নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কি নাম দেব, এই গল্পের?

১২ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩২

মেয়েটির মিষ্টি ও অতি সাধারণ, তার চলাফেরা-কথাবার্তা-সাঁজ পোশাক এবং অন্যান্য সব কিছুতেই। কোন কিছুতেই কোন দেখানো ভাব নেই বা নেই কোন অহংকারের ছাপ এতটুকুও! যদিও কথা কম বলে, খু-খুবই কম তবুও বোঝা যায় যে এটা তার অহংকার বা নাক উঁচু ভাব নয়। অথচ সে বেশ বনেদী পরিবারের মেয়ে, নিজে বেশ ভালো আয় করে, একটি বেশ ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। তার এই সব দেখে ও বিশ্লেষণ করেই তাকে কারো ভালো লেগে যায়। অবশ্য এমন মেয়েকে যে কোন ছেলেরই ভালো লাগবে।

তবে এই ছেলেটির ভালো লাগাটি একটু অন্য রকম, এখানে নেই কোন চাওয়া বা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, এতো টুকুও। এ শুধুই একটু ভালো লাগা, তবে এই ভালো লাগাটাই ধীরে-ধীরে মেয়েটির প্রতি ছেলেটির মুগ্ধতার জন্ম দিল। তেমন কোন কারণ বিশেষ কারণ ছাড়াই। আর মেয়েটির প্রতি এই মুগ্ধতা এক সময় ছেলেটির ভাবনার আকাশে রঙ ছড়ালো, আর সেই রঙ এক পর্যায়ে কল্পনার রংধনু হয়ে ছেলেটির আকাশ সাজালো!

ইস সে যে কি এক সুখ আর সুখের যন্ত্রণা! সে বোঝাবার নয়। আজকাল ছেলেটির সমস্ত ভাবনা জুড়ে শুধু মেয়েটাই আসে! একদম সিনেমার মতই অনেকটা, হাঁটতে-চলতে-ঘুমোতে-জেঁকে আসা মেঘে-ঝরে পরা বৃষ্টিতে-ঝকঝকে দিনে-নিকষ রাতে-ভরা জ্যোৎস্নায়-এমনকি শীতের কুয়াশায়-শিশির জড়ানো ঘাসে-সকালের মিষ্টি আর আদর মাখা রোঁদে-গরম ধোঁয়া ওঠা কফিতে শুধু মেয়েটিকেই দেখতে পায়!

এ এক অদ্ভুত ভাবনা আর নদীর মত আপন নিয়মে জোয়ার-ভাটার মত বয়ে চলা কখনো সুখ হয়ে কখনো দুঃখ হয়ে ধরা দেয়া স্বপ্ন ও কল্পনা, যেখানে ছেলেটির কোন হাত নেই, না নেই কারণ এই ভাবনা সে চাইলেও আসে আর না চাইলেও আসে, তার কিছুই করার নেই। ছেলেটি কয়েকবার বেরিয়ে আসতে চেয়েছে এই অমুলক ও অবাস্তব ভাবনা থেকে কিন্তু যখনই মেয়েটির ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছে তখনই মেয়েটি বা মেয়েটির ভাবনা যেন ছেলেটিকে আরও বেশী করে আঁকড়ে ধরেছে। আর সেই আঁকড়ে ধরাটা ছেলেটিকে ধীরে-ধীরে যেন গ্রাস করছিল!

তাই ছেলেটি খুব সচেতন ভাবেই, মেয়েটির ভাবনা থেকে নিজেকে আর দূরে রাখতে চায়নি, নিজের ভালোর জন্যই, এতে করে মেয়েটির ভাবনা তো আর তাকে গ্রাস করতে পারবেনা, ছিনিয়ে তো নিতে পারবেনা তার নিজ থেকে! তাই ছেলেটি সেই ভাবনাকে চলতে দিল আপন মনে, ভাবনার নিজ নিয়মে, এতে যদি হয় কিছু সুখ তো হোকনা, বেশ ভালোই তো লাগে, মন্দ নয় আদৌ!

