নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্রিকেট সাংবাদিক। গান লিখি। গল্প লিখি আর এমন একজনের জন্য অপেক্ষা করি, যে কোনোদিন ফিরবে না...

সাইফ হাসনাত

অবেলার বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে গেছে সব।ভিজে যাওয়া পৃথিবীটা হাতে নিয়ে একা বসে আছি।শেষ দিনের রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষায়...

সাইফ হাসনাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুহুর্ত অথবা এ্যাকুরিয়ামের গল্প

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:১৮





আমার কী! ইচ্ছে হলেই চলে যাবে, ইচ্ছে হলেই আমার সামর্থ্যের সীমা নিয়ে প্রশ্ন করবে, ইচ্ছে হলেই সৃষ্টিকর্তার দেয়া দয়া করার শক্তি দিয়ে তুমি আবার চলে আসবে। আমার লোমহীন শুকনো বুকে মাথা গুঁজবে। তারপর বুঝতে পারবে, এ বুকে তোমার জন্য কিছু নেই। যা আছে, তা তোমার না। তা কোনো কুশ্রী মেয়ের। তা কোনো অসুন্দরীর। তুমি তো সুন্দরী। তোমার তো অনেক প্রেমিক। তুমি চাইলেই এর চেয়ে অনেক মাংসল বুক পেয়ে যেতে পারো। এর চেয়ে অনেক সুঠাম ডানায় মাথা রেখে সারা রাত নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারো। তাতে তোমার কোনোই ক্ষ্ট করতে হবেনা।



আমি সব জানি। তবু চুপ করে থাকি। মুখ বুজে থাকি। নিজের মুখেই যখন তুমি বলে দাও, একটু ভালোও আমাকে বাসোনি। আসলে আমার মতো একজন কিছুতেই তোমার যোগ্য নয়। তুমি আমার কাছে এসে পড়েছো ভাগ্যের লেখনে নয়; দুর্ভাগ্যের জোরে। ভাগ্যের লেখন আর দূর্ভাগ্যের জোর আমি বুঝিনা। আমি কেবল ভাগ্য বুঝি। তুমি যখন আমাকে একা বৃষ্টিতে ভিজিয়ে রেখে চলে যাও, আমি তখনও চুপ করে থাকি। ভাবি, যে চলে যায় তাকে ফেরানো যায়না। তাকে ফেরাতে হয়না। গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করলেও আমি চুপ করে থাকি। ভালোবাসতে যতো শক্তির প্রয়োজন হয়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তির প্রয়োজন হয় ভালোবাসাকে চলে যেতে দেয়ার জন্য। আমি তোমাকে চলে যেতে দেই; আমি হঠাতই মহা শক্তিধর হয়ে উঠি। তুমি চলে যাও। আর আমার এখানে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হয়। আমি বৃষ্টিতে ভিজি। কাদা মাটিতে একা পড়ে থাকি।



আমি কেবল ভাগ্য বুঝি। তুমি চলে যাও, আমার কিছুই করার নেই। ভাগ্যে আমার এই-ই লেখা। তুমি অন্য কারো হয়ে যাও, তবুও আমার কিছুই করার নেই। তুমি তো আর আমার না। আমার কী; ভাগ্য তো আমার জন্য কিছুই রাখেনি।



রাতে আমার ঘুম ভেঙে গেলি একা বসে থাকি। অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখতে পাই, আমার ভাগ্য আরো কী ভীষণ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। আমার জানলার কাচে অন্ধকারের গন্ধ লেগে যায়। আমার সারা ঘর অন্ধকারের গন্ধে ভরে থাকে। আমি একা বিছানায় বসে থাকি। চোখের সামনে থেকে মুহুর্তরা উঠে দাঁড়ায়। তারপর উল্টো পায়ে পিছনের দিকে হাঁটতে থাকে। কী মনে করে যেনো আমিও মুহুর্তদের কাতারে হাঁটি। মুহুর্তরা অদ্ভুত। মুহুর্তরা আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। আমার সামনে চলে আসতে থাকে ফেলে আসা একেকটা রাত। রাতের একেকটা ভাগ। আমি চোখ বড় বড় করে দেখে যাই। রাতের অন্ধকারে রাত দেখতে আমার কোনোই কষ্ট হয়না। কিছু রাত অস্পষ্ট। জমাট-গাঢ়। আমি তাদের দেখতে পাইনা। আমার তাতে কষ্ট লাগেনা কোনো। আমি তো এখন তোমাকেও দেখতে পাইনা। তোমার কোনো খোঁজই তো আমার কাছে নেই। তো কী হয়েছে! ভাগ্যই তো আমার জন্য কিছু রাখেনি। জমাট রাত আমার কাছে অস্পষ্ট হয়ে উঠলে আমার কিছুই করার থাকেনা; রাতের তো অস্পষ্টই হওয়ার কথা। রাতের তো আরো বেশি গাঢ়তর অন্ধকারে ডুবে থাকার কথা।



