নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগে ঘুরতে আসায় আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আশা করছি আমার লেখালেখি, ফটোগ্রাফি আপনার ভালো লাগবে । ফেসবুকে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন— https://www.facebook.com/SA.Sabbir666

সাব্বির আহমেদ সাকিল

আমাকে যাচাই করার পূর্বে নিজেকে যাচাই করুন ।

সাব্বির আহমেদ সাকিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাটির সাথে দাদা-নানা’র ঘনিষ্টতা ও আমার শৈশব-কৈশোর

১২ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:০৯

আমার দাদা মারা গেছেন আমার জন্মের বহু আগে । দাদাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি । নানা মারা যান যখন আমি ক্লাস ফোর কি ফাইভে পড়ি তখন । দাদা নাকি খুব ডানপিটে মানুষ ছিলেন । দাদা কৃষিকাজ করতেন এমনকি নানাও । জমিজমার সাথে দাদা এবং নানার গভীর ঘনিষ্টতা ছিলো ।

তখন তো এত আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিলোনা‚ তখন জমি চাষ হতো গরুর পিঠে লাঙ্গল-জোয়াল দিয়ে । জমি নিড়ানির জন্য পাচন ব্যবহার করা হতো । দাদা ফজরের নামাজ পরেই মাঠে চলে যেতেন‚ জমি পর্যবেক্ষণ‚ পানি সেচা‚ হাল দেওয়া‚ নিড়ানি দেওয়া সবই করতেন ।

আমার যে বয়সটাতে দাদা-নানার কাছে নানারকম প্রশ্ন করে সেসবের উত্তর জানার কথা সেই বয়সটাতে তাঁদের আমি পাইনি । তাঁদের জীবিকা‚ তাঁদের প্রেম-ভালোবাসা‚ তাঁদের জীবনযাত্রা‚ তাঁদের আনন্দ‚ তাঁদের উৎসব‚ তাঁদের রাজনীতি কোনোকিছুই জানা হয়নি আমার । পৈত্রিকভাবে এবং নিজের পরিশ্রমে দু’জনই ভালো সম্পত্তি রেখে গেছেন ।

পরম্পরায় কৃষিকাজ করেছি বাল্যকাল থেকেই । জমিতে ধান‚ আলু‚ পাট‚ বেগুন‚ মরিচ‚ ফুলকপি‚ কলাসহ নানা পন্য উৎপাদন করেছি । আব্বার সাথে ধান বুনেছি‚ নিড়ানি দিয়েছি‚ ধান কেটেছি‚ ধান ভানতে গেছি এছাড়াও যখন প্রাইমারি-হাইস্কুলে পড়েছি তখন শীতের সকালে ফুলকপি-পাতাকপি কাটতে গিয়ে হাত ঠান্ডায় জমে হীম করেছি । ভোরবেলা ঠান্ডা পানিতে নেমে বিছনের জমি সেচেছি‚ নিড়ানি দিয়েছি ।

এই যে ধারাবাহিকতা চলে আসছে পৃথিবীর কোটি কোটি বছর ধরে । মানুষ ফসল উৎপাদন করছে‚ বিক্রি করছে এটার ধারাবাহিকতা কখন কি শেষ হবে? হবেনা । পৃথিবী যতদিন থাকবে এটা চলতেই থাকবে । মাটির সাথে মানুষের যে আত্নিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেটি কিন্তু খুব সাধারণ ব্যাপার নয় । যাঁরা মাটির সাথে বেড়ে ওঠেনি তাঁরা এই মর্মটি কখনও বুঝতে পারবেনা ।

