নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এখন পর্যন্ত মানুষ ! তবে মানুষের হিংস্রতা দেখে মাঝে মাঝে মানুষ পরিচয় দিতে মন সাড়া দেয় না!

সাদিক তাজিন

নির্ভেজাল প্রকৃতি প্রেমী । সার্টিফিকেটের জোরে শিক্ষিত আসলে গবেট। মনে যা আসে লিখি। সাহিত্যের বিচারে না, মনের ইচ্ছায়, পরিবর্তনের মানসে...

সাদিক তাজিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হৃদকথন

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১২

রাফ ভাবনা

ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনের অধিকাংশ আয়াতই প্রতীকী। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে নানান ঘটনা ও করনীয় নির্ধারনে, শ্রষ্টার ক্ষমতা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান বুঝাতে ইঙ্গিতের পাশাপাশি উপমার, আবার কখনে কখনো উদাহরনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এজন্য হাদিসের মাধ্যমে পরবর্তীতে সেগুলো মানুষের কাছে ক্লিয়ার করা হয়েছে। না হলে মানুষ বুঝতেই পারতো না কেন এবং কোন প্রেক্ষিতে কথিত আয়াতটি এসেছে। অথচ আমরা দেখি বেশিরভাগ মানুষই এর গভীরতায় না গিয়ে আক্ষরিক অর্থকে গ্রহণ করে বসে থাকে যা সম্পুর্ণ অযৌক্তিক। এমন অনেক আয়াত আছে যেগুলো বুদ্ধিমান পাঠকের কাছে স্পষ্ট হওয়ার কথা। যেমন : সুরা ফাতেহর দশম আয়াতে বর্ণিত ‘আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপরে’ অর্থাৎএটাই বুঝাচ্ছে আল্লাহর ক্ষমতা অনেক বেশি। সুরা ফুরকানের ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : ‘তারপর তিনি (আল্লাহ) আরশে সমাসীন
হন।’ আরশ শব্দের অর্থ রাজসিংহাসন। যেহেতু আল্লাহর কােন দেহ নেই তাই তিনি কােন আসনে বসার কথা নয় বরং তিনি
হবেন মহাবিশ্বের সর্বেসর্বা প্রভু। তাঁর এই আসনে বসাটা প্রতীকী। হয়তো আল্লাহর সুসংহত অবস্থান বুঝাতেই রাজসিংহাসনের অবতারনা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়- মানুষ ঈশ্বরকে নিজের মত করে ত্রিমাত্রিক মানসচিত্রে কল্পনা করে নিয়েছে।’
সুরা কিয়ামা’তে বলা হয়েছে : ‘সেদিন কােন কােন মানুষের মুখ উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের
প্রতিপালকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’ ( ৭৫:২২-২৩)। এখান থেকে বুঝায় যে, পুণ্যবান নর-নারী আল্লাহর প্রতি
মনোনিবেশ করবে। কোরআনে বারবার একথা পুনরাবৃতি হয়েছে যে, ‘আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা ও সর্বজ্ঞানী’- এ থেকে আমরা বুঝি কােন
কিছুই আল্লাহর অজানা নেই।

অনেক মুসলমান বিশ্বাসের পক্ষে অনমনীয়। তারা কোরআনের যে ব্যাখ্যা হাদিসে আছে শুধু তা-ই গ্রহণ করেত চান এবং মনে
করেন ধর্মীয় ব্যাপারে এর বাইরে কােন যুক্তি বা বিচার-বুদ্ধির প্রয়োগ অনুমোদনযোগ্য নয়। অনেক ক্ষেত্রে হাদিসও খোঁজেন না মুল্লামুন্সির নিজস্ব ব্যাখ্যাকে পরম জ্ঞান মনে করে আকড়ে ধরেন। তারা কোরআনেরআয়াতগুলােকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করেন এবং বিশ্বাস বা ধারনা করেন আল্লাহর মানুষের মতই মাথা, মুখ, চোখ, হাত, পা রয়েছে।
এবং তিনি ঠিক মানুষের মতই অনুভুতিক্ষমতা সম্পন্ন। কারণ কোরআনে আল্লাহর শোনা, বলা, দেখা এবং মানবসুলভ বিভিন্ন গুণের কথা উল্লেখ আছে। বাগদাদের একজন ধর্ম প্রচারক আবু মা’মার আল হুজাইলি’র (মৃত্যু ২৩৬ হজির বা ৮৫০ খৃষ্টাব্দ) মতে
কেউ যদি এরকম আক্ষরিক ব্যাখ্যা অবিশ্বাস করে তবে সে কাফের। বিখ্যাত ইমাম আহমদ বিন হানবল কেরআনের আক্ষরিক
অর্থকেই গ্রহণ করেছেন এবং এর প্রত আজীবন অবিচল ছিলেন। এই মজহাবের পরবর্তী প্রধান আহমদ বিন তায়মিয়া এ-ব্যাপারে
এতই গভীর বিশ্বাসী ছিলেন যে তিনি মুতাজিলাদের কাফের ও বিশিষ্ট ইসলামি দার্শনিক গাজ্জালিকে ধধর্মবিরোধী বলে মনে
করেতন। একদিন তিনি দামেস্কের প্রধান মসজিদে (উমাইয়া মসজিদ) উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় ভাষণ শেষে মিম্বর থেকে
নামতে নামতে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তাঁর সিংহাসন (আরশ) থেকে এভাবে নামবেন যেভাবে আমি নামছি।’

