নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগে ঘুরতে আসায় আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আশা করছি আমার লেখালেখি, ফটোগ্রাফি আপনার ভালো লাগবে । ফেসবুকে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন— https://www.facebook.com/SA.Sabbir666

সাব্বির আহমেদ সাকিল

আমাকে যাচাই করার পূর্বে নিজেকে যাচাই করুন ।

সাব্বির আহমেদ সাকিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক সন্ধ্যায়

২৮ শে জুন, ২০২২ রাত ১১:২৪

তখন মাগরিবের ওয়াক্ত, চারিদিকে আজান হয়ে গেছে । সন্ধ্যের পূর্বেই কাজ সেরে রুমে ফিরেছি । শার্টটা ক’দিন ধরে পরছি, তাই ফিরেই ধুয়ে দিচ্ছিলাম । ধোয়া শেষে আঁড়ে নেড়ে দিচ্ছি । তখনই কেউ একজন বমি করতেছে বলে মনে হলো, টি-শার্টটা নাড়তে দিতেই উচ্চস্বরে হাউমাউ করে উঠলেন একজন মহিলা ।

তড়িঘড়ি করে কাছে গিয়ে দেখি একজন মহিলা হেঁচকি তুলছেন অনবরত । পাশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে, আরেকজন কোলে নিয়ে মাথায় পানি ঢেলে যাচ্ছেন । পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাগুলোকে বললাম উনার হাত ঘষে দিন । অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপের দিকে গেলো, মহিলা গা ছেড়ে দিলেন একেবারে ।

বললাম হাসপাতালে নিতে হবে । যিনি পানি ঢালছেন তিনি বললেন, বাবা একটা অটোরিক্সা ডাকেন । রোডের সাথেই যেহেতু বাসা, সেহেতু গাড়ি পেতে দেরি হলোনা । তখন আমি লুঙ্গি পড়া, বললাম যে একটু দাঁড়ান । রুমে এসে প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে বললাম ‘চলেন’ । কারণ আশেপাশে উনার কোনো পুরুষ আত্নীয় ছিলোনা ।

অটোরিক্সা চলছে, মহিলাকে পিছনে রেখে আমি সামনে বসেছি । অসুস্থ মহিলাকে ধরে আসেন তাঁর আপন বোন(যা পরে জেনেছি) । রাস্তা ভাঙা হওয়ায় একটু যেতেই মহিলা নিচে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো । অটোরিক্সাওয়ালা বললেন, ভাই আপনি পিছনে গিয়ে বসেন তাছাড়া পড়ে যাবে মানুষটা । পিছনের সিটে বসে উনার কোমর আর পা ধরে নিকটস্থ পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলাম ।

রিক্সা থেকে নামার পর সেই অসুস্থ মহিলাকে হাসপাতালের ভিতরে নিতে হবে, কিন্তু যেই মহিলা আমার সাথে ছিলেন তিনিও মোটামুটি বৃদ্ধা । উনি ধরে নিয়ে যেতে পারবেননা । ততক্ষণে সেই অসুস্থ মহিলার জ্ঞান ফেরেনি । অটোরিক্সাওয়ালা বললেন, ভাই আপনি ঘাড়ে করে নিয়ে যান, সবারই মা-বোন আছে ।

ঘাড়ে তুলে নিয়ে সোজা জরুরি বিভাগের একটা স্ট্রেচারে শুইয়ে দিলাম । একজন ইন্টার্ন উনার প্রেশার মাপলেন । সিস্টোলিক চাপ ১১০ আর ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০ । সুতরাং প্রেশার নরমাল ।

ইন্টার্ন বুকে ঘষতে লাগলেন, জ্ঞান তখনও ফেরেনি । খানিক পর জ্ঞান ফিরলো মহিলার । ইন্টার্ন বললেন, ইসিজি করাতে হবে । ইসিজি করালাম, রিপোর্ট নরমাল । কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক আসলেন খানিক পর, উনি বললেন, এডমিট করে দিন ।

যখন সেই অসুস্থ মহিলাকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিই, তখন দেখি উনার একটা চোখ নেই । ডাক্তার প্রশ্ন করলেন উনার নাম কি, তখন আমি সেই বৃদ্ধা মহিলাকে বললাম ডাক্তার কি জিগেস করে সেগুলোর উত্তর দিন । মহিলার নাম: রেখা, স্বামীর নাম: কাজল, ঠিকানা: পূর্বধলা, বয়স: ২৫ । বয়স নিয়ে ডাক্তারের একটু সংশয় হলো, হবারই কথা যে মেয়ের বিয়ে হয়েছে বাল্যকালে যাঁর এক ছেলের বয়স ১৪ আরেকটা মেয়ের বয়স প্রায় দশ বছরের মতো হবে । সেই মহিলাতো নুঁইয়ে পড়বেন-ই, স্বাভাবিক । ওদিকে স্বাস্থ্যও রোগাপাতলা, দেখেই বোঝা যায় পুষ্টিহীনতায় ভোগে ।

ডাক্তারের কাছ থেকে এডমিট ফর্ম নিয়ে দোতলায় তুললাম আমি আর এক ভাই(সেই ভাইটা মহিলার নিকটাত্মীয় হোন, উনি কোনো একটা কাজে এসে দেখেন তাঁর আত্নীয়ের এই অবস্থা) । উপরতলায় গিয়ে দেখি কোনো রুমে বেড ফাঁকা নেই, রুমের বাহিরে একটা বেড পাওয়া গেলো, সেখানে শুইয়ে দিলাম । তারপর সেখানকার স্টাফদের বললাম ঘটনাটা, তখন বললেন যে উনাকে উপরে না রেখে নিচে রাখুন । সেন্সলেস মানুষকে উপরে রাখলে সমস্যা হবে ।

