নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃতি সবসময় ফেরত দেয় । আজ আপনি যা করবেন প্রকৃতি আগামীতে আপনাকে তাই ফেরত দিবে । -Saif

সাইফুলইসলাম সাইফ

মানুশ আমি আমার কেন পাখির মত মন ?

সাইফুলইসলাম সাইফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘‘বাবার মুখে ৭১এর শোনা ঘটনা’’

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

আমি লিখিয়ে না । লেখালেখি আমার কর্ম নয় । অযাচিত চর্বিত চর্বণ করাও আমার কম্ম নয় । আমি শুধু বাবার মুখে শোনা ঘটনাই লেখব । সময়ের পরিক্রমায় বাবার সম্মুখে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিক্ষিপ্ততার রুপ নিয়েছে । ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে না লেখাটিতে । প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছি না । শুরু করছি...

ব্যক্তিগত জীবনে বাবা আওয়ামীলীগ কে পছন্দ করে না । করার কথাও না । বাবা প্রায় ২ বছর বাসার বাইরে ঘুমিয়েছে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে পরে মিলিয়ে । আমি প্রায় বন্ধুর বাসায় গিয়ে রাত কাটাতাম । টেলিভিশনে আওয়ামীলীগ অথবা শেখ হাসিনা সম্পৃক্ত কোন নিউজ ও বাবা দেখতেন না । চ্যানেল ঘুরিয়ে দেন ।

১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত আনুমানিক ৮.৪০ । চ্যানেল চেঞ্জ করছে বাবা । হঠাৎ থেমে যায় বিটিভি তে প্রচারিত শেখ মুজিব এর ৭ মার্চ রেইসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণে । আমি নড়েচড়ে বসলাম । মৃদু কণ্ঠে জানতে চাইলাম বাবার কাছেঃ যুদ্ধের সময় তোমার বয়শ কত ছিল ? পাশ থেকে মায়ের উত্তরঃ তোর সমান হইব! বাবা বলব না, আমি তখন টেনে পড়ি... এইখান থেকেই আমি একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকি আর বাবা স্মৃতি থেকে বলে যেতে থাকে ঘটনা...

‘ আমরা তখন সবাই আওয়ামীলীগের পক্ষে । ৭০ এর নির্বাচনে তোর দাদা ভোট দিল । আওয়ামীলীগ পাশ করল । কিন্তু পাকবাহিনি ক্ষমতা দিল না । আমি তখন ভোটার না । কিন্তু আমি এই মিটিং এ ছিলাম । এই রেইসকোর্স এর মিটিং এ । সেই কি মানুশ । চারিদিকে শুধু মানুশ আর মানুশ । সবার মুখে মুখে “জয় বাংলা”। কিন্তু শেখ সাহেবের এই জয় বাংলা অনেকে পছন্দ করত না ।’ আমি থামিয়ে দিয়ে জানতে চাইঃ ক্যান করত না ? বাবা কোন উত্তর দেয় না । আমি আবার জানতে চাইঃ এই মিটিং এর বাইরে তো অনেক সেনাবাহিনি ছিল! ‘হ ছিল । শেখ মুজিব সেইদিন খুব বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিছিল । না হইলে সেইখানে কাউরে খুইজা পাওয়া যাইত না।’ হুম । এমনটা অনেকেই বলে । সেদিন শেখ মুজিব সব দিক ম্যানেজ করছে । এইটা নিয়ে অনেক গবেষণাও হইছে । আমি বললাম ।
বিটিভি তে প্রচারিত ভাষণটি শেষ পর্যায়ে । জয় বাংলা বলেই শেষ হয়ে যায় । বাবা বলেঃ এর পরেও শেখ সাবে আরও কিছু বলছিল । আমি জানতে চাইলামঃ কি বলছিল! বাবা মনে করতে পারে না । আমিও ইচ্ছে করে বাবা কে ডাইভার্ট করতে চাচ্ছিলাম না । তাই আমিও কিছু বললাম না ।

