![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাওয়াই মিঠাই নেবে...হাওয়াই মিঠাই,মিষ্টি মিষ্টি রঙ বেরঙের হাওয়াই মিঠাই...?অনেকটা এভাবেই শহরের অলিতে গলিতে হাকডাক পেরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে হকাররা।বেশ লম্বা একটা বাঁশের পোলের ছিদ্রগুলোতে গুঁজে দেওয়া হয় এক একটা হাওয়াই মিঠাই এর কাঁঠি।দূর থেকে দেখে মনে হয়,কোথা থেকে যেনো সাদা,গোলাপী কিংবা নীল মেঘের ভেলা ভেসে আসছে।হাওয়াই মিঠাই ধরতে খেতেও অনেকটা মেঘের মতনই।ওজনে একদম হালকা আর বিশাল এক টুকরো মুখে ঢুকানোর সাথে সাথেই হাওয়ার মত মিলিয়ে যায়।আর তাই দেখেই তো বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত এই মুখরোচক খাবারটির নাম হাওয়াই মিঠাই।
বাংলাদেশে এর নাম হাওয়াই মিঠাই হলেও অন্যান্য দেশে কিন্তু এর নানা নাম প্রচলিত।উদাহরণস্বরুপ পশ্চিমা দেশগুলোয় হাওয়াই মিঠাইকে কটন ক্যান্ডি,ফেয়ারি ফ্লস,ক্যান্ডি ফ্লস কিংবা স্পুন সুগারও বলা হয়।অবশ্য কটন ক্যান্ডই নামটাই সেখানে বেশি চলে।দেখতে লাগে একদম তুলোর মত আর সে থেকেই নাম কটন ক্যান্ডি।অনেকে তো আবার হাওয়াই মিঠাইকে মজা করে বুড়ির মাথার পাকা চুলও বলেন।
চৌদ্দশতকে ইটালিতে চিনি দিয়ে তৈরি এই মজার খাবারটি প্রচলন শুরু হয়। সেই সময় ঘরোয়া ভাবেই সামান্য চিনির ঘন রস বিশেষ পদ্ধতিতে সুতোর মতো তৈরি করে বানানো হত হাওয়াই মিঠাই। আঠারো শতক পর্যন্ত এইভাবে তৈরি হয়েছে। ১৮৯৭ সালে মার্কিন উইলিয়ম মরিসন ও জন সি. ওয়ারটন হাওয়াই মিঠাই তৈরির জন্য প্রথম মেশিন আবিষ্কার করেন।মেশিনে তৈরি হাওয়াই মিঠাই তখন তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ব্যাপকভাবে এর প্রসার বাড়ে ১৯০৪ সালে। সে বছর মরিসন এবং ওয়ারটন তাদের মেশিনে তৈরি হাওয়াই মিঠাই নিয়ে হাজির হলেন সেন্ট লুইসের বিশ্ব মেলায়। অবাক হওয়ার বিষয়, মেলার প্রথম দিনই ২৫ সেন্ট করে ৬৮ হাজার ৬৫৫ বাক্স হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয়েছিল, যা ছিল সে সময়ের হিসাবে অনেক বড় একটা অঙ্ক! ক্রমেই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় খাবারটি। চাহিদা ও জনপ্রিয়তার জন্য একাধিক কোম্পানি এগিয়ে এল এই মজাদার খাবারটি উৎপাদন ও বিপণনে। টটসি রোল অফ কানাডা লি. বিশ্বের সর্বাধিক হাওয়াই মিঠাই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
শয়েক দামী দামী চকোলেট,আইসক্রীম কিংবা ক্যান্ডিতে বাজার সয়লাব হলেও পুরনো সেই হাওয়াই মিঠাই এর কদর কিন্তু এখনও এতটুকুও কমে নি।আজও যখন বাচ্চারা স্কুলের গেটের সামনে কিংবা মার্কেটের বাইরে হাওয়াই মিঠাইওয়ালাকে দেখে দৌড়িয়ে লাফঝাঁপ দিয়ে তারাই সবার আগে ভিড় জমায়।শুধু বাচ্চারা কেনো?এমনি বড়দেরও প্লাস্টিকের প্যাকেটে মোরা এই ছোট্ট ছোট্ট রঙ্গিন মেঘের টুকরোদের দেখলে জিভে জল চলে আসে।
সাধারণত হাওয়াই মিঠাই যে মেশিনে তৈরী করা হয় সেই মেশিনের একদম নিচের অংশে একটি মোটরচালিত চুলোয় সাদা চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে ঘন ক্যারামেলে পরিণত করা হয় এরপর তার সাথে মেশানো হয় প্রাকৃতিক অর্গানিক রঙ কিংবা ফুড কালার।ক্ষেত্রবিশেষে হাওয়াই মিঠাইয়ে বিশেষ গন্ধ এবং ফ্লেবারিং এর জন্য নানারকম ফ্র্যাগরেন্স এবং এসেন্স ব্যবহার করা হয়।মেশিনের উপরের অংশে মোটরের সাহায্যে একটি গোলীয় চাকা তীব্র বেগে অনবরত ঘুরতে থাকে।