এই ধরনের রক্ষণশীল মানিসকতাসম্পন্ন ধর্মান্ধরা শুধু মুতাজিলাদের নয় বরং আশারির মত ধর্মতাত্ত্বিকদেরও অনৈসলামিক বলে মনে করতেন। তারা তাদের সংকীর্ণ ধর্মীয় ব্যাখ্যার ভিন্নব্যাখ্যাকে ‘বিপদজনক উদ্ভাবন’ বলে অভিহিত করতেন। আবু আমর আলকোরেশি ঘোষণা দিয়েছিলেন সুরা শুরা’র ১১ নম্বর আয়াত : ‘কােনকিছুই তাঁর মত নয়’ যা প্রকাশ করছে তা সরাসরি গ্রহণ করা
ধর্মবিরুদ্ধ। তাঁর মতে এ আয়াত দ্বারা কেবল বুঝায় আল্লাহর সদৃশ্য কােন পরম সত্ত্বা নেই। কারণ আল্লাহর মানুষের মতোই
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে। আবু আমর আল কােরেশি শেষ বিচার সংক্রান্ত সুরা কলমের একটি আয়াতের কথা বলেছেন : ‘সেই দারুণ
সংকটের দিনে যেদিন ওদেরকে সিজদা করার জন্য ডাকা হবে, ( সেদিন) কিন্তু ওরা তা করতে পারবে না। (৬৮:৪২)। এরপর
কোরেশি নিজের ঊরুতে হাত দিয়ে আঘাত করে বলেছিলেন, ‘আল্লাহরও ঠিক আমার মত হাত-পা রয়েছে।’

গোঁড়া ধর্মবাদীদের এ-রকম বিশ্বাস ইসলাম-পূর্ব যুগের আদিম বিশ্বাস ও প্রথার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। আরবদেরমধ্য থেকে হঠাৎ করে জড়বাদী ধারণা, বিমুর্ত চিন্তায় অক্ষমতা, আধ্যাতিক নির্লিপ্ততা, উশৃঙ্খলতা ও একগুঁয়েমি দূর হয়ে গেছে
এমন নয়। সর্বোপরি তাদের মন-মানসিকতা ইরানীয়দের মতো কােন ভিন্ন জাতি দ্বারা প্রভাবিত হয়নি অথবা তারা বিভিন্ন ইসলামি
বুদ্ধিবৃত্তিক দল যেমন মুতাজিলা, সুফি, শিয়া, ইখওয়ানুস-সাম এবং বােতনাইতদের সংস্পর্শে আসেনি।
এটা সবিদিত যে, মৌলবাদের ধারা আরবীয়দের মধ্য থেকে আগত এবং ইসলােমর প্রথম দিকের বুূ্দ্ধিবৃত্তিক চর্চা অ-আরবীয়দের
কাছ থেকে এসেছে। মুতাজিলা ও তাদের পরবর্তী চিন্তাবিদরা হয় অ-আরবীয় অথবা এরকম আরবীয় যারা গ্রীক ও ইরানীয় প্রভাবে
আদিম সংসার থেকে মুক্ত হতে পেরেছিলেন। সবশেষে বলা যায় এসব বিষয় প্রথম দিকে দেয়া অভিমতটিকে প্রমাণকরে,- ‘মানুষ তার মানবীয় চিন্তার বাইরে ঈশ্বরকে রাখতে পারেনি। তাই সে ঈশ্বরকে তার নিজের মত করে কল্পনা করে নিয়েছে। মহিমান্বিত আল্লাহকে বিশ্বভ্রষ্মান্ডের অধিপতি ভাবতে হলে, আল্লাহকে যে বিশেষণ দেওয়া উচিত তা দিতে হলে আগে তাঁর অধিনস্ত বিশ্বভুবণকে জ্ঞান করতে হয়। অথচ মানুষ সেটা না করে বেমালুম ঈশ্বরের মানবিক মুর্তি দাড় করাচ্ছে যা সে নিজেও জানেনা। এতে করে সে তার প্রভুকে নিজের সমতায় নিয়ে এসেছে একথা ঘুণাক্ষরেও ভাবছে না।

