নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখন পর্যন্ত মানুষ ! তবে মানুষের হিংস্রতা দেখে মাঝে মাঝে মানুষ পরিচয় দিতে মন সাড়া দেয় না!

সাদিক তাজিন

নির্ভেজাল প্রকৃতি প্রেমী । সার্টিফিকেটের জোরে শিক্ষিত আসলে গবেট। মনে যা আসে লিখি। সাহিত্যের বিচারে না, মনের ইচ্ছায়, পরিবর্তনের মানসে...

সাদিক তাজিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ ছেড়ে যাইবা যদি

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:২৯

সাদিক তাজিন

কৈফিয়ৎ পর্ব :-
মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায়। তখন কোন কিছুই আর ভাল্লাগে না। ব্যাখ্যাতীত কোন কারণে কারো ভালো কথাও খারাপ ঠেকে। ইচ্ছে করে কী লাভ বেঁচে থেকে, দেই একটা লাফ সুউচ্চ পাহাড়ের চুড়া থেকে...

আজকাল আমার ভেতরে স্মৃতির আনাগোনা শুরু হয়েছে অদ্ভূতভাবে। যেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাক্তির সামনে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে বসে আছি, ঠিক তখনি চোখ ঝাপসা করে বুকের ভেতর উথাল-পাথাল করে উঠল, মুহুর্তে এলোমেলো হয়ে গেল জাগতিক তাবদ ভাবনা। মরিয়ার মতো তখন খুঁজতে থাকি নির্জনতা, যদি একটা ফাঁকা জায়গা নজরে পড়ে যায়, দ্রুত বসে পড়ি সেখানে। চলচিত্রের মতো চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে আমার হারিয়ে যাওয়া কোন একটা সময়। পুঁঙ্খানুপুঁঙ্খ সব দেখতে পাই, শুনতে পাই। অদ্ভূত বিষয়, বিগত স্মৃতির গন্ধ পর্যন্ত উঠে এসে আমার স্নায়ুকে জাগিয়ে তুলে প্রগাঢ় ভাবে। নিভৃত হস্তমৈথুনের মতো এভাবেই আমি আমার স্মৃতির নির্মম নির্যাস বের করে আনি এক একটা নির্জন দুপুরে …

এসব কথা কাউকে বলি না। কেউ বুঝতে পারবে না বলে। বন্ধুদের কাছে এজন্যই হয়তো চাপা, অলস, দ্বায়ীত্বজ্ঞানহীন সহ নানা মধুর ভর্ৎসনা আমার জোটে।
কিন্তু আসলটা কে দেখে? ম্যাজিকের কালো মঞ্চে বাহিরটা বড়ই দৃশ্যমান! কিন্তু ভেতরের খবর কে রাখে? কামনার অন্ধকারে ভাসতে ভাসতে ভেঙ্গে চুরমার হওয়া অসংখ্য বর্ণীল স্বপ্নঢেউ যা অজানাই থেকে যায়…

মূলপর্ব :-
তাকে প্রথম দেখেই চমকে গিয়েছিলাম। ভীষণ ভালো লেগেছিল। আমি ভালো করেই জানি এটা নেহায়েত নিম্নপর্যায়ের একটি আবেগ। একজন মানুষ সম্পর্কে তেমন কিছু না জেনে হুট করে ভালোলাগা সে তো ছেলেমানুষি। কিন্তু সত্যটা এরকমই। এতোটা ভালো কেন লাগলো, তাও ভাবিনি তখন। দেখে মনে হয়েছিল সে যেমনই হোক, ভালো-মন্দ, বড়-ছোট তাতে আমার কিছু যায় আসে না। চরম সত্য হলো, তাকে অসম্ভব ভালো লেগেছে। কিন্তু এ অনুভূতি প্রকাশের পরিবেশ কোনদিনই ছিলনা। একজন অপরিচিত মানুষকে তো আর হুট করে বলা যায় না- এই যে শোনো, তোমাকে বড় ভালো লেগেছে, তুমি আমার অনেক কাছের মানুষ হবে? আর আমার তো অসাধারণ কোন ব্যাক্তিত্বও নেই যে তার চোখে অন্যভাবে ধরা পড়বো, একটু অন্যভাবে।
একসময় সে ভাবনাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। যদিও ভাবনা হয়েতো আমাকে ছাড়েনি। সে জন্যই হয়তো ঘটনা থেমে থাকেনি...