আমি জানতে চাইলামঃ তুমি যুদ্ধে যাও নি, কিন্তু এই গ্রাম থাইকা তখন কেউ কি যুদ্ধে গেছিল ? তখন এই গ্রামে মানুশ কত ছিল ? বাবা শুরু করেঃ না এই গ্রাম থেকে কেউ যুদ্ধে যায় নি । আর গ্রামের লোকসংখ্যা কত ছিল মনে নাই । আমি যুদ্ধে না গেলেও আমাদের বাসায় মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প আছিল । সেই ক্যাম্পে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ছিল । পাশ থেকে মা বলেঃ তোমার যদি একটা মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট থাকতো তাইলে আজকা বইয়া বইয়া টাকা পাইতা । সাইফুলেরও কাজে লাগত চাকরি-বাকরিতে । আমি বললামঃ যুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধ করছে মানে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাগো সার্টিফিকেট লাগে না । এর সার্টিফিকেটের জন্য যুদ্ধ করে নাই । দেশকে ভালবেসে যুদ্ধ করেছে । বাবা সম্মতি দেয় মাথা নাড়িয়ে । আমি জানতে চাইঃ আমাদের বাড়িতে যারা থাকতো তারা কোন জায়গার মুক্তিযোদ্ধা ছিল ? বাবা বলতে শুরু করে... তারা তো একেক জন একেক জায়গার ছিল । কেউ ছিল দোহারের, কেউ মুন্সিগঞ্জের, কেউ ফরিদপুরের আর কেউ কেউ... অনেক জায়গার ছিল । এরা আমাদের বাড়িতে থাকতো, খেত আবার চলে যেতে আবার অনেক নতুন আসত । এদের সাথে অস্ত্র থাকত । আমি শুধু বস্তা বস্তা ধান ভাঙ্গাইয়া নিয়া আসতাম । আমগো তখন প্রচুর ধান হইত । বলার মাঝেই আমি জানতে চাইলামঃ এদের সাথে যুদ্ধের পর আর দেখা হয় নি ? বাবা বলেনঃ না । তবে যুদ্ধের মদ্ধেই আরেকটা পরিবার আমাদের বাড়িতে আসছিল । ঢাকার । এক হাজী সাহেব । ছেলে, ছেলের বউ পরিবার নিয়া আমাদের বাড়িতে অনেক দিন ছিল । যুদ্ধের পরে আমি একবার তাদের বাড়িতে গেছিলাম । কিন্তু এর পর আর কোন যোগাযোগ ওরাও করে নি আর আমিও যাই নি ।

আমি বললামঃ যুদ্ধের সময় দাদা কি করত ? বাবা বলতে লাগলেনঃ তোর দাদার তখন ইসলামপুরে কাপড়ের দোকান ছিল । যুদ্ধ শুরু হলে দোকান বন্ধ থাকে আর তোর দাদা বাড়ীতেই থাকত । যেদিন যুদ্ধ শুরু হয় সেদিন তোর দাদা দোকানে । হটাৎ শুনে যুদ্ধ শুরু হইছে । তোর দাদা দোকান বন্ধ করে বাড়িতে আসবে এমন সময় গোলাগুলির শব্দ শুনে । অনেক কষ্ট কইরা চিপা চাপা দিয়া শুয়ারিঘাঁট আসছে । এসে দেখে লাশ আর লাশ পানিতে ভাসছে । বাসায় এসে বলে যুদ্ধ শুরু হইছে । আর সেদিনের ঘটনা বলে ।

