নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগে ঘুরতে আসায় আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আশা করছি আমার লেখালেখি, ফটোগ্রাফি আপনার ভালো লাগবে । ফেসবুকে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন— https://www.facebook.com/SA.Sabbir666

সাব্বির আহমেদ সাকিল

আমাকে যাচাই করার পূর্বে নিজেকে যাচাই করুন ।

সাব্বির আহমেদ সাকিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ শুক্রবার: পবিত্র দিনের পবিত্র তাবারক

০৫ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:২১


শুক্রবার মানেই অন্যরকম একটা দিন । সারা সপ্তাহ কাজ করার পর আনুষাঙ্গিক কাজ যেমন কাপড়চোপড় ধোয়া, বিছানাপত্র পরিষ্কার করা, ঘর গোছানো, গৃহপালিত গরু-ছাগলকে পুকুর কিংবা নদীতে গোসল করানো । বাড়িতে বিভিন্নরকম কাজ বাকি থাকলে সেসব করা । কাজ শেষে গোসল করে, আতর-সুরমা লাগিয়ে মসজিদের পানে যাওয়া ।

মসজিদে গিয়ে বয়ান শোনা, খুতবা শোনা অতঃপর দু রাকাত ফরজ সালাত আদায় করা । পরিশেষে মানবজাতির সুখ, শান্তি ও সম্বৃদ্ধি কামনায় অশ্রুসিক্ত মোনাজাত । নামাজ শেষে থাকে কোনো ব্যক্তির বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা পোলাও, ক্ষীর, পায়েস, মিষ্টান্নসহ নানা পদের তাবারক ।

নতুন বাড়িতে ওঠা, নতুন গাড়ি কেনা, নতুন ব্যবসায় জড়িত হওয়া, চাকরি পাওয়া, মৃত কোনো স্বজনের মঙ্গল কামনা, অসুস্থতা থেকে মুক্তিসহ নানাবিধ কারণে যুগের পর যুগ ধরে চলে এসেছে এই রীতি । যেটা নামাজ শেষে বিশেষ দোয়ার পর সারিবদ্ধভাবে দেয়া হয় ।

মানুষকে খাওয়ানো সুন্নত । আল্লাহপাক খুশি হোন । সামাজিক মানুষদের এই প্রথা বহু প্রাচীন । অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটার পর নতুন সুগন্ধি চালের পায়েস করে মানুষকে খাওয়ানো কিংবা গ্রামের কিছু বাড়ি একসাথে অর্থ তুলে খাবারের আয়োজন করা । শুধু নতুন চাল নয়, নতুন আলু হওয়ার পরও এধরনের আয়োজন হয় ।



বগুড়াতে গরুর গোশত দিয়ে লাল মরিচের পোলাও, গরুর গোশত কিংবা বড় মাছ দিয়ে আলুঘাটি বগুড়ার একটি সুপরিচিত নাম । বিশেষত মৃত মানুষের মঙ্গল কামনা করে শত শত থেকে হাজার হাজার মানুষের জন্য চলে বড় ধরনের এরকম আয়োজন । রাত্রিবেলা বাড়ির মহিলারা, পাড়া-পড়শীরা মিলে আদা-রসুন বাঁটে, পেঁয়াজ কাটে, মরিচ চেড়ে, আলু টুকরা করে । রাতের শেষভাগে হয় গরু জবাই ।

তারপর গরুর চামড়া ছাড়ানোর পর গোশত কেটে আলাদা করা হয় । বড় বড় ডেকচিতে ফুঁটতে থাকে গরম পানি । মশলাপাতির গন্ধে ছেঁয়ে যায় আশপাশের মহল্লা । দূর-দূরান্ত থেকে জমায়েত হতে থাকে হাজারও মানুষ । ছুঁটে আসে আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে । কচিকাঁচা, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, মধ্যবয়স্ক, বৃদ্ধ ছাড়াও মহিলারাও আসেন । কেউবা থালা-বাটি নিয়ে, কেউবা আবার পলিথিন নিয়ে, কেউবা খালি হাতে ।