চাঁদকে আমার খুব ছোট্টকাল থেকেই বড় বেশী ভালো লাগে । যখন দাদার বাড়ির সাথে দাদার ভাইয়ের বাড়ির কোনো বাউন্ডারি ছিলোনা‚ বিশাল একটা আঙিনা ছিলো তখন কোনো কারণে বেড়াতে গেলে ঐ আঙিনা থেকে জোছনা দেখতাম । বিশাল আমগাছ আর বড়ই গাছের উপরে জোছনার ছায়া পড়তো । এবং আঙিনার দক্ষিণ সাইডে একটা পুকুর ছিলো(এখনও আছে তবে মৃতপ্রায়) সেখানে জোছনার আলোর বিচ্ছুরণ দেখতাম ।
নানাবাড়িতে মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোনেরা হৈ-হুল্লোড় করে জোছনা রাতে পিকনিক করতাম । কখনও দেশী মুরগি দিয়ে পোলাও রাঁধা হতো‚ কখনও ডিম দিয়ে আলুঘাটি । নানী মুরগির ঘড়া থেকে ডিম বের করে দিতেন । আমার সুস্পষ্টভাবে মনে আছে নানাবাড়িতে কোথায় মুরগির ঘর ছিলো ।

একে একে পরিবার তথা আত্নীয়দের সংখ্যা বাড়লো । দাদার বাড়ির সামনে সেই বিশাল আঙিনার মধ্যে বাউন্ডারি হলো‚ নতুন ঘর তৈরি হলো । নানাবাড়িতে পার্টিশন তৈরি হলো‚ মামারা ভাগ হয়ে গেলেন । জীবনের আনন্দগুলো তখন থেকেই ভাঙা শুরু ।

নানা বাড়িতে বড় বড় দুইটা চৌকি । চৌকির আয়ুষ্কাল প্রায় পঞ্চাশের বেশী ছাড়া কম হবেনা আমার যতটা ধারণা । কালো রঙের মজবুত সেই কাঠ । জানিনা কোন গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি । সেই চৌকিতে কত গড়াগড়ি করেছি । আমার নানাবাড়িতে একটা ভালো দিক হলো সেই চৌকিতে শোয়ার একটু সময়ের মধ্যেই আমার ঘুম এসে যেত । নানা-নানীর সেই ঘরে এত প্রশান্তি এরকম প্রশান্তির ঘর আমার ইহজীবনে আর পাইনি ।

বগুড়া থেকে আসার আগে মাঝেমধ্যেই নানীর ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকতাম । আমার খুব গভীর ঘুম চলে আসতো যেন । ভাত খাওয়ার জন্য নানীর সেই আকুতি আমাকে বড় অবাক করে । সে কেন আমাকে এত মায়ায় জড়াতে চায়‚ কেন এত ভালোবাসে ।

আমার মনে পড়ে সেই দিনগুলো । ধুলোমাখা শরীর নিয়ে নানীর বাড়িতে যাওয়া । নানীর আদুরে বকা‚ নানার ক্ষীণ কণ্ঠের ডাক । খুব তাড়াতাড়িই বোধহয় বড় হয়ে গেলাম । যাঁদের ভালোবাসলাম তাঁদের কাছে কাছে রাখতে পারলামনা‚ কেউ মরে গেলো কেউবা দূরে সরে গেলো ।

জীবন ও মৃত্যুর এই বিচ্ছেদগুলো বড় বিদঘুটে মনেহয়‚ বড় বেশী কষ্ট দেয়‚ মানসিকভাবে মানুষের শরীরকে ক্ষত বিক্ষত করে । আমার কেন যেন মনেহয় আমি বোধহয় পরিবারের সবার আগে মারা যাবো । একেবারে অনন্তকালের জন্য চলে যাবো দাদা-নানাদের‚ যাঁদের সাথে সম্পর্ক ছিলো আবার ভেঙ্গেও গেছে তাঁদের থেকে অনেক অনেক দূরে । জীবন থেকে বড্ড পালাতে ইচ্ছে করে আমার...

সাব্বির আহমেদ সাকিল
২৫ আশ্বিন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ‚ শরতকাল | ০২ রবিউল আওয়াল ১৪৪৩ হিজরী | ১০ অক্টোবর ২০২১ ইং | রোববার | সন্ধ্যা ০৭ টা ০৭ মিনিট | ময়মনসিংহ

#সাব্বিরসাকিল #জীবনধারা #দাদানানা #জীবিকা #জীবন #জীবনথেকেনেওয়া #জীবনথকে #ময়মনসিংহ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখাটি পড়ে আমার দাদাজানের কথা মনে পড়লো। তাই দাদাকে নিয়ে আমি আজ একটা পোষ্ট লিখলাম।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৯

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: দাদার আদর আমি পাইনি ভাই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.