নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ শফিউল ইসলাম চৌধুরী

মোঃ শফিউল ইসলাম চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

লকডাউনে বিয়ের স্বপ্ন।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১৪

কোয়ারান্টাইন এ থাকতে থাকতে আমি বিরক্ত।মানে কেমন জানি বিশ সাল টা বিষময় হয়ে গেছে।প্রতিদিন সকালে উঠে সেই সামনের দেয়াল টাও এখন বিরক্ত লাগে,ডানে ওয়ারড্রব টাও বিষাক্ত মুখ ধারণ করেছে,বামে দেয়ালটাও।আর মাথার পিছনে সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিসটা দেখতে হয় ঘুম ভাঙ্গার পর,আর সেটা হলো বইখাতার টেবিলটা।

খুব বিরক্ত হয়ে আছি।নতুন কাউকে পেলে এই কোয়ারান্টাইন টা অন্তত এতোটা বিরক্তিকর হতো না।কিন্তু বাসায় তা বোঝেই না।বাসায় সারাক্ষণ পরিচিত মানুষ গুলো আর জিনিস গুলো দেখে তিতা করলার স্বাদ পাচ্ছি।

রুম থেকে বের হলেই রান্নাঘরের দৃশ্য হলো আম্মুর হাড়িপাতিল আর কাটি রান্না,সামনের রুমের দৃশ্য আব্বাজান পত্রিকা মেলে খুঁটে খুঁটে সব লাইন পড়ছে,পারছে না প্রত্যেক টা লাইন গিলে খেতে।আর আমার দায়িত্ব সারাদিন এ সব পর্যবেক্ষণ করা।কয়েকদিনের মধ্যে আমি দেয়ালের ভিতরের অদৃশ্য পাথর গুলো দেখতে পাবো বলে আশা করছি।

সেদিন আম্মু কে বলছি,
--আম্মু বাসায় নতুন একটা মেম্বার আসলে তুমি খুশি হবা না?
--মানে কি!কি বলস এসব?আবার নতুন কারে লাগতো?তোর ভাই আছে,আমি আছি তোর আব্বা আছে!
--না মানে আর একজন কে দরকার ছিলো আর কি,তোমার ও ভালো লাগতো,দুজন মিলে গল্প করতা,রান্নাবান্না করতা।
--হায় আল্লাহ পোলার কি মাথা গেছে নাকি!

এই বলে আম্মা চিল্লাই দিয়া কান্না করি ফেলছে।কিছু বুঝার আগেই ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম।আমি কিছু একটা বলতে গেলেই কান্নার স্পিড যেনো দশ গুন বেড়ে যায়।কি মুশকিল!অনেক কষ্টে মুখ দিয়া কতা বের করলাম।

--আম্মা কিসে এখানে কান্নার কি আছে?
--কানমো না মানে?তুই আমারে এতো বড় কথা কেমনে কইতে পারলি রে সোহান।

এটা বলে আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মতো চোখের পানি ফেলে বিলাপ করতে লাগলো।এদিকে আমি কনফিউশন হয়ে ভাবছি,কি এমন বলে ফেললাম যাতে আম্মা এতো কষ্ট পায়ছে।আবারো আদর যত্ন করি কথা বের করতে লাগলাম,
--আচ্ছা আম্মু আমি সরি,কিন্তু তুমি কি এমন মনে করে কান্না করতেছো আমাকে একটু বলবা?
--তুই কেমনে কইলি নতুন কাউরে আনতে,কেন তোর কি নতুন আম্মা দেখার খুব শখ রে?দেখ যতই নতুন আম্মা আনার চেষ্টা করিস না কেন আমিই কিন্তু তোর আসল মা সোহান।

এটা শুনে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো সেটা মনে করতেই পারছি না।কি বলতাম এই মানুষটাকে?এতো সরল কেন এটা?
--আল্লাহ রে এটা কি ভাবলা তুমি আম্মা?
-- না তো কি,তুই তো বললি যে আরেকজন নিয়ে আসো মেম্বার যার সাথে আড্ডা দিবা,রান্না করবা,সময় ভালো কাটবে তোমার!দেখ উনি আমার সতীন হবে রে,কোনো ভালো সময় কাটবে না রে,আশান্তি বাড়বে।
--আমার পাগল মা'রে,আমি তোমার সতীন আনার কথা বলি নাই,আর আব্বার এই বয়স কই বলো বিয়ে করার?
--মুখ সামলায় কথা বল সোহান,উনি তোর আব্বা। এখনো উনি অনেক ইয়ং।
--বাপরে এতো প্রেম ভালোবাসা এখনো আসে কোত্থেকে?যাই হোক এই প্রেম ভালোবাসা অটুট রাখো।
--শরম লজ্জা নাই রে তোর থেকে?মা রে এসব বলতে লজ্জা লাগে না?
--মা রেই তো কইলাম,ধুর এসব বাদ দাও।যেটা বলতে চাইলাম,নতুন মেম্বার বলতে বুঝায়ছি আমারে বিয়া করায় দাও।

এটা বলার পর লজ্জায় যেনো মুখ দেখাতে পারছি না আম্মারে।ইসস কি বলি ফেলাইলাম?
--থাপ্পড় খায়সোস বহুত দিন হয়সে রে সোহান!