মাইক কিংবা সাউন্ডবক্সে চলে দোয়া-দরুদ । মুক্তিকামী মানুষের জন্য মুক্তির পথ দেখানোর জন্য বড় বড় ওলামায়ে কেরামরা আসেন । বয়ান দেন ।

খাবারের আয়োজনের জন্য এলাকার কিশোর ও যুবকরা খাবারের পাত্র হিসেবে কলাপাতা, পলিথিন, ওয়ান টাইম প্লেট সরবরাহ করে । মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিরা বড় বড় গামলায় করে সারিবদ্ধভাবে খাবার দিতে থাকেন, একটা বড় গামলার সাথে তিন-চারজন ব্যক্তি বরাদ্দ থাকেন, গামলার খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আরেকজন গামলায় খাবার ঢেলে দেন ।

কোথাও কেউ পানি চাইলে তৎক্ষনাৎ কোনো কিশোর জগ আর গ্লাস নিয়ে পানি এগিয়ে দেয় । এলাকার মধ্যে কারোর বড় আঙ্গিনা(বগুড়াতে, ‘খুলি’ বলা হয়) কিংবা ফাঁকা মাঠ অথবা রাস্তায় চলে এই আয়োজন । ডেকোরেটরের রঙীন কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয় । যেখানে মুরুব্বি এবং হুজুররা বসেন সেখানে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় ।

অভূতপূর্ব এক আয়োজন । বিশাল অঙ্কের মানুষের সমারোহ । যেই আয়োজনে দেখা মেলে আইসক্রিমওয়ালার, ঝালমুড়িওয়ালার, বুট-বাদামওয়ালার, বরই-চালতা-জলপাই বিক্রেতার ।

খাওয়া শেষে আবারও মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে মানুষ ছুঁটে যায় । সাইকেলের ক্রিংক্রিং, হোন্ডার হর্ণ, প্রাইভেটকারের হর্ণে একাকার হয়ে যায় । মানুষের মুখে মুখে নানারকম শ্রুতি শোনা যায় । মন্তব্য হয় সেই আয়োজনকে ঘিরে, খাবারকে ঘিরে ।

এটাই এক ভালো লাগার দৃশ্যমান সংস্কৃতি । যা আজও বাঙালী মুসলমানের মধ্যে আলাদাভাবে স্থান করে আছে ।

সাব্বির আহমেদ সাকিল
২১ শ্রাবণ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, বর্ষাকাল | শুক্রবার | ০৫ আগস্ট ২০২২ ইং | পূর্বধলা, নেত্রকোনা

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:০৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমরা গুড়ের ক্ষীর / গুড়ের পায়েস বলেই চিনি। আগে গ্রামের দাওয়াতে খাওয়ার শেষে পরিবেশন করা করো। আমরা ছোটবেলায় দাওয়াতের এই পদের জন্য অপেক্ষা করতাম। পাতে গরম গরম পরিবেশন করতো , আমরা ফুফু দিয়ে দিয়ে খেতাম।
আমার দাদী প্রতি মহররমে প্রতিদিনের জমানো মুষ্টি চাউল দিয়ে ক্ষীর বানিয়ে পাড়ার ছেলেমেয়েদের মাঝে সিন্নি বিতরণ করতেন।

আহা সেই দিনগুলো। আপনার এই পোষ্ট আবেগী করলো ভীষণ। ধন্যবাদ নিবেন।

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৩৭

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৩০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ছোট বেলায় শুক্রবার দিন
জুম্মার নামাজের পরে কলা
পাতায় বিতরণ করা শিন্নির
স্বাদ এখনো মুঝে লেগে
আছে!

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৩৭

সাব্বির আহমেদ সাকিল বলেছেন: আহা!

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১:১৫

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: dubaipictures বলেছেন: ওসাম ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.