চাকাটিকে আবৃত করে থাকে একটি অতি সূক্ষ্ণ ছিদ্রযুক্ত পাতলা স্টিলের পাত।গরম উত্তপ্ত ঘন ক্যারামেল যখন ছিদ্রযুক্ত সেই লোহার পাত দিয়ে বের হয় তখন সেগুলো তীব্র গতিতে অনেক সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ সুতোর মত বের হয় আর বাইরের বাতাসের স্পর্শে এসেই ঠান্ডা হয়ে যায়।এরপর একটা সরু কাঁঠি দিয়ে সুন্দর করে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে সংগ্রহ করা হয় হাওয়াই মিঠাই।মেশিনটির উপরভাগে বিশাল একটি স্টিলের বাটি বসানো থাকে ফলে হাওয়াই মিঠাই ছড়িয়ে যায় না।এক একটি কাঁঠিতে হাওয়াই মিঠাই পরিমানে দেখতে অনেক বেশি মনে হলেও সাধারণত এক কাঁঠির পেছনে মাত্র ৩০ গ্রামের মত চিনি ব্যবহৃত হয় আর বাদবাকি থাকে হাওয়া কিংবা বাতাস।
বাংলাদেশে সাধারণত মেলায়,স্কুলের সামনে কিংবা মার্কেটের হাওয়াই মিঠাইগুলো সাদা,গোলাপী আর নীল রঙ্গের হয়ে থাকে।কিন্তু বাইরের দেশগুলোতে হাওয়াই মিঠাই প্রায় সব রঙ দিয়ে তৈরী করা হয়।চীন,জাপান এবং কোরিয়ায় রঙ বেরঙ্গের হাওয়াই মিঠাই দিয়ে করা হয় নানারকম খাদ্য শিল্পকর্ম।রঙ এর যেমন বাহার আছে এত তেমনি বাহার আছে গন্ধ এবং ফ্লভারেও।যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া,কানাডার মত দেশগুলোয় পাওয়া যায় স্ট্রেবেরী,ব্লুবেরী,ম্যাপল,আপেল,আম,গোলাপফুল,লেভেন্ডার সহ নানা ফ্লেভার ও গন্ধের হাওয়াই মিঠাই।বাংলাদেশে এসেন্স এবং ফ্লেভারের ব্যবহার অনেকটা নেই বললেই চলে।এখানে শুধু চিনিরই হাওয়াই মিঠাই করা হয়।এদেশে যেমন ৫টাকা,১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা দামের হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায় বিদেশে কিন্তু তেমনটা না সেখানে ফ্লেভারিং এর উপর ভিত্তি করে চড়া দামের হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয়।উদাহরনস্বরুপ,যুক্তরাস্ট্রে সবচেয়ে দামী হাওয়াই মিঠাই হল সেফরন ফ্লেভারড কটন ক্যান্ডি।যার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০০০ টাকা।
ইউরোপ- আমেরিকার জয় করে আমাদের এখানে হাওয়াই মিঠাই তৈরি শুরু হয় এমন কথা বলা যায় না। কারণ চিনি দিয়ে তৈরি শনপাপড়ি বহুকাল আগেই এখানে তৈরি হত। উন্নত বিশ্বের মত আমাদের দেশে অবশ্য আজও সেভাবে হাওয়াই মিঠাই উৎপাদন এবং সুন্দর প্যাকেজিং করে বিপণন হয় না। মেলা, বেড়ানোর জায়গা কিংবা রাস্তার ফেরিওয়ালারাই বিক্রি করে হাওয়াই মিঠাই।ইতিহাস বলে হাওয়াই মিঠাই আমাদের দেশে আগে এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে,আগে কোনো জায়গায় এর হাকডাক পেলেই বাড়ির বাচ্চাকাচ্চা থেকে শুরু করে মেয়ে,বৌ,পাড়া প্রতিবেশীসহ বুড়োড়াও টাকা থাকলে টাকা না থাকলে বাড়ির পিতলের জিনিসপাতি,কাপড় চোপড় দিয়ে কিনে নিত হাওয়াই মিঠাই।প্রচুর লাভও হত বটে বিক্রেতাদের।তখনকার মত দেশে এখন এই খাবারের অত জনপ্রিয়তা না থাকলেও এর স্বাদ এখনও সকলের কাছে তুলনাহীন।শুধু কি তাই?যুক্তরাস্ট্রের মানুষরা হাওয়াই মিঠাই এর পেছনে এতটাই মুগ্ধ যে তারা ৭ ডিসেম্বর দিনটিকে "জাতীয় কটন ক্যান্ডি ডে" হিসেবে পালন করে।লিখাটি পড়ে নিশ্চয়ই তোমার জিভে জল চলে এসেছে হাওয়াই মিঠাই এর জন্য।তাহলে আর দেরী কীসের?চট করে কিনে নিয়ে এসো একটি হাওয়াই মিঠাই।মুখে দিলে অবশ্য হাওয়ার মত মিলিয়ে যাবে কিন্তু জিভে স্বাদটা ঠিকই লেগেই থাকবে।
©somewhere in net ltd.