কিছু বুঝার আগেই এটা বলে আবারো রান্নাঘর নামক টুরিস্ট প্লেসে চলে গেলেন আম্মা।

আমার বাসায় এখন অনেক টুরিস্ট প্লেইস আছে।কক্সবাজার এর হোটেল এর বারান্দা সামনে অবশ্য সমুদ্রের বদলে বড় বড় দালান দেখা যায়।আরো আছে রেডিসন ইনফিনিটির রান্নাঘর যেখানে আম্মা প্রায় ভ্রমণ করে,আমিও করি মাঝে মাঝে।আর আছে সোফান্দ্রনাথ রিসোর্ট যেখানে আব্বু বসে পেপার পড়ে আর মুক্ত বাতাসের ফিল নে,তাও আবার কৃত্রিম ফ্যান।অইখানেও মাঝে মাঝে যায় আমি।তবে এতো প্লেইসে ভ্রমণ করেও আমি বিরক্ত।সাথে সঙ্গী ছাড়া ভ্রমণ কখনো সুন্দর হয়না।আম্মা বুঝেই না।

বিয়ে নামক শব্দ টা আমার মাথায় ভিষণ ভাবে চেপে বসেছে।নইতো কি আর কতো কাল একা রুমে লকডাউনের ফিল নিবো!আর এ বিষাদময় আর হতাশার মধ্যে কাটা গায়ে নুন দিচ্ছে কিছু পাবলিক।না পারতেছি গাইল্লাইতে না পারতেছি সহ্য করতে।বিয়ে করছেন ভালো কথা,স্ট্যাটাস ছবি আপলোড দেয়ার মানে আছে তাও আবার এরকম বৈরাগী লকডাউনে!

কিছু বড় ভাই লকডাউনের আগে কিভাবে যেনো বিয়ে করে ফেলছে।তারা হয়তো আন্দাজ করতে পারছিলো তাদের বিয়ের পর ই লকডাউন হবে আর তারা সারাদিন গুলুমুলু গুলুমুলু করবে বাসায়।এর মধ্যে বড় শোক হচ্ছে এক বন্ধু ও বিয়ে করে ফেলছে,ব্যাবসা করে।পারিবারিক ভাবে বিয়ে,তো ভাই কি দরকার ছিলো।পরে করলে কি বা ক্ষতি হতো।

সেদিন এক বন্ধু এসে বলে

--সোহান তোর ভাবি বেডা অনেক মন খারাপ করি আছে?
--কেন?
--বেডা অনেকদিন হয়ে গেলো দেখা হয় না তাই।
--কেন চ্যাট বা ভিডিও কল হয় না?
--আরে বেডা চ্যাট কিংবা ভিডিও তে কি ভালোবাসা আর অনুভুতি সব কি শেয়ার করা যায়?
--কেন করা যায় না?
--তুই বুঝবি না,আগে প্রেম কর তারপর স্পর্শ কিংবা ছোঁয়া তে কি যে এক ভালোবাসা নিহিত থাকে তা বুঝবি।

দুঃখে বুক টা ফেটে যাচ্ছিলো তখন।ইচ্ছে করছিলো ভে ভে করি কান্না করি কতোক্ষন, কিন্তু করলাম না।সাহসী দের কান্না করতে নেই।কি কপাল বিয়ে করা বউ তো নাই ই একটা ভালোবাসার মানুষ ও নেই যে কিনা এই লকডাউনে একটু বলবে,'বাবু তুমি খেয়েছো?বাবু প্লিজ মাক্স ছাড়া বের হবা না একদম' ইত্যাদি ইত্যাদি।

সদ্য বিবাহিত রা লকডাউনে ঘরে বসে আরাম করছে,টোনাটুনির গল্প করছে,মাঝে মাঝে গাল টিপছে,আরো কতো কি করছে।সাথে মাই ডে দিচ্ছে,' আলহামদুলিল্লাহ নতুন টুনির সাথে দীর্ঘ ৩ মাস লকডাউনে ' আর আমি সেখানে লাভ দিচ্ছি।মাঝে মাঝে নিজেকে নিজেই বলি আহারে সোহান তোর জীবনটা আসলেই আহারে!