সাফাই পর্ব :-
‘তুমি কোথায়?’
-‘বাসায়’
-‘বাসায়ই বসে থাকো, তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না!’
-‘বুঝলাম না!’
ওর কন্ঠে রাগ নেই, আছে রহস্যময়তা, দুষ্টমী আর সোহাগ। ও কখনো রাগ করে না। আমার ব্যাপারটা বুঝে বলেই হয়তো করেনা। ওর মতো করে এমনভাবে আমাকে আর কেউ কখনো বুঝেনি। অন্য দশটা লোকের প্রণয়ের চেয়ে খানিকটা ভিন্ন আমারটা। কারণ দিনের মধ্যে ১০টা ফোনকল দিতে হবে, ৫০টা এসএমএস পাঠাতে হবে, কারনে অকারনে দেখা করতে হবে ইত্যাদি থেকে আমি পুরোপুরি মুক্ত। নিজে তো ফোন করিই না, কতোবার যে ওর ফোন ধরি না, তার হিসাব নেই। ও ঠিক বুঝে নেয়।

অভিমান পর্ব :-
একটা সময় ওর আবেগের মাত্রাটা এমন পর্যায়ে পৌছালো যে, কথা নাই বার্তা নাই ফোন দিয়ে বলল-
“আমাকে দিয়ে তোমার কাজ নেই, তুমি থাকো তোমার কবিতা নিয়ে।”
কখনো কখনো এমন সব বায়না ধরত যা আমার জন্য সঠিক না হলেও মেনে নিতে হত।
“তুমি কখনো আমার পছন্দের পোশাক পরো না। পরলেও ওই সাজে আমার কাছে আসো না।” এতসবের পরও কিন্তু সে কোন অভিযোগ করে না। কখনোই করে না…

স্বপ্নপর্ব :-
আমার বুকের মধ্যে একটা স্বপ্ন জেগে থাকে। শুভ্র শাড়ীতে নিজেকে জড়িয়ে সেঁজুতি বসে আছে মোমবাতির আলোছায়া মাখা টেবিলের ওপারে। আর আমি এপারে। দুজনেই চুপচাপ। ওকে দেখতে অ-নে-ক আনন্দ। ওর মৃদু হাসি আমার হৃদসমুদ্রে ঢেউ তুলে অহর্ণিশি। আমি ভাবনার অথলে হারিয়ে যাই। ইচ্ছে করে ওর ক্লোন করে সারা শহরে ছড়িয়ে দেই। দিতে পারলেই বরং ভালো লাগতো। যেখানে যেতাম তাকে দেখতে পেতাম…

দূর্ঘটনা পর্ব :-
আমি ওর লাশ দেখতে যাইনি। পরিচিত মানুষের মৃত মুখ দেখার মতো মানসিক জোর আমার কোনদিন ছিল না। অথচ আমাকে বারবার এই পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রকৃতির খেয়াল বলে কথা...
আমার কানে এখনো কথাগুলো অশরীরি শব্দের মত বাজে-
“সৌহৃদ আমি বাইরে যেতে চাই। আই ওয়ান্ট টু গো টু আউট সাইড। আমাকে নিয়ে চলো।”
কথাগুলো শুধু কানে নয় বুকের মধ্যেও কাটা হয়ে বিঁধে আছে।

চেতনা পর্ব :-
আমি কতক্ষণ অচেতন ছিলাম বলতে পারবো না। ঘুম আর মৃত্যুর মাঝে ছিলাম আমি। কি ভয়াল অভিজ্ঞতা! শুধু এই মনে আছে সেঁজুতি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল ভয়ার্ত চেহারায়। দুষটা হয়তো আমাদের ড্রাইভারেরই। বিপদজনক মোড় পাড়ি দিতে দিতেই বিশাল ট্রাকের ধাক্কা আমাদের ছোট কার মেনে নিতে পারেনি।
ও হ্যা, ভুল বললাম, মনে আছে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখছিলাম। এই প্রথম শিখলাম, মানুষ মরলেও স্বপ্ন জেগে থাকে! জেগে থাকতে থাকতে মলিন হয়ে যায়, এক সময় হারিয়ে যায়।
এভাবে কতকিছু যে হারিয়ে যাচ্ছে...
বন্ধুরা ভুল বুঝতে শুরু করেছে। ভাবছে- আমি ইচ্ছে করেই ওদের এড়িয়ে চলছি। কেউ কেউ অহেতুক খুঁচিয়ে চলছে; বুঝতে চাইছে না জীবন বয়ে বেড়াতে বেড়াতে আমি যে কত ক্লান্ত। পূরো ক্লান্ত…

অপেক্ষা পর্ব :-
বাবা তাঁর আয়ুষ্কাল অফুরন্ত হাতাশা নিয়ে বিদায় হয়েছিলেন। মা’কেও একই পরিণতি বরণ বৈকি তাঁর জন্য নতুন কিছু নেই। মাঝে মাঝে মা’কে কাঁদতে বারণ করি, অথচ বেকুবের মত নিজেই কাঁদি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে আকাশ-পাতাল ভাবি।
আমার কি দুষ বলো মা, আমি না ওকে কথা দিয়েছিলাম! আর এখন যা অবস্থা কারো করুণা নিয়ে বাঁচার ইচ্ছা তোমার সন্তানের নেই মা…

এসব কতদিন আগের কথা? কতকাল? কতকিছু হারিয়ে গেল জীবন থেকে। হৃদযন্ত্রটা বিটে বসল। লেখালেখিটা থেমে গেল। একটা সময় ছিল অসংখ্য ফোনকল/এস.এম.এস./চ্যাটিং/ফেসবুকিং না করলে দিনটা অসম্পূর্ণ থেকে যেত। এখন...? জানতে পারি না কে কোথায় আছে, কেমন আছে...
এভাবে সব হারিয়ে যাচ্ছে সব।

ইতিপর্ব :-
আমাকে দেখাশুনার জন্য একজন কেয়ারটেকার এসেছে কেবল। আর রয়ে গেছে প্রথমকার হুইল চেয়ারটা। ঘরের এককোণায় বেচারা কেয়ারটেকার নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে। তাকে দেখতে রোবট রোবট লাগে। দেখতেই হবে, বিকল্প নেই। ইচ্ছে করে, নিজের পায়ে হাঁটি। হেঁটে হেঁটে একচিলতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। অন্তত বাইরের পৃথিবীটা দেখি। তা হয় না। যদি কখনো সুযোগ পাই তাও হুইল চেয়ারের কল্যাণে! ব্যালকনিতে গেলে তুমুল হাওয়া এসে আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। আমার মনে পড়ে, সেঁজুতি আমার চুলে আঙ্গুল ডুবিয়ে দিয়ে বলত-
“তোমার চুলগুলো আগোছালো করে দিতে বড্ড ভালো লাগে।”
এসব কতদিন আগের কথা? সময় কি অনন্ত? আর ভাবতে ভালো লাগে না...

বাইরে থেকে কোন নাম না জানা বাউলের ক্রন্দন জাগানীয়া গানের উদাসীন গলা ভেসে আসে। কী অপূর্ব সেই গানের সুর, কী মিষ্টি বাউলের গানের গলা, কি হৃদয় মোচড় দেওয়া গায়কী আবেগ! আমার খুব ইচ্ছে করে লোকটার সাথে তাঁর বাড়ী চলে যেতে। গিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে লোকটা কখন বেরোয়। ও কি রাতে ঘুমায় না একটুও? কেন এই কণকণে ঠান্ডায় এত কষ্ট করে ঘুমন্ত মানুষদের গান শুনিয়ে বেড়ায়? এতে ওর কী লাভ...?
নিজের অজান্তে আমার ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সন্তর্পনে। আমার চোখের পল্লব ভারী হয়ে ওঠে অনাবশ্যকীয় অশ্রুতে...।
তখনো বাইরে বাউলের মিষ্টি গলার অস্পষ্ট সুর ভেসে আসে-
“কারে কি বলিবো আমি
নিজে অপরাধী,
মরণ জ্বালা সইতে নারী
দিবানিশি কাঁদিরে বন্দু
ছেড়ে যাইবা যদি।”

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: খুব ভাল লাগল! নাইস রাইটিং!

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২৭

সাদিক তাজিন বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৩১

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
সাদিক,

উত্তর করার সময় সবুজ বাটনে চাপবেন। একটা বক্স আসবে। ওখানে কমেন্ট করলে নোটিফিকেশন পাওয়া যা।। নাহলে যায় না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.