![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হ্যাঁ উপহারটি ছিল ছেলেটির নিজ হাতে তৈরি করা ১০ বছর ধরে পরম যত্ন নিয়ে আর অনেক-অনেক আপন হয় ওঠা তার সবথেকে প্রিয় একটি কৃষ্ণচুড়ার বনসাই। ভীষণ ভীষণ দুর্লভ একটি উপহার, ছোট একটি সমতল টবের চারপাশ ছেয়ে গেছে সবুজ ও কচি কুঁচিকুঁচি পাতায়, যেন এক মহীরুহ আর প্রতিটি ডালে-ডালে ফুটে থাকা টকটকে লাল কৃষ্ণচুড়া! আর অসংখ ছোট-বড় লাল-হলুদ কুড়ি যারা ফোঁটার অপেক্ষায়।
এমন দুর্লভ উপহার এর আগে কেউ-ই দেখেনি, এমনিতেই বনসাই অনেক দৃষ্টি নন্দন ও আকর্ষণের একটি বস্তু, যে কেউই ওতে আকৃষ্ট হয় কমবেশী আর অনেক রকম বনসাই এর দেখাই মিলেছে কিন্তু এমন আকর্ষণীয় আর অদ্ভুত সুন্দর কৃষ্ণচুড়ার বনসাই কেউ আর আগে দেখেছে বলে মনে হলনা। কারণ ওটা দেখে সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল হতবাক হয়ে, বিস্ময়ে। যেন কোন অপার্থিব বস্তু এই পৃথিবীতে নেমে এসেছে!
ছেলেটির সাথে মেয়েটির চৌখিক পরিচয়! একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। মৌখিক বা কথোপকথনে নয় এই কারণে যে, মেয়েটি তো কারো দিকে বা কোথাও তাকায়-ই না তো মৌখিক পরিচয় হবে কিভাবে? তবুও হল চৌখিক পরিচয় এভাবেঃ মেয়েটির সাধারনত্ত, শালীন ও রুচিশীল পোশাক, সাঁজহীন কিন্তু ভীষণ মিষ্টি আর লাবণ্যময় মুখ কারোই নজর এড়ায় না আর এই ছেলেটির তো আরও না!
কারণ ছেলেটি সাধারণত সাঁজহীন, শালীন আর সামান্য মিষ্টি মেয়েদের দিকেই আকর্ষিত হয়ে থাকে, বেশী সুন্দরী বা স্মার্ট মেয়েদের তার আবার তেমন মনে ধরেনা। যে কারণে এই মেয়েটির নীরবতা ও সাধারনত্ত তার দৃষ্টি এড়ায় না। তাই ছেলেটি মেয়েটির দিকে চোখ রাখে সব সময়-ই, কারণে-অকারণে! চোখে-চোখ রাখা সে সাধ্য ছেলেটির তেমন একটি হয়ে ওঠেনা। কারণ ওই চোখ দুটির ভিতর কি যেন একটা আছে যেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা।
অথচ এই ছেলেটি-ই অন্য মেয়েদের সাথে খুব-খুব সাবলীল ও প্রাণবন্ত ভাবে মেশে, কথা বলে, ফাজলামি-বাঁদরামিও করে মাঝে-মাঝে আর যাই করুক না কেন ওই মেয়েটিকে দৃষ্টির আড়াল করেনা, কখনোই! এভাবে চলছিল কোন কথা না বলে শুধু চেয়ে-চেয়ে, কিছু কাছে-কিছু দূরে, এভাবেই। একদিন ছেলেটির চোখ এড়ালো না যে, মেয়েটি তাকে দেখেছে আড় চোখে, দুই-এক পলক! ভীষণ গরমে যেন শীতল পরশ! মেয়েটির সেই ক্ষণিকের আড় চোখের দৃষ্টি, ছেলেটির কাছে! না, কোন কথা হয়নি, এখনো।
শুধুই দৃষ্টি বিনিময়, তাও ক্ষণিকের। একদিন বাসে যেতে হঠাৎ দেখা, সেদিন-ই প্রথম বুকে সুখের ধুলিঝড় আর মনে মাতাল হাওয়া বয়ে যাওয়ার অনন্ত অম্লান আর নিষ্পাপ হাসি উপহার! তাও দাঁত বের করে নয় শুধুই ঠোঁটের একটু বেঁকে যাওয়া! আর চোখের হাসির আভা ছড়িয়ে পরা! না ছেলেটি ভুল দেখেনি, ওটা হাসি-ই ছিল, ছেলেটির দিকে তাকিয়ে! উহ, সে যে কি শিহরণ, কিজে সুখের মিহি আলিঙ্গন! কিজে হৃদয়ে তোলপাড় তোলা ক্ষণ সে বোঝাবার নয়! সে শুধুই উপলব্ধির আর আত্ন-সুখে বিলীন হবার মোহময় গোধূলি!