যত যাই হোক বা ঘটুক ছেলেটির মনে মেয়েটিকে নিয়ে এই ভাবনার চেয়ে বেশী কিছু নেই, বা ছিলনা কিন্তু এক সময় নিজের অজান্তেই ছেলেটি মেয়েটিকে ফলো করা শুরু করলো, মেয়েটি কখন বাসা থেকে বের হয়, কখন ফেরে, কোথায় যায়, কখন যায়? ইত্যাদি-ইত্যাদি।
মেয়েটি কিন্তু ছেলেটিকে সামান্ন চিনতো, কোথাও হত মাঝে-মাঝে দুই বা একটি কিন্তু পুরো বাক্য বিনিময় কখনো নয়।

সব চেয়ে আশ্চর্যের হল, মেয়েটি জানতো বা বুঝতো যে ছেলেটি তাকে নিয়ে কম বা বেশী ভাবে, এমনকি এটাও জানতো বা বুঝতো যে ছেলেটি তাকে ফলো করে। কিন্তু কখনো এটা ছেলেটিকে বলেনি বা বুঝতে দেয়নি বা দেয়নি কোন বাঁধা! এভাবে ফলো করতে-করতে ছেলেটি মেয়েটির ভাবনায় আরও বেশী মশগুল হল এবং আরও অনেক বেশী কল্পনার নানা রঙের আল্পনা আকতে লাগলো। যা মেয়েটিও অনেকটা বোঝে কিন্তু কখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না।

কিছুদিন যেতে না যেতেই ছেলেটি লক্ষ্য করলো মেয়েটি কখনো একই সময় বাসায় ফেরেনা, এক-একদিন, এক-এক সময় বাসায় ফেরে, আবার কোন-কোন দিন বাসায় ফেরেও না! ছেলেটি ভাবলো হয়তো কোন আত্নিয় বা নিজেদের অন্য কোন বাড়ি আছে সেখানে থাকে বা গেছে? অবশ্য এটা নিয়ে ছেলেটির তেমন কোন ভাবনা নেই বা ছিলনা। কারণ সকালে বাসা থেকে নিয়মিত এবং একই সময় বের হয় যথানিয়মেই।

কিন্তু এর কিছুদিন পরে মেয়েটি আর বাসা থেকে বের হচ্ছেনা, অন্য জায়গা থেকে জায়গা থেকে যাচ্ছে, এতেও ছেলেটির মনে কোন প্রশ্নের উদয় হয়নি, কারণ? কারণ আর কিছু নয়, মেয়েটির প্রতি ছেলেটির সীমাহীন মুগ্ধতা! হ্যাঁ এই মুগ্ধতাই ছেলেটির সামনে মেয়েটিকে নিয়ে কোন প্রশ্নের হাজির করেনি। কিন্তু একদিন ছেলেটির এক বন্ধু ছেলেটিকে বলল “আচ্ছা মেয়েটি যে এক-একদিন, এক এক জায়গা থেকে আসা-যাওয়া করে, ব্যাপারটা কি? আমার কাছে একটু অস্বাভাবিক ঠেকছে!”

এবার ছেলেটির মনে একটু খটকা লাগলো, এবং ছেলেটি বন্ধুর কথার সাথে বেশ মিল খুঁজে পেল, যা সে এতদিন ভাবেনি বা ভানবায় আসেনি অথবা চিন্তা করেনি, করবে কেন? মেয়েটির প্রতি যে ছেলেটির অসীম মুগ্ধতা! কিন্তু ছেলেটিকে মেয়েটির প্রতি এই নতুন ভাবনায় পেয়ে বসলো, বেশ ভালো ভাবেই। এবং ছেলেটি সিধান্ত নিল, সে মেয়েটিকে কয়েকদিন ভালো ভাবে ফলো করবে, তার পুরো বিষয়টা জানার জন্য, যদিও এতে ছেলেটির কোন লাভ বা ক্ষতি নেই, বা নেই কোন বিশেষ কারণ, তবুও! মুগ্ধতার আকর্ষণে!