মুহুর্তরা আমাকে টেনে নিয়ে যায়। আমি মুহুর্তদের পায়ের আওয়াজ শুনি। আওয়াজ শুনে শুনে পথ চলি। আমি আমার হাতের তালু দেখতে পাইনা। আমার চোখে রাজ্যের অন্ধকার। গভীর রাত আমার কাঁধে হাত রাখে। কানে কানে ফিসফিস করে ইনসমনিয়ার গল্প বলে; এক দেশে এক ইনসমনিয়াক ছিলো। তার কিছুই ছিলোনা একটা কাচের এ্যাকুরিয়াম ছাড়া। এ্যকুরিয়ামে দুইটা মাছ ছিলো। সোনালী আর রুপালী। রুপালী মাছটা এক পূর্ণিমার রাতে কাচের সাথে মিশে গিয়েছিলো। তারপর সোনালী মাছটা কাচের গায়ে ঠোঁট লাগিয়ে দিনমান রুপালী মাছটাকে খুঁজে বেড়াতো। এভাবে একদিন সোনালী মাছটাও। কাচের সাথে মিশে গেলো। একদিন কাচের সব পানি শুকিয়ে শেষ হলো। ইনসমিয়াক সব দেখেছিলো চুপচাপ। তারপর ইনসমনিয়াকের ইচ্ছে হয়েছিলো মাছ হওয়ার। ইচ্ছে হয়েছিলো কাচের এ্যাকুরিয়ামের পানিতে ডুবে যাওয়ার...



আমার তখন ইচ্ছে করে রাতের কানে কষিয়ে এক চড় মারি। কে কোন ইনসমনিয়াক আমার তাতে কী? আমি তো মুহুর্তদের পিছনে পিছনে চলা পথিক। কাচের এ্যাকুরিয়ামের গল্প আমার মাথায় পোকা হয়ে ঢুকে পড়ে। এ্যকুরিয়ামে ঢুকে পড়তে ইচ্ছে করে আমারও! কিন্তু আমার তো ইচ্ছে পূরণ হয়না। ভাগ্য তো আমার জন্য কিছুই রাখেনি। তুমি নেই, তাই আমার আর ভাগ্য জানতে ইচ্ছে করেনা। আমি মুহুর্তদের পিছনে হাঁটতে থাকি। একেকটা রাত ফুরিয়ে আসে। রাতের ভাগগুলো আমার পিছনে পড়ে যায়। আমি সব হিসেব তালগোল পাকিয়ে ফেলি। কোন রাত কবে গিয়েছিলো। কোন ভাগ কার হয়ে ছিলো। সব বড় অদ্ভুদ লাগে। রাতগুলো ফুরিয়ে যেতে থাকে। আমার চোখের সামনে এবার দিন। রাতের গাঢ় অন্ধকারে দিন দেখার ভাগ্য হয় আমার। ভাগ্য আমার জন্য এটা কী রাখলো!



আমি অবাক হয়ে যাই। আমি অবাক হয়ে যাই। আমি তো কখনো অবাক হতাম না! পুরোনো প্রেমিকের নামে তুমি আমাকে ডেকে ফেলেছিলে। আমি তো অবাক হইনি। আমি তো শুধু একটাবার বলেছিলাম, কি বললে! তুমি বলেছিলে নামটা এতো সহজ যে, ইচ্ছে না করেই চলে আসে। আমি তো সেদিন অবাক হইনি। মুহুর্তরা অদ্ভুত। আমার সামনে সেই দিনটাকে নিয়ে আসে। এবার আমি অবাক হই। আমি নতুন করে অবাক হতে শিখি। তোমার হাতে পুরোনো প্রেমিকের ছবি। তোমার টেবিলের ফটোফ্রেমে আমি। ছবি থেকে জীবন্ত হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি। তোমার হাতে ফোন। তোমার কানে ফোন। তোমার হাতটা কানের উপরে। তুমি আমার সাথে কথা বলো। আমাকে ডাকো জড়িয়ে ফেলা ডাকনামে। ছবি থেকে জীবন্ত হয়ে উঠা আমি মুচকি হাসি। আমি তো মুচকি হাসতাম না আগে!