যাক আম্মু কে বেশ কয়েকবার পর অবশেষে আবার সিঙ্গেল ট্যাগ ভাঙতে যাচ্ছে।মানে বিয়ে করছি।ধুমধামে করছি,লকডাউনে মানছি না।প্রশাসন এর লোক কে টাকা দিয়ে রেখেছি যাতে বাধা না দে।বিয়ে তো একবার ই করবো সব হবে মজ মাস্তিতে।

গায়ে হলুদ আজ।ককশিটে বড় বড় করে লেখা হলো 'সোহানের শুভ গায়ে হলুদ'।আহা কি প্রশান্তি।অবশেষে আমারো একটা টুনি হবে।তাও লকডাউনে। খুশিতে পায়জামা পরতে গিয়ে তিনবার পড়ে গেছি।আবারো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছি,কারণ ভেঙ্গে পড়লে হবে না বিয়ে আমায় করতে হবে।অনেক অপেক্ষার অবসান হবে।সবাই কেক মিষ্টি খাওয়াচ্ছে,ভিডিও হচ্ছে।ডিএসএলআর এ ফটোশুট হচ্ছে।সবাই গায়ে হলুদের পোশাক পড়েছে।

ভোজপুরি গান চলছে,হুরুস্তুল নাচ।মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব একসোর নাচ হচ্ছে।আমিও সব কিছু শেষে নাচে যোগ দিলাম।বিয়ে বলে কি নাচবো না নাকি?যে গান কখনো শুনি নাই তাতেও আজকে নাচতেছি।খুশিতে,কাল ঘরে সঙ্গিনী আসছে।আহা!

কাল সকাল সকাল উঠতে হবে তাই নাচ শেষে শুয়ে পড়লাম।খুশিতে যেনো চোখে ঘুম ও আসছে না।আশ্চর্য বিষয় আমি মেয়েকে বা আমার হবু বউ টারে দেখি নি,কোথায় থাকে বা বাড়ি কোথায় তাও জানি না।আরে ধুর এতো ভেবে কাজ কি বিয়ে হয়লেই হলো তাও এই লকডাউনে।এসব ভেবে ভেবে চোখে ঘুম কে নিমন্ত্রণ দিলাম।ঘুম এসে গেলো,ঘুমিয়ে পড়লাম।

হাসিখুশিতে ঘুম ভাঙলো।অনেক দিন পর ফুরফুরে মেজাজ,বিয়ে করছি মন তো ভালোই থাকবে।উঠে ঘড়িতে থাকালাম,বেলা ১২ টার কাছাকাছি বেজে গেছে।কি আশ্চর্য কেউ আমাকে এতোক্ষণ ডাকলো না কেন?বর কে আর্লি ডেকে দিতে হয় তারা কি জানে না?চারপাশে কেমন জানি নিরবতা বিস্তার করছে।বিয়ে বাড়ির কোলাহল পাচ্ছি না।নাকি আমাকে ফেলেই সবাই ক্লাবে চলে গেছে?ওমা তাইলে আমাকে সাজাবে কে?পাঞ্জাবি শেরোয়ানি কে পড়াই দিবে?

চোখ কচলাচে কচলাতে ওয়াশরুম এর দিকে যাচ্ছি,ওমা দেখি ঘর তো ফাঁকা,কেউ নেই।কোনো মেহমান কিংবা বিয়ের আমেজ।আম্মারে দেখছি সেই চিরচেনা টুরিস্ট প্লেসে,আর আব্বা সেই সোফাতে বসে খুটে খুটে পেপার পড়ছে।কি আজব!

--আম্মা!
--কি?
--মেহমান সবাই কোথায়?
--কিসের মেহমান?
--কাল গায়ে হলুদ এ যারা আসছিলো তারা?
--এই লকডাউনে আবার কার গায়ে হলুদে আসবে সবাই?
--আরে আমার।
--তোর গায়ে হলুদ মানে?
--কাল আমার গায়ে হলুদ হলো না?তোমরা এনা মেয়ে পছন্দ করে আমাকে বিয়ে দিচ্ছিলে!
--মাথা ঠিক আছে?জ্বর টর আসে নাই তো বাবা?

আম্মুর স্বাভাবিক ভঙ্গিমা দেখে দুনিয়া চক্কর দিয়া উঠছে।মেয়ে পক্ষ কি তাহলে বিয়ে ক্যান্সেল করছে নাকি আমি অন্য জগতে ছিলাম।ঘুম আমাকে এতো বড় ধোঁকা দিতে পারলো?এতো নিষ্টুর কেন ঘুম তুমি?এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আম্মুর ডাকে ফিরে আসলাম এই ভুবনে,

--কিরে সোহান কি ভাবতেছোস?
--তাহলে কি আম্মা আজকে আমার বিয়ে হবে না?
--এই কয়েকদিনে এতো বিয়ে বিয়ে করছিস কেন?হয়ছে টা কি তোর?বিয়ের বয়স হয়ছে নাকিরে তোর?
--বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে আম্মা!

হতাশ মুখে ব্রাশ করতে করতে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,' সোহানরে তোর জীবনটা আসলেই আহারে'!যা ব্রাশ মুখে তোরে অভিশাপ দিলাম তোর দ্বারা বিয়েই হবে না,আমার একটা আশা রাখতে পারোস না বেডা।এই লকডাউনে তুই কোল বালিশের লগেই প্রেম কর হালার বাদাইম্মা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.