নাহ, তবুও কোন কথা নয়, মেয়েটির দিক থেকে, কিন্তু ছেলেটি আর অপেক্ষা করতে পারলোনা এই দুর্লভ মুহূর্তকে কথা বলার সুযোগ হারাতে, তাই সে জিজ্ঞাসা করলো “কোথায় থাকেন?”
“এইতো এই দিকেই” আহ, কি সুখ, কি সুখ এই প্রথম তার রিনিঝিনি শব্দও শোনা গেল, না যেন ছেলেটির কান ধন্যহল! মাত্র তিনটি শব্দ আর একটু অভিব্যাক্তি যেন কবিতা না যেন গান! এমনই সুধালো!
সেদিনের মত সেখানেই শেষ কারণ, মেয়েটি নেমে গেল একটু পরেই আর কোন শব্দের ব্যয় বা দৃষ্টির বিনিময় না করেই। আর একটু পরে ছেলেটি ও। সাথে সুখের আবির্ভাব, একা-একা একে যাওয়া আল্পনা, বর্ণিল কিছু কল্পনা।
আবারো দেখা হল সেই মেয়েটির সাথে সেই পুরনো আর নিয়মিত জায়গায় এবার স্বাভাবিক দৃষ্টির দেয়া-নেয়া সাথে ক্ষীণ হাসিও ছিল বোধয়। ছেলেটি বেশ স্বাভাবিক, মোহটা কিছুটা কেটেছে মনে হল! তার স্বাভাবিক অভিব্যাক্তিতে। এভাবে স্বাভাবিক থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করলো ওদের পরিচয়টা আর কেটে যেতে লাগলো আড়ষ্টতা।
আবার দেখা হল তেমনই একটা বাসে, তবে এবার সকালে আর বাসায় না ফিরে যাবার সময়, অবাক হল দুজনায় তাদের দুই জনের পোশাকের একটা অদ্ভুত কাকতালীয় মিল দেখে ছেলেটির ক্যাপ আর মেয়েটির ওড়না যেন হলুদ-সবুজে মাখামাখি! হ্যাঁ মেয়েটির ওড়নায় ছিল হলুদ-সবুজের দারুণ কম্বিনেশন আর ছেলেটির ক্যাপেও! লজ্জিত হল দুই জনই একটু-একটু নিজেদের পোশাকের এই দারুণ কাকতালীয় মিল দেখে।
আসলে সেই দিন থেকেই শুরু হয়েছিল তাদের অব্যাক্ত-নীরব আর শব্দহীন বন্ধুত্ত! কিন্তু অভিব্যাক্তিহীন নয়, প্রকাশ ছিল ওদের চোখে, ওদের চাহুনিতে, ওদের হাসিতে আর ওদের দুরত্তে যেটা দূরে থেকেও ওদের রেখেছিল কাছে! এক অদ্ভুত বাঁধনে। ছেলেটি মেয়েটিকে বুঝতে পারে খুব সহজেই, কখন কি ভাবে? আর কখন কি লাগে? মেয়েটি প্রকাশের আগেই ছেলেটি ওকে বুঝে ফেলে! যা ক্ষণে-ক্ষণে মেয়েটিকে আলোড়িত করতে লাগলো, কিন্তু মেয়েটি তার এই আলোড়িত হওয়াটা কিছুতেই বুঝতে দিতোনা, কোন অভিব্যাক্তিতেই! সে সব কিছুই দেখতো-বুঝতো-শুনতো-উপভোগ ও উপলব্ধি করতো অদ্ভুত নিশ্চুপতায়!