বাবা এবার কিছুটা পেছনে চলে যায় । বাবা যখন সিক্সে পড়ত তখন বাবার এক শিক্ষক আমার দাদা কে বলে ভাল এক জন গৃহশিক্ষক আছে । আপনার বাসায় থাকবে খাবে আর আপনার ছেলেদের পড়াবে । দাদা রাজি হয় । কিন্তু দাদা তখন জানত না শিক্ষকটি হিন্দু । বাবা যখন জানে, তখন বাবা বলে আমাদের কোন সমস্যা নাই । কিন্তু স্যার কি আমাদের সাথে খাবে । বাবার শিক্ষক তখন বলে খাবে শুধু গরুর গোস্ত যেদিন রান্না করবে সেদিন জেনো ওই স্যারের জন্য আলাদা তরকারি রান্না করা হয় । বাবা রাজি হয় । গৃহ শিক্ষক বাসায় আসে । ওই শিক্ষক তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্র । বাবা মাঝে মাঝে যেত ওই শিক্ষকের সাথে ঢাবিতে । শিক্ষকের বাড়ি ছিল ফরিদপুরে । এই ভাবে প্রায় শিক্ষক ৪ বছর ছিল আমাদের বাসায় । যুদ্ধ শুরু হলে ওই শিক্ষক গ্রামের বাসায় চলে যায় । এর পর অনেক বছর কোন খোঁজ খবর বাবা জানত না । কয়েক বছর আগে এক কলেজের এক শিক্ষকের সাথে পরিচয় হলে বাবা তাঁর সেই শিক্ষকের কথা জানতে চায় । কারণ বাবার সেই শিক্ষক ওই কলেজের টিচার ছিল । বাবা যখন বর্ণনা দিচ্ছিল তখন সেই শিক্ষক জানাল বাবার সেই শিক্ষক উনার আত্মীয় হয় । এর পর বাবা সেই শিক্ষকের নাম্বার নেয় ।কথা হয় । উঁনি বরতমানে সিলেটে থাকে । বাবা একদিন যাবে সেই শিক্ষকের বাসায় ।

বাবা কিছুটা থেমে আবার বলতে লাগে ...পাশের গ্রাম(ভাওয়াল, মনোহরিয়া) দিয়ে যখন পাক বাহিনিরা যেত তখন রাস্তার দুই পাশ দিয়ে যত বাড়ি ঘর ছিল সব আগুন লাগাইয়া দিত । সেই কি তেজ আগুনের । এইখান থেকে মনে হইত আগুনে বুঝি পুড়ে যাব । (পাশের গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামের দূরত্ব প্রায় হাফ কিমি) । আমি জানতে চাইলাম পাসের গ্রামে ওরা আসছে এই গ্রামে আসে নাই ক্যান ? বাবা বলেঃ এই গ্রামে আসার তো রাস্তা ভাল ছিল না । পাক বাহিনি তো গাড়ি নিয়ে আস্তে পারত না আমাদের গ্রামে । তাই আসে নাই । কিন্তু আমাদের সামনের গ্রামে(খানবাড়ি) আসছিল । খান বাড়ীতে আগুন দেয় । দুই জন মানুশ মারা গেছিল । ওই যে কাদের মোল্লার যে একটা মামলা ছিল ঘাঁটারচর খান বাড়ীতে ১১ জন কে পুড়িয়ে মেরেছে । এইবার আমি বাবাকে থামিয়ে দিলাম । বললামঃ কিন্তু তুমি তো বললে দুই জনের কথা । কিন্তু মামলাতে তো ১১ জনের কথা বললে । বাবা শুধু হুম বলল । এইখানে তখন আমি আরও কিছু জানতে চাইলামঃ কিন্তু তুমি তো একদিন বলছিলাম যুদ্ধের সময় বুড়িগঙ্গায় কোন ব্রিজ ছিল না, তাহলে পাক বাহিনি গাড়ি নিয়ে আসত কেমনে ? বাবা