![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নির্ভেজাল প্রকৃতি প্রেমী । সার্টিফিকেটের জোরে শিক্ষিত আসলে গবেট। মনে যা আসে লিখি। সাহিত্যের বিচারে না, মনের ইচ্ছায়, পরিবর্তনের মানসে...
হাকালুকি হাওরে সাধারণত দুধরণের গাছ জন্মে: শেকড়ধারী (rooted) আর ভাসমান। হাওরে পানি কম হলে শেকড়ধারী উদ্ভিদের পরিমাণ বেড়ে যায়। এভাবে একপ্রকারের গাছ বেশি হলে অন্যপ্রকারের গাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আবার একপ্রকারের গাছ থেকে পশু-পাখি-মাছ পর্যাপ্ত সকল খাদ্য উপাদান পায়ও না। হাওরাঞ্চলে আগে যেখানে গভীর জঙ্গল ছিলো, এখন (২০০৯) সেখানে ধুধু করছে উদম হাওর। স্থানীয়দের অভিমত থেকে জানা যায় বদলে গেছে চেনা হাওরাঞ্চলের রূপ। এখন আর সময়মতো বৃষ্টি হয় না, যখন হয়, তখন একসাথে অতিবৃষ্টি হয়। এতে হাওর পানিতে ভরে গেলেও তা স্থায়ী হয় না, ফলে জলজ উদ্ভিদ আর প্রাণীবৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখিন। এতে হাকালুকির চিরচেনা হিজল, করস, জারুল, বরুণসহ বৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত জলজ উদ্ভিদের অবস্থা বিপন্ন। এছাড়া পানির অভাবে পানিবাহিত প্রজননের অভাবে অনেক গাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; যেমন: কিছু গাছের ফল গাছে থাকতেই সেগুলোতে শিকড় গজাতে শুরু করে, ফলে সেগুলো বোঁটা ছিঁড়ে নিচে পড়তেই চারা গজানো শুরু করে। নিচে পানি থাকলে ফলগুলো ভাসিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছ জন্মাতে পারে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে এক জায়গায় সব ফল পড়ে তেমন কোনো উপকারই হয় না।[৫]
ইকোট্যুরিজম
ইকোট্যুরিজম হচ্ছে কোন এলাকার স্থানীয় জনগনের অংশগ্রহণ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে প্রকৃতিকে উপভোগ করার এমন একটি দায়িত্বপূর্ন ভ্রমণ যা ঐ এলাকার জনগনের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির উপর তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না এবং স্থানীয় জনগনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ইকোট্যুরিজমে স্থানীয় জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকায় তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় এবং ইকোট্যুরিজম হতে অর্জিত আয়ের একটি অংশ ঐ এলাকার পরিবেশের উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের বিকাশে ব্যবহার হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে পর্যটন একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শিল্প। দিন দিন এই শিল্পে বিনিয়োগ বেড়েই চলেছে। এতে সর্ববৃৎ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত বলে ধারনা করা হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটন শিল্প তাদের জিডিপির এক বৃহৎ অংশ দখল করে আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কেনিয়া তার জিডিপির ১০% আয় করে পর্যটন শিল্প থেকে যার আর্থিক মূল্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার। আর, অপরদিকে আফ্রিকার কোষ্টারিকা ৩৩৬ মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে যা জিডিপির ২৫%। পর্যটন শিল্পের আয় ষ্টিল, গাড়ী, ইলেকট্রনিকস কিংবা কৃষিখাত থেকে বৃহৎ। এক হিসাবে দেখা যায় যে, প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে ৪০০০ মিলিয়ন মানুষ ভ্রমন করে থাকে যা থেকে সারা বিশ্বে আয় হয় ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এই আয় সারা পৃথিবীর জিডিপির শতকরা ৬%। অতএব ট্যুরিজম/পর্যটন শিল্পকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ আমাদের নেই। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম
ইকো-ট্যুরিজম
ইকো-ট্যুরিজম হচ্ছে প্রকৃতি ভ্রমন যেখানে উদ্ভিদ, প্রাণী, জনগণের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য মূল আর্কষন হিসেবে পরিগণিত হয়। ইকো-ট্যুরিজম ভ্রমনকৃত এলাকার জনগণের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদের উপর কম প্রভার বিস্তার করে এবং স্থানীয় প্রকৃতিক সম্পদ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সহায়তা করে ।হাওড়ে পর্যটন বিকাশে উদ্যোগ
যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ হাওড়ে সরকারী ও বেসরকারি ভাবে যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে এ পর্যন্ত পর্যটন বিকাশে কোন ধরনের অগ্রগতি হয়নি।
সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা গেলে আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসাবে পরিচিত সিলেট অঞ্চলের এ হাওড়টি দেশের অন্যতম
পর্যটন ক্ষেত্রে
পরিণত হতে পারে- যা দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি হাওড়বাসীর জন্য বিকল্প আয় সৃষ্টি, হাওড়ের পরিবেশ উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তর ‘উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে হাকালুকি হাওড়ে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন বিকাশে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে
হাকালুকি হাওরে ইলিশ
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন স্বাদু পানির মৎস্য ভাণ্ডার বলে খ্যাত সিলেটের হাকালুকি হাওরে এ বছর (জুন) প্রচুর পরিমাণে ইলিশের সমাগম দেখা যাচ্ছে। অতীতে হাকালুকি হাওরে মাঝে মধ্যে দু’ একটা ইলিশ মাছ নজরে পড়লেও এ বছর এর পরিমান বেশ চোখে পড়ার মত। জানা যায়, আগাম বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে এ বছর বেশ আগে ভাগেই হাকালুকি হাওর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় স্বাদু পানির মাছ ইতোমধ্যেই ডিম ছেড়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই জেলেদের জালে হাওরের অন্যান্য মাছের সাথে বেশ কিছু ঝাটকা ইলিশও ধরা পড়ছে। এ বারের আগাম বন্যায় হাওর প্লাবিত হওয়ার সাথে ইলিশের প্রজনন মৌসুম মিলে যাওয়াতে বেশী পরিমাণে ঝাটকা ইলিশ হাওরে ঢুকে পড়ছে বলে মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (সিডবিস্নউবিএমপি) কুলাউড়া অফিসের মৎস্য জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকী।
প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ পূর্নিমার ৫ দিন আগে এবং ৫ দিন পরে ডিম ছেড়ে থাকে। এসময় দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদী এবং নদীর সাথে সংযোগ আছে এমন কিছু বিল ও হাওড় অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে এ সময়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম পরিমাণে বর্জ্য পানিতে নিষ্কাশনের কারনে অধিক পরিমাণে ইলিশ মাইগ্রেট করার সুযোগ পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া সরকারের ঝাটকা নিধন বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেও ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হয়। ইলিশ মাছ নদীর প্রায় ১২০০-১৩০০ কিঃমিঃ উর্দ্ধে পাওয়া যায় এবং এরা দিনে প্রায় ৭১ কিঃমিঃ পর্যন্ত পরিভ্রমণ করতে পারে। হাওরে প্রাপ্ত এ সকল ইলিশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফ্রেশ ইলিশের স্বাদ একটু ভাল হলেও তা নদীতে প্রাপ্ত অন্যান্য ইলিশের মত অতটা সুস্বাদু নয় বলে জানা যায়। স্রোতের বিপরীতে চলে আসা এসব ঝাটকা অকালে জেলেদের জালে ধরা না পড়লে হাকালুকিতে এ বছর বেশ ভালই ইলিশ পাওয়া যেত বলে ধারণা করা হয়। পরিপক্ক এক একটা ইলিশ মাছ ওজন ভেদে প্রায় ১.০ -২০.০ লক্ষ পর্যন্ত ডিম দিতে পারে।
প্রশাসনের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই হাওরের ছোট মাছ নিধন রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বিশাল আয়তনের হাওরের তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনসহ কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং গোলাপগঞ্জের উপজেলা প্রশাসন একযোগে কাজ করলে হাওরের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব বলে স্থানীয়দের ধারণা। এ ক্ষেত্রে জন প্রতিনিধিদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ অতীব জরুরী। হাকালুকির ছোট মাছ রক্ষায় আশু পদক্ষেপ নেয়া না হলে হাওর পাড়ের মুনাফালোভী মহাজন চক্রের কারণে মৎস্য ভাণ্ডার বলে খ্যাত ‘হাকালুকি’ অচিরেই মৎস্য শূন্য হয়ে পড়বে বলে সকলের ধারণা করা হচ্ছে। আর ইলিশ, সেতো অতিথি পাখির মতই এসেছে আবার সুযোগ পেলে চলেও যাবে হয়ত। তবে তাদের বিচরন ও ফিডিং ক্ষেত্র রক্ষা করা গেলে আমরা বারবারই এদের ফিরে পেতে পারি বলে বিশেষজ্ঞগণ ধারণা পোষণ করেন।
©somewhere in net ltd.