ধরাধরি করে এক জায়গা থেকে আবার আরেক জায়গায় শিফট করালাম । স্টাফ বললেন, স্কচটেপ শেষ হয়ে গেছে, একটু স্কচটেপ আনুন । নিচে গিয়ে স্কচটেপ, একটা মশার কয়েল নিয়ে উপরে গিয়ে দেখি মহিলাকে স্যালাইন দেয়া হয়ে গেছে ।

ততক্ষণে সেই বৃদ্ধা মহিলা ফোন করে বাড়িতে খবর পাঠিয়েছেন । তাঁর বোন আসলো, উনাকে বললাম আপনি থাকেন আর আমি ইনাকে(সেই বৃদ্ধ মহিলাকে) নিয়ে যাই । উনি একটা মাদুর আর যা যা লাগে নিয়ে আসবেনি । সেই বৃদ্ধা মহিলাকে রিক্সাতে করে আনতেছি, তখন উনি বললেন, রান্নার যে কি হলো ওদিকে, মাছ কি বিড়ালে নিয়েই গেলো নাকি । আমি বললাম চিন্তা কইরেননাতো, যা হবার হবে । পৌঁছে দেখি পাশের বাড়ির একজন বৃদ্ধ চুলোয় লাকড়ি ঠেলছেন ।

আজ সকালে উঠে কাজের উদ্দেশ্যে বের হলাম, মন আনচান আনচান করছিলো যে এখনই দেখে যাবো নাকি সন্ধ্যায় যাবো তাকে দেখতে । সাত-পাঁচ না ভেবে সকালেই রওনা দিলাম । হাতে সামান্যকিছু ফল নিয়ে হাসপাতালে গেলাম ।

পৌঁছার পর দেখি মহিলার দ্বিতীয় স্যালাইন চলছে । পাশে বসে আছে তাঁর ছোট্ট মেয়ে । নাম আকলিমা, একটা মহিলা মাদ্রাসাতে পড়ে । তাঁর একটা ভাই আছে যে ঢাকাতে পাইলিংয়ের কাজ করে । আকলিমার বয়স প্রায় দশ বছর হবে । আর ওঁর ভাইয়ের চৌদ্দ । তাঁর বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে, ভরণপোষণের খরচ তাঁর ছোটভাই পাঠায় মাসে মাসে । পরিবারের সাথে তেমন যোগাযোগ রাখেনা । শ্যামগঞ্জে রিক্সা চালায় আবার দিনমজুরের কাজ করে । আকলিমার পাশে বসে আছে তাঁর ছোট খালা ।

খানিকটা সময় পর বললাম, আমি আবার সন্ধ্যায় এসে দেখে যাবো । থাকেন । সেই অসুস্থ মহিলা আমাকে, 'ছেলে' সম্বোধন করলেন, বললেন আপনি নাকি গতকাল আমারে একাই নিয়ে এসেছেন । আপনি না থাকলে আমি হয়তো মরে যেতাম ।

আমি নির্বাক হয়ে পড়লাম । সেসব কথা কাটিয়ে বললাম, থাকুন আমি যাই ।

সন্ধ্যের পূর্বে ফেরার মতো আবারও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলাম, গিয়ে দেখি নিচের বেড ফাঁকা । কিরে, কই গেলো মানুষটা । ডিউটিরুমে বললাম, এখানে গতরাতে রেখা নামের একজন পেশেন্ট ভর্তি হয়েছিলো উনাকে কোথায় শিফট করা হয়েছে বলতে পারবেন, উনারা বললেন রুমগুলোতে দেখুন । দু’পাশে দুইটা রুম, কিন্তু কোনো রুমেই তাঁরা নেই । স্টাফদের বললাম রেজিস্ট্রি খাতাতে চেক করে দেখুনতো, পরে দেখা গেলো যে রিলিজ দেয়া হয়েছে ।

বাসায় ফিরে দেখি সেই বৃদ্ধা মহিলা রাঁধতেছে । সেই বৃদ্ধা মহিলা(তিনি এখানকার মেসে রান্না করে দেন, যিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেই মহিলা উনার বোন হয়) বললাম যে কখন বাসায় নিয়ে এসেছেন, বললেন দুপুরে...

সাব্বির আহমেদ সাকিল
১৪ আষাঢ় ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | মঙ্গলবার | ২৮ জুন ২০২২ ইং | পূর্বধলা, নেত্রকোনা

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০২২ রাত ১১:৪১

সোনাগাজী বলেছেন:



ভালো কাজ।

২২ শে জুলাই, ২০২২ রাত ৮:৩৯

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

২| ২৯ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি একজন মানবিক মানুষ।

২২ শে জুলাই, ২০২২ রাত ৮:৪০

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: দোয়া রাখবেন ভাই ।

৩| ২৯ শে জুন, ২০২২ রাত ১:০৬

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: সবাই আপনার মতো মানবিক হোক।

২২ শে জুলাই, ২০২২ রাত ৮:৪০

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: আল্লাহ আপনার কথা কবুল করুন ।

৪| ২৯ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:৩৪

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সবাই আপনার মতো মানবিক হোক। রাস্তায় কেউ বিপদে পরলে কেউ সাহায্য করতে চায়না পুলিশের ভয়ে; কিছু ঘটে গেলে পুলিশ উদ্ধারকারীর লোম ছিড়তে ব্যস্ত হয়ে পরে।

২২ শে জুলাই, ২০২২ রাত ৮:৪১

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: সবাই মানবিক হোক সেটাই প্রত্যাশা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.