বলেঃ ওরা এইদিকে আসলে আগে ট্রলারে করে নদী পার হত তারপর মার্চ করতে করতে আসত । আমাদের এই গ্রামের রাস্তা তখন অনেক খারাপ ছিল তাই আর আসে নাই । কিন্তু পাসের গ্রামের রাস্তা ভাল ছিল । আমি জানতে চাইলামঃ যখন ওরা পাসের গ্রামে আসত তখন তোমগো ভয় করত না ? তখন কি করতা ? বাবা বলেঃ ভয় করত না তেমন । তবে দুইবার খুব ভই পাইছি । একবার পাসের গ্রাম দিয়ে ওরা যাচ্ছে এমন সময় আমি মসজিদের ওই পারে(আমাদের বাসার পাসেই মসজিদ আর মসজিদের ওই পাশে দাঁড়ালেই পাসের গ্রাম দেখা যেত) দাঁড়াইয়া দেখতেছি । একটা লম্বা গাছের নিচে দাঁড়াইয়া ছিলাম । হঠাৎ দেখি গাছের একটা ডাল মাঝখান দিয়ে দুই টুকরা হইয়া পরতেছে । বুঝতে আর দেরি নাই । এক দৌড়ে বেউতার(আমাদের গ্রাম থেকে আরও অনেক অনেক পেছনে) দিকে গেলামগা । জানতে চাইলাম কি বুঝলা? বাবা বলেঃ পাক বাহিনিরা পাসের গ্রাম দিয়ে যাবার সময় বাড়ি ঘরে আগুন দিতেছে আর এদিকে গুলি করতেছে । একটা গুলি গাছের ডালে লেগে ডালের ভেতর দিয়ে চলে গেছে । আরেকবার দাঁড়াইয়া আছি মসজিদের কোণায় । আমার সামনে একটা ছাগল দাঁড়াইয়া ছিল । দেখি ছাগলের এই পাশ দিয়ে নাড়িভূরি শোব বাইর হইয়া পরতেছে । খুব ভয় পাইছিলাম । আবার দৌড় দিয়া বেউতার দিকে গেছিলাম । সেইবার আমাদের সাথে আরও অনেকে ছিল । আমার এক ভাবি ছিল বাচ্চা পেটে । দৌড়াইতে পারত না । সেই কি কষ্ট । সারাদিন কিছু খাই নাই । সন্ধার দিকে বাসার দিকে আসছি । এসে দেখি খাবারের কিছু নাই । মুড়িও নাইগা । পরে কেমনে জানি কিছু খাবার জোগাড় হইছিল । মানুশ হইলাম ১৫-২০ জন খাবার হইল ২-৩ জনের । কি করুম এই খাবার দিয়ে ভাবতে ভাবতেই দেখি ভাবি একাই সব খাইয়া ফেলছে । এই দেখে খুদা কিছুটা এমনেই কমে গেছে ।
আরেকবার আসানুল্লাউ(আমাদের পাশের বাসার) পাক বাহিনিগো দেখবার গেছে । এক পাক বাহিনি ওরে দেইখা ধইরা নিয়া গেছে অফিসারের কাছে । তারপর আসানুল্লাহ বলতেছেঃ খোদার কসম আমি মুক্তিযুদ্ধা না ।আমি গরীব মানুশ । আমারে ছাইড়া দেন । শালা বাইঞ্চত বইলা অফিসার গালি দিয়া দুই বস্তা গুলি তুইলা দিছে কাঁধে । আসানুল্লাহ পরে বলেঃ সেই কি ভারি! দুই কদম আগাই আর মনে হয় এইবার বুঝি মইরাই যামু! আবার ভাবি ফালাইয়া দৌর দেই! এই রকম করতে করতে প্রায় এক মাইল কাঁধে করে গুলির বস্তা নিয়ে গেছে । এক পর্যায়ে কাধ থেকে ফেলে দেয় । বলে স্যার আমি আর পারুম না । অফিসার শালা বাইঞ্চত বইলা পাছায় লাথি দিয়ে বলেঃ ভাঘ! পরে আসানুল্লাহ বলে আর পাছা হাতায়! আর আমরা হাসি । বাবা বলে থামে ।

