি অনর্গল মিথ্যে বলে আর মেয়েটি অর্থবিষ্টের মোহে পড়ে সম্পর্কে জড়ায় এটাই মূল কারণ । কারণ বিয়ের পর আস্তে আস্তে দু’জন মানুষের মধ্যে তেমন কোনো বিষয় অজানা থাকেনা । বিয়ের পর তাঁর আসল রূপ বের হয়ে আসে ।
মানুষটি কতটা সাধু কতটা ভণ্ড তা বের হয়ে আসে । তখন ছেলেটি দোষ দেয় মেয়েটির লোভকে আর মেয়েটি দোষ দেয় ছেলেটির মিথ্যা আশ্বাসকে । পরিশেষে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় । বিচ্ছেদ হয় সম্পর্কের ।
আমি এই সমাজের খুব সীমিত কিছু ভালোবাসার সম্পর্ক দেখেছি । যেটাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা বলে । কিছু দেখেছি প্রেম-ভালোবাসা করে বিয়ের সম্পর্ক আবার কিছু দেখেছি বিয়ের পরে ভালোবাসার সম্পর্ক । কি দারুণ তাঁদের সংসার । কত মহব্বত‚ কত শ্রদ্ধা‚ কত মর্যাদা‚ কত প্রাধান্য‚ কত মায়া‚ কত যত্ন‚ কত দায়িত্ববোধ‚ কত অনুগত্য‚ কত ভালোবাসা । এরকম সম্পর্ক দেখলে অনেক ভালো লাগে ।
আর অধিকাংশ যে প্রেম‚ ভালোবাসা‚ বিয়ের সম্পর্ক দেখেছি তাঁর বেশিরভাগই ভণ্ডামি । প্রেম করে সেটাতে ভণ্ডামি‚ বিয়ে করে ভণ্ডামি । দু’জনের মধ্যে পারস্পরিক মেলাবন্ধন‚ শ্রদ্ধাবোধ‚ অনুগত্যবোধ নেই । মিছেমিছি একটা সম্পর্ককে মানুষ টেনে নিয়ে যায় বছরের পর বছর ।
এ সমাজ মানেই কাউকে ভালোবাসা যাবেনা‚ বিয়ে হলে আবার বিচ্ছেদ হওয়া যাবেনা । মানে যত কুসংস্কার আর অজ্ঞতায় ঠাসা তা এ সমাজের ভীতকে একটু চেষ্টা করে দেখলেই জানা যায় । কতটা অনুর্বর কাঠামো‚ যুক্তির মধ্যে দিয়ে এঁরা মহাকালকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ।
তাহলে ‘ভালোবাসা’ কখন প্রকাশ পায়‚ কখন ‘ভালোবাসা’ হয় । এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে কত মানুষ মরেছে-মরছে ।
আমাদের মধ্যে কখন ভালোবাসার সৃষ্টি হয় তা অধিকাংশের ক্ষেত্রেই নিজের কাছেই অজানা থেকে যায় । কাউকে পটিয়ে প্রেম করা‚ রাত-বিরেতে কথা বলা‚ রেষ্টুরেন্টে খেতে যাওয়া‚ পার্কে খুনসুটি করা; তবুও কি তাকে ভালোবাসি । কখনও কি শূন্য মনেহয়‚ অস্থির লাগে নিজের কাছে । দেখা যায় প্রেমিকা অনেকাংশে অস্থিরতা কিঞ্চিৎ কমায় আবার প্রেমিকাকে সবকিছু বলাও যায়না । কিন্তু এমন কেউ থাকে যাকে সবকিছু বলা যায়‚ যে মনকে প্রশান্ত করে দেয়‚ অনুপ্রেরণা দেয়; যেটা বেশিরভাগ প্রেমিকা পারেনা । তবে কি সেই মানুষটিকেই ‘ভালোবাসি না?’ তাকেই জীবনভর পেতে চাইনা?’