মুহুর্তরা অদ্ভুত! ভাগ্য আমার জন্য এ কেমন মুহুর্ত রেখে দিয়েছে! বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে আসা বাতাসে কেরোসিনের কুপি নিভে নিভে যায়। ফোনের বাতির আলোতে তোমার রঙিন মুখ। আমি অবাক তাকিয়ে থাকি। তুমি গেমস খেলো। অদ্ভুত সুন্দর রাতে তোমার সোনা আঙুলে গেমসেরা ধন্য হয়। আমার চোখ ধন্য হতে চায় তোমাকে দেখে; কিন্তু পারেনা। গেমসের আড়ালে তুমি লুকিয়ে রাখো কোন যাতনা? আজ আমি মুহুর্তদের সেই প্রশ্ন করে ফেলি। মুহুর্তরা সব জানে। কিন্তু মুহুর্তরা অদ্ভুত। উত্তর দেয়না। মুহুর্তরা আমার মতো। আমিও তোমার কথা উত্তর দিতামনা। শুধু শুধু প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে ভালো লাগেনা। শুধু শুধু করা প্রশ্নের চেয়ে, শুধু শুধু দেয়া উত্তর বড় বেশি কৃত্রিম। কান তা সহ্য করতে পারেনা। কান তা মস্তিষ্কে পাঠায় না। কিন্তু আমি এখন শুধু শুধু প্রশ্ন করছিনা। তবুও মুহুর্তরা উত্তর দেয়না। মুহুর্তরা অদ্ভুত।



তোমার টেবিলে ধূলো জমে গেছে। ফটোফ্রেমটা আর নেই। পুরোনো জিনিস পত্রে ঠাসা টেবিলটা আমাকে মনে রেখেছে। তাই আমার মতো খসখসে হয়ে আছে। মুহুর্তরা আমাকে সব দেখায়। দেখিয়ে দেয়। তোমার জানলার গ্রীলে মাকড়শার জ্বাল। তাতে আটকে আছে আমার দৃষ্টিপাত। যা ফেলেছিলাম তোমার গেটের সামনের খেলার মাঠ থেকে। যা ফেলেছিলাম হোটেল তাজের তোমার সমান্তরাল জানলা থেকে। মেঘনার জলে তোমাকে নিয়ে ভাসি আমি। প্রথমবার ভেসে যায় আমার বিশ্বাস। ঝুলে পড়ে গাঙচিলের লেজে। গাঙচিল দূরে উড়ে যায়। আমি আর কোনোদিন আমার বিশ্বাস ফিরে পাইনা। বাথরুমের সাদা জলে তুমি ধুয়ে ফেলো আমাকে। তুমি ধুয়ে ফেলো আরো অনেককে। আমি রাগের চোখে মুহুর্তদের দেখি। মুহুর্তরা অদ্ভুত। আমাকে বলে দেয়- ভাগ্য তোর জন্য কিছুই রাখেনি।



আমি চুপচাপ ফিরে আসি। একা বৃষ্টিতে ভিজি। কাদা মাটিতে স্থবির পড়ে থাকি। আমার ঘর, ঘরের অন্ধকার, অন্ধকারের গন্ধ কোথায় আছে; আমি ভুলে যাই। আমার এ্যাকুরিয়ামে ডোবার স্বপ্ন কোথায় থাকে আমি বুঝিনা। মুহর্তরা অদ্ভুত। ইচ্ছে হলেই চলে যায়। আমার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:৩২

স্বপনবাজ বলেছেন: মুহুর্তরা অদ্ভুত! ++

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪

সাইফ হাসনাত বলেছেন: ধন্যবাদ, ভালো থাকুন....

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:৩৪

রাইসুল নয়ন বলেছেন: কবি !!

এতো কষ্ট পোষার জন্যেই বুঝি মনুষ্য জন্ম !!!

লেখা অসাধারণ, তবে লেখার বেদনা অসীম ।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫

সাইফ হাসনাত বলেছেন: আমি কবি নই; নিতান্তই মানুষ।

কষ্ট পোষার জন্যই হয়তো জন্ম...


আমি তো জানিনা।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:০৪

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: বেদনা চির তরে বুকের মাঝে থেকে যায় ঠিকই, তার পরও উজ্জল ভবিষৎ হাত ছানি দিবে। সুদিন ফিরে আসলে আপনার এই লিখা পড়েই হাসবেন আর মনে মনে বলবেন কি সব লিখেছিলাম সেই সময়।


আপনার সুদিনের কামনায়.........

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৭

সাইফ হাসনাত বলেছেন: শুভ কামনার জন্য কৃতজ্ঞতা।

নিরন্তর ভালো থাকুন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.