এরপর থেকে ছেলেটি, মেয়েটিকে প্রতি দিন ফলো করতে লাগলো, সকাল-সন্ধা-দুপুর, বাসা থেকে বের হওয়া থেকে বাসায় ফেরা পর্যন্ত! প্রায় ১৫ দিন এক নাগাড়ে। এতে ছেলেটি দেখতে পেল যে, হ্যাঁ মেয়েটি কোন এক জায়গা প্রতিদিন নামেনা বা একই জায়গা থেকে ওঠেওনা! বেশ অবাক হল ছেলেটি, বেশ-বেশ।

আর মেয়েটির এই অস্বাভাবিক যাওয়া-আসা ছেলেটিকে ধীরে-ধীরে বিচলিত করতে শুরু করলো আর এই বিচলিত ভাবটাই একসময় বিপর্যস্ততায় রূপ নিল এবং অনেক-অনেক ভেবে সে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সিদ্ধান্ত নিল সে এই রহস্যের শেষ দেখে ছাড়বে, দেখেই ছাড়বে!

তাই ছেলেটি একদিন বেশ আট-ঘাট বেঁধেই মেয়েটির পিছু নিল, ভীষণ গোপনীয়তায় ও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে জেনে-বুঝেও, এমনকি এতে করে মেয়েটি যে অনেক-অনেক রেগে যেতে পারে, হতে পারে ভীষণ-ভীষণ অপমানিত যদি জানে বা বোঝে ছেলেটির এই গুপ্তচরবৃত্তি। তবুও......

বিকেল বেলা মেয়েটি সরাসরি বাসায় না ফিরে অন্য পথ ধরলো, ছেলেটিও ফলো করতে লাগলো মেয়েটিকে, মেয়েটি একটি অনেক আধুনিক আর সুসজ্জজিত আলিশান বাড়িতে ঢুকে গেল, ছেলেটি এবার আর এগোতে পারলোনা, প্রবেশ মুখের ভীষণ করা নিরাপত্তা দেখে থমকে যেতে বাধ্য হল।

তবুও অদম্য তার এই শেষ দেখে নেয়ার ইচ্ছা। সে অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে গেটের নিরাপত্তা রক্ষীকে রাজী করালো, দিল বেশ কিছু টাকা পয়সাও এমনকি সেই নিরাপত্তা রক্ষীকে আশ্বস্তও করলো যে যদি সে ধরা পরে আর সেই কারণে যদি তার চাকুরী চলে যায়, তবে ছেলেটি তাকে চাকুরীর ব্যাবস্থা করে দেবে। আর এও জেনে নিল যে, এই মেয়েটি এখানে প্রায়ই আসে, আবার চলেও যায়, কখনো-কখনো থেকেও যায়, কখনো এক-আধ বেলা থেকে চলে যায়। তবে এই বাড়ির মানুষদের সাথে কি তার সম্পর্ক সেই ব্যাপারে কিছুই জানেনা।

যাই হোক ছেলেটি নিরাপত্তারক্ষীকে টাকা-পয়সা দিয়ে আর মেয়েটির লোকেশন জেনে চলে গেল, ডুপ্লেক্স বাড়ির বাইরে থেকে ছাদে যাওয়া সিঁড়ি ধরে দেড় তালার এক মনোরম করিডোরে, যেখানে অসংখ্য পাতাবাহার আর অন্দর সজ্জার মনোরম কিছু সবুজ গাছ, পাশের ভারী পর্দা দিয়ে ঢাকা বিশাল কাচের জানালা, কিন্তু দিনের প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের জন্য জানালার পর্দাগুলো দুই পাশে সরানো। খুবই সংগোপনে ছেলেটি চোখ রাখলো সেই কাঁচের দেয়াল ঘেরা জানালার ভিতরে, দারুণ সুসজ্জিত আর বেশ বড় বেডরুম, ধপধপে সাদা চাঁদর আর বালিশে যেন কোন রাজা-বাদশার শয়ন! কিন্তু কোন মানুষের আনাগোনা-ছায়া বা রেখা দেখতে পেলনা!