বেশিররভাগ মানুষই তার অর্জিত বিশ্বাসের মাঝে বন্দী, এবং শারীরিক ও সহজাত প্রবৃত্তির প্রতি অনুগত। আর এই বন্দীত্ব ও আনুগত্যের ফলে মানুষের
যৌক্তিক ক্ষমতা হ্রাস পায়। পরিষ্কারভাবে চিন্তা-বিশ্লেষণ মানুষ করতে পারেনা। তখন তারা সেসব আসল ঘটনাকে উপেক্ষা করে, যা
তাদের বিশ্বাসের সাথে সংঘাত সৃষ্টি করে। তারা শুধুমাত্র যা কিছুর মধ্যে তাদের ধারণা ও বিশ্বাসের আলামত পায় নূন্যতম সাদৃশ্য দেখে তা'ই আঁকড়ে ধরে।
মানুষের এই আচরণ ও মানিসকতাই হচ্ছে কুসংস্কার এবং বিভ্রম বিস্তারের কারণ।

আগের বছর আপনি কোন ঠাকুর বা পীরের মাজারে গিয়ে ঐ পীর/ঠাকুর সম্পর্কে চালু থাকা অলৌকিক গল্পগুলো শুনে আসুন। পরের বছর আবার গিয়ে দেখবেন গল্প আগের জায়গায় থাকেনি। ফুলে-ফেপে মহীরুহ আকার ধারন করেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে ভক্তকুলও বেড়েছে। এসব অলৌকিক গল্প বিশ্বাসের বন্দীদশা থেকে সৃষ্ট। সত্যিকার অর্থে সবগুলো গল্পই এভাবেই আসল ঘটনাকে পাশ কেটে অন্ধভক্তি অথবা বিশ্বাসের দাসত্ব থেকে উৎসারিত। যেখানে লজিকের, তথ্যের কিংবা কার্য-কারণ সম্পর্কের কোন গুরুত্ব নাই।

এনিওয়ে,
কেন জানি মনে হচ্ছে অলৌকিক গল্প দিয়ে ইজমকে সমাজে বেশিদিন ঠিকিয়ে রাখা যাবেনা। ঠিকানোর জোর প্রয়াস চালালে কতিপয় অনুরাগী ছাড়া বাদবাকি সমাজ এসব অলিক ইজমকে পেছনে ফেলে ঠিকই সামনে এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২৭

গুলিস্তানের হকার বলেছেন: সুন্দর কবিতা । +

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২৯

সাদিক তাজিন বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২৯

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: চমৎকার , ভাল লাগল :)

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৭

সাদিক তাজিন বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৯

অরুনি মায়া অনু বলেছেন: জীবনের পথ চলায় এমনি করে কত যে হোচট খেতে হয়। উঠে দাঁড়িয়েছেন এটাই মূখ্য

৬| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৪

সাদিক তাজিন বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ ও শুভ কামনা

৭| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৫

বোরহাান বলেছেন: বাস্তবতা ফুটে উঠেছে!

৮| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: বেশ ভাল!

৯| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৫৬

সাদিক তাজিন বলেছেন: মুগ্ধতা।

১০| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৬

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: মোটামুটি লাগল।

১১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২

সাদিক তাজিন বলেছেন: ধন্যবাদ।

১২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:২৬

কয়েছ আহমদ বকুল বলেছেন: প্রিয় কবি, স্নেহাস্পদ গল্পকার কালই জানলাম ধর্মীয় জঙ্গিবাদের উর্বর ভূমি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ থেকে মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তুমি ফ্রান্স এসে পৌছেছ। ভাল লাগলো, একজন ভালবাসার মানুষ অন্তত ধর্মীয় ক্রুরতার হাত থেকে নিজেক রক্ষা করে বেঁচে থাকার সুযোগ পেলো।

১৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৫৪

সাদিক তাজিন বলেছেন: ধন্যবাদ অগ্রজ। মানবতার জয় হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.