![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিন ছিল সোম বার। যাচ্ছিলাম মহাখালী। বাহাদুর শাহ্ পার্ক হতে বাসে। সময় সকাল ৯ টা। প্রতি সোম বার আমাকে মহাখালী যেতে হয়।
বসেছিলাম সামনের চেয়ারে। সকাল বেলা, রৌদ্র উঠতে শুরু করেছে। তাই জানালার পাশের দিকের চেয়ারটা খালি রেখে অন্যটাতে বসেছিলাম। তখন আর কোনো যাত্রী ছিল না।
বসে থাকার কিছু পরেই সে এল। দ্বিতীয় যাত্রী হিসেবে। গেট দিয়ে যখন ভেতরে এল, তখন চোখে চোখ পড়ে যায়। দ্য ভিঞ্চির ‘লাষ্ট সাপার’ এর মত অনুভূতি শুন্য দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম
আমার পাশের চেয়ার টা খালি। ও বসতেও চেয়েছিল। কিন্তু আমার কোনো আমন্ত্রন ছিল না। তাই, কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বসল সমান্তরাল ভাবে আমার ঠিক পেছনের চেয়ারে।
চোখে ছিল রিমলেস চশমা। ফাইবার গ্লাস। এই সাঝ সকালেই যে স্নান করে বেরিয়েছে, তা স্পষ্ট। সেই কারনেই বোধ হয়, অনেক বেশী প্রাণবন্ত মনে হয়েছিল।
যেমন নিশ্চুপে এসেছিল, ঠিক তেমনি নিঃশব্দেই বসল চেয়ারে। আমার ছিল দেড় ঘন্টার জার্ণি। বরাবরের মতই, এই সময়ের অর্ধেকটা আমাকে পড়াশোনা করেই কাটাতে হবে। বই খুলেছিলাম আগেই। একটা অনুভুতি নিয়ে পড়া করলাম শুরু, জানালার আলোতেই।
এই পড়াটা আমার জন্য অনেক খানি বাধ্যতামূলক ছিল। কারন, আগের রাতে সবটা পড়া হয় নি। যা কিছু বাকী আছে, তা না শেষ করলে ঝামেলাই হবে। তাই, কিছুক্ষণের জন্য ডুবে গেলাম বইতে।
একটু পরে মনযোগ ভাঙ্গল। ছ্যাঁচড়া টাইপ একজন উঁকি দিল বাসের দরজায়, তৃতীয় যাত্রী হিসেবে। সম্পূর্ণ বাসটাই খালি পড়ে আছে। কিন্তু খুঁজে-খুঁজে গিয়ে সে বসল তার পাশেই।
নিজের উপর জেদ হল, অকারনেই।
কিন্তু যা নির্ধারিত হবার, তা অনেক আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। তাই, যুক্তি বিদ্যা দিয়ে নিজেকে শান্ত হতে বললাম। মনযোগ দিলাম বইতে।
শুনেছিলাম, ম্যাজিক কখনো-কখনো মানুষের লজিক কে হার মানায়। কোলাহল পূর্ণ এই ঢাকা শহরের পাবলিক বাসে তাহার উপস্থিতি ছিল অনেকটা পঙ্কিলতার মাঝে শুভ্র পদ্মের মত। যাহার স্নিগ্ধতা কেবল মন্ত্রের মতই কাজ করে।
আর আমিও মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিলাম। বোধ হয় সে জন্যই, পড়ার মাঝখানে পেছনে ফিরে চাইলাম। চোখে চোখ পড়ল। ধরা পড়ে গেলাম। আর তাই চোখও ফিরিয়ে নিলাম।
আবার মন দিলাম বইতে। কিন্তু নরেশ মালহোত্রার মাল্টিপল রিগ্রেশনের ফর্মূলার পরিবর্তে বইয়ের পাতায় ভেসে উঠল - এক জোড়া চোখ। হাসলাম, মনে মনে
।
ভাবতে লাগলাম, ইজ দেয়ার অ্যানি কোরিলেশন? ইফ দেয়ার, দেন হোয়াট আর দ্যা ভ্যারিয়েবলস? আর ঠিক তখনই সহযাত্রী ঐ ছ্যাঁচড়া ভ্যারিয়েবল কে কন্ট্রোল করে রিগ্রেশনের চিন্তা মাথায় এল।
মনে মনে খুশী হলাম এই ভেবে – রিসার্সের মত রস-কষ হীন সাবজেক্টের একটা ইন্টারেষ্টিং এক্সাম্পল পেলাম। হাসি পেল। এবং হাসি মুখেই তার দিকে আবার ফিরে চাইলাম। আর ধরা পড়ে গিয়ে চোখও নামিয়ে নিলাম আবার। কিন্তু, এর মাঝেও তাহার অধর তরঙ্গ আমাকে ফাঁকি দিতে পারিল না।
যাই হোক, বেলা বাড়িতে লাগিল। বাসও চলিতে লাগিল। আসন সংখ্যা পূর্ণ হইয়া তাহারও অধিক যাত্রী ঝুলিতে লাগিল। এর মধ্যে সূর্য মহাশয় তাহার আধিপত্য একটু একটু করিয়া বাড়াইতেও লাগিলেন। মানে, সব মিলিয়া একটা খিচুড়ি অবস্থা। যে খিচুড়ি মোটেই সুখাদ্য নয়
এই ধরনের দূর পাল্লার জার্ণি যারা করেন তারা কম-বেশী সবাই ঘুমানোর চেষ্টা করেন। এবং এক সময় খেয়াল করলাম সে নিজেও চোখ বন্ধ করে আছে। আর কপালে রচিত হয়েছে - শরতের শিশির বিন্দু। ঘুমানোর মাঝেও না-কি একটা সৌন্দর্য আছে। সেটা পড়েছিলাম ‘ব্রাম ষ্টোকার’ এর বইতে। ষ্টোকার সেখানে ‘লুসি ওয়েষ্টেনরা’র সৌন্দর্যকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আর আজ, আমার কাছে মনে হলো – আমি সেটা বাস্তবে দেখলাম
সময় হয়েছে এবার। চেয়ার ছেড়ে আমি উঠে দাড়ালাম গেটের কাছে। একটু পরেই নেমে যাব গন্তব্যে। কিন্তু তাহার মাঝে নামার কোনো চিহ্ন পেলাম না। ঢাকা শহরে যে জনসংখ্যা, তাতে পুনর্বার আমার সাথে তার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছা-কাছি। কোথায় যেন একটা তীব্র অনুভূতি হল।
কিন্তু, চমক ভাঙ্গল বাসের কন্ডাক্টরের কথায় – ‘মহাখালী’। যাবার আগে শেষ বারের মত ফিরে চাইলাম। ফিরে চাইল সেও।
চোখের যে অনেক ভাষা থাকে – অনুভব করলাম, আরো এক বার।
তার পরেই নেমে পড়লাম, মহাখালী।
©somewhere in net ltd.