নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাকে যাচাই করার পূর্বে নিজেকে যাচাই করুন ।
ছোট্ট একটা পাতিলে নানী কোরবানির পশুর গোশত রাঁধতেন । গোশত সেদ্ধ হতে হতে নরম হয়ে যেত । যেদিন নানাবাড়ি যেতাম, নানী পাতিল থেকে গোশত বেড়ে দিতো । নানীর সেই রান্না করা গোশতের স্বাদ আমি কখনোই ভুলবোনা ।
মানুষটা চলে যাওয়া এক মাস হতে চললো । নানী কোরবানির গোশত খেতে পারলেন না, আমাদেরও খাওয়াতে পারলেন না । ঈদে যখন নানী আমাদের দাওয়াত দিতেন তখন মা আমাকে বলতেন মাদলা থেকে একটা দই নিয়ে এসো ।
আমরা কেউ তেমন মিষ্টি পছন্দ করতাম না । সবাই দই পছন্দ করতাম । নানী জোর করে আমার প্লেটে বেশী পরিমাণ দই দিতো । কারণ আমি দই পছন্দ করি বলে । গরুর গোশতের সাথে থাকতো খেসারির ডাল আর চিকন করে আলু কেটে দিয়ে চচ্চড়ি ।
ঈদের দিন দাদার কবর জিয়ারত করে নানীকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলতাম । নানী ভালোমতো হাঁটতে পারতেন না বলে ঈদের দিনও আসতে পারতেন না । অসুস্থতার এই সময়গুলো তিনি কি যে ভীষণ একাকীত্বে ভুগেছেন ।
কিছুদিন না গেলে বললেন, তুই আর আসিসনে কোমা শাকিলালী । মা নানীবাড়িতে গেলেও আমার কথা জিজ্ঞেস করতেন, উঁই কোমা আর আসেনা । কেন যে তিনি আমাকে এক নজর দেখার জন্য এত আক্ষেপ করতেন ।
মানুষটার ঘরে গেলেই কি যে শান্তি পেতাম । আমার কাছে নানা-নানীর ওই ঘরটা জান্নাতের মতো । ওই ঘরটাতে কি যে এক অদ্ভুত গন্ধ লেগে থাকতো । মনে হতো যেন আমার শৈশবের কালো টিপের গন্ধ, পাউডারের গন্ধ ।
একেবারে একা করে দিয়ে বড্ড অসময়ে আল্লাহ তাঁকে আমাদের কাছে থেকে কেড়ে নিলেন । কত স্বপ্ন ছিল চাকরি পেয়ে আয়-রোজকার করে মানুষটার খায়েশ মেটাবো । যা খেতে চায় তাই খাওয়াবো । ভেবেছিলাম সামনের ঈদ থেকে তাঁকে একটা করে শাড়ি কিনে দেবো ।
বুকের মধ্যে বড্ড হাহাকার করে ওঠে মানুষটার জন্য । আমাকে কি পরিমাণ যে ভালোবাসতো । আহারে । মানুষটা নেই এ কথা ভাবতে গেলেই অশ্রুসিক্ত হয়ে যাই । কেন যে মানুষটাকে এত ভালোবাসতাম আমি । অথচ সেই ভালোবাসার প্রতিদান তেমন কিছুই দিতে পারলাম না আমি ।
হয়তো জান্নাতে আবার দেখা হবে । জান্নাতে নানা-নানীর ওই মাটির ঘরই থাকবে । আমি ওই ঘরে ঘুমিয়ে থাকবো কোটি কোটি বছর ধরে ।
সাব্বির আহমেদ সাকিল
১৪ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বর্ষাকাল | শুক্রবার | ২৮ জুন ২০২৪ ইং | ফেনী সদর
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১০:৫১
নাহল তরকারি বলেছেন: আল্লাহ আপনার নানী কে জান্নাতবাসী করুক।