বাবা আবার বলতে শুরু করেন । সিরাজ সাহেবের এক ভাতিজা ছিল । পায়খানায় গেছে । এমন সময় পাশ দিয়া পাক বাহিনি যাইতেছে আর ওই ও বের হইব, এইটা এই পাক বাহিনি দেইখা গুলি মারছে । ধাপ কইরা পইরা মইরা গেল । বাইর হবি হ একটু পরই হইতি । তাইলেই মরত না ।

যুদ্ধের সময় কি তোমরা গ্রাম পাহারা দিতা ? বাবা বলেঃ না, তবে যুদ্ধের পর দিতে হইছে । কারণ তখন চুরি ডাকাতি বেড়ে যায় । যুদ্ধের সময় বাসায় যেটা যেমনে ফেলে যেতাম এসে দেখতাম ওইটা অইভাবেই আছে । জানতে চাইলামঃ যুদ্ধে এই গ্রামের কেউ মারা যায় নায় ? বাবা বলেঃ না, এই গ্রামের কেউ মারা যায় নায় তবে ভাওয়ালের অনেকে মারা গেছে আর খান বাড়ির দুই জন মারা গেছে । আর পেছনের গ্রামের কেউ মারা যায় নায় ।

আরও বলতে থাকেঃ ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে আমাদের বাড়ীতে থাকত ২০-২২ জন । আগে থেকেই থাকত ওরা । ওরাও মুক্তিযোদ্ধা ছিল । তো ১৫ তারিখ বিকেলে ওরা বাড়ি থেকে বাইর হইয়া যায় শহরে যাইব বইলা । ওরা সবাই সহরের ছিল । সবাই ছাত্র ছিল ভার্সিটির । ওরা নৌকা দিয়া পার হইয়া যাইব শুয়ারি ঘাঁট । নৌকা ঘাঁটে ভিড়ব এমন সময় নৌকায় মানুশ বেশি থাকায় নৌকা ডুবে যায় । নৌকায় প্রায় ৫০ জনের মত ছিল । আমি জানতে চাইলামঃ নৌকায় ৫০ জন ? বাবা বলেঃ ছোট ট্রলার এর মত আরকি! তো নৌকা ঘাটের আগেই ডুইবা যায় । ১০-১২ ছাড়া সব মারা যায় । কেউ সাতার জানত না, যারা আমগো বাড়ীতে থাকত । ১৫ জন মারা গেছে আর ৫ জন বেঁচে গেছে । ওরা বাইচা গেলেও ওগো অবস্থা খুব খারাপ ছিল তখন । পরে বেচে ছিল কিনা জানি না । আমি আফসোস করি! বাবা আরও বলতে থাকেঃ আমি দেখতে গেছিলাম । সেই কি লাশ বুড়িগঙ্গায় । মনে হয় পানি দেখা যায় না । খালি লাশ লাশ আর লাশ ।
এর পর বাবা কিছুটা সময় থেমে থাকে ।

বুঝতে পারি বাবার ঝুলিতে যুদ্ধের বেশি সামানা নাই । তাই জানতে চাইলামঃ তুমি যুদ্ধে গেলা না ক্যান ? বাবা বলেঃ আমি যামু কি! আমগো বাড়িতেই তো তখন অনেক মুক্তিযোদ্ধা । ওদের কে সেবা যত্ন করতে করতেই তো যুদ্ধ শেষ । আর তা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাগো সাহায্য করাও তো যুদ্ধ করাই । এই সাহায্যই তখন কে করে ? ঘরে মানুশের নিজের খাবার নাই, সেই জায়গায় আমাদের বাড়ীতে ওগো থাকবার দিলাম খাওয়াইলাম । এইটাই কয়জনে করছে । তোর দাদার তো তখন ছিল দেইখা । আসে পাশের গ্রামের মানুশ গ্রাম ছাইড়া পলাছে, আমরা তো তাও গ্রামেই ছিলাম । যেই সব মুক্তিবাহিনি আমগো বাড়ীতে আছিল ওগো নিয়াই তো আমার সব ঘটনা । তা কি কি ঘটনা শুনি একটু বললে বাবা বলেঃ সব কি আর মনে আছে ? তখন আমি ১৫ বা ১৬ বছরের আর আজ ... তাছাড়া আরও অনেক কিছুই ঘটছে বলতেই একটা কল আসে বাবার মোবাইলে । আর শোনা হয় না ঘটনা ।

উপরের আলাপ চারিতা মূলত ১৫-২০ মিনিটের । আরও কিছু দুই এক লাইনের ঘটনা বলে কথার মাঝে মাঝে । কিন্তু সেগুলো তেমন কিছু না ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:


হয়তো কিছু, হয়তো কিছুই না।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৭

সাইফুলইসলাম সাইফ বলেছেন: জ্বী । ধন্যবাদ ।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৮

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আমার বাবাকে কখনও আফসোস করতে দেখিনি শুধু একদিন ছারা- কেন যে ওসনীর সই কর সনদ একশ টাকা দিয়ে কিনলাম না! এই কথাটি আমার এক লেংটা কালের বন্ধুর মুখ থেকে শোনা। যে সদ্য স্মাতকোর পাশ করে হন্য হয়ে চাকরির খুজছেন।

আপনার বাবার বলা টুকরো গল্প ভালো লেগেছে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৩

সাইফুলইসলাম সাইফ বলেছেন: আপনার মন্তব্যর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।

আমার বাবাকেও এই নিয়ে আফসোস করতে দেখি নাই বা শুনি নাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.