কিন্তু এটি মেয়েটির দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য সেটা বোঝা গেলনা কারণ? মেয়েটি যে ছেলেটিকে আড় চোখে দেখে, শোনে তার সব কথাই, উপভোগ করে ছেলেটির ছোট-খাট পাগলামি আর সরলতা, নিজেকে প্রকাশের অকপটতা, নিজেকে খুব-খুব-খুব ছোট আর নগন্য করে দেখা, সত্য ও বাস্তবতার নিখাদ স্বীকারোক্তি ইত্যাদি এসবই মেয়েটি দেখতো-বুঝতো আর ভাবতো খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে তা ছেলেটি বুঝে গিয়েছিল! কিন্তু ছেলেটি যে মেয়েটিকে বুঝে ফেলেছে সেটা সে আবার মেয়েটিকে কিছুতেই বুঝতে দিতনা!
এটাই ছিল ওদের একে-অন্যেকে জানা বা বোঝার নীরব ও বাক্যহীন অনুধাবন। কিন্তু ছেলেটি কিভাবে বুঝলো যে মেয়েটি তাকে একটু হলেও কাছের ভাবে, সঙ্গটাও উপভোগ করে, ভালোলাগে ছেলেটির সাথে দুই-এক মিনিট পথ চলতে, কখনো-সখনো বাসের পাশাপাশি সিটে বাড়ি ফিরতে?
একদিন, বাসে যেতে যেতেই ছেলেটির পিপাসা পেল বেশ-বেশ, ছেলেটির সাথে সব সময়ই পানির একটি বোতল থাকে, আজ নেই। কেন নেই? হয়তো বিধাতা এমনই চাইছিলেন! কিন্তু ছেলেটি সেটা প্রকাশ করলনা, একটু উসখুস করতে লাগলো শুধু মাত্র। একটু পরে মেয়েটি তার ব্যাগ খুলে অনেক চমৎকার আর দামি গোলাপি রঙের পানির পট বের করে, মুখটা খুলে ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিল!
ছেলেটি যেন নির্বোধ হয়ে গেল! বিস্ময়ে আর আবেগে, এ যেন দম বন্ধ হওয়া সুখের অনুভূতি! ছেলেটি একটি বাক্যও ব্যয় করেনি, চুপচাপ পট হাতে নিল আর ঠোঁট না ছুঁইয়ে পানি ঢেলে দিল মুখের ভিতরে, এ অপার্থিব! এ অপার্থিব। একটু পরে মেয়েটি নেমে গেল তার গন্ত্যব্যে।
এরপর ছেলেটিও আর অল্প একটু পরে, কিন্তু ছেলেটি আজ আর হেটে চলছেনা, যেন উড়ে-উড়ে ভেসে যাচ্ছে কোন এক অজানায়, আজ ওর আর উড়তে পাখা বা ডানা লাগবেনা! এমনি-এমনিই ভেসে-ভেসে বেড়াতে পারবে সুখ-আনন্দ আর আবেশের আবিপুপ্ততায়।
এখন প্রশ্ন একটাই, তবে কি মেয়েটাও বোঝে ছেলেটাকে! বুঝে ফেলেছে কি যে ছেলেটা তাকে বোঝে? তা না হলে পানি তো ছেলেটা চায়নি, কিন্তু মেয়েটা বুঝলো কিভাবে?
শেষ নয়.........!
©somewhere in net ltd.