এরপর একটু অপেক্ষা আর একটু উঁকি-ঝুঁকি আর সেই সাথে আছে ধরা পরে যাবার বুক ধড়ফড়ানি! কিন্তু তবুও অপেক্ষা শেষ দেখার আর মাঝে-মাঝে চোখ বাইরের গেটের দিকে, কখন আবার বেরিয়ে যায় মেয়েটি? সন্ধা ঘনিয়ে রাতের আনাগোনা, নেই কারো কোন সাড়া-শব্দ, নেই কোন মানুষের ছিটেফোঁটা, আরও বেশ কিছুক্ষণ অসম্ভব অপেক্ষার পরে সেই ঘরে আলো জ্বলে উঠলো আর সাথে সাথে ছেলেটি মাথা নামিয়ে, মেঝের সাথে সিটিয়ে ফেলল তার পুরো শরীর, এরপর অপেক্ষা আর অপেক্ষা কি ঘটে, কি ঘটে? মাঝে-মাঝে শরীর তুলে একটু-একটু সাহস সঞ্চার করে চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি ফেলে রুমের ভিতরে, বোঝা যায় হাসি-কলকাকলি-খুনসুটি আর আছে অনেক আনন্দ আর আহবানের আখ্যান কিন্তু শোনা যায়না কিছুই, বাইরে আসতে পারেনা কোন শব্দই ওই পুরু কাঁচ ভেদ করে।

এভাবে আরও কিছু সময় যায়, এক সময় রুমের আলো নিভে গেল আর ছেলেটার অনেক-অনেক অভিসপ্ত কিছু অপার্থিব রক্তক্ষরণের কাল যেন বয়ে চলে মনের ভিতরে-বাইরে আর সমস্ত পৃথিবীর সকল সত্তা জুড়ে! কত আবোল-তাবোল আর উল্টা-পাল্টা ভাবনার ডাল-পালা যেন মেলছে তাদের শাখা-প্রসাখা, ছেলেটির ইচ্ছে-অনিচ্ছের ধার না ধেরে! নিজেই চাপড়ে দেয় নিজের মাথা।

এক সময় আবার আলো জ্বলে ওঠে সেই রুমের, এবার ছেলেটি তার বুকে জমে থাকা সব টুকু সাহস এক সাথে জড়ো করে উঠে বসে, আর করুন-সকরুনের মিশ্র দৃষ্টি রাখে সেই রুমের ভিতরে, আর দেখতে পায়...

মেয়েটি তার শরীরের উপর থেকে ধপধপে সাদা চাদর সরিয়ে উন্মুক্ত বুকে টেনে নেয় এক খণ্ড কাপড় তার ডান হাত দিয়ে আর বাম হাত দিয়ে ছিনিয়ে নেয় বিছানার পাশে সাইড টেবিলে রাখা এক গুচ্ছ টাকা! বিছানা থেকে নেমে যায় বাথ রুমের দিকে ছেলেটিকে ক্ষতবিক্ষত করে! ছেলেটি যেন বধীর-অন্ধ আর বাকরুদ্ধ হয়ে গেল, চিৎকার করতে চাইলো তার শরীরের সব টুকু শক্তি দিয়ে, কিন্তু পারলোনা, নিচে নেমে এলো নিজের মুখ, নিজেই চেপে ধরে।

ছেলেটি কোন কথা বলতে পারছেনা, কিছু শুনতে পারছেনা, কিছু বুঝতেও পারছেনা। শুধু চাইছে চিৎকার করে তার এই আর্তনাদ পৃথিবীকে শোনাতে! কিন্তু সেটাও পারছেনা কি জবাব দেবে, এই পৃথিবী যখন জবাব চাইবে সেই আর্তনাদের? তাই সে পুকুরে ঝাঁপ দিল যেন চিৎকার করতে না পারে!

কিন্তু কতক্ষণ? নিঃশ্বাস যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেতো মরতে পারবেনা, সেতো মরতে চায়না, তার তো কিছুই আসে যায়না! তবুও যদি পারতো একবার, শুধু একবার বুক ফাটা আর্তনাদ করতে বা একবার চিৎকার করে কাঁদতে! তবুও কিছু লাঘব হত হয়তো, হত কিছু বিসর্জন! সেও পারছেনা...... কেন পারছেনা?

সেই থেকে ছেলেটি অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল আর কোনদিন তাকাতে পারেনি কোন মেয়ের দিকে...! কোনো দিনও না!

আর ফিরেও পায়নি তার স্বাভাবিকতা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.