জীবন একটা বিশাল বড় পাথর । এটাকে একা একা বহন করে নিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন । এজন্য আরেকজনের দরকার হয় । যাকে নিঃসংকোচে বলা যায়‚ “হেই‚ আপনি/তুমি/তুই কি আমার এই পাথরটাকে বহন করতে সাহায্য করতে পারবে?” যাঁরা নির্দ্বিধায় রাজি হয় তাঁরা ভালোবাসে । ভালোবাসা থাকলে পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ‚ মনের মিল যখন থাকে তখন সবই করা যায় ।
আমরা অনেকসময় বলিনা‚ “তোমাকে নিয়ে গাছতলায় থাকবো‚ ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচবো” । দু’জনের মধ্যে ভালোবাসা থাকলে আসলেই এটি সম্ভব । যদি দু’জনের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াটা এককভাবে চলে । পৃথিবীর কত কত প্রেমিক-প্রেমিকা জীবন দিয়েছে শুধুমাত্র ভালোবাসে বলে‚ তবে এটি কি তাঁর থেকেও অসম্ভব যে একসাথে বাঁচা যাবেনা । যায়...আসলেই যায় তয় অধিকাংশের ক্ষেত্রে কিন্তু যায়না । দু-চারজনের মধ্যে যায় ।
সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস থাকলে এটিও মানুষকে মানতে হয় যে জীবনে দুঃখ‚ কষ্ট‚ দূর্দশা থাকবে-আসবে আবার চলেও যাবে । এই পৃথিবীর কতজন মানুষ আছে যাঁদের দুঃখ‚ কষ্ট‚ জরা‚ দূর্দশা নেই? সার্ভে করলে হয়তোবা মিলবে তবে সেটি খুবই নগণ্য! এই যে দেখুননা আপনার গ্রাম/শহরের কতজন মানুষ‚ কত পেশার মানুষ‚ কত রকমের বাড়ি । সবাই কি সমানে সমান? অধিকাংশের জীবনেইতো দুঃখ‚ কষ্ট‚ জরা‚ দূর্দশা লেগেই আছে-থাকে ।
তবুও আমরা এই সংখ্যাগরিষ্টতা‚ অধিকাংশকে মেনে নিতে পারছিনা । যেকারণে আমরা অস্থির হয়ে পড়েছি । যান্ত্রিকতা‚ লোভ‚ অভিলাষ আমাদের ভালোবাসার সেই সত্তাকে বারবার কুঠারঘাত করছে । ফলে সারাজীবন অস্থিরতা‚ অসুখী হয়েই কাটিয়ে দিচ্ছি ।
সবার জীবনেই একটা মানুষের দরকার হয় । আপনার দাদার হয়েছে‚ দাদার দাদার হয়েছে‚ তাঁর দাদার দাদার হয়েছে‚ আপনার বাবার হয়েছে আপনাদের অনেকেরই হয়েছে কারোর হবে । তবে সেই মানুষটি কেমন হবে‚ কেমন চাই সেটা শুধু আপন মন-ই জানে । হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাতে বারী সিদ্দিকীর একটি গান ছিলো‚ “কেহ গরীব অর্থের জন্য‚ কেহ গরীব রূপে । এই দুনিয়ার সবাই গরীব কান্দে চুপে চুপে রে কান্দে চুপে চুপে ।”
ভালোবাসা হতে হয় স্বচ্ছ কাচের মতো । যেন একপাশের মানুষটি অন্যপাশের মানুষটিকে পরিপূর্ণরুপে দেখতে পারে । ভালোবাসা হয় দু’টি সত্যের মিশ্রণে । মিথ্যা দিয়ে পৃথিবীতে কখনও ভালোবাসা হয়না । মিথ্যা দিয়ে হয় পরাজয়‚ জয় নয় । মিথ্যা দিয়ে যেটা জয় করা যায় সেটা সাময়িক আর সত্য দিয়ে যেটা জয় হয় সেটা অনন্তকাল স্থায়ী ।
পৃথিবীর ভালোবাসাগুলোর জয় হোক ।
সাব্বির আহমেদ সাকিল
২৫ শ্রাবণ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ‚ শরৎকাল | সোমবার | ০৯ আগস্ট ২০২১ ইং | রাত্রি ০৩ টা ০৮ মিনিট | ধানমণ্ডি এলাকা‚ ঢাকা
#সাব্বিরসাকিল #ভাবনা #ভালোবাসা #প্রেম #বিয়ে #জীবন #জীবনধারা #পৃথিবী
২| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:৩৭
মৌরি হক দোলা বলেছেন: দারুণ বিশ্লেষণ করেছেন। শতভাগ আমার মনের কথা। ধন্যবাদ।
৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৩৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: প্রেম করে বিয়ে অথবা প্রেম ছাড়া বিয়ে যেটাই বলেন কিছু ঝুকি আছে। জীবনের সব কাজেই ঝুকি আছে। তাই এই কিঞ্চিৎ ঝুকিকে মেনে নিয়েই সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। নো রিস্ক নো গেইন। ভালো লিখেছেন।
৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৫৭
সাসুম বলেছেন: নারী পুরুষের প্রেম ভালোবাসা আধুনিক স্মার্ট মানুষ দের আবিস্কার এবং তাদের সমস্যা। ৫ শতক আগে কেউ এর নাম ও শুনে নাই।
কয়েক শ বছর আগেও এসবের বালাই ছিলনা।
ষোল শতকের শেষ দিক থেকে ফ্রেন্স রিজিয়নে এই প্রেম ভালোবাসার জোয়ার দেখা দেয় এবং সাহিত্য এবং শিল্প কলা হয়ে সেটা এখন আমাদের সাইকোলজিকাল ব্রেইনে একটা স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছে।
সময়ের সাথে এটা হারিয়ে যাবে আবার। মানব জীবনে বেচে থাকার জন্য এটা অপরিহার্য্য কিছুনা। ফর সারভাইবাল এটা দরকারি না।
বিঃদ্রঃ প্রাণী জগতে একমাত্র হোমো সেপিয়েন্স এর কগ্নিটিভ ডেভেলপমেন্ট এর সাথে সাথে তাদের সাইকোলজিকাল ডেভেলপমেন্ট ও হয়েছে যেটা একটা ইউনিক ইভুলিউশান।
প্রেম বা ভালোবাসা একটা সাইকোলজিকাল টার্ম, এবং হিউমান এক্সিস্টেন্স এর জন্য এটা জরুরি কিছু না। যেহেতু এটা জরুরি কিছুনা সো এটা এক সময় না এক সময় বিলীন হবেই। মানুষ ক্রমাগত বিবর্তিত হচ্ছে এবং এ বিবর্তন এক সময় আমাদের কে এসব নন প্রোডাক্টিভ দিক থেকে সরিয়ে নিবে।
আগের দিনে যেমন- গোষ্ঠী ভিত্তিক বিয়ে প্রথা চালু ছিল শুধু মাত্র বাচ্চা জন্মের জন্য এখন আর এটা নেই, সামনে টোটালি থাকবেনা। তখন- সন্তান জন্ম হবে চাহিদা মাফিক এবং নিয়ন্ত্রিত।
বিঃদ্রঃ পিতা মাতার সাথে সন্তান এর টান বা ভালোবাসা জৈবিক এবং এটা আমাদের এক্সিস্টেন্স এর জন্য জরুরি কারন যদি পিতামাতা ভালো না বাসে তাহলে শিশু বড় হতে পারবেনা। পরিপূর্ন হিউমান হতে পারবেনা।
৫| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৪৬
সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: @কামাল১৮ ধন্যবাদ ভাই । ভালোবাসা জানবেন । ❤️
৬| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৪৬
সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: @মৌরি হক দোলা, ধন্যবাদ আপু । ভালোবাসা জানবেন । ❤️
৭| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৪৮
সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: @সাড়ে চুয়াত্তর, যাচাই করার সুযোগ তো একটা থাকা উচিত । সেই মনের মানুষটির জন্য । ভালোবাসা জানবেন । ❤️
৮| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৫০
সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: @সাসুম, 'ভালোবাসা' তো আদি পিতা আদম-হাওয়া থেকেই সৃষ্টি হয়েছিলো ভাই । হয়তোবা পৃথিবীর ক্রমবিস্তারের ফলে মানুষের কাছে ভালোবাসার টার্ম বদলেছে । তবুও কিন্তু মানুষ সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকেই বারবার চেয়েছে ।
৯| ১০ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১০:৪৮
রক্তহীন বলেছেন: লেখাটা আমার আশ্চর্য রকমের ভালো লেগেছে।
১০| ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৫১
সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: @রক্তহীন, ধন্যবাদ । ভালোবাসা জানবেন । ❤️
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৭:৪৩
কামাল১৮ বলেছেন: অনেক রকমের ভালোবালার কথা বলেছেন।গভীর দৃষ্টিকোন দিয়ে দেখেছেন অনেক কিছু। ইচ্ছা করে ভালোবাসা যায় না ভালোবাসা হয়ে যায়।