নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখন পর্যন্ত মানুষ ! তবে মানুষের হিংস্রতা দেখে মাঝে মাঝে মানুষ পরিচয় দিতে মন সাড়া দেয় না!

সাদিক তাজিন

নির্ভেজাল প্রকৃতি প্রেমী । সার্টিফিকেটের জোরে শিক্ষিত আসলে গবেট। মনে যা আসে লিখি। সাহিত্যের বিচারে না, মনের ইচ্ছায়, পরিবর্তনের মানসে...

সাদিক তাজিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

না বলা যাতনা অথবা প্রেম

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৫৮

১.
বাসার সামনে রিকশাটা থামতেই নেমে পড়ে রুপম। রুপম চৌধুরী। খানিকটা কৌতুহল নিয়ে বিল্ডিঙের দিকে তাকায়, আর তখনই দেখে দোতলার বারান্দায় একজোড়া সজল চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি নামিয়ে সে দ্রুত ছুটে যায় ঘরে।
মেয়েটির নাম অবনী। মৃত্তিকা হায়দার অবনী। ছিপছিপে দেহে গোলাপি আভা, পিঠের ওপর ছড়ানো রাশি রাশি চুল-এক কথায় অপূর্ব। সপ্তাহখানিক হয় তাদের ফ্লাটে উঠেছে। মেয়েটি প্রায়ই বারান্দায় দাঁড়িয়ে রুপমের চলার পথে দৃষ্টি বিছিয়ে দেয়। এসব তার মোটেই ভাল্লাগে না...
অহেতুক চিন্তা প্রশ্রয় দেয় না রুপম। সে জানে, তার মতো ক্যাব্লাকান্ত টাইপের ছেলেকে আর যাই হোক, কেউ কখনো ভালোবাসতে পারে না। বন্ধুরা ঠাট্টা করে তার নাম দিয়েছে ‘ঘরকুণো’। প্রয়োজন ছাড়া কখনো সে বাইরে যায় না। ঘরেই থাকে। বিকেলে বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে প্রকৃতির সাথে প্রেমে মাতে। নির্ভেজাল প্রকৃতি প্রেম...

২.
সকাল আটটা। ইউনিভার্সিটির উদ্দেশে বেরিয়েছে সে। তিন তলার সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামছে। হঠাৎ দোতলার ডান দিকের শেষ ফ্লাটের একটা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে গতদিনের দেখা মুখশ্রী। জলতরঙ্গের সুর বাজে ওর কন্ঠে, ‘
-রুপম ভাইয়া, কোথায় যাচ্ছেন?
রুপম তো অবাক! ভাবতে থাকে কোন প্রকৃতির মেয়ে হলে পরিচয় ছাড়াই এমন হুটহাট কথা বলতে পারে! না আছে পরিচয় না চেনাজানা! মনে মনে বিব্রত হলেও সে মাথা নিচু করে উত্তর দেয়-‘ভার্সিটিতে।’
চোখ তুলে তাকাতেই দেখে মিটিমিটি হাসছে মেয়েটি। তার বিব্রতভাব আরো বেড়ে যায়।
একই বিল্ডিঙের বাসিন্দা ওরা দুজন। যোগাযোগ আছে ওদের দু'পরিবারের মধ্যে। অবনী হলো রুপমের ছোট বোন শমির সমবয়সী, যদিও ক্লাসমেট নয়। সেই সুবাদেই অবনী আজকাল রুপমদের বাসায় প্রায়ই আসে। কখনো কখনো কলিং বেলের শব্দ শোনে রুপম দরজা খুলে দেখে রোমানা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে-মুখে আলো ছাড়িয়ে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে:
-শমি বাসায় আছে?’
রুপম কোন জবাব দেয় না। পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। নিঃশব্দে অবনী ভেতরে প্রবেশ করে।

একদিন বিকেলে নিজেদের বারান্দায় বসে আছে রুপম। এমন সময় অবনী এসে সামনে দাড়ায়। কোনো রাখ-ঢাক ছাড়াই জিজ্ঞাসা করে:
-আপনি আমাকে এতো লজ্জা পান কেন?
প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায় রুপম। দ্বিধাজড়িত কন্ঠে জবাব দেয়:
-তোমাকে লজ্জা পাবার কী আছে!
তাহলে... বলেই থেমে যায় অবনী। কথা আর এগোয় না।

৩.
অন্য একদিন। ভার্সিটিতে যাবার জন্য রিকশায় উঠে বসতেই পেছনে থেকে অবনীর হাক:
-এই যে, শুনুন। অনেকটা কৈফিয়তের ভঙ্গিতে সে বলে কোনো রিকশা পাচ্ছি না। দশটার আগে কলেজে পৌছতে হবে। আপনি কি কাইন্ডলি আমাকে একটু...।
কেন যেন অবনীর কথাগুলো সত্যি মনে হলো না রুপমের। তবুও ভদ্রতার খাতিরে বললো, ‘ঠিক আছে...’।

একই রিকশায়, পাশাপাশি দুজন বসে আছে। চুপচাপ। রুপম যতোটা সম্ভব চেপে বসে আছে রিকশার এক পাশে। দৃষ্টি সামনে।
-‘শুনুন।’
পাশ ফিরে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। মনে মনে ভাবছিল রুপম বিপরীত দিকে থাকিয়ে কোন কথা না বলেই পার করে দেবে সময়টুকু। কিন্তু কি একটা সম্মোহন তাকে ঘিরে রাখে। সে যেন তলিয়ে যাচ্ছে অবনীর জোড়াচোখের নীল জলে। রিকশার ঝাঁকুনিতে চেতনায় ফিরে সে। তখনো তার দিকে পলকহীন চেয়ে আছে অবনী। পরিবেশ স্বাভাবিক করতে সে জিজ্ঞাসা করে:
-কিছু বলবে?
রহস্যময় মুচকি হাসি হেসে অবনী জবাব দেয়:- না, কিছু না...

রুপম মাঝে মাঝে উপলব্ধি করে, তার ভেতরে কেমন যেন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। এত দিনের নীরব, নিথর মনটা একটু একটু করে চঞ্চল হতে শুরু করছে। একাকী সময়ে ওর চোখের সামনে অবনীর মুখ ভেসে ওঠে। কিন্তু কেন? সে তো এই মেয়েটিকে পছন্দ করে না! তবে কি এটাই প্রেম? সে বুঝতে পারে, এটা প্রেম হোক বা না হোক সে ক্রমেই জড়িয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য এক খাঁচায়।

৪.
জীবনে কাউকে কোনোদিন বলা হয়ে ওঠে নি ‘ভালোবাসি’, রুপমের। সময়-সুযোগ দুটোই ওর ছিল। অথচ লজ্জা, আড়ষ্টতা, সংকোচ, ইত্যাদি ঘিরে থাকত সে সব সময়। এরচেয়েও বড় কারন, কাওকে খুব একটা ভালোও লাগেনি কখনো তার। রুপম একা মনে বিড়বিড় করে:
-অবনী আমাকে ভালোবাসে, বুঝতে পারি। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারি না। জানি না, লজ্জা, নাকি এসব কোন অদৃশ্য খেলা।’ ইদানিং রুপম ভালো ভাবনাবাজ হয়েছে...

কেমন করে যে জীবন থেকে এই আশা-হতাশার সময়টি স্বপ্নের মত এত দ্রুত শেষ হয়ে গেল। আজ অবনীরা চলে যাচ্ছে। ওর বাবা বদলি হয়েছেন জেলা শহর নারায়গঞ্জে। বিদায়ের সময় দেখা হলো। তাও সামনাসামনি। যেন সিনেমার দৃশ্যপট।
-আমরা চলে যাচ্ছি...’ ভেজা কন্ঠে অবনীর উচ্চারণ।
বুকের ভেতরে কষ্ট চেপে রুপমের উত্তর-‘ভালো থেকো...
চোখ তুলে তাকালো সে। দেখে অবনীর দু'চোখ ভরে গেছে সাগরের নোনাজলে। এখনই তা আছড়ে পড়বে কূলে। ভেঙ্গে দেবে একুল-ওকুল। রুপম শিউরে ওঠে- একি! সবাই দেখে ফেললে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে! কারন জীবন তো আর সিনেমা না।
দ্রুত সরে পড়ে রুপম। বুকের ভেতর উছলে উঠা কান্না সামলাতে গিয়ে নিজে নিজেকে প্রশ্ন করে সে:
-ও আমাকে এতো ভালোবাসে?

৫.
অবনী চলে গেছে। কেমন যেন একটা কষ্ট অনুভূত হচ্ছে রুপমের হৃদয় জুড়ে। এই প্রথম কারো জন্য ওর এতো বেশি কষ্ট হচ্ছে। দুঃসহ বেদনা বুকে চেপে অবনী চলে গেছে- এ কথা আরো অসহায় করে তোলে তাকে। বারবার মনে পড়ে অবনীর স্মৃতিগুলো। মনে মনে ভাবে,
সে, গায়েপড়ে মেয়েটি লেগে থাকতো অথচ পাত্তা দেইনি। নিজের প্রতি একধরনের ঘৃণা কাজ করছে তার:
-আমি তাকে ভুলতে পারছি না, পারবোও না কোনোদিন।
সারাক্ষণ সে মনের সাথে যুদ্ধ করে- যদি আমি ওর জন্য এতোটা ব্যাকুল, তাহলে কেন বলিনি- ‘ভালোবাসি? সে তো আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করতো না।বরং কথা বলার সুযোগ চাইতো সে। নিজে কিছু না বলায় সে-ও বলেনি এবং এটাই স্বাভাবিক। তাহলে দোষটা কার? ভাবতে ভাবতেই কান্না আসে রুপমের।

পরিশিষ্ট: দিনের বেশির ভাগ সময় আজকাল ঘরে কাটায় সে । কখনও কখনও বিস্তীর্ণ কলেজ মাঠে একা বসে থাকে। হয়তো অবনীও ছটফট করছে তার জন্য, একাকীত্বের জন্য। একথা ভেবেই কেঁদে ওঠে রুপমের অন্তরাত্মা:
-আমি তাকে খুব ভালোবাসি, অথচ বলা হয় নি, ভালোবাসি। না বলা ভালবাসার ধারালো তীর ক্রমশ যিশুর মত আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে রুপমের আহত হৃদয়। না বলা ভালবাসার শুণ্যতা তাকে ক্রমশ ভাসায়, ক্রমশ ডুবায় বাস্তবতার অকুল সমুদ্রে। যার কোন সুরাহা নেই, পরিত